জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৪৮

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৪৮
সম্পাদকীয়,
১৫০ তম সংখ্যায় পৌঁছাতে আমাদের তিন তিনটে বছর পেরোতে হয়েছে। এই তিন বছরে আমার ছোট্ট বন্ধুরা কত বড়ো হয়ে গেছো আর আমরা বড়োরা আরো বয়স্ক হয়েছি। এর মধ্যে আমরা ছোটোদের বন্ধু নারায়ণ দেবনাথ কে হারিয়েছি। কোভিড আমাদের অনেক প্রিয়জনকে কেড়ে নিয়েছে। আর এই সদ্য আমরা হারিয়েছি ছড়াকবি দীপ মুখোপাধ্যায়কে। তিনি আমাদের ছোটোবেলার ৪৪ তম সংখ্যায় প্রথম লিখেছিলেন। পর পর দু বছর উৎসব সংখ্যায় গুচ্ছ ছড়া লিখেছিলেন তোমাদের মনে আছে নিশ্চয়ই? এবারে বিশ্বনাথ জেঠু তাঁকে স্মরণ করে একটি ছড়া লিখে পাঠিয়েছে। বর্ষাকাল মানেই ছড়া আর বৃষ্টির ছড়া মানেই ঝম ঝম, টাপুর টুপুর, ঝর ঝর, নিয়ে হাজির দীপঙ্কর আঙ্কেল। বর্ষা মানেই গল্প।  কিসের?  হয় ভূতের নয় বাঘের। শ্রীকান্ত আঙ্কেল বাঘের গল্প নিয়ে হাজির।  পয়ারে ফেল। আনিসা ওদের স্কুলের শিক্ষক দিবস নিয়ে লিখেছে। মানালীর মন খারাপ নাকি? এমন দুঃখু দুঃখু ছবি পাঠিয়েছো?আয়ুস্মিতা ঘুড়ির ছবি পাঠিয়েছে, কারণ সামনেই বিশ্বকর্মা পুজো। কি মজা!দোলনচাঁপা আন্টি গণতন্ত্র দিবসের কথা বলেছে আর সুদীপ্তা দিদি পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখে পাঠিয়েছে। এই সুদীপ্তা দিদিই তো লাচুঙের নেকড়ের প্রচ্ছদ এঁকেছে সেটা জানোতো? আর সবশেষে চুপি চুপি টুংকুড়ির বন্ধু ম্যাও টাকে দেখে নিই ঋপণ আঙ্কেলের তোলা ছবিতে। ম্যাওটা রেগে আছে তাই ওকে দীপ আঙ্কেলের একটা ছড়া শোনাবো। দেখি ওর রাগ ভাঙে কিনা।  -- মৌসুমী ঘোষ


রাম রাবণ
দীপ মুখোপাধ্যায়

যেই না ওকে প্রশ্ন করা
মুখ শুকিয়ে আমশি তার
কান্ড দেখ সেই ছেলেটার
নাম শোনেনি রাম -সীতার।

গোদাবরীর পূর্বতটে 
সত্যি ছিল ভর দূষণ?
দাপিয়ে ছিলেন জংলাবনে
শূর্পনখা খর -দুষণ?

এক জটায়ু পক্ষী সেদিন
ধমকে ছিলেন রাবণকে
ফল পাবি তুই করলি যখন
এই অপমান মা-বোনকে।

করতে পালন প্রতিজ্ঞা রাম
বলেন কেমন বাক্য সে?
রাম,লক্ষণ,বানরসেনা
পিটিয়ে মারে রাক্ষসে?

কীসের জন্য বিখ্যাত আজ
লংকাদেশের আমড়া বন
বাল্মীকি তাঁর রামায়নে
ঠিক এঁকেছেন রাম-রাবণ?


(না ফেরার দেশে দীপ মুখোপাধ্যায়...)

নিভে গেল দীপ
বিশ্বনাথ চৌধুরী

শিশুদের ভাষা বুঝতে তুমি
বলার কত ছিল বাকি
কত পথ হাঁটার ছিল
যাওয়ার সময় এটা নাকি?

