জ্বলদর্চি

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি এবং বিদ্যাসাগর-চর্চার জন্য কিছু সহায়ক পুস্তকের তালিকা /প্রসূন কাঞ্জিলাল

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি এবং বিদ্যাসাগর-চর্চার জন্য  কিছু সহায়ক পুস্তকের তালিকা

প্রসূন কাঞ্জিলাল


১৮২০:
২৬শে সেপ্টেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জন্মগ্রহণ করেছিলেন পশ্চিম কলকাতা থেকে ৫২ মাইল দূরে অবস্থিত বীরসিংহ গ্রামে, সেটি আগে হুগলী জেলার অন্তর্গত ছিল কিন্তু ১৮৭২ সালে মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত হয়।

১৮২৪ :
১ জানুয়ারী সংস্কৃত কলেজের প্রতিষ্ঠান, বউবাজারের ভাড়া বাড়িতে পাঠ আরম্ভ।

১৮২৫ :
৫ বৎসর বয়সে তিনি বীরসিংহ গ্রামে কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের পাঠশালায় পড়াশুনা শুরু করেন এবং সেখানে ৩ বছর পড়াশোনা করেন।

১৮২৬:
১ মে গোলদীঘির সন্নিহিত নিজস্ব ভবনে সংস্কৃত কলেজে প্রবেশ।

১৮২৮:
নভেম্বর মাসে তিনি তাঁর পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যখন পদব্রজে যাত্রা শুরু করেন কলকাতার উদ্দেশ্যে পড়াশোনার জন্য তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৮ বৎসর ২ মাস। কলকাতার বড় বাজারে জগদ্দুর্লভ সিংহ মহাশয়ের বাড়ী ১৩ নং দীনহাটা স্ট্রীট, বর্তমানে যেটি দীগম্বর জৈন টেম্পল রোড, কলকাতা, সেখানে থেকে ৩ মাস প্রাথমিক শিক্ষালাভের জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষক স্বরূপচন্দ্র দাসের শিক্ষাদানের তত্ত্বাবধানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পদব্রজে কলকাতা যাবার পথে মাইলস্টোনগুলি পর্যবেক্ষণ করে ঈশ্বরচন্দ্র ইংরেজী সংখ্যাগুলি চিনে ফেলেছিলেন। এ কাহিনী তিনি নিজের আত্মজীবনীতে উল্লেখ করে গেছেন।

১৮২৯:
১লা জুন তিনি সংস্কৃত কলেজে তৃতীয় শ্রেণীতে ব্যাকরণ শিক্ষালাভের জন্য ভর্তি হন, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৮ বৎসর ৮ মাস।

১৮৩০-৩১ :
তিনি মাসিক বৃত্তি ৫ টাকা বাৎসরিক পরীক্ষায় ভাল ফল করার জন্য লাভ করেন এবং পর পর তিন বছর এই পুরস্কার তিনি জয় করেন। এটি মাত্র ১১ বৎসর বয়সের বালকের কাছে মোটেও সহজসাধ্য ব্যাপার ছিল না। ১১ বছর বয়সে তাঁর পৈতা অনুষ্ঠান হয়।

১৮৩২:
বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য অমর ঘোষ, উত্তররামচরিত ও মুদ্রারাক্ষস পুস্তাকাবলী পারিতোষিক পান।

১৮৩৩-৩৪:
পে-স্টুডেন্ট হিসেবে নগদ ২ টাকা পান। তিনি ষষ্ঠ শ্রেণীর বাৎসরিক পরীক্ষায় ইংরাজীতে পুনরায় পুরস্কৃত হন।

১৮৩৪: 
তিনি ক্ষীরপাই নিবাসী শহর ভট্টাচার্যের কন্যা দীনময়ী দেবীকে বিবাহ করেন।

১৮৩৫:
জানুয়ারী মাসে জয়গোপাল তর্কালঙ্কার মহাশয়ের কাছে সাহিত্য বিষয় অধ্যয়নের জন্য সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন এবং প্রথম বর্ষের পরীক্ষায়  কৃতকার্য হয়ে মাসিক ৫ টাকা বৃত্তি লাভ করেন। দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষাতেও এর  অন্যথা হয় না । তিনি সাহিত্য বিভাগে পুনরায় পুরস্কৃত হন।
ফেব্রুয়ারী মাসে সংস্কৃত কলেজে প্রেমচাঁদ তর্কবাগীশের অধীনে এক বছরের জন্য অলংকার শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।

নভেম্বর: তৎকালীন কর্তৃপক্ষ ইংরাজী পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন, এর বিরুদ্ধে অন্য সকল সহপাঠীদের সঙ্গে ঈশ্বরচন্দ্রও প্রতিবাদে সামিল হন।

১৮৩৬:
অলঙ্কার শাস্ত্র পাঠ শেষে বার্ষিক পরীক্ষার সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করার জন্য রঘুবংশ,কাব্যপ্রকাশ, রত্নাবলী, মালতি-মাধব, উত্তর রামচরিত, মুদ্রারাক্ষস, বিক্রমোবর্শী ও মৃচ্ছকটিক পুস্তকাবলী পারিতোষিক পান। এই বছরের মে মাস থেকে ২ বৎসর তিনি শম্ভুচন্দ্র বাচস্পতি মহাশয়ের নিকট বেদান্ত শিক্ষালাভ করেন এবং বাৎসরিক পরীক্ষায় তিনি সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত হন।

১৮৩৭:
এই বছর মে মাস থেকে তাঁর মাসিক বৃত্তি ৫ টাকা থেকে বেড়ে ৮ টাকা হয় এবং বেদান্ত শাস্ত্রেরও তিনি তাঁর প্রথম স্থান সুরক্ষিত রাখেন। দ্বিতীয় বর্ষেও পুনরায় পুরস্কৃত হন।

১৮৩৭-৩৮:
সংস্কৃত কলেজে পণ্ডিত হরচন্দ্র ভট্টাচার্য ও ঐ কলেজেরই অধ্যাপক হরনাথ তর্কভূষণের অধীনে স্মৃতি-শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। এক বছর এ বিষয়ে পড়াশোনার পর তাঁর পারদর্শিতার জন্য মাসিক ৮টাকা বৃত্তি লাভ করেন।

১৮৩৯: 
তিনি বাৎসরিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে পুরষ্কৃত মূল্য ৮০ টাকা সুরক্ষিত করেন এবং সংস্কৃত গদ্য রচনায় তিনি ২০০ টাকা পুরস্কার লাভ করেন।

২২শে এপ্রিল:
হিন্দু-ল কমিটির পরীক্ষা দেন এবং এই পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ২২-৪-১৮৩৯ তিনি হিন্দু-ল কমিটির পরীক্ষা দেন।

১৬ই মে: 
তাঁর মেধার জন্য প্রশংসা পত্র লাভ  করেন ও নামের আগে বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। এটি অত্যন্ত সম্মানীয় উপাধি। এই বছরেই তিনি নিমাইচন্দ্র শিরোমণির কাছে ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়ন করা আরম্ভ করে দেন। এই দিন তিনি হিন্দু ল -কমিটির থেকে প্রশংসা পত্র লাভ করেন।

২১ শে মে:
কলেজে পুনরায় ইংরাজী পড়াশোনার জন্য বিভাগের সকল  ছাত্ররা লিখিতভাবে তৎকালীন সরকারের শিক্ষাবিভাগের সম্পাদককে জানান এবং সেই দরখাস্ততে ঈশ্বরচন্দ্র স্বাক্ষর করেছিলেন।

১৮৪০-৪১:
জয়নারায়ন তর্কপঞ্চানন মহাশয়ের নিকট তিনি আবারও ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়ন করার সময় তিনি পৃথিবী ও বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কিত আরো ১০০টি শ্লোক লেখার জন্য পুরস্কৃত হন। এই সময় তিনি উদ্যোগী হয়ে জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে কিছুদিন পড়াশুনো করেন  ও ন্যায় শাস্ত্র গতিপথ সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করেন।
🍂

১৮৪১:
ডিসেম্বর ২:
১২ বছর ৫ মাস সংস্কৃত কলেজের অধ্যয়ন শেষ করার পর তিনি কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা বিভাগের সেরেস্তাদার বা প্রধান পণ্ডিতের পদে নিযুক্ত হন। সেই সময় তিনি প্রতি মাসে ৫০ টাকা করে মাইনে পেতেন। সেই সময়ই তিনি একজন হিন্দুস্থানী পণ্ডিতের কাছে হিন্দি শিখতে শুরু করেন এবং সাথে সাথে দুর্গাচরণ বন্দোপাধ্যায় এর  নিকট ইংরাজী সাহিত্য সম্বন্ধে পড়াশোনা করেন। তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে হেডরাইটার এবং কোষাধ্যক্ষের পদে নিযুক্ত হন। পরে তিনি তাঁর নিজের ছাত্র নীলমাধব মুখোপাধ্যায়ের কাছেও ইংরাজী শিখেছিলেন, এছাড়া কিছুদিনের জন্য রাজনারায়ণ বসুর কাছে ইংরাজী শিখেছিলেন। পরে হিন্দু কলেজের ছাত্র রাজনারায়ণ গুপ্তকে তিনি মাসিক ১৫ টাকা দিয়ে গৃহশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেন ইংরাজী শিক্ষক হিসেবে। পন্ডিত আনন্দকৃষ্ণ বসুর কাছে শেক্সপিয়র সম্বন্ধে পড়াশোনা করেন।
ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পর তিনি হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবত গীতা অবলম্বনে সংস্কৃত ভাষায় বাসুদেব চরিত নামক একটি পুস্তক রচনা করেন এবং সেটি প্রকাশনার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন কিন্তু তাদের অসম্মতির কারণে সেটি প্রকাশিত হয়নি।

