জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -১৪৯

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা -১৪৯
সম্পাদক -মৌসুমী ঘোষ 
 - কল্যাণ সাহা

সম্পাদকীয়,
দেশে বিদেশে ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব হয়। আর আমরা তো বিশ্বকর্মা পুজোয়, স্বাধীনতা দিবস, পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়াই। তাই না? তবে সবাই কিন্তু ঘুড়ি ওড়াতে পারে না। এখন তো তোমরা ঘরে বসে মোবাইলে গেম খেলতে বেশি ভালোবাসো,  তাই এখন বেশিরভাগ ছেলেপুলেই ঘুড়ি ওড়াতে পারে না। তবু কেউ কেউ ঘুড়ি ওড়ায়। ঘুড়ি ওড়ানোর যে আনন্দ তা যারা ওড়ায় তারাই জানে। কল্যাণ আঙ্কেল ঘুড়ি ওড়ানোর ছবি পাঠিয়েছে। তাতে আমি দেখছি উৎসবের আগমণে ভেসে বেড়ানো মেঘ গুলোকে। শুধু কি ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব? আমাদের দেড়শো তম প্রকাশের উৎসবের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? তবে বর্ষা যাই যাই করেও এখো যায় নি। তাই তূয়া নূরের ছড়ায় বর্ষা এসেছে। আর রানু পিসির গল্পে অঙ্ক এসেছে। তবে উৎসব মানেই বেড়ানো। তাই ছোট্ট বন্ধু মৌন বেড়াতে যাবার গল্প লিখেছে। উৎসবের আনন্দে যতই মাতি, চিন্তা পিছন পিছন সঙ্গে যায়। কিসের চিন্তা? কেন, বড়মামার ছেলে আর ছোটোমামা হারিয়ে গেছে মনে নেই? শ্রীকান্ত আঙ্কেল পুজোর আগে একি চিন্তায় ফেলল। পুলিশ কি পারবে তাদের খুঁজে দিতে? জানিনা। তবে কেউ যদি পুজোয় বেড়াতে বেড়াতে লাচুঙ যাও খোঁজ নিও ওদের। আর মৃন্ময় আঙ্কেলের মতো পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখে জানিও। শেষে বলি দোলনচাঁপা আন্টি পর্যটন দিবস নিয়ে লিখেছে পড়ে নাও ও উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠো। সাহিল আর প্রমিতকে অনেক ভালোবাসা। প্রাক দেড়শো পর্বে সকল ছোটোবেলার বন্ধুদের শুভেচ্ছা। --- মৌসুমী ঘোষ।