ছন্দ নিয়ে করতে কত খেলা
বৃদ্ধ শিশু মুগ্ধ হতো তাতে
তোমার লেখা ছড়া পড়ার পর
সকলে খুব আনন্দেতে মাতে।

নম্র স্বভাব খেয়াল খুশিমতো
জীবনটাকে সাজিয়ে নিয়েছিলে
কিভাবে যে চলতে হয় সব
কাছে দূরের মানুষ সবাই মিলে।

মন থেকে হারিও না কখনও
যতই এখন হলে দূরের তারা
তোমাকে কেউ ভুলবে না জানি
তোমায় নিয়ে থাকবে মাতোয়ারা।

আয়ুস্মিতা সামন্ত। নার্সারী।
সরস্বতী শিশু মন্দির। মেদিনীপুর

বৃষ্টি পড়ে
দীপঙ্কর বেরা

ঐ দেখো মা আকাশ জুড়ে 
মেঘ করেছে কালো
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর 
শুনতে লাগে ভালো, 
আজকে আমি পড়ব না মা 
দেখব বৃষ্টি খেলা
টগবগিয়ে ঝমঝমিয়ে 
পড়ছে সারা বেলা।

কেমন করে ঝরঝরিয়ে 
দেখো বৃষ্টি পড়ে
টিপটিপ করে পড়বে যখন 
থাকব না মা ঘরে, 
উঠোনে জল বেশ জমেছে 
ভিজছে গাছের পাতা
একটা নৌকা বানাব মা 
ছিঁড়ে আমার খাতা।
ধারাবাহিক উপন্যাস
লাচুঙের নেকড়ে
শ্রীকান্ত অধিকারী