 ডিসেম্বর ৪:
গভর্ণমেন্ট সংস্কৃত কলেজের ১২ বৎসর ৫ মাস অধ্যয়নের পর কলেজের এবং অধ্যাপকগণের দুটি শংসাপত্র লাভ করেছিলেন। তিনি প্রথম ন্যায় শাস্ত্র অধ্যায়ন করেন এবং বহু পুরস্কারে পুরস্কৃত হন। ন্যায়শাস্ত্রে প্রথম স্থান অধিকার করে ১০০ টাকা পুরস্কার পান । এছাড়া গল্প লিখে ১০০ টাকা, দেবনাগরী হরফে সংলাপ লিখে ৮ টাকা এবং বাংলায় কোম্পানী রেগুলেশান পরীক্ষার জন্য আরো ৮ টাকা পুরস্কার পান। ৪-১২-১৮৪১ এই দিন সংস্কৃত কলেজে ১২ বছর ৫ মাস পড়াশোনা করে "বিদ্যাসাগর" উপাধি লাভ করেন।

১৮৪৩:
আগস্ট ১৬:
মাসিক সাময়িক পত্রিকা তত্ত্ববোধিনী 'তত্ত্ববাণী' তার শুরুর দিন থেকেই নতুন আলোর দিশারী হয়ে ওঠে। বিদ্যাসাগর ঐ সাময়িক পত্রিকা প্রবন্ধ বিভাগে কমিটিতে ছিলেন। উনি নিজের উদ্যোগে এই পত্রিকার প্রস্তাবনা পক্ষ থেকে বাংলা ভাষার মহাভারত (উপক্রমণিকা অংশ) প্রকাশ করেন। নিজেও তাতে লিখতেন।

১৮৪৪: 
গর্ভনর হেনরিক হার্ডিঞ্জ স্থানীয় বাসিন্দাদের তাদের মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষিত করার জন্য বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার বিভিন্ন অঞ্চলে মোট ১০১টি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। বিদ্যাসাগর ও জি.টি. মার্শালের উপর ভার ন্যস্ত হয় ওই সব বিদ্যালয়ের শিক্ষক নির্বাচনের জন্য।

১৮৪৬:
এপ্রিল ৬ঃ 
বিদ্যাসাগর ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের হেড পণ্ডিতের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

আগস্ট ৬:
মাসিক ৫০ টাকা বেতনে সংস্কৃত কলেজের সহকারী সচিব বা সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন।

সেপ্টেম্বর ২৯ :
সংস্কৃত কলেজের সচিব রসময় দত্তের কাছে উন্নততর শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন (সংস্কৃত কলেজের উপর টীকা) পেশ করেন। এছাড়া কিছু মৌখিক প্রস্তাব ও ছিল। কিন্তু সংস্কৃত কলেজের সচিব রসময় দত্ত না রাজী ছিলেন কোনও সংস্কার করতে, না বিদ্যাসাগরের ঐ প্রতিবেদন পাঠালেন শিক্ষা পরিষদে। বিতৃষ্ণায় বিদ্যাসাগর তারানাথ তর্কবাচস্পতির উপর ভার ন্যস্ত করে সহকারী সচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

১৮৪৭:
সমকর্ত-যন্ত্র সংস্কৃত ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন এবং মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সহায়তায় গ্রন্থ ভান্ডার গড়ে তোলেন।

এপ্রিল:
ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের প্রকাশনা বিভাগ থেকে জনপ্রিয় হিন্দি বই 'বিক্রম-বেতাল' অবলম্বনে প্রকাশিত হয় বেতাল পঞ্চবিংশতি। বইটির প্রথম সংস্করণে লেখক হিসেবে বিদ্যাসাগরের নাম ছিল না। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সচিব জি.টি. মার্শালের অনুরোধে বইটি লেখা হয়েছিল।

জুলাই ২৬:
সংস্কৃত কলেজের সহকারী সচিবের পদ থেকে তাঁর পদত্যাগ পত্র গৃহীত হয়। ঠিক তার আগেই তার চতুর্থ ভাই.... মাত্র ১১ বছর বয়সে গুটি বসন্তে মারা যায়।

ঐ ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ থেকেই ভারতচন্দ্রের বই 'অন্নদামঙ্গল' বাংলায় সম্পাদিত হয়ে প্রকাশিত হয়। প্রতি বই ছয় টাকা মূল্যে ১০০টি বই বিক্রি হয়ে যায়। ঋণশোধ হয়ে যথাযোগ্য নামে ছাপাখানা সমষ্টিগত ভাবে কেনা সম্ভব হয়।

সম্ভবত ঐ বছরেরই জুলাই মাসে হিন্দু কলেজের অধ্যক্ষ কের বিদ্যাসাগরের সঙ্গে অভদ্র ব্যবহার করেন। বিদ্যাসাগরকে নিজের অফিসে ডেকে বিদ্যাসাগরের সামনে জুতোশুদ্ধ পা টেবিলে তুলে বসেন ও তার সাথে কথা বলতে থাকেন। বিদ্যাসাগর সেই ব্যবহার ভোলেননি। কের কে এই একই ব্যবহার তিনি সুদে আসলে ফিরিয়ে দেন সংস্কৃত কলেজে কের সাহেবকে ডেকে।

১৮৪৮:
সিরাজদৌল্লা থেকে লর্ড বেন্টিঙ্ক পর্যন্ত বাংলার ইতিহাসের ২য় পর্ব প্রকাশিত হয়। এ ইতিহাস সংকলিত অভিযোজিত ইতিহাস, আক্ষরিক অনুবাদ নয়। শেষ ৯ টি অধ্যায় ইংরাজীতে লেখা মার্শম্যানের লেখার প্রতিরূপও নয়।

১৮৪৯:
মার্চ ১:
বিদ্যাসাগরফোর্ট উইলিয়ম কলেজে নিরাপত্তা আমানত বাবদ ৫০০০ টাকা গচ্ছিত রেখে মাসিক ৮০ টাকা বেতনের বিনিময়ে মুখ্য লেখক ও কোষাধ্যক্ষ পদে নিযুত হন। রবার্ট ও উইলিয়ম চেম্বারস এর লেখা বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী 'জীবনকৃত' নামে বাংলায় অনুদিত ও প্রকাশিত হয়।
বিদ্যাসাগর গভীর আঘাত পান কলকাতায় মাত্র ৮ বছর বয়সে তাঁর পঞ্চম ভ্রাতা হরিশচন্দ্রের মৃত্যু সংবাদে।

নভেম্বর ২৪:
বিদ্যাসাগরের পুত্র নারায়ণ জন্মগ্রহণ করেন।

১৮৫০:
"সর্বশুভকরী পত্রিকা" প্রকাশিত হয়। প্রথম সংখ্যার মূল বিষয়বস্তু বাংলায় বিদ্যাসাগরের লেখা অথচ লেখকের নামহীন একটি প্রবন্ধ- "বাল্যবিবাহের দোষ"। তিনি নিজে সার্বিক বিশ্বাস থেকে প্রবন্ধটি লেখেন।

ডিসেম্বর৪:
 ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের মুখ্য লেখক ও কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

ডিসেম্বর৫:
 মাসিক ৯০ টাকা বেতনে সংস্কৃত কলেজের সাহিত্য বিষয়ক অধ্যাপকের পদে নিযুক্ত হন।

ডিসেম্বর ১৬:
 শিক্ষা পরিষদে সংস্কৃত কলেজের পুর্নগঠন সম্বন্ধে বিস্তারিত প্রতিবেদন পেশ করেন।

ডিসেম্বর: 
ঐ মাসেই বেথুন গার্লস স্কুলের সাম্মানিক সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন। দীর্ঘদিনের বন্ধু মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সাথে অজানা কারণে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

১৮৫১:
জানুয়ারি ৫:
সংস্কৃত কলেজের অস্থায়ী সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন।

জানুয়ারী ২২ : 
মাসিক ১৫০ টাকা বেতনে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের ভার গ্রহন করেন। এতদিন পর্যন্ত থাকা সচিব ও সহকারী সচিবের পদ বিলুপ্ত করে মূলতঃ ওনার জন্যই সংস্কৃত কলেজে অধ্যক্ষ পদটি তৈরী হয়। 

এপ্রিল ৬:
 বিভিন্ন ইংরেজী পাঠকদের জন্য বাংলায় 'বোধোদয়' (প্রথম পাঠ্য বই) নামে একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। প্রথমে এটার নাম ছিল শিশুশিক্ষা চতুর্থ ভাগ। এছাড়াও  প্রকাশিত হয় 'উপক্রমনিকা' ও 'রজুপথ '(প্রথম ও তৃতীয় ভাগ)।