মিস্ ম্যাথ্স্  আর অন্যরা
রানু ভট্টাচার্য 
               
অফিসের ড্রয়ারে একখানা অঙ্ক বই রাখা থাকে আমার। কে সি নাগের। কাজটাজ সেরে বিকেলের দিকে ছেঁড়াফেলা কাগজে অঙ্ক কষি। বেশ লাগে। বন্ধুরা যারা  টের পায়, প্রচুর হাসে আমায়।  
- এই বয়সে অঙ্ক? 
- তো?  তাতে কি হয়েছে?
বলি তাদেরকে। এই বয়সে তোমরাও তো ছোটোকালের মতো ক্রিকেট খেলো, ফুটবল খেলো। খেলো না?
      এসব কথাবার্তায় অঙ্কটা গেল হারিয়ে। আবার শুরু করি, প্রথম থেকে। সিঁড়িভাঙা অঙ্কটার সিঁড়িগুলো ভাঙতে থাকি। অনেকদিন আগে...সে ছিল আমার স্কুলবেলা...ঘরের লাল মেঝেয় চক্ দিয়ে অঙ্ক কষতাম। এক ঘর অঙ্ক। অত অত খাতা কোথায় পাবো? শ্লেটপেনসিলেও কষতাম। মুছে ফেললেই আবার অঙ্ক কষবার পরিষ্কার জায়গা।  ক্লাস ওয়ানে  স্কুলের অ্যাডমিশন টেষ্ট হলো, বেশ লম্বা একটা যোগ অঙ্ক ছিল তাতে। স্কুলে ভর্তিও হয়ে গেলাম। আর সেই থেকে  অঙ্ক আমার বন্ধু। ওর নাম দিয়েছি মিস্ ম্যাথ্স্। ও আমার খুব ভালো বন্ধু। ভারী আপন। ওর সাথে মেশার টেকনিকগুলোও দারুণ মজার। ওর সাথে খেলাতেও কিন্তু হাইড এণ্ড সিক্ আছে, ফুটবল ক্রিকেটের মতো পেনাল্টি ফাউল নো বল কট্ আউট বোল্ড আউট.... সব আছে।  
       অফিসে বাড়িতে...  ফাঁক পেলেই  মিস্ ম্যাথ্সের সাথে খেলতে বসে যাই। সকালবেলায় বাগান লাগোয়া বারান্দাটায় যখন বসে থাকি, তখন সাথে থাকে চায়ের কাপ, খবরের কাগজ আর অঙ্কের বইটা। গাছগাছালি পাখপাখালি প্রকৃতির সাজ... নেশা লেগে যায় আমার। বুঁদ হয়ে বসে থাকি, আর দেখি, এই সব কিছুর মধ্যে থেকে মিস্ ম্যাথ্স্ হাসি হাসি মুখে চেয়ে আছে। ফুলে ক'টা পাপড়ি হবে, গাছে ক'টা ডালপালা কোথায় হবে, ফুল পাতা কোন ডালে ক' টা করে থাকবে, এ সবকিছুতেই প্রকৃতি নির্দিষ্ট অঙ্ক কষে রেখেছে। বড় হয়ে আরও অঙ্ক শিখলে শিখবে ফিবোনাচ্চি সিরিজ, তার গোল্ডেন রেশিও। তাজমহল, গিটার, পিরামিড, হারমোনিয়াম, শামুকের স্পাইরাল, ভায়োলিন, ঘূর্নিঝড়ের আকার,  ট্রাম্পেট...সবেতেই কিন্তু ঐ গোল্ডেন রেশিও।
       অনেকেই বলে, অঙ্ক ভয় পাই। তা, চারিদিকে যখন শুধুই অঙ্কের খেলা, তখন ম্যাথ্স্ ফোবিয়া হলে চলবে? 
        এই পর্যন্ত লিখেই দেখি, সুমিতা বাগানের গেট্ খুলে ঢুকছে। রোজ দু'চারটে করে ফুল তুলে নেয় আর দু'এক মিনিট কথা বলে। এই যেমন আজ...জানেন মাসীমা, পিঙ্কিটার তো সারাদিন খেলা আর খেলা...পড়তে বসতেই চায় না...আজ  ওর অঙ্ক পরীক্ষা...কাল রাতে বালিশটালিশ নিয়ে চলে এসে বলে কি....মা, আজ তোমার কাছে শোবো..কি কাণ্ড দেখুন...কি যে অঙ্ককে ভয় পায় মেয়েটা..। হাসলাম একটু। অত যে খেলতে ভালোবাসে পিঙ্কি, খেলাতেও তো অঙ্ক আর হিসেব। এক্কাদোক্কা, হাডুডু, কাবাডি, ফুটবল, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিক্স্, মারাদোনার বাইসাইকেল কিক্, ক্রিকেটের গুগলি,  কুস্তির প্যাঁচ - গণিত তো সবেতেই। মিস্ ম্যাথ্সের বন্ধু হলে, ওর সাথে ওর টেকনিকে খেলতে শুরু করলে....সবেতেই শুধু জিতই হবে। টেকনিক্ মানে তো কায়দা, কৌশল। খেলাতেও তো কায়দা লাগে। লাগে না? গানএর চর্চা, খেলার চর্চা, লেখার চর্চা, এসব যদি করা যায়, গণিতের চর্চাই বা করা যাবে না কেন? এসবেও তো অঙ্ক আছে।
         পাশে রাখা অঙ্ক বইটা হাতে নিতেই দেখি, টেবিলে আজকের খবরের কাগজে চাঁদে চন্দ্রযান নামার খবর আর ছবি। চাঁদ ! সে তো অনেকদূর! কি করে গেল? পৃথিবীতে বসে চাঁদের দূরত্ব মাপলো কি করে? অমনি অঙ্কের বইটা থেকে মিস্ ম্যাথস্ হেসে উঠলো।  সেই সাথে আরও কেউ কি হেসে উঠলো? বাগানের পাখিদের শিষের সাথে সাথে একটা দুটো অন্যরকম শিষও শুনছি যেন!  টু...ইট্..টু...ইট্ আর কু....উক্...কু....উক্...এ দুটো শিষ্ তো একটু অন্যরকম।  উঁকিঝুঁকি মেরে দেখতে থাকি, কোনো নতুন পাখি এলো নাকি? অমনি কারা যেন হেসে উঠলো। কে? কে হাসলো?
- আমরা।
কে? কে বললো? কাউকে তো দেখতে পাচ্ছি না।
- আমরা। আমরা।
একি! কথাগুলো যেন আমার ভেতর থেকেই আসছে।
- হ্যাঁ হ্যাঁ। 
- আমরা তোমার মনের মধ্যে ঢুকে পড়েছি।
- ওখান থেকেই কথা বলছি।
বলে কি? ঘাবড়ে যাই বেশ।
- কে তোমরা?
- আমরা... তোমরা যাকে এলিয়েন বলো..
- সে আবার কি? নাম কি তোমাদের?
- নাম নেই। নাম হয় না।
- নম্বর হয়।
- তা'হলে বলো, কত নম্বর?
- *******
- কি যে বললে হিজিবিজবিজ, কিচ্ছু বুঝলাম না।
  থাকো কোথায়?
- আমি থাকি শনিগ্রহের চাঁদ টাইটানে।
- আর আমি থাকি মঙ্গলগ্রহে।
সে আবার  কি? অত দূর থেকে এলো কি করে?
- চিন্তার ভেতর দিয়ে...
- গণিতের ভেতর দিয়ে...
- তোমরা কি ছেলে নাকি মেয়ে?
- আমরা ওসব কিচ্ছু নই।
ঘাবড়ে গেলাম। এসব কি সত্যি? নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি? না না। ঐ তো পাখির ডাক্, ফুল গাছ, ঝিরঝির হাওয়া। আর ঐ তো, আমার অঙ্কের বইটা আর খাতাকাগজ।
- অত ভাবছো কেন?
কে যেন আবার মনের মধ্যে থেকে কথা বললো।
- সবই তো অঙ্কের খেলা।
- তুমিই তো এইমাত্র ওসব লিখছিলে।
- আরেকটা অঙ্কের মজা দেখবে?
- তোমার ঐ লেখার কাগজটা নিয়ে একটা ভাঁজ করো।
- এই তো, করলাম।
- আরেক ভাঁজ  দাও।
- দিলাম।
- আবার ভাঁজ করো... করতে থাকো...
- এই.. দু'ভাঁজ, তিন ভাঁজ, চার, পাঁচ ছয়..একি, আর 
  হচ্ছে না কেন?
- হবে না.. হবে না..
- বারো বারের বেশী কেউ পারেইনি।
- কাগজের পুরু নিয়ে ফর্মূলা আছে যে।
- ফর্মুলা দিয়ে অঙ্ক করে দেখো..
- তেতাল্লিশ বার কাগজ ভাঁজ করতে পারলে...
- ততটা দূরে আছে চাঁদ...
- একান্নবার ভাঁজ করতে পারলে...
- অঙ্কটা দিয়ে ততটা দূরে সূর্য...
- আর একাশিবার ভাঁজ করতে পারলে... 
-  অ্যাণ্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিতে...
মাথা ভোঁ ভোঁ করতে থাকে আমার। আমি নয় এক আধটু অঙ্কটঙ্ক করতে ভালো বাসি, তাই বলে এত কিছু?
- তোমার মিস্ ম্যাথ্সকেই জিজ্ঞেস করো না...
- আমরা ঠিক বলছি না ভুল বলছি...  
টের পেলাম, মিস্ ম্যাথ্স্ মিট মিট্ করে হাসছে। তার মানে... তার মানে...এই হিসেবটা সত্যি! এলিয়েন দুটো তো দেখছি অনেক কিছু জানে! আচ্ছা, ওদেরকে কি দেখতে পাবো না?
- না।  দেখতে পাবে না।
- কিন্তু বুঝতে পারবে।
- ডাকলেই আমরা চলে আসবো।
- কি করে ডাকবো?
- মনে মনে ডাকবে...
- কি বলে ডাকবো? তোমাদের তো নামই নেই। 
  তোমাদেরকে নাম দিই দুটো? একজন পিং আর 
  অন্য জন... ইকা! পছন্দ হয়েছে নাম?
একটা হালকা  হাসি শুধু টের পেলাম মনে মনে। তারপর... আবার সব শুনসান। খবরের কাগজটা পড়তে পড়তে ভাবলাম, এসব কি সত্যিই সত্যি? পিং আর ইকাকে মনে মনে ডেকে দেখবো একবার, আসে কিনা? না থাক্। আবার পরে...।
প্রমিত নস্কর
ষষ্ঠ শ্রেণী,  রঘুনাথবাড়ি রামতারক উচ্চ বিদ‍্যালয়,পূর্ব মেদিনীপুর