পর্ব  ২৭

সেবার যখন কাশ্মীর বেড়াতে গেছিল, পহেলগাঁও থেকে জিপে করে বেতাব ভ্যালি হয়ে চন্দনওয়াড়িতে পোঁছেছে তখন রাত হয়ে গাছে। আঁকাবাঁকা রাস্তায় ওপরের দিকে উঠতে উঠতে আরো রাত গভীর। তবু শেষ অবধি চন্দনওয়ারি পৌঁছেছিল, মা আর আন্টি ওই রাতেই পাথুরে মাটি চেঁছে এনেছিল। এখানেই নাকি শেষ গাড়ি পথ। তারপর কাগজপত্র চেক করে হাঁটা পথ অমরনাথের। শুরু অমরনাথ যাত্রা। মা’রা যখন ঐশ্বরীয় ভাবে গদগদ সে তখন আশপাশের জমাট পাথুরে অন্ধকার দেখে মায়ের খুব কাছেই সিঁটিয়ে ছিল, এমনিতে সে ভীতু নয়। না হলে সে গাড়ি থেকে নেমেই সামনে পুল পেরিয়ে একটা অজানা আনন্দ উপভোগ করার জন্য হাঁটা লাগায়! অবশ্য তখনো পাথুরে রাস্তার দু পাশে ছোট বড় দোকান খোলা ছিল। তাদের ভেতর থেকে টিম টিম করে লম্ফ জাতীয় আলো জ্বলছিল। হঠাৎ সে নজর করে সামনের ঘন চাপ অন্ধকার থেকে তীক্ষ্ণ আলো বেরিয়ে আসছে। বিষ্ময়ে এই আলোর উৎস খুঁজতে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল অনেকক্ষণ। কিছুক্ষণেই দেখে এই আলো একটা নয় অনেকগুলো। কিছু দূর অন্তর অন্তর। এও দেখে, মাঝে মাঝে আলোগুলো দিপদিপ করে জ্বলছে নিবছে। আবার সরে সরে যাচ্ছে। ততক্ষণে সে বুঝে ফেলেছে এই অন্ধকারের পেছনে আরো জমাট অন্ধকার রয়েছে। স্থির। ঘন। সেই অন্ধকারের জগৎ  থেকে বেরিয়ে আসছে তীক্ষ্ণ আলো অথবা আগুনের ফুলকি। একবার মনে হয় খুব কাছে আবার অনেক দূরে। অনেক অনেক। সবাই চলমান।
সে যখন এই অদ্ভুত দৃশ্যগুলোকে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না কিংবা স্থবিরের মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বুকের ভেতর বা মাথার ভেতর ঢুকিয়ে নিচ্ছে আর ভয় পাচ্ছে এবং রন্ধ্রে রন্ধ্রে তার প্রভাব পড়ছে তখনই পেছন থেকে ওর বাবা ওর  হাতটা চেপে ধরে।  না হলে হয়তো ওই ভাবেই সেই অমোঘ টানে ঐ অদ্ভুত দৃশ্যের দিকে চেয়েই থাকত। আর ভেবে ভেবে কুল কিনারা করতে পারত না। 
গাড়িটা যখন সেই দুইদিক পাথরে চাপা অন্ধকারে জোরালো হেড লাইট জ্বালিয়ে সামনের দিকে সরীসৃপের মত দ্রুত গতিতে রাস্তা কেটে নীচে নেমে যাচ্ছে আর মাঝে মাঝে এপাশে ওপাশে  হেলে হেলে পড়ছে ঠিক তখনই ড্রাইভারের পাশে থেকে বলে, কাকু ওই যে ওই ঘুরঘুটে অন্ধকারের মাঝে ছোট ছোট আলোগুলো নড়ে বেড়াচ্ছে ওগুলো কী? 