জুলাই ৯:
সংস্কৃত কলেজে ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য ছাড়া কায়স্থ ও ভর্তির অনুমোদন পেল।

জুলাই ২২ :
সংস্কৃত কলেজে শুধুমাত্র রবিবার ছুটির দিন হিসেবে ঘোষিত হয়। এর আগে পর্যন্ত হিন্দু ধর্মের নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও প্রথা অনুযায়ী বিভিন্ন শুভদিন ছুটির দিন হিসেবে পরিলক্ষিত হত।

আগষ্ট ২২ :
জন ড্রিঙ্ক ওয়াটার বেথুন বাংলায় নারী শিক্ষার প্রসারে অন্যতম মহান পৃষ্ঠ পোষক এবং তিনি আমৃত্যু বিদ্যাসাগরের সুহৃদও  ছিলেন। 

নভেম্বর :
 এ মাসেই এ যাবৎ প্রচলিত ব্যাকরণ "মুগ্ধবোধ" এর জায়গায় বাংলা সংস্করণে  সংস্কৃত ব্যাকরণ "উপক্রমনিকা"ও "রজুপদ" পাঠ্য বই হিসেবে সংস্কৃত কলেজে পরিচিত হল।
ভার্নাকুলার সাহিত্য সমাজ প্রতিষ্ঠিত হল। বিদ্যাসাগরের সাথে রাধাকান্ত দে, হাডসন, রেভারেন্ড লং , প্র্যাট, সেটনকর, রবিনসন ও রাজেন্দ্রলাল মিত্র এই সমাজের সদস্য হন। 
সম্ভবত ঐ বছরেই বিদ্যাসাগরের প্রথমা কন্যা হেমলতা জন্মগ্রহণ করে।

১৮৫২:
জানুয়ারী ৮ : 
বেথুন সমাজে প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যাসাগর ছিলেন এই সমাজের অন্যতম সদস্য।

জানুযারী ১৩: 
আগে হিন্দু কলেজ ও মাদ্রাসার মেধাবী ও সফল ছাত্রদের সরকারী স্মারক প্রদান করা হত। আবেদন করা হয় ঐ একই সুযোগ সুবিধে যেন সংস্কৃত কলেজের উপযুক্ত মেধাবী ও কৃতী ছাত্রদেরও দেওয়া হয়। সেই আবেদন গৃহীত হয়।

এপ্রিল ১২: 
আরও একটি সংস্কৃত কলেজের উপর টীকা পেশ করা হয়।

মে ২১ : 
বিদ্যাসাগরের গ্রামের বাড়ি বীরসিংহে ডাকাতি হয়। বিদ্যাসাগর সেই সময় গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। ৪০-৫০ জন ডাকাত কার্যত বাড়ি নিঃস্ব করে লুঠ করে।

আগস্ট ২৮ :
 সংস্কৃত কলেজে ভর্তির প্রবেশ মূল্য ২ টাকা ধার্য করা হয়।
রজুপথ (দ্বিতীয় ভাগ) ও হিন্দিতে বেতাল পঞ্চবিংশতি সম্পাদনা করে প্রকাশিত হয়।

জানুয়ারী ২ :
সংস্কৃত কলেজের পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে চিঠি লেখেন বিদ্যাসাগর।

নভেম্বর:
সংস্কৃত কলেজের ইংরেজী বিভাগের সব মিলিয়ে পুনর্গঠন হয় । পাঠক্রমে ইংরেজী পাঠ বাধ্যতামূলক করা হয়। বহুদিন পর্যন্ত ঐচ্ছিক থাকা ও প্রকাশনা বই আকারেই ছিল। তার প্রবন্ধ 'সংস্কৃত ভাষা সংস্কৃত সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব' বেথুন সমাজে পড়ান শুরু হয়। শুধু তাই না এই বছরের ২য় অর্ধে 'ব্যাকরণ কৌমুদী'র প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ  রূপে প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি গভীর ভাবে পড়াশুনো শুরু করেন বিভিন্ন হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রের বিষয় নিয়ে। খুঁজে বার করেন বিধবাদের পুনঃ বিবাহের পক্ষে যৌক্তিক মত। এই সময় তিনি সাধারণতঃ  সংস্কৃত কলেজেই থাকতেন। সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন "কিরাতঅর্জুনিয়াম" ও "রঘুবংশম্"।
'লীলাবতী' ও 'সংস্কৃত বীজগণিতের জায়গায় সংস্কৃত কলেজে ইংরাজী বীজগণিতের প্রচলন শুরু করেন।

১৮৫৩-৫৪:
অবৈতনিক স্কুল, নৈশ বিদ্যালয়, রাখাল বালকদের জন্য বিদ্যালয়, নারী বিদ্যালয় ও বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্র  প্রতিষ্ঠা করেন বীরসিংহ গ্রামে।

১৮৫৩ -৫৮:
সংস্কৃতে সম্পাদনা করে এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত হল 'সর্বদর্শনা সংগ্রহ' ।

১৮৫৪:
জানুয়ারী ২৪: 
ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের অসামরিক ব্যক্তি নিয়োগের পরীক্ষার জন্য একটা পরীক্ষক সমিতি গঠন করা হয়। সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে বিদ্যাসাগরকে ঐ পরীক্ষক সমিতির সদস্য করা হয়। মাসিক ৩০০ টাকা বেতনের মাধ্যমে।

ফেব্রুয়ারী ৭ : 
বাংলা মাধ্যমে পড়ানোর ব্যাপারে বিদ্যাসাগর হ্যালিডে  কে একটি গুরুত্বপূর্ণ  চিঠি লেখেন। 

জুন:
কলেজে ছাত্রদের কাছ থেকে এক টাকা করে শিক্ষন পারিশ্রমিক ধার্য করার সূত্রপাত হয়।

জুলাই ৩: 
হ্যালিডেকে শিক্ষা বিষয়ক একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়।

ডিসেম্বর: 
 জাত পাতের পার্থক্য মুছে নিরপেক্ষ ভাবে কোন সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবার থেকে কেউ এলে তাকে কলেজে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 'ব্যাকরণ কৌমুদী'র তৃতীয় ভাগ প্রকাশিত হয়। কালিদাসের সংস্কৃত নাটক 'অভিজ্ঞানশকুন্তলম্' অবলম্বনে রচিত হয় একটা বাংলা গল্প।

১৮৫৫:
জানুয়ারী ২৪: 
হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রকে উদ্ধৃত করে বিধবা বিবাহের সপক্ষে উপদেশ দিয়ে প্রকাশিত হয় 'বিধবাবিবাহ' প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা- ইত্যবিষয়ক প্রস্তাব। এই ঘটনা সারা দেশে বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করে।

জানুয়ারী ২৬:
 কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত সরকার একটি  বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ গঠন করে। বিদ্যাসাগর ঐ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

এপ্রিল ১৩: 
'বর্ণপরিচয় প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয়।

মে ১:
 সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ব্যতিরেকে মাসিক ২০০ টাকা বেতনের বিনিময়ে বিদ্যাসাগরের উপর দক্ষিণবঙ্গের সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শকের ভার ন্যাস্ত করা হয়। এছাড়া বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও সংগঠিত করার সাথে সাথে হুগলি নদীয়া, বর্ধমান ও মেদনীপুর এই চার জেলার আদর্শ বিদ্যালয় পরিদর্শনের কাজেও নিযুক্ত হন। সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শকের দায়িত্ব নেওয়ার অব্যহতির পরেই বিদ্যাসাগরকে উপ-পরিদর্শকের পদে নিয়োগ করা হয়। চারটি জেলার প্রত্যেকটির জন্য আলাদা আলাদা ভাবে ও অন্যান্য বিষয় অতিরিক্ত আরও ১০০ টাকা করে মাসিক ভাতা পান বিদ্যাসাগর।

জুন ১৪:
'বর্ণপরিচয়' (দ্বিতীয় ভাগ) প্রকাশিত হয়।

জুলাই ১৭:
সংস্কৃত কলেজের অধীনে শিক্ষকদের শিক্ষনকার্য শেখানোর বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
অক্ষয়কুমার দত্তকে ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নিযুক্ত করা হয়।

অক্টোবর ৪:
 বিধবা আইন সংক্রান্ত প্রায় ১০০০ সাক্ষর সম্বলিত আবেদন পত্র ভারত সরকারের বিধান পরিষদের নিকট পেশ করেন।

অক্টোবর :
ঐ বছরই বিধবা বিবাহের সমর্থনে দ্বিতীয় বই প্রকাশিত হয় - “বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা ইত্যাবিষয়ক প্রস্তাব" ।

নভেম্বর ২১ :
সংস্কৃত কলেজে সম্ভবত প্রবল বিরোধিতার চাপে ভর্তির ব্যাপারে একটা সীমাবদ্ধতা টানা হয়। জন নির্দেশ অধিকর্তা বর্ডার ইয়ংকে চিঠি লেখা হয় ১৮৫৪ সালে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আলাদা নির্দেশিকায় সমস্ত সম্ভ্রান্ত হিন্দু জাতির মধ্যে এই সুবিধা সম্প্রসারণ হয়।

ডিসেম্বর ২৭:
বহু বিবাহ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে ভারতীয় আইন সভায় প্রথম আবেদন যায়। 