স্বপ্নে মোড়া ছোট্টবেলা
তূয়া নূর

ছোট্টবেলা হাতছানি দেয়, আদর করে ডাকে 
নকশী কাঁথায় মোড়া সময় হারায় পথের বাকে।  

মনের ভেতর স্বপ্ন ছিলো হবে অনেক বড়,
অনেক বড় এখন তুমি, মনটা জড়োসড়ো। 

স্মৃতিটা যে অনেক উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা 
পথটা যেনো মুছে গেছে যায় ঘরে ফেরা। 

বড়ো তুমি চাইলে হতে বড়ো হলে ঢের
কতো কিছু ফেলে গেছো পাওনি তুমি টের!

ছোট্টবেলার সোনার চাবি পাবে নাতো আর খুঁজে
আশার বাতি মোমের মতো গলে পড়ে পিলসুজে। 


সামার জ্বর
তূয়া নূর

নেয়নি ছাতা ভিজলো সামা
বর্ষার ঝর ঝর জলে
রাতের বেলা ভীষণ জ্বরে
আবেল তাবোল বলে।

ডাক্তার এলো পথ্যি এলো
জ্বর গেলো তার নেমে
সামার মাথায় চিন্তা তবু
কপালটা তার ঘামে।

বললো মাকে— একটা কথা
খুব করেছে ভর,
জলের ভেতর থেকেও কেনো
হয় না ব্যাঙের জ্বর?
সাহিল সেখ, সেন্ট জেভিয়ার্স ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, বেথুয়াডহরি, নদিয়া, প্রথম শ্রেণি


ঘুরু ঘুরু
মৌন মন্ডল, ষষ্ঠ শ্রেণি, করিমপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, নদীয়া