--‘চুপ হো যাও বাবু। মত চিল্লাও। মাইজি ইসকো রোকো।’-এক অজানা ভয়ঙ্কর কিছু একটা বুঝিয়ে ড্রাইভার কাকু সাপের মত হিসহিসিয়ে বলে, -‘উ সব শিব আছে। শিব।’ তারপর যা বলল  সে বুঝতে না পারলেও বাবা বলে দেয়,তার সারমর্ম এই যে,মাথায় সামনের দিকে লাইট লাগানো  হেলমেটের মত কিছু একটা পরে ওরা ভেড়া খোঁজে। সারা রাত।পাহাড়ের আনাচে কানাচে। ওর মনে পড়ে গেল ওরা যখন চন্দনওয়াড়ির রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল ঠিক একই রকম কিছু মাথায় পরে গোটা তিনেক লোক ফিরে যাচ্ছিল নীচের দিকে।   
অদ্ভুত একটা শিহরণ খেলে যায় রামসিঙের শরীরে। পাশেই শাদুলমামা একটা পাইন গাছের আড়ালে ছিল। খুব আস্তে আস্তে বলে, কী হলরে  এর মধ্যেই ভয় পেয়ে গেলি। দূর বোকা ওগুলো হলো আলেয়া! -মিথেনের আগুন। কখনো কখনো গাছের পাতা এক জায়গায় বহুদিন গাদ হয়ে থাকলে তারপর পচে গিয়ে এক সময় মিথেন তৈরি হয় আর হঠাৎ এমনি এমনি এক সময় আগুন ধরে যায়। ভূতের আগুন! কি বলিস! 
ছোট মামা ওই দেখো। 
দেখতে দেখতে আগুনের পিণ্ডগুলো ধীরে ধীরে ওদের সামনের দিকে আসতে থাকে। কাছে আরো কাছে। জোড়া জোড়া। রামসি ছোটমামার হাতটা পিছন দিকে বাড়াতেই দেখে পিছনে  ছোটমামা নেই।--ছোট মামা? শাদুল মা-মা? রামসি চাপা গলায় ডাকে।  
--ভয় পাস না। আমি এখানে। 
এত অন্ধকার যে পাশের লোককেও দেখতে পাওয়া যায় না। শুধু অনুভবে কথার উৎস ধরে বুঝতে পারে ওর মামা পাশেই একটা পাইন গাছের ওপরে। ওখান থেকেই চাপা স্বরে বলে, হাঁধা কোথাকার! চট পট গাছে উঠে পর। দেখছিস না ওগুলো সব হয় ব্যাঘ্র কিংবা ভল্লুক। মানুষের গন্ধ  পেয়েছে, তাই দল বেঁধে আমাদের শিকার করতে আসছে। একটা বাঘের পাঞ্জার ওজন কত জানিস?–বাইশ থেকে পঁচিশ কেজি। একবার পেটে চালাতে পারলে নাড়িভুঁড়িগুলো লম্বা হয়ে তোর মায়ের তৈরি ম্যাগিস্যুপের মত ঝুলবে। এই বেলা উঠে পর।  
মায়ের কথা মনে হলেও তাৎক্ষণিক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে বুকের মধ্যে চাপা দম আটকানো কষ্টকে পাত্তা না দিয়ে ছোটমামার মত সামনের পাইন গাছে উঠতে গিয়ে আর উঠতে পারে না। তার আগেই সেই আগুনের গোলাগুলো ওর একেবারে কাছে এসে পড়ে প্রায়।  আর সে উঠতে পারে না। বরঞ্চ ক্ষণিকের জন্য ভেবে নেয় এবার পালা সাঙ্গ। পায়ের কাছে খণ্ড খণ্ড পাথরে ওর পায়ের জায়গা সরে যায়। রামসি নিমেষে দেখার চেষ্টা করে কারা এরা? বাঘ! হায়না! মানুষ! বনমানুষ! যারা মানুষের মাংস খায়! কিন্তু বড়মামা বলেছিল এখানের এই লাচুঙে মানুষ খেকো কোনো প্রাণী নেই। শুধুমাত্র এক ধরণের পাহাড়ি নেকড়ে আছে যারা একবার পেলে ছিঁড়ে নেবে। এই চলমান আগুনের ভাটিগুলো কি সেই নেকড়ের! নাকি অন্য কিছু। একবার মায়ের মুখটা মনে পড়ে রামসির। হাতে পায়ে শরীর রক্ত শূন্য মনে হচ্ছে। ঠিক তখনই কারা যেন পেছন থেকে টুপ করে ওদের দুজনকে তুলে নেয়। 
(ক্রমশ)