১৮৫৬ :
এই বছর জানুয়ারী মাসের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের চারটি জেলায় মোট ২০০টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

জুলাই ২৬ : 
ভারতীয় আইন পরিষদে বিধবা বিবাহ আইন পাশ হয় ও তদানীন্তন রাষ্ট্রপালের সাক্ষরের মাধ্যমে।

আগস্ট : 
বাংলার সরকার বিদ্যাসাগরকে বেথুন মহিলা বিদ্যালয়ের সম্পাদক পদে ও শ্রীযুক্ত বিডন সাহেবকে  প্রশাসক পদে নিযুক্ত করে।

 নভেম্বর : 
ভারত সরকারের নির্দেশে বিদ্যাসাগরের পদ সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক থেকে পরিবর্তিত হলে দক্ষিণবঙ্গে বিশিষ্ট বিদ্যালয় পরিদর্শকের পদাভিষিক্ত হন।

ডিসেম্বর ৭: 
প্রথম বিধবা পুনর্বিবাহ। পাত্র হলেন ধর্ম শিক্ষায় বিখ্যাত খাটুয়ার রামধন তর্কবাগীশের পুত্র শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন- যিনি একাধারে সংস্কৃত কলেজের বিশিষ্ট ছাত্র, মুর্শিদাবাদ জেলার শাসক । পাত্রী কালীমাটির পলাশডাঙা গ্রামের ব্রহ্মানন্দ মুখোপাধ্যায়ের দশ বছরের বিধবা কন্যা কালীমতী দেবী । যার প্রথম বিবাহ হয় মাত্র চার বছর বয়সে এবং ছয় বছর বয়সে বিধবা হন। বিধবা পুনর্বিবাহ সম্পন্ন হয় তৎকালীন ১২ নং বর্তমানে ৪৮ নং সুখিয়া স্ট্রীটে রামকৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায়ের  বাড়িতে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃত শাস্ত্রে গভীর পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ, নানা জ্ঞানীগুনী ও শহরের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ। নানা সমস্যা ও জটিলতার আশঙ্কায় অনুষ্ঠান বাড়ির সান্নিধ্যে ব্রিটিশ সৈন্য মোতায়েন করা হয়। মাত্র এই একটি বিবাহে  বিদ্যাসাগর ব্যক্তিগত ভাবে ১০,০০০ টাকা খরচ করেছিলেন।

'চরিতাবলী' নামে বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী প্রকাশিত হয়। ঈশপের আখ্যানের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হল 'কথামালা' নামে। কথামালার ইংরেজী অনুবাদ করলেন রেভারেন্ড থমাস জেমস্।
সম্ভবত এই বছরই বিদ্যাসাগরের দ্বিতীয় কন্যা কুমুদিনী জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

১৮৫৭:
জানুযারী ২৪:
 কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্য পরিচালনা সভার প্রথম বৈঠকে  বিদ্যাসাগরকে কথা বিভাগের সদস্য মনোনীত করা হয়।

নভেম্বর ২৮ : 
বিদ্যাসাগরকে সংস্কৃত, বাংলা, হিন্দী ও ওড়িয়া ভাষার পরীক্ষক নিযুক্ত করা হয়। সংস্কৃতে সম্পাদনা করে প্রকাশিত হয় "শিশুপাল বধ"।

১৮৫৭ - ৫৮ : 
নভেম্বর মে:
 বিদ্যাসাগরের দায়িত্বে থাকা জেলাগুলিতে এই সময়ের মধ্যে ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী হুগলিতে ২০টি, বর্ধমানে ১১টি, মেদিনীপুরে ৩টি ও নদীয়ার ১টি।

১৮৫৭-৫৯: 
সিপাহী বিদ্রোহের সময় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কৃত কলেজের ভবনটি কোম্পানী সৈন্যদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের আদেশ পত্র দেওয়া হয়। কলেজ স্থানান্তরিত হয় ৯২ নং ও ১১০ নং বউবাজার স্ট্রীট-এ ১৩১ নং ঠিকানায়, কলেজেরও কিছু শ্রেণী কিছুদিনের জন্য স্থানান্তরিত হয়। 

মার্চ ২২ : 
বহু বিবাহের তীব্র সমালোচনা করে রামনারায়ণ তর্কালঙ্কারের লেখা ভার্নাকুলার সামাজিক নাটক কুলীন কুলসর্বস্ব মঞ্চস্থ হয় বড়বাজারের গদাধর শেঠের বাড়িতে। ঐ নাটক মঞ্চস্থ হাওয়ার তৃতীয় রাত্রে বিদ্যাসাগর স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। যা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

জুন ২৪: 
স্ত্রী শিক্ষার উপর সরকারী অনুদান প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্তের পরিণামে চিঠি যায় জন নির্দেশ অধিকর্তার কাছে। স্ত্রী শিক্ষার প্রসারে বিদ্যাসাগর ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী ছিলেন ও তাঁর যথেষ্ট অবদান ও ছিল। এই মহৎ উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করতে গিয়ে তাঁকে বিরাট অঙ্কের ঋণ নিতে হয়েছিল। দীর্ঘায়িত টানাপোড়েনের পর ঐ বছরই ডিসেম্বরের ২২ তারিখে সরকার শিক্ষার জন্য ঋণ বাবদ ৩,৪৩৯ টাকা ২১ পয়সা মিটিয়ে দেয়।

জুলাই ৩১ :
বেলগাছিয়া নাট্যশালার মূল সংস্কৃত নাটক রত্নাবলীকে বাংলায় মঞ্চায়িত করেন রামনারাযণ তর্করত্ন। বিদ্যাসাগর ঐ নাটকের মঞ্চায়নে স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন।

নভেম্বর ৩: 
একই সাথে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ও বিশিষ্ট বিদ্যালয় পরিদর্শকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। একই দিনে বিদ্যাসাগর উপরোক্ত পদকেন্দ্রিক সমস্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পান।

নভেম্বর ১৫ :
স্বদেশী সাপ্তাহিক 'সোমপ্রকাশ' পত্রিকার সূচনা হয়। দেশের রাজনৈতিক সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য বিদ্যাসাগর প্রথম থেকে এ রকম একটি পত্রিকার পরিকল্পনার পিছনে ছিলেন। পত্রিকার প্রথম সংখ্যাটাই বলে দিচ্ছিল বিদ্যাসাগরের বহুমুখী প্রতিভার নমুনা। পরে তিনি তথ্যবাণীর সম্পাদকীয় পরিষদের সচিব হন। স্বদেশী সাময়িক তাত্ত্বিক পত্রিকা তথ্যবাণীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। সম্পূর্ণ ভিন্ন উদ্দেশ্যে প্রকাশিত এই স্বদেশী সাময়িক পত্রিকার লক্ষ্য ছিল পাঠক ও সমাজের মধ্যে ধীরে ধীরে একটি যুক্তিবাদী মন ও মানসিকতা তৈরী করার উদ্দেশ্য যা ছিল  বিদ্যাসাগরের মস্তিষ্কপ্রসূত।

১৮৫৯:
জানুয়ারী ৮ :
 বিদ্যাসাগরের মাতামহ (ঠাকুমা) দুর্গাদেবীর মৃত্যু হয়।

এপ্রিল ২৩ :  
উমেশচন্দ্র মিত্র লিখিত  'বিধবা বিবাহ' নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হয় কলকাতার মেট্রোপলিটন থিয়েটারে। বিদ্যাসাগর বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকবার নাটকটি দেখেন।

মে : 
তথ্যবাণীর সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দেন বিদ্যাসাগর। তথ্যবাণী ব্রাহ্ম সমাজের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যায়। আর ব্রাহ্ম সমাজ ছিল একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও আবেদনের জন্য সচেষ্ট প্রার্থীদের ব্যবহার ও সুবিধার্থে প্রকাশিত হল 'পথমালা'। শিক্ষায় ইংরাজীর প্রভাবের কথা চিন্তা করে শঙ্কর ঘোষ লেনে ছয় জন ভদ্রলোক প্রতিষ্ঠা করলেন 'ক্যালকাটা ট্রেনিং স্কুল'। কয়েকমাস পর বিদ্যাসাগর ঐ প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন।

সেপ্টেম্বর ২৯: 
রাষ্ট্রপাল গ্রান্টকে গণশিক্ষা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পত্র দেন।

১৮৬০:
পরীক্ষক সমিতির সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দেন। সম্ভবত একই বছরে 'মহাভারত' (মুখবন্ধ অংশ), 'সীতার বনবাস' ও সংস্কৃতে সম্পাদিত করে প্রকাশিত হয়। বাল্মীকি রামায়ণম্।

১৮৬১:
এপ্রিল : 
পরিচালন সমিতির মধ্যে নানা মত পার্থক্যের ফলে পুরোনো পরিচালন সমিতি ছেঁটে ফেলে
কলকাতা ট্রেনিং স্কুলে নতুন পরিচালন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিদ্যাসাগরকে ঐ নব্যগঠিত পরিচালন সমিতির সম্পাদক মনোনীত করা হয়।