" ঘুরতে যাবি? 
"কোথায়? " 
"কোথাও দূরে নদী, পাহাড়-পর্বতে..." 
"দার্জিলিং"! 
"চল না কালকে ভোর বেলা ট্রেন ধরে যাব।" 
"ঠিক আছে। কিন্তু টাকা পয়সার ব্যাপারটা?" 
"সে আমি ম্যানেজ করে নেব তুই চিন্তা করিস না।" 
"ঠিক আছে তাই হবে। কালকে ভোর বেলা ছটার সময় উঠে রেল স্টেশনে চলে আসবি। দেরি করবি না কিন্তু। তোর তো আবার স্বভাব আছে দেরি করার।" 
"তুই চিন্তা করিস না আমি ঠিক চলে আসব।" 

এই দুই সপ্তাহ আগে বর্ণী আর তাতানের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ছেলে-মেয়ে দুটোর মোটে ভাল্লাগেনা বাড়িতে বসে থাকতে। তাই ওরা প্লান করেছে দার্জিলিংএএকটা ছোট্ট ট্রিপ করবে। 
"ধুত এলার্ম ক্লক টাও না, বন্ধ হতে চাই না শুধু বেজেই যায়।" ক'টা বাজে? সাড়ে ছটা! যা এবার আমাকে তাতানের কাছে বকা শুনতে হবে। যাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ব্যাগটা নিয়ে টোটো ধরে স্টেশনে পৌঁছে যায়। এদিকে বর্ণী ঘুম থেকে উঠেতে দেরি করে আর ওই দিকে তাতান সেই কোন ভোর থেকে স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে। তাতান ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর রাগে কচকচ করছে। যেই না বর্ণী টোটো থেকে নেমে স্টেশনে পৌঁছালো অমনি তাকে ধমক দিয়ে  উঠলো, "কিরে ক'টা বাজে এখন? আমি এখানে ৬:১৫ থেকে দাঁড়িয়ে আছি। আর তুই এখন আসছিস  পৌনে সাতটার সময়?" 
বর্নী বলল, "সরি রে। তুই তো জানিস আমি একটু  আলসে। ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠা মানে ভীষণ কষ্টের।" 
তাতান বিরক্ত হয়ে বলল, "তুই চিরকাল একই থাকবি। ওদের দুজনার  তর্কের মধ্যে ট্রেনও চেলে এলো। প্রথমে ওরা ট্রেনে করে যাবে জলপাইগুড়ি। সেখানে নেমে তারপরে যাবে ওরা দার্জিলিং। তাতান আর বর্নী দুজনেই বাইরের দৃশ্য দেখে আপ্লুত হয়ে পড়েছে। বর্ণী, তাতান কে বললো, "তাতান তুই তোর ক্যামেরাটা এনেছিস ?" তাতান বলল, "এনেছি তো, কেন? "দার্জিলিং  গিয়ে আমার কটা ভালো ছবি  তুলে দিস তো তোর ক্যামেরাটা দিয়ে।"
 তাতান মুচকি হেসে বলল, " দাঁড়া বর্ণী আগে আমরা জলপাইগুড়ি তো পৌঁছাই তারপরে দার্জিলিংয়ের কথা ভাবিস। বাইরে থেকে খুব সুন্দর হাওয়া বইছে। তাতান এবং বর্ণীর দুজনের চোখ কেমন ঢুলে ঢুলে আসছে। একি ওরা দুজনেই তো  ঘুমিয়ে পড়েছে! "ও দাদা, দাদা উঠুন।" তাতান চমকে উঠে বলল, "হ্যাঁ দাদা বলুন।"
 "বলছি যে আপনারা দুজন কি এখানে নামবেন? এটা লাস্ট টপেজ। এইখান থেকে কিছুক্ষণ পরে ট্রেনটা আবার ঘুরবে।" 
"এই  বর্ণী ওঠ। আমরা পৌঁছে গিয়েছি।" 
তাতান একজন ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করল,  "আচ্ছা দাদা জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং এর ট্রেন কখন বলুন তো? ভদ্রলোক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, "আরে দাদা এটা জলপাইগুড়ি না।"
 তাতান অবাক হয়ে বলল, "কি? এটা জলপাইগুড়ি স্টেশন নয়। " তাহলে এটা কোন স্টেশন?" 
"আরে দাদা এটা হচ্ছে গরুমারা স্টেশন ।" 
"কি? গরুমারা স্টেশন?" তাতান আর  বর্ণী ঘুমের কারণে বুঝতেই পারেনি যে কখন ওরা জলপাইগুড়ি ছাড়িয়ে চলে এসেছে গরুমারা।  
"আচ্ছা দাদা এখান থেকে জলপাইগুড়ি কত দূর বলতে পারেন?" 
"এখান থেকে জলপাইগুড়ি বাসে ওই  দুই ঘন্টা মত লাগে।" 
"এরপর ট্রেনটা কটার সময়  দাদা?" 
"আপনারা যে ট্রেন থেকে এখনই নামলেন সেটাই সকালের জলপাইগুড়ি  যাওয়ার  লাস্ট ট্রেন ছিল।" ধুত,  ঠিক আছে দাদা আপনি এখন যেতে পারেন ধন্যবাদ। তাতান রেগে গিয়ে বর্ণীকে বলল, "তুইও ঘুমিয়ে গিয়েছিলি, তুই জেগে থাকলে আমরা জলপাইগুড়ি ছাড়িয়ে চলে আসতাম না।" 