মানালী সরকার 
সপ্তম শ্রেণি, বেথুয়াডহরি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বেথুয়াডহরি, নদিয়া 

আমাদের শিক্ষক দিবস 
আনিসা পারভীন
অষ্টম শ্রেণি
কেশপুর গার্লস হাই স্কুল, 
পশ্চিম মেদিনীপুর

ভারতে শিক্ষক দিবস প্রতি বছর পাঁচ‌ই সেপ্টেম্বর অত্যন্ত উৎসাহের সাথে পালন করা হয়। ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষক দিবস পালন করার জন্য খুব উচ্ছ্বসিত থাকে।
এই বছর‌ও আমাদের বিদ্যালয়ে খুব ধুমধাম করে শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। এই উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজন ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিল দ্বাদশ শ্রেণির দিদিরা। শিক্ষিকাদের পরামর্শ মেনে দিদিরা আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রীরা নৃত্য প্রদর্শন করে। ষষ্ঠ শ্রণির একজন বোন খুব ভালো বক্তব্য রাখে। অনেকেই শিক্ষকদের সম্মান জানিয়ে সুন্দর আবৃত্তি ও গান করে। 
আমি একাদশ দ্বাদশ শ্রেণির দিদিদের সাথে একটি নাটকে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমাদের শিক্ষিকার লেখা নাটকটি সাইবার সচেতনতা নিয়ে লেখা।
আমরা সকলেই শিক্ষিকাদের নানা উপহার দিয়ে সম্মানিত করেছিলাম। এই দিনে বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও বাৎসরিক পরীক্ষার পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
সব শেষে আমাদের বিদ্যালয়কে সবুজ করার অঙ্গীকার নিয়ে শিক্ষিকাদের হাতে আমরা চারা গাছ তুলে দিলাম।
স্মরণীয় দিবস
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস 
(১৫ ই সেপ্টেম্বর)
কলমে- দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