ডিসেম্বর: 
'হিন্দু পেট্রিয়ট' পত্রিকার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর ঐ পত্রিকার সমস্ত ভার পরিশোধ করে বিদ্যাসাগর ঐ পত্রিকার দায়িত্ব নেন। সংস্কৃতে সম্পাদনা করে প্রকাশিত হয় 'কুমারসম্ভব'। 

জানুয়ারী: 
মাইকেল মধুসুদন দত্তকে 'হিন্দু পেট্রিয়ট' পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত করেন। ঐ পত্রিকার সমস্ত
ভার ও দায়িত্ব দেন বিদ্যাসাগর।

ফেব্রুয়ারী :
মাইকেল মধুসুদন দত্ত তাঁর লেখা 'বীরাঙ্গনা' গীতিকাব্য উৎসর্গ করেন বিদ্যাসাগরকে।

মে:
কৃষ্ণদাস পালকে হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত করা হয়। 'বৈয়াকরণ কৌমুদী' (চতুর্থ ভাগ) সম্পাদনা করে সংস্কৃতে প্রকাশিত হয় 'কাদম্বরী' ।

নভেম্বর: 
সরকার বিদ্যাসাগরকে প্রতিষ্ঠান রক্ষণাবেক্ষণ পরিদর্শক হিসেবে নিযুক্ত করে। জার্মান ওরিয়েন্টাল সোসাইটির সংবাদদাতা সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
"অক্ষয়মঞ্জুরী" (ছয়টি গল্পের সংকলন ও সামান্য আরও কিছু) প্রকাশিত হয়।

জুন ২২:
 রাঁচী মিঃ স্ট্যানফোর্থ এর কিছু প্রশ্নের উত্তরে বিদ্যাসাগর জানান হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী মানসিক
বিকারগ্রস্ত বাবার পুত্র তার সম্পত্তির পূর্ণ উত্তরাধিকারী হওয়ার যোগ্য।

জুলাই ৪ :
তিনি ইংল্যাণ্ডের রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য নির্বাচিত হন। 

আগস্ট ২:
 ফ্রান্সের মানসিক ভাবে ভয়ানক বিধ্বস্ত থাকা মাইকেল মধুসুদনকে বিদ্যাসাগর ১,৫০০ টাকা পাঠান।

কলকাতা ট্রেনিং স্কুলের নতুন নামকরণ হয় 'হিন্দু মেট্রেপলিটন ইন্সটিটিউশন' এবং পরে খুব শীঘ্রই 'হিন্দু' উপসর্গকে ঝেড়ে ফেলে নাম হয় 'মেট্রেপলিটন ইন্সটিটিউশন'। 'শব্দমঞ্জরী' নামে প্রকাশিত হয় বাংলা অভিধান। বঙ্গীয় মাদক দ্রব্য পরিহার সমিতি গঠিত হয়। বিদ্যাসাগর ও আরো কিছু প্রভাবশালী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের এই সমিতিতে যোগদান এর ভিত্তি গঠন করে।

১৮৬৫:
জানুয়ারী ১১:
প্রাতিষ্ঠানিক রক্ষণাবেক্ষনের পরিদর্শক হিসেবে সরকারের কাছে বিদ্যাসাগর তাঁর প্রথম
প্রতিবেদন পেশ করেন।

আগস্ট ২৯ :
 দ্বিতীয় প্রতিবেদন পেশ করেন এবং পরবর্তীকালে পরিদর্শকের পদ থেকে ইস্তফা দেন। পিতা ঠাকুরদাস বন্দোপাধ্যায়ের বারাণসীতে ধর্মগৃহে যাত্রা করেন।

১৮৬৫-৭৩ঃ
মহারাজা মণীন্দ্র মোহন ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত পাথুরীয়াঘাটা বঙ্গ নাট্যালয়ের পরিচালন সমিতির সদস্য করা হয় বিদ্যাসাগরকে।

১৮৬৬:
 মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৮৬৬:
ফেব্রুয়ারী ১:
 ভারতীয় আইন পরিষদে বহু বিবাহ রোধে দ্বিতীয় আবেদন পাঠানো হয়।

মে-জুলাই: 
বাংলা ও ওড়িষা ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের শিকার হয়। বীরসিংহ ও তাঁর সংলগ্ন গ্রামে গড়ে ওঠে গন রান্নাঘর। সেখান থেকে দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের মুখে বিনা মূল্যে খাবার তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় বিদ্যাসাগরের নিজস্ব খরচায়। টানা ৩-৪ মাস এই দাতব্য রান্নাঘর চলে। ঐ দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষরা বিদ্যাসাগরকে 'দয়ার সাগর' খেতাব প্রদান করে।

ডিসেম্বর ৩ :
ছাত্রীদের শিক্ষা প্রদান করার জন্য সাধারণ মহিলা শিক্ষন বিদ্যালয় তৈরীর যে কমিটি গঠিত হয়েছিল বিদ্যাসাগর সেখান থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন। এই বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষয়িত্ৰী তৈরী করা।

ডিসেম্বর ১৬: 
বিদ্যাসাগরের অনুষঙ্গী হয়ে মিস্ মেরি কার্পেনটার, অ্যাটাকিমসশন ও বিদ্যালয় পরিদর্শক মিঃ উড্রোকে নিয়ে কলকাতার সন্নিকটে উত্তরপাড়ার জমিদার রাজা জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের প্রতিষ্ঠিত মহিলা বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। ফেরার পথে গাড়ী দুর্ঘটনায়  বিদ্যাসাগরের যকৃতে গুরুতর আঘাত লাগে। তাঁর হজম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় প্রায়। স্বাস্থ্য ক্রমশ ভেঙে পড়তে থাকে। যকৃতের এই চোট শেষ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

১৮৬৭:
জুলাই: 
বিদ্যাসাগরের বড় মেয়ে হেমলতার সাথে গোপাল সমাজপতির বিবাহ সম্পন্ন হয়।

জুলাই ২৬: 
নানা বৈঠকের মধ্যে নিয়ে বারংবার বিধবা পুর্নবিবাহের জন্য বিদ্যাসাগরের ঋণ পরিশোধের আবেদন ওঠে। কিন্তু বিদ্যাসাগর বিধবা পুনর্বিবাহের ঋণ পরিশোধের জন্য কোন রকম আর্থিক সহায়তা নিতে অস্বীকার করেন।

১৮৬৮:
জানুয়ারি ২১:
বিদ্যাসাগরের ঘনিষ্ঠ রামগোপাল ঘোষ এর মৃত্যু হয়।

মার্চ ২৮ : 
বর্ধমানের চকদীঘির সারদাপ্রসাদ সিনহা রায় এর মৃত্যু হয়, ইনিও বিদ্যাসাগরের বন্ধু ছিলেন।
ঘাটালের (জাহানাবাদ অঞ্চলের) কিছু ব্যবসায়ীদের উপর ইচ্ছেমত কর ঠিক করে দিচ্ছিল আয়কর দপ্তর। বিদ্যাসাগর ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে পদক্ষেপ করেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে বর্ধমান জেলার জেলাশাসক মিঃ হ্যারিসন বিদ্যাসাগরের অনুষঙ্গী হয়ে ব্যক্তিগত ভাবে ঘটনাটার অনুসন্ধান করেন এবং আইন অনুযায়ী তার প্রতিবিধান করেন।

'অক্ষয়মঞ্জুরী' (গল্প সংকলন) পুনর্মুদ্রিত হয় ও মূল সংখ্যার সাথে আরও সাতটি গল্প সংযুক্ত হয়। তাছাড়া ঐ বইয়ের অন্য অংশও প্রকাশিত হয়।

১৮৬৯:
জানুয়ারী: 
বেথুন মহিলা বিদ্যালয়ের সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দেন।

মার্চ:
বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগরের বাসভবন আগুনে পুড়ে যায়। মায়ের জন্য আলাদা বাড়ি ও প্রত্যেক ভাইয়ের জন্য পৃথক পৃথক গৃহ নির্মাণ করে দেন তিনি। নিজে মায়ের সাথেই একসাথে থাকতে শুরু করেন। এই সময় থেকেই তাঁর পরিবারের সদস্যরা আলাদা আলাদা হয়ে থাকতে শুরু করেন।

এপ্রিল :
সংস্কৃতে সম্পাদনা করে প্রকাশিত হয় কালিদাসের 'মেঘদূতম্'।

জুন-জুলাই : 
বিদ্যাসাগর বীরসিংহ গ্রামে প্রাথমিক পর্যায়ে বিধবা পুনর্বিবাহের ব্যাপারে সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে এর থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। পরে তাঁর মতামত অগ্রাহ্য করেই বিধবা পুনর্বিবাহ হতে থাকে। বিদ্যাসাগর তাঁর ছোট ভাইএর  ব্যবহারে মানসিক ভাবে ভীষণ আঘাত পান। ফলে পরবর্তীকালে তাঁর গ্রামের বাড়ি বীরসিংহে আর কোনদিন ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যান নি।