বর্ণী  রেগে গিয়ে বললো, " আমি এমনি ভোরবেলা উঠে এসেছি। তুই তো জানিস আমার যদি সকাল বেলা ঘুম ঠিকঠাক  না হলে আমি আবার ঘুমিয়ে যাই।" 
"নমস্কার।" পিছন থেকে একজন ভদ্রলোক বললেন। "আপনাদের ট্যুর গাইড লাগবে নাকি?" 
"হ্যাঁ মানে দাদা, বলছি এইখান থেকে জলপাইগুড়ির এখন কোন ট্রেন আছে ?" ট্রেন তো সে বহুৎ আছে। কিন্তু সব ট্রেনই রাত্রি বারোটা থেকে চলতে শুরু করে।  আপনারা বুঝি জলপাইগুড়ি যেতেন?" 
"হ্যাঁ আসলে আমরা দার্জিলিং ঘুরতে যেতাম।" 
লোকটা মুচকি হেসে বলল, "ও বুঝতে পেরেছি ভুল করে এখানে চলে এসেছেন। কিন্তু এই জায়গাটাও খুব সুন্দর দাদা। আমি আপনাদের একটা  ঘুরিয়ে দিতে পারি।" 
তাতান আর বর্যনী বলল, "ঠিক আছে তাই হোক না হয়।" ভদ্রলোকটা হেসে বললেন,"আমার নাম ননিদা। আমি টুর গাইড। চলুন আপনাকে গরুমারা  ন্যাশনাল পার্কে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।" 
ননিদা তাতান আর বর্ণী একটা বাসে উঠে ন্যাশনাল পার্কের দিকে চলল। 
ননিদা হেসে বলল, "এই গরুমারা ন্যাশনাল পার্কের খাসিয়াত হচ্ছে এর গন্ডার গুলো। ওই দেখুন ওই দূরে জঙ্গলটায় একটা বাচ্চা গন্ডার একটা মা গন্ডার " তাতানের ক্যামেরাটা বার করে গন্ডারদের  ছবি তুলতে লাগলো। চলুন চলুন চলুন হয়ে গিয়েছে অনেক দেখা  এবার   অন্য জায়গা চলুন। 
বর্নী বলল, "আরে ননিদা এত তাড়াহুড়ো করছেন কেন? এখানে ১০ /১৫ মিনিট বসে একটু ছবি টবি তুলি তারপরে না হয় অন্য জায়গায় যাওয়া যাবে? ননীদা বললেন, "না না ম্যাডাম এইখানে বেশিক্ষণ বসে থাকলে চলবে না এখনো কত কিছু দেখা বাকি আছে। "ঠিক আছে চলুন না হয়। " এবার ওরা আসলো জিপ সাফারি। বর্নি প্রথম প্রথম  ভয় পাচ্ছিল কিন্তু ননীদা ওকে সাহস জাগিয়ে বললেন, "ভয় পাবেন না ম্যাডাম। আপনি দেখবেন কত মজা হবে।" তারপরে বর্ণী ভয় কাটিয়ে জিপের উপরে উঠল। চারিদিকে কত গাছপালা আর পশু পাখি। ওরা জঙ্গলে একটু ভিতরে গিয়ে দেখল কত বড় বড় হাতি। ননীদা বললেন, "চলুন আপনাদের এখন আমি হাতির সাফারি করাব। "বর্ণী হাতিদের দেখে খুব ভয় পেল। ননীদা আবার ওকে সাহস জাগিয়ে বললেন, এখানে কিছুতে ভয় পাবেন না ম্যাডাম। এই হাতিগুলো সব সময় ওদের 
মাহুতের কথা শুনে চলে।"  ননীদা  মাহুতদের বললেন, "দেখাও তো মাহুত ভাই তোমার হাতিদের খেল।" 
তখনই মাহুত তার হাতিদের বলল 'ডোরি ' তা শুনে হাতি পিছনে চলে গেল। তারপর ওরা যখন হাতির পিঠে উঠলো তখন হাতির সামনে একটা বড়  ঝোঁপ ছিল। মাহুত তখন হাতিকে বলল, 'মাইল' তখনই হাতি সাবধান হয়ে গেল আর নিজের শুঁড় দিয়ে ঝোপগুলো সরিয়ে দিল। তা দেখে তাতান আর বর্ণী অবাক। এইভাবে পুরো সকালটা তারা  ঘুরে ফিরেই কাটিয়ে দিল। সন্ধ্যা  হয়ে আসছিল।  তাদের বড়জোর খিদেও পেয়েছিল। তাই ননিদা তাদের নিয়ে গেলেন গরু মারার বিখ্যাত 'ডাক বাংলো' হোটেলে। তার যেমন গন্ধ তেমনি স্বাদে অতুলনীয়। খাওয়া-দাওয়া ঘোরাফেরা গল্প আড্ডা মজা সব করে রাত হয়ে গেল। এখন তাতান আর বর্ণীর ফেরার সময়। ট্রেনও চলে এসেছে। ননীদা ওদের ছাড়তে এসেছেন। যখন ওরা ট্রেনে উঠে পরলো ননিদা চিৎকার করে  বললেন, "আবার দেখা হবে। যদি না হয়, আমি আপনাদের ঠিক খুঁজে বার করব যেখানে আপনারা থাকবেন।"
 তাতান আর বর্ণী ট্রেনের জানলা থেকে চিৎকার করে বলল, "চিন্তা করবেন না ননিদা আমরা আবার আসবো ভুল করে না  সত্যি সত্যি গরুমারায় ঘুরতে ।ভালো থাকবেন। " সত্যি তাতান আর বর্ণীর জীবনে তা সেরা দিন ছিল । এ প্ল্যানিং ছিল দার্জিলিং তবুও এই গরুমারার স্টেশনে ননীদার মত একজন লোককে বন্ধু হিসেবে পাওয়া এবং তার সাথে গোটা একটা দিন কাটানো খুবই একটা মজার ব্যাপার। ভুল করেও যে এত মজা পাওয়া যায় আজ ওদের দেখে শিখলাম।
ধারাবাহিক উপন্যাস
লাচুঙের নেকড়ে
পর্ব - ২৮