গণতন্ত্র শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ডেমোক্রেসি, এই শব্দটি এসেছে ডেমোস এবং ক্রিটোস বা ক্রেটস গ্রিক শব্দ থেকে। ডেমোস এর অর্থ হলো জনগণ আর ক্রিটোস  বা ক্রেটোস শব্দের অর্থ হলো শাসন ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব সুতরাং গণতন্ত্র ব্যুৎপত্তিগত অর্থে  জনগণের শাসন।

গণতন্ত্রের জন্ম প্রাচীন গ্রীস দেশের নগরে হলেও আধুনিক গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটে ইংল্যান্ডে। বর্তমানে গণতন্ত্রের বিকাশ এতটাই সাফল্য লাভ করেছে যে, বেশিরভাগ আধুনিক সভ্যতায় গণতান্ত্রিক সভ্যতায় পরিণত হয়েছে।
গণতন্ত্রের কোন স্থায়ী সংজ্ঞা নেই, কারণ কাল,স্থান ভেদে গণতন্ত্রের পার্থক্য ঘটে। তাই বলা হয়ে থাকে জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য এবং জনগণের শাসনই গণতন্ত্র (আব্রাহাম লিংকন)

আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস বিশ্বের ইতিহাসে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন।
২০০৭ সালে  জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৫ ই সেপ্টেম্বর তারিখ টিকে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এই দিনটি উপলক্ষে এক কথায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস বলেন, বিশ্বে গণতন্ত্রের পশ্চাৎসরন ঘটেছে। নাগরিকদের মত প্রকাশের স্থানও সংকুচিত হয়েছে। বিশ্বে অবিশ্বাস ও গুজব বাড়ছে এবং মেরু করন গণতন্ত্রান্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। মানুষ তথা দেশকে এখনই সতর্ক হতে হবে। গণতন্ত্র, উন্নয়ন আর মানবাধিকার পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত, একে অন্যের উপর নির্ভরশীল এবং একটি অন্যটিকে শক্তিশালীও করে তোলে। গণতন্ত্রের মূল মন্ত্র সমতা, অন্তর্ভুক্তি এবং সংহতির পক্ষে একতাবদ্ধ হয়ে দাড়ানোর সময় এটা।
গণতন্ত্রের নীতিগুলোকে প্রচার ও সমুন্নত রাখার উদ্দেশ্যে এবং সমস্ত রাষ্ট্র ও সংস্থা গুলিকে এই দিনটিকে যথাযথ পালনের জন্য আহ্বান জানানো হয়।
গণতন্ত্র এমন এক অবস্থা বা এমন এক আবহ যেখানে  মানুষের এক আবেগ কাজ করে। সারা বিশ্বজুড়ে দিনটি যথাবিহিত মর্যাদায় পালিত হয়। এই দিনটির সঙ্গে  মানবাধিকারের  ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। পৃথিবীর ৪৬ টি দেশের সংসদে গণতন্ত্র(১৫ই সেপ্টেম্বর)দিবস পালিত হয়।
গণতন্ত্রের মূল যে উপজীব্য তা হল এর ভিতরে স্পেস দেওয়ার যে ভাবনা। ব্যক্তি মানুষকে, ব্যক্তি ভাবনাকে এবং ব্যক্তি অস্তিত্বকে মান্যতা দেওয়া, তার অধিকারের পরিসরকে বৃদ্ধি করাই হলো গণতন্ত্রের স্বপ্ন ও লক্ষ্য। যেকোনো রাজনীতিতে, যে কোন সংস্থায়, প্রতিষ্ঠানে বা সংঘে গণতন্ত্রই হলো মূল শক্তি। ব্যক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে সমষ্টিবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার নামই হলো গণতন্ত্র।
আমরা দেখেছি, যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশ অন্য দেশের থেকে অনেক এগিয়ে থাকে সব দিক দিয়েই। যেমন আমাদের দেশ ভারত গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিশ্বে আজ সব দিক দিয়ে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে আছে। যে দেশে গণকণ্ঠ রুদ্ধ নয়, বাক্ স্বাধীনতা আছে এবং যে দেশে ব্যক্তি ভাবনার কথা দেশের সরকার মান্যতা দেয় সেই দেশের মানুষ এক মুক্তির আবহাওয়ার মধ্যে বেড়ে ওঠে। এছাড়াও বলতে পারি, গণতন্ত্রে একটা রাজনৈতিক, সামাজিক পরিসর পাওয়া সেই দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত তৃপ্তির এবং আনন্দের।

সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকার গড়ার লক্ষ্যে আয়োজিত ভোটে নিজের মতামত জানানোর যে একটা স্পেস থাকে তা এক নায়ক তন্ত্র বা অন্য কোন তন্ত্রে থাকেনা।
গণতন্ত্রে ব্যক্তি মানুষ অনেক শক্তিশালী। এখানে জনগণই শেষ কথা। জনগণই বিভিন্ন সম্ভাবনার আধার।

বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় যে এথেন্স হলো পৃথিবীর সব থেকে প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক দেশ আর ভুটান হল নবীনতম গণতান্ত্রিক দেশ।
🍂

পাঠ প্রতিক্রিয়া
(ছোটোবেলা ১৪৭ পড়ে সুদীপ্তা আদিত্য যা লিখল)

পত্রিকার উন্মোচন বিকশিত পারিজাতের সৌরভের মতন হতে হলে একটা ভালো ছবির কালেকশন আর ইতি সম্পাদকীয় টা জোরদার হতে হয়।বাচ্চা হনুর অবাক আবেশে রেলিং যাত্রার সুখ পাঠকদের আরো আরো সুখী করে দিল! সম্পাদকীয়র অনুচ্ছেদ যথার্থ এবং বেশ নিখাদ পরিচ্ছন্ন। মৌসুমী দিদিভাইয়ের এই পত্রিকার রূপায়ণ বরাবরই আমাদের পছন্দের তালিকায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। একটা শব্দের থেকে রঙের জোর তলোয়ারের মতন ধারালো-এই বিশ্বাসেই আগে পত্রিকার সাথে যুক্ত আমার স্নেহের খুদে ভাইবুনু দের আঁকিবুঁকি বিশ্লেষনে বসলাম-ছবি সত্যিই অনেক কথা বলে! এক কাপ কফি খেয়ে এবার পত্রিকার পাতাটা স্ক্রোল করছি এখন। রাখি নিয়ে ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল হাসপাতাল শেষে কিভাবে দৌড়ে ট্রেনপথে দেদার ছুট দিয়েছিলাম স্হান,কাল,পাত্র না ভেবেই!বছরে একদিন তো! রোজ তো নয় আর!মেঘনা বুনুর মত আমিও রাখি বেঁধেছি হুল্লোড় আর হুজুগ নিয়ে। প্রমিত ভাইয়ের রঙে মিছিলে কেমন করে প্রজাপতি নেচে উঠল। চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত প্রকৃতি বুঝি মূর্ছা যায় পাঠকদের চোখে!এই স্মরণীয় লেখনীর তালিকায় বেশ ইনফরমেটিভ আলোচনা আমার ভালো লাগে। আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস নিয়ে ভাবনা চিন্তা এত সুন্দর করে আগে কখনো মাথাচাড়া দেয়নি। অনন্যার মৌসুমী স্কুল মিসের মতন আমিও ম্যামদের স্যারদের জন্য রাখি নিয়ে যেতাম স্কুলে। তেনাদের দেওয়া উপহার গুলো এখোনো টেবিলের তাকে রাখা আছে।তাতে ধূলো জমলেও স্মৃতিশক্তি আমার বড়ো খাসা,বড়ো টাটকা। কফি কাপ টা টেবিলে রেখে,তাক থেকে একবার চোখের দেখা দেখলাম এত বছরের পরাধীনতায় ভুগতে থাকা উপহার গুলোকে। রাখির দিন সকালের রোজনামচা টা পুরো অনন্যা বুনুর মতন প্রানবন্ত ছিল।বন্ধু থেকে দাদা দিদি,স্কুলে কারোর হাত ফাঁকা যেত না। ওত রাখি পাব কোথায়!নিজেরাই তিনটা রঙের উল দিয়ে বিনুনি বানাতাম।যেন নিজেদের দোকানে নিজেরাই রাজা এমন ভাব।যা ইচ্ছা যোগ করব। পুঁথি থাকত হরেক রকম। বেশিরভাগ মায়ের ছেড়া হারের থেকে গুছিয়ে যত্নে বেছে নেওয়া।এখন দিননামচা বদলেছে। ওত গুছিয়ে রাখি বানানোর জো নেই আর সময়টাও ফাঁকি দেয় অনেক।কেনা রাখিটুকুই ভরসা। বাঁধনের হাত টাও আগের মত নেই, নেহাত একটা কি দুটো। সবই তো এখন গন্ডি। এই তো কুহেলী দাশগুপ্তের যে পাঠপ্রতিক্রিয়া পড়লাম যতটা নিখুঁত ততটাই অতল গভীর।ক্রমশ শেষ থেকে শুরুর পথে নিশপিশ করছে আঙ্গুল । এরপর একটা আঞ্চলিক গল্পের সমাবেশ নিয়ে বসলাম জানলায়। এই বিকেলে ভালো এলো পাথাড়ি বাতাস দেয়। আমিও দুষ্টুমি করে শুকনো চুল বিছিয়ে দি। নে যতটা পারিস ওড়া ফুরফুরিয়ে। ভাবনা শেষ হলে মন দিলাম পড়ায়। পাঁজি পুরোহিত আর কাঠবেড়ালির গল্প। এই যে লোধাপাড়া গ্রাম আর সুবর্ণরেখা নদীর বর্ণণা রয়েছে স্বল্প খানিক তাতেই তো একটা জেলার ইতিহাস ফুটে উঠেছে। কলমের জোর আছে।আছে তীক্ষ্ণতা, দূরদৃষ্টি।কাউকে কখনোও ভয় দেখিও না ভাবতে ভাবতে চোখ তো ঠিকরে যায়। শেষে হবে টা কি! অকারণে শিঙা বাজিয়ে পাঁজি বুড়োর ঘুমন্ত কাঠবেড়ালি কে ঘুম ভাঙানোর শাস্তি কি আদেও মিলল! না কি আমার খোলা চুলের মত উড়ে গেল ফুরফুরিয়ে। বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ইস! এবার শেষ করতে হবে পড়া!মায়ের কাজে হাত লাগাতে হবে।এই ভাবতেই দেখলাম আমার সেই বহুমাস আগে আঁকা একটা প্রচ্ছদ পত্রিকায় জ্বলজ্বল করছে। না ওটা কিছুই না,তেমন সুন্দর না। একদম ফিকে।রঙচটা। তাও মৌসুমী দিদিভাইয়ের সযত্নে কোনোকিছুর আগলে রাখার ক্ষমতা আর মাতৃত্ব বোধ কে মন থেকে প্রণাম জানাই।লাচুঙের নেকড়ে বাঘ ধীরে ধীরে পূর্ণ বয়স্ক হচ্ছে আর পরিচিতি পাচ্ছে পাঠক মহলে। লেখক মলয় সরকারের গাছ লাগানোর যে আকুতি,বিপ্লব আনছে।লেখার স্রোতে বিপ্লব আসছে। সাব্বাস!যাই হোক শুরু করলে থামতে হবেই।এখানেই থামতে হচ্ছে। জানলায় আর আমি নেই।লন্ঠন হাতে অন্ধকারে লেখা শেষ করছি। উপভোগ করলাম অনেক টা। এবার এর রেশ নিয়ে থেকে যাব।উপভোগের রেশ।

Post a Comment

0 Comments