আগস্ট: 
বিধবা পুনর্বিবাহের সঙ্গে তাঁর সংযোগের কারণে তাকে যা ঋণ করতে হয়েছিল তা পরিশোধ করতে সংস্কৃত ছাপাখানা এক তৃতীয়াংশ ভাগ রামকৃষ্ণ ঘোষকে ও অপর এক-তৃতীয়াংশ ভাগ কালীচরণ ঘোষকে বিক্রি করে দেন সর্বমোট ৮,০০০ টাকার বিনিময়ে। 'গ্রন্থভাণ্ডার (বুক ডিপোজিটরি) নামে প্রকাশনার সংস্থাটি দান করে দেন কৃষ্ণনগরের ব্রজনাথ মুখোপাধ্যায়কে।

নভেম্বর :
সমস্ত আত্মীয়স্বজনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নির্জনে একাকী জীবন কাটানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে চিঠি লেখেন।

ডিসেম্বর ১৬ :
শেক্সপীয়ারের নাটক 'কমেডি অফ এরর' এর বাংলায় অনুবাদ হয়ে 'ভ্রান্তি বিলাস' নামে প্রকাশিত হয়। বিদ্যাসাগর এই বইএর অনুবাদটি ১৫ দিনে সম্পূর্ণ করেন। রাত্রে খেতে যাওয়ার আগে রোজ ১৫ মিনিট করে তিনি এই অনুবাদের লেখাটি লিখতেন।

১৮৭০:
জানুয়ারী:
 ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের উন্নতিসাধনের জন্য ভারতীয় সমিতি বা 'ইন্ডিয়ান এ্যাসোশিয়েসন অফ কালটিভেশন সায়েন্স' এ ১,০০০ টাকা দান করেন বিদ্যাসাগর।

ফেব্রুয়ারী ২০:
 বিদ্যাসাগরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডঃ দুর্গাচরণ বন্দোপাধ্যায়ের (সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় এর পিতা) মৃত্যু হয়।

আগস্ট:
 কৃষ্ণনগরের খানাকুলের শম্ভুচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের বিধবা কন্যা ভবসুন্দরীর সাথে বিদ্যাসাগরের পুত্র নারায়ণ চন্দ্রের বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিদ্যাসাগরের মা ভগবতী দেবী বারাণসীর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। 

নভেম্বর ১০ :
সংস্কৃতে সম্পাদনা করে প্রকাশিত হয় ' উত্তরাচরিত্রম্' ।

১৮৭১:
এপ্রিল ১২: 
বারাণসীতে বিদ্যাসাগরের মা ভগবতী দেবী প্রয়াত হন।

জুন:
সংস্কৃতে সম্পাদনা করে প্রকাশিত হয় কালীদাসের "অভিজ্ঞানশকুন্তলম্'।

আগস্ট ৮:
 বই আকারে প্রকাশিত হয় 'বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা- ইত্যবিষয়ক বিচার'।

১৮৭১-৭২:
স্থান পরিবর্তন করে বর্ধমানে কিছুদিন থাকার পরেও বিদ্যাসাগরের স্বাস্থ্যের উন্নতি লক্ষ্য করা গেল না। তিনি বিহারের কার্মাটরে একটি বাগান বাড়ি কেনেন ও সেখানে দিন নির্বাহ করতে থাকেন। সেই সময় তিনি সেখানে কিছু বিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

জানুয়ারী ২৫: 
মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশনের নতুন পরিচালন সমিতি গঠন হয়। প্রখ্যাত বিচারপতি দ্বারকানাথ মিত্র, হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক কৃষ্ণদাস পাল ও স্বয়ং  বিদ্যাসাগর নতুন সমিতির সদস্য হিসাবে থাকেন।

মে ২৮ :
দীনবন্ধু মিত্র তাঁর কাব্য সংক্রান্ত কাজ 'দ্বাদশ কবিতা' বিদ্যাসাগরকে উৎসর্গ করেন।

 জুন ১৫৪: 
হিন্দু বিধবাদের সুবিধার্থে পারিবারিক বার্ষিক তহবিল গঠন করেন।

জুন-জুলাই : 
বিদ্যাসাগরের দ্বিতীয় কন্যা কুমুদিনীর সাথে অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিবাহ সম্পন্ন হয়।
মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশনের মানোন্নতি ঘটানো ও কলা বিভাগে ছাত্রদের প্রথম ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রশিক্ষকের ব্যাপারে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন পত্র জমা দেওয়া হয়। ঐ বছরই প্রথম এফ. এ. পরীক্ষার প্রচলন হয়। মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন কলেজ দ্বিতীয় শ্রেণীর কলেজে উন্নীত হয়।

১৮৭৩ :
জানুযারী :
মেট্রোপলিটন কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

ফেব্রুয়ারী: 
বিদ্যাসাগরের বড় মেয়ের স্বামী গোপালচন্দ্র সমাজপতির বারাণসীতে মৃত্যু হয়।

এপ্রিল ২: 
'বহু বিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা- ইত্যাবিষয়ক বিচার'- নামক বহুবিবাহের সমালোচনা মূলক বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। সংস্কৃত শ্লোকের বাংলায় অনুবাদ প্রকাশিত হয় "বামনাখ্যাম্" নামে।

আগস্ট ১৬ : 
মাইকেল মধুসূদনের নাটক 'শর্মিষ্ঠা'র উপস্থাপনার মধ্যে নিয়ে বাংলা রঙ্গমঞ্চের উদ্বোধন। নাটকে মহিলা চরিত্রে বারবনিতাদের অভিনয়ের প্রতিবাদ হিসেবে বাংলার রঙ্গমঞ্চের পরিচালন সমিতির সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দেন বিদ্যাসাগর। এই পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালন সমিতির পদের শূন্যতা নিয়ে বিতর্ক ওঠে।

১৮৭৪ :
জানুয়ারী ২৮:
 বিদ্যাসাগর এশিয়াটিক সোসাইটির যাদুঘর দেখতে যান। কিন্তু দেশীয় পোশাক-আশাক ও
চপ্পল পরিহিত অবস্থায় তাঁর প্রবেশাধিকার প্রত্যাখ্যান করা হয়। তিনি সরাসরি মূল ফটক থেকেই ফিরে আসেন। 

ফেব্রুয়ারী ২৫:
 বিদ্যাসাগরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিচারপতি দ্বারকানাথ মিত্র পরলোকগমন করেন।
শ্যামপুকুরে মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশনের শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যাসাগর  পুত্র নারায়ণ চন্দ্রকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেন ও সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করেন।

অক্টোবর-নভেম্বর :
স্বাস্থ্যোন্নতির জন্য কানপুরে বসবাস করতে যান। কাশী (বারাণসী), লক্ষ্ণৌ ও এলাহাবাদের প্রয়াগ প্রদর্শন করেন।
বর্ধমানের মহারাজা মহতাবচাঁদ  বাহাদুরের মৃত্যু হয়। তিনি ছিলেন বিদ্যাসাগরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বন্ধু, যিনি একাধারে বিশ্বাসী ও অনুগত আইনজীবী ও বিদ্যাসাগরের সমস্ত আন্দোলনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষকও।

১৮৭৫:
মে ৩১:
 বিদ্যাসাগর তার ইচ্ছাপত্র তৈরী করেন। সেই ইচ্ছাপত্রের শেষ পংক্তিতে তিনি পুত্র নারায়ণচন্দ্রকে তার উত্তরাধিকারী হিসেবে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন ও সংগত কারণ হিসেবে পুত্রের বিপথগামীতাকে উল্লেখ করেন। কিছু লোক আছে যাঁরা বিশ্বাস করেন পুর্বে বিদ্যাসাগর অন্তত আরও দুটি তাঁর ইচ্ছাপত্র তৈরী করেছিলেন।

জুলাই ১৩ :
বিদ্যাসাগরের তৃতীয় কন্যা বিনোদিনীর সাথে ফরিদপুরের সূর্যকুমার অধিকারীর বিবাহ সম্পূর্ণ হয়।
ম্যালেরিয়া জ্বরের মহামারীতে বীরসিংহ গ্রামে ছেলেদের ও মেয়েদের বিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যাসাগর যথেষ্ট পীড়িত ও বিষণ্ন হয়ে পড়েন। দাতব্য চিকিৎসালয়ও তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা তখনও চলছিল। 

১৮৭৬ : 
জানুয়ারী : 
প্রখ্যাত রাষ্ট্রনায়ক ও পরবর্তীকালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় কে মার্সিক ২০০ টাকা বেতনে মেট্রোপলিটন মহাবিদ্যালয়ের (কলেজ) ইংরেজী সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

জানুযারী ১৫ : 
 ভারতীয় বিজ্ঞান অনুশীলন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং রাজ্যপাল রিচার্ড টেম্পিল এর সভাপতিত্বে বৈঠক ডাকা হয়। ছয়জন অছি সদস্যদের মধ্যে একজন হিসেবে মনোনীত হন বিদ্যাসাগর। এই সংঘ ২১০ নং বৌবাজার স্ট্রীটে ঘর ভাড়া নিয়ে তার পথ চলা শুরু করে। পরবর্তীকালে ১৯৫৪ সালে যাদবপুরে ভারতীয় বিজ্ঞান অনুশীলন সংঘের নিজস্ব ভবনে তা স্থানান্তর হয়।