শ্রীকান্ত অধিকারী

কেয়া শুভ সমাচার বাঙালি বাবু? আজ বহোত সুবা সুবা ফ্যামিলিকে সাথ পোলিশ স্টেশন পর?-লাচুঙের পুলিশ স্টেশনের ভেতর চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকা এক কনস্টেবল হাসিমুখ করে বড় মামাকে শুধোয়। যদিও সেই হাসি বেশিক্ষণ মুখে থাকে না, তার বদলে একটা বিষন্নতা সারা মুখমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। 
তুম জানতে হো, কার সঙ্গে কথা বলছ? ডু ইউ নো হু অ্যাম আই?-নটবর নন্দী। তোমহারা বস মেরে জুনিয়র থা। পুছো উসকো। কাঁহা হ্যায় সেরগিল? বড় মামা ঝাঝাঁলো স্বরে পুলিশি ঢঙে ধমকে ওঠে। অবশ্য এই পুলিশটা সের গিল সাহেবের সঙ্গে খোস মেজাজে ওদের কথা বলতে দেখেছে। কিন্তু তাই বলে এই সময়! বড় মামা চুপ করতেই বড় মামি হাঁউমাউ করে ওঠে।-হামার লেড়কা অউর দেবর কাঁহা হ্যায়। ঢুণ্ডহো উস দোনো কো, নেহি তো হাম লোগ এহিঁ পর হত্যা দেঙ্গে। বলতে বলতে থপাস করে সামনে পাতা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে কাঁদতে শুরু করে। ছেলে দুটো আমার হারিয়ে গেল রে ছোটো…!  
অফিসার কোথায়? 
এগিয়ে আসে আরেক জন।-আমি দীপক ব্যানার্জী। কলকাতা থেকে। 
সোমেশ্বর কিছু বলতে যাচ্ছিল, স্টেশনের আরেক কনস্টেবল এসে বলে,-প্লীজ ওয়েট। সাহেব আ রাহা হ্যায়। 
আজ সে রকম কুয়াশা বা ঘন মেঘ আকাশে নেই। বৃষ্টিও হয়নি। স্টেশনের জানলার ফাঁক দিয়ে রুপোর মত পাহাড়ের চুড়াগুলো দেখা যাচ্ছে। নীচে দীর্ঘ পাইন গাছের সারি, সঙ্গে পীচ আর আপেল গাছের বাগান। হয়তো মন ভালো থাকলে ওরা সবাই এক সঙ্গে নেচে উঠতো। হয়তো গান গায়তো সিঙি। সঙ্গে গলা মেলাত ওর মা। আর বড় মামি পান খাওয়া দাঁত বের করে বলেই ফেলত,-নাহ! আমার বেড়ানোর পয়সা উসুল। আর ক’টা দিন থেকে গেলেই ভালো হত।  

রামসি চুপ। ছোটোমামাও গভীর চিন্তা মগ্ন। এখান থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার কথা দূর, তার আগে এখনো পর্যন্ত ওদের এভাবে ধরে রাখার কোনো মোটিভ খুঁজে পায় না। এমতবস্থায় নিজেই যখন বিভ্রান্ত, হঠাৎ জনা তিনেক কামার পেটানো চেহেরার ছেলে এসে ওদের তুলে দাঁড় করায়। 
রামসি লক্ষ করে লোকগুলো প্রত্যেকের মাথায় বিদ্ঘুটে টুপি। অনেকটা মুখোশের মত। চোখ, নাকের ডগা খাবারের মুখগুলো শুধু বেরিয়ে। কপালের দিকটা স্পোর্টস টুপির মত। সেখানে একটা করে নেকড়ের ছবি আঁকা, নীচে ফার্স্ট ব্র্যাকেটের মাঝে ভারটিকাল লাইনের দু পাশে দুটি   বিন্দু। 
অদ্ভূত লাগে সবকিছু। রামসি একই সঙ্গে বিস্ময় এবং জিজ্ঞাসা নিয়ে ছোটমামার দিকে হেলে দাঁড়ায়। আর আড় চোখে সব, সব কিছু জানতে চায়। 
-অ্যামিনিস্ট!
ছোট মামা মৃদু স্বরে বলে, ওরা অ্যানিমিজমে বিশ্বাসী। শ্বাস,নেচার আর প্রকৃতি তত্তই ওদের ধর্ম। মানুষ ছাড়াও উদ্ভিদ প্রাণহীণবস্তু পাথর নদী জল আবহাওয়া সবেতেই দেবতা আছে। প্রকৃতিই দেবতা। আর ওটা সর্বপ্রাণবাদের চিহ্ন। 
রামসি আর ছোটোমামার হাতগুলো ইতোমধ্যে খুলে দিয়েছে। এবার ভালো করে দাঁড়াতে পারছে। কিন্তু বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পায় না। ওই তিন জনে ওদের মামা ভাগ্নেকে ঘর থেকে বের করে দিতেই রামসি প্রায় আঁতকে ওঠে। চোখের সামনে এগুলো কী? হাত বাঁধা অবস্থায় রামসি  কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভেবে ছিল একবার যদি হাত খোলা পাই দেব পোঁপাটে দৌড়! সে যে স্কুলে শর্ট রেসে চ্যাম্পিয়ান ওরা তো জানে না! হান্ড্রেড মিটারস আর টু হান্ড্রেড মিটারস রেসে ওকে কেউ হারাতে পারে না। অতএব পাহাড় জঙ্গল ডেঙিয়ে এমন ছুট লাগাবে নিমেষে পগার পার! কেউ দেখতে পাবে না। 
কিন্তু সামনে একদল ভয়ঙ্কর চতুষ্পদকে বিশাল আকারে জিভ বের করে হ্যা হ্যা করতে দেখে রামসির পিলে খাঁচাছাড়া। কিছুক্ষণের জন্য চোখে অন্ধকার দেখে।-এ তো কুকুর নয়।  কুকুরের মত দেখতে। সে অনেক ধরণের কুকুর দেখেছে-পিট বুল টেরিয়র,রট উইলার, জার্মান শেফার্ড, বুল ডগ,ডোবারম্যান,অ্যালসিসিয়ান,এমন কি তীব্বেটিয়ান টেরিয়র, টীব্বেটিয়ান স্পেনিয়ায়াল, রোডেশিয়ান রিডব্যাক কিন্তু এমন ভয়ঙ্কর বাঘের মত কুকুর একমাত্র ছবিতে দেখেছে। এমন হিংস্রভাবে তাকাচ্ছে যেন এখনই ছিঁড়ে খাবে।
–উলফ!
 কোনো রকমে ছোটমামার দিকে চোখ ফেরাতেই দেখে ছোটমামা কিম্ভূত রকমের মুখ করে চোখ মুজে আছে। ওর দিকে তাকানোর কোনো ইচ্ছেই নেই। 
ওদেরকে পেছন থেকে কে যেন ঠেলা মেরে এগিয়ে যেতে বলে। তার আগে অবশ্য নেকড়েগুলোকে আরো কয়েকটা লোকে চামড়ার দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে চলেছে। রামসি ভালো করে লক্ষ করে সব কটা নেকড়ের নাকের ভেতর দিয়ে চামড়ার দড়ি পরানো। রামসির একটা গল্পের কথা মনে পড়ে গেল, হিমাদ্রিবাবুর একটা গল্পে যেন পড়েছিল তিব্বত আর সিকিমের মাঝামাঝি কোনো একটা জায়গায় নেকড়ের খামার বানিয়ে নেকড়ে চাষ করা হয়। তারপর তাদের দেশের বাইরে পাচার করা হত। এই নেকড়েগুলো সেই রকম কোনো খামারের নেকড়ে কি! এখনো রামসির বুক ঢিপ ঢিপ করছে। 
ছোট মামা এখন ঠিক তার আগে। পা দুটো প্রায় টেনে টেনে যাচ্ছে। রামসি ডাকে, শাদুল মামা? 
ছোটোমামা সাপের মত হিসহিস করে,-নো টক। আগে বঢ়ো। নেকড়েগুলো দেখেছিস! একবার পেলে তোকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভালুক বাঁধার মত না বাঁধলে ওরাও থাকত কি! 
ওই লোকগুলোর পেছন পেছন কিছু দূর গিয়ে ছোট ঝোড়া পেরোতে একটা পাহাড়ের কিছু অংশ দেখা গেল। 
ঝোড়ার জল ঠাণ্ডা। কিন্তু এত ঠান্ডা হবে জীবনেও ভাবতে পারেনি। এখানে সব কিছুই কি উদ্ভট! সব বেশি বেশি! পায়ে জল ঠেকতেই মাথা চিনচিন করে উঠল। বরফের চেয়েও ঠাণ্ডা কিছু একটা শিরদাঁড়া বেয়ে মাথায় যেন উঠে এল। এত ক্ষণে রামসি বুঝতে পারল জুতোগুলো সেই দুদিন আগে থেকে পরে আছে, খোলার বা চেঞ্জ করার কথা খেয়াল হয়নি আবার সে রকম কোনো ব্যবস্থাও নেই। 
ছোটমামা আবার হিসহিসায়,-একে কি বলে জানিস? নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরানো।
ছোট মামার কি কোনো আক্কেল হবে না! যেখানে জীবন নিয়ে টানাটানি, সেখানেও …মামা তোমার ভয় করছে না?
ভয় করবে কী রে? আমি তো ওদের মতলব কিছুই বুঝতেই পারছি না। আমাদের মত দুটো অকাল কুষ্মাণ্ডকে নিয়ে কী করতে চায়? 
বলতে বলতে জঙ্গলের কয়েকটা পীচগাছ আড়াল করে ভেতরে ঢুকে যেতেই একটা গর্তের মত কিছু বের হয়ে এলো। চোখের নিমেষে নেকড়ের দল সহ লোকগুলো সেই গর্তের মধ্যে ঢুকে পড়ল। রামসি আঁতকে ওঠে। থমকে দাঁড়িয়ে চাপা স্বরে ডাকে,-মামা-! 
(ক্রমশ)