ফেব্রুয়ারী: 
বিদ্যাসাগরের তৃতীয় জামাতা সূর্যকুমার অধিকারীর মেট্রোপলিটন মহাবিদ্যালয়ের একাধারে অধ্যক্ষ ও সম্পাদক পদে নিয়োগ হয়। বিভিন্ন মতানুযায়ী সূর্যকুমার অধিকারী ১৮৭৪ সালে শুধু অধ্যক্ষ হিসেবেই নিযুক্ত হন।

ফেব্রুয়ারী ২১ : 
মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে তাঁর সাথে হিন্দু পরিবারের বার্ষিক তহবিল নিয়ে যোগাযোগ ছিন্ন হয়। কলকাতার বাদুড়বাগানে (বর্তমানে বিদ্যাসাগর স্ট্রীট) বসবাসের জন্য বাড়ি নির্মাণ করেন।

এপ্রিল ১২ : 
 পিতা ঠাকুরদাস বন্দোপাধ্যায় বারাণসীতে মৃত্যু বরণ করেন। বিদ্যাসাগর পিতার মৃত্যুশয্যায় উপস্থিত ছিলেন।

আগস্ট ১-২ :
 বিদ্যাসাগর বর্ধমান আদালতে উপস্থিত হয়ে তাঁর পুরোনো বন্ধু চাকদিঘির সারদাপ্রসাদ সিংহ রায় এর বিধবা পত্নী রাজেশ্বরী দেবীর সপক্ষে সাক্ষী দেন। নকল ইচ্ছেপত্রের হাত থেকে রাজেশ্বরী দেবীকে রক্ষা করেন ও তৎসহ তাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়াটাও আটকায়।

১৮৭৭ :
জানুয়ারী ১:
 দিল্লী দরবার (দিল্লী জনসভা) উপলক্ষে বাংলার রাজ্যপাল রিচার্ড টেম্পল বিদ্যাসাগরকে হিন্দু সম্প্রদায়ের সামাজিক সংস্কার ও বিধবা পুনর্বিবাহের মাধ্যমে সমাজের প্রগতিশীল অংশে সংস্কারের আলো সঞ্চারের জন্য শংসাপত্রের মাধ্যমে মর্যাদা প্রদান করেন। ভারতের রাষ্ট্রপ্রধানের নির্দেশে রাণী ভিক্টোরিয়ার নামে এই শংসাপত্র জারি হয়।
বিদ্যাসাগর কলকাতায় তার বাদুড়বাগানের বসতবাটিতে বসবাস করতে থাকেন। 

এপ্রিল-মে : 
 বিদ্যাসাগরের সর্বকনিষ্ঠ কন্যা শরৎকুমারীর সাথে কার্তিকচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিবাহ সম্পন্ন হয়।

১৮৭৯ :
মেট্রোপলিটন মহাবিদ্যালয় স্নাতক স্তরের পড়ানোর অনুমতি মঞ্জুর হয় ও স্নাতক স্তরের পড়াশুনোর প্রচলন হয়। ফলে এই মহাবিদ্যালয় পূর্বের দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণীর মহাবিদ্যালয় উন্নীত হয়। 

১৮৮০ : 
বিদ্যাসাগর সরকার দ্বারা 'সি. আই. আই' খেতাবে সম্মানিত ও ভূষিত হন। তিনি সবসময় সরকারের থেকে খেতাবসর্বস্য সম্মান গ্রহণে বিমুখ ছিলেন। অনেক প্ররোচনা সত্ত্বেও তিনি খেতাব গ্রহণে ইচ্ছুক ছিলেন না। যদিও শেষ পর্যন্ত সম্মান গ্রহণে সম্মত হন; কিন্তু শিল্পীর দরবারে সম্মান প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি অনুপস্থিত থেকে সরকারের কাছ থেকে সনদ বা শংসাপত্র গ্রহণে বিরত থাকেন। শংসাপত্রে অন্তর্লিখিত কথা ছিল মোটামুটি ভাবে - "ভারত সরকারের নির্দেশে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে মর্যাদাপূর্ণ সাথী হিসেবে সম্মান প্রদান করা হল"।

১৮৮২:
আগস্ট ৫ : 
বিদ্যাসাগর তাঁর বাদুড়বাগানে বসত বাড়িতে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসকে আমন্ত্রণ জানান। মেট্রোপলিটন কলেজে আইন শিক্ষার প্রচলন হয় (মতান্তরে ১৮৮৪)।

১৮৮৩ :
পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত সদস্য হন। সংস্কৃতে সম্পাদিত হয়ে প্রকাশিত হয় 'হর্ষচরিতম্'। 

১৮৮৪ :
বেথুন কলেজের কাদম্বরী বসু প্রথম মহিলা ছাত্রী হিসেবে কলা বিভাগে স্নাতকত্তোর (এম. এ.) পাশ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিদ্যাসাগর ভীষন রকম খুশী হয়ে তার গুণের সমাদর করে কাদম্বরী বসুকে শেক্সপীয়ারের সম্পূর্ণ সংগ্রহ উপহার দেন।

নভেম্বর: 
হাওয়া বদলের জন্য কানপুরে যান ও কয়েকদিন থাকেন।

১৮৮৫ :
জানুয়ারী ১: 
সংস্কৃত ছাপাখানার তাঁর শেষ এক তৃতীয়াংশ অংশীদারীত্ব  ৫,০০০ টাকার বিনিময়ে রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিক্রি করে দেন।
মেট্রোপলিটন কলেজে কলাবিভাগের স্নাতক (বি.এ.) পর্যায়ের অধ্যয়ন ক্রম শুরু হয়, শংকর ঘোষ লেনে জমি কেনেন মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন ও কলেজের জন্য। মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউটের বৌবাজারে শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৮৬:
জানুয়ারী : 
কলকাতা সুকিয়া স্ট্রীটে 'দ্য ক্যালকাটা লাইব্রেরী' (কলকাতা গ্রন্থাগার) নামে ও শৈলীতে একটি বইয়ের দোকান খোলা হয়।

১৮৮৭ :
জানুযারী : মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন ও মহাবিদ্যালয় শঙ্কর ঘোষ লেনে তাদের নিজস্ব ভবনে সক্রিয় হয়ে ওঠে। মেট্রোপলিটন বিদ্যালয়ের বড়বাজার শাখার উদ্ঘাটন হয়। ঐ মাসেই ভারত সরকার বিদ্যাসাগরকে 'মহামহোপাধ্যায়' খেতাব অর্পণ করার প্রস্তাব দেন। কিছু অসুস্থতার অজুহাতে তিনি ঐ বিভূষিতকরণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান  করেন।

১৮৮৮ :
আগস্ট ১৩:
বিদ্যাসাগরের স্ত্রী দীনময়ী দেবীর মৃত্যু হয়।

সেপ্টেম্বর :
মেট্রোপলিটন মহাবিদ্যালয়ের পদ থেকে জামাতা সূর্যকুমারকে অপসারণ করা হয়। বৃহত্তর সর্বোচ্চ স্বার্থে শিক্ষাবিষয়ক  প্রতিষ্ঠানের পোষকতা করার জন্য। 'অক্ষয়মঞ্জরী'র (দ্বিতীয় ভাগ), কৃত্তিবাসী রামায়ণের নির্বাচিত স্তবক  নিষ্কৃতিলাভপ্রয়াস' ও 'পদ্যসংগ্রহ' (প্রথম ভাগ) নামে বাংলায় প্রকাশিত হয়।

১৮৮৯ :
প্রথমদিকে বিদ্যাসাগরের কিছু সাহিত্যমূলক সংস্কৃত লেখা সমগ্র "সংস্কৃত রচনা" নামে প্রকাশিত হয়।

১৮৯০ :
মায়ের মৃত্যুর পর বীরসিংহ গ্রামের বিদ্যালয়টি ভগবতী বিদ্যালয় নামে নতুন করে পুনরুজ্জীবন লাভ করে। সংস্কৃতের কিছু অসামান্য কবিতা সংগ্রহ "শ্লোক মঞ্জরী" নামে ও ভারতচন্দ্র রায়ের অন্নদামঙ্গলের কিছু কবিতা সংগ্রহ "পদ্মাসমগ্র"  (দ্বিতীয় ভাগ) প্রকাশিত হয়।

ফেব্রুয়ারী ১৬:
ভারতীয় দণ্ডবিধির সংশোধনীর মাধ্যমে আইন সভায় একটি প্রস্তাবিত আইনের খসড়া উপস্থাপিত করা হয়। মহিলাদের যৌন সহবাসের ক্ষেত্রে বয়সভিত্তিক সম্মতির ব্যাপারে অপরাধী দন্ডবিধি নির্দিষ্ট কিছু বিভাগের সাথে সম্পর্কিত। এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে আইন প্রণয়নের জন্য সরকার বিদ্যাসাগরের মতামত চায়। বিদ্যাসাগর আক্ষরিক অর্থেই ঐ আইনের খসড়াকে সমর্থন না করে নিজস্ব মতামত জানিয়ে সরকারকে একটি টিকা পাঠান। বিদ্যাসাগরের জ্ঞানের সুপারিশ ছাড়াই খসড়াটি আইন হিসেবে পাশ হয়।

জুলাই ২৯:
বাদুরবাগানে নিজের বাসভবনে রাত্রি দুটো বেজে আঠারো মিনিটে ৭০ বছর ১০ মাস ও ৩ দিন বয়সে এই মহান আত্মা তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। 
ডাক্তাররা পাকস্থলী ক্যান্সারকে তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে সন্দেহ করেন।
----------------------------------------------

পন্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর সমন্ধে তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণামূলক কাজে আগ্রহী ব্যক্তিদের সুবিধার্থে কিছু বই এর অভিসম্বন্ধ  নিম্নে দেওয়া হলো। পাঠক ও গবেষক বৃন্দের মতামত জানতে বিশেষ ভাবে আগ্রহী।

১.অঞ্জলি বসু (সম্পাদিত) ; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ১৯৭৬

২.অমরেন্দ্রকুমার ঘোষ ; যুগপুরুষ বিদ্যাসাগর : তুলিকলম, কলকাতা, ১৯৭৩

৩.অমূল্যকৃষ্ণ ঘোষ ; বিদ্যাসাগর : দ্বিতীয় সংস্করণ, এম সি সরকার, কলকাতা, ১৯১৭

৪.অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ; বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগর : মণ্ডল বুক হাউস, কলকাতা, ১৯৭০

৫.ইন্দ্রমিত্র ; করুণাসাগর বিদ্যাসাগর : আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৬৬

৬.গোপাল হালদার (সম্পাদিত) ; বিদ্যাসাগর রচনা সম্ভার (তিন খণ্ডে) : পশ্চিমবঙ্গ নিরুক্ষরতা দূরীকরণ সমিতি, কলকাতা, ১৯৭৪-৭৬

৭.বদরুদ্দীন উমর ; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালি সমাজ : দ্বিতীয় সংস্করণ, চিরায়ত, কলকাতা, ১৯৮২

৮.বিনয় ঘোষ ; বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ : বেঙ্গল পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ

৯.বিনয় ঘোষ ; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : অনুবাদক অনিতা বসু, তথ্য ও বেতার মন্ত্রক, নয়াদিল্লি, ১৯৭৫

১০.ব্রজেন্দ্রকুমার দে ; করুণাসিন্ধু বিদ্যাসাগর : মণ্ডল অ্যান্ড সন্স, কলকাতা, ১৯৭০

১১.মহম্মদ আবুল হায় আনিসুজ্জামন ; বিদ্যাসাগর রচনা সংগ্রহ : স্টুডেন্টস ওয়েজ, ঢাকা, ১৯৬৮

১২.যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত ; বিদ্যাসাগর : পঞ্চম সংস্করণ, কলকাতা, ১৯৪১

১৩.যোগীন্দ্রনাথ সরকার ; বিদ্যাসাগর : ১৯০৪

১৪.রজনীকান্ত গুপ্ত ; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : ১৮৯৩

১৫.রমাকান্ত চক্রবর্তী (সম্পাদিত) ; শতবর্ষ স্মরণিকা : বিদ্যাসাগর কলেজ, ১৮৭২-১৯৭২ : বিদ্যাসাগর কলেজ, ১৯৭২

১৬.রমেশচন্দ্র মজুমদার ; বিদ্যাসাগর : বাংলা গদ্যের সূচনা ও ভারতের নারী প্রগতি : জেনারেল প্রিন্টার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৩৭৬ বঙ্গাব্দ

১৭.রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ; বিদ্যাসাগর-চরিত : বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা

১৮.রাধারমণ মিত্র ; কলিকাতায় বিদ্যাসাগর : জিজ্ঞাসা, কলিকাতা, ১৯৪২

১৯.রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী ; চরিত্র কথা : কলকাতা, ১৯১৩

২০.শঙ্করীপ্রসাদ বসু ; রসসাগর বিদ্যাসাগর : দ্বিতীয় সংস্করণ, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ১৯৯২

২১.শঙ্খ ঘোষ ও দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় (সম্পাদিত) ; বিদ্যাসাগর : ওরিয়েন্ট, কলকাতা

২২.শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন ; বিদ্যাসাগর চরিত : কলকাতা, ১২৯৪ বঙ্গাব্দ

২৩.শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন ; বিদ্যাসাগর জীবনচরিত : কলকাতা

২৪.শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন ; বিদ্যাসাগর চরিত ও ভ্রমণিরাস : চিরায়ত, কলকাতা, ১৯৯২

২৫.শশিভূষণ বিদ্যালঙ্কার ; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : জীবনীকোষ, ভারতীয় ঐতিহাসিক, কলকাতা, ১৯৩৬

২৬.শামসুজ্জামান মান ও সেলিম হোসেন ; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : চরিতাভিধান : বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৮৫

২৭.সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাস (সম্পাদিত) ; বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (তিন খণ্ডে) : বিদ্যাসাগর স্মৃতি সংরক্ষণ সমিতি, কলকাতা, ১৩৪৪-৪৬ বঙ্গাব্দ

২৮.সন্তোষকুমার অধিকারী ; বিদ্যাসাগর জীবনপঞ্জি : সাহিত্যিকা, কলকাতা, ১৯৯২

২৯.সন্তোষকুমার অধিকারী ; আধুনিক মানসিকতা ও বিদ্যাসাগর : বিদ্যাসাগর রিসার্চ সেন্টার, কলকাতা, ১৯৮৪

৩০.হরিসাধন গোস্বামী ; মার্কসীয় দৃষ্টিতে বিদ্যাসাগর : ভারতী বুক স্টল, কলকাতা, ১৯৮৮

৩১.পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকার বিদ্যাসাগর সংখ্যা, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৯৪.

৩২. অনন্য বিদ্যাসাগর, শ্রী অনুনয় চট্টোপাধ্যায়।

৩৩. স্বামী বিবেকানন্দের বানী ও রচনা, নবম খণ্ড, উদ্বোধন, ১৯৭৩।

৩৪. জীবন সন্ধানী বিদ্যাসাগর, রামরঞ্জন রায়।

৩৫. পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকা, বিদ্যাসাগর সংখ্যা, ১৪০১ বঙ্গাব্দ।

৩৬. ঊনবিংশ শতাব্দীর যুক্তিবাদী ও বিদ্যাসাগর, শ্রী গৌতম চট্টোপাধ্যায়।

৩৭. বিদ্যাসাগর জীবনচরিত ও ভ্রমনিরাস, শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন, চিরায়ত প্রকাশন, ২০১৪।

৩৮. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙ্গালী সমাজ, বদরুদ্দীন উমর, সুবর্ণ, ২০১৬।

৩৯. বিদ্যাসাগর, বিনয় ঘোষ।

৪০. ইন্টারনেট।

৪১. বিদ্যাসাগর রচনাবলী ( ১ম,২য় ) - ( সাহিত্যম্ ) ২০০/- প্রতি খন্ড

৪২. Isvar Chandra Vidyasagar - Subol Chandra Mitra ( Parul Prakashani ) 395/-

৪৩. বিদ্যাসাগর - বিহারীলাল সরকার ( নবপত্র প্রকাশন ) ৪০০/-

৪৪. বিদ্যাসাগর - শ্রী চন্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ( কলেজ স্ট্রিট পাবলিকেশন‌ ) ৫০০/-

৪৫. বিদ্যাসাগর জীবনচরিত ও ভ্রমনিরাশ - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন ( চিরায়ত প্রকাশন ) ১৬০/-

৪৬. করুণাসাগর বিদ্যাসাগর - ইন্দ্রমিত্র ( আনন্দ পাবলিশার্স ) ৬০০/-

৪৭. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালী সমাজ - বদরুদ্দীন উমর( চিরায়ত প্রকাশন ) ৮০/-

৪৮. বিদ্যাসাগর ও বাঙালী সমাজ - বিনয় ঘোষ ( Orient Blackswan ) ৫৯৫/-

৪৯. বিদ্যাসাগর - অমিয় কুমার সামন্ত ( Progressive Publishers ) ৩৫০/-

৫০. বিদ্যাসাগর ও অন্যান্য ব্যক্তিত্ব - কোরক সংকলন ( কোরক ) ১৫০/-

৫১. বিদ্যাসাগর : নানা প্রসঙ্গ - রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য ( চিরায়ত প্রকাশন ) ২২০/-

৫২. শ্রেণি দৃষ্টিকোণে বিদ্যাসাগর - ড. দিলীপ কুমার দে ( দিগন্ত পাবলিকেশন,ব্যারাকপুর ) ৪০০/-

৫৩. সমকালে বিদ্যাসাগর - স্বপন বসু - ( বাংলার মুখ প্রকাশন ) ৩৫০/-

৫৪. বিদ্যার ঈশ্বর বিদ্যাসাগর - অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য ( আশাদীপ ) ২০০/-

৫৫. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর : ব্যাক্তি ও ব্যাক্তিত্ব - অর্ণব নাগ ( অক্ষর প্রকাশনী ) ৪০০/-

৫৬. জন্মদ্বিশতবর্ষে বিদ্যাসাগর বিশেষ সংখ্যা -জানুয়ারি ২০২০ ( সংবর্তক ) ৩৫০/-

৫৭. দ্বিশতবর্ষে ঈশ্বরচন্দ্র - কোরক সাহিত্য পত্রিকা - শারদ ২০১৯ ( কোরক ) ১৭৫/-

৫৮. ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ - নিখিল সুর ( আনন্দ পাবলিশার্স ) ২৫০/-

Post a Comment

1 Comments