স্মরণীয় দিবস
বিশ্ব পর্যটন দিবস
(২৭শে সেপ্টেম্বর)
কলমে-দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে


পর্যটন বা ট্যুরিজম এই বহুল প্রচলিত শব্দটির অর্থ কি?
পর্যটন এক ধরনের বিনোদন, অবসর বা ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করাকে বোঝায়। ইতিমধ্যে বিশ্বের সর্বত্র পর্যটনকে শিল্প হিসেবে দেখা হয়। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী অবসরকালীন কর্মকাণ্ডের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে পর্যটন। যিনি আমোদ-প্রমোদ বা বিনোদনের উদ্দেশ্যে অন্য কোথাও ভ্রমণ করেন তাহলে তিনি পর্যটক নামে পরিচিত হন।
২৭ শে সেপ্টেম্বর তারিখটি সারা বিশ্বব্যাপী পর্যটন দিবস হিসেবে পালন করা হয়। জাতিসংঘের অধীনস্থ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ১৯৮০ সাল থেকে সকল সদস্য দেশে ২৭ শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হয়ে আসছে।
এই দিনটির প্রধান উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও পর্যটক কেন্দ্রের সাথে এক বন্ধন গড়ে তোলা। এছাড়াও পর্যটনের ভূমিকা হিসেবে জন সচেতনতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উপযোগিতা কে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়া এই দিবসের প্রধান লক্ষ্য।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তির পর বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সম্প্রসারণের ফলশ্রুতিতে বিশ্ব মাপের পর্যটন ব্যবসার  প্রসার ঘটে। এই অবস্থায় পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিবর্গ ও ভোক্তা শ্রেণীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বিষয়ক সংস্থা বা আই ইউ ওটিও। এই সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী পর্যটন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রসারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রাজস্ব আয়ে বিশেষ অবদান রাখে। 
১৯৭৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে সংস্থাটি বার্ষিক সম্মেলনে এর নাম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পুনরমূল্যায়ন নির্ধারণ করা হয় এবং তখন থেকে এটি বিশ্ব পর্যটন সংস্থার নামে চিহ্নিত বিষয়ে সদস্যদের মধ্যে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮০ সালের বার্ষিক সম্মেলনে এই সংস্থার গঠনের দিবসে অর্থাৎ ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে বিশ্বব্যাপী পর্যটন দিবসের পালন এর বিষয়ে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়। 
এই দিনটি ভারতের পর্যটনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে  পালন করা হয়। ভারতের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, গ্রামীন প্রকৃতি, শিক্ষা মূলক, খেলাধুলা ও ইকো ট্যুরিজম ইত্যাদি সব বিভিন্ন ধরনের পর্যটন রয়েছে।
🍂

পাঠ প্রতিক্রিয়া
(জ্বলদর্চি ছোটোবেলা পড়ে মৃন্ময় ভট্টাচার্য যা লিখলেন)

গ্রীষ্মের তপ্ত আবহে, অসহ‍্য ভেপসা গরমে আমরা সবাই প্রার্থনা করি মৌসুমী বায়ুর আগমনে আসুক বর্ষা, আবার শীতল হোক তপ্ত চরাচর, নতুন ফসল উঠুক প্রতিটি চাষীর ঘরে, অন্ন সংস্থান হোক সব বিশ্ববাসীর ।

ঠিক সেরকম ভাবেই এই অস্থির দ্রুতগতির জীবনে, প্রতি মুহূর্তে বাঁচার তীব্র লড়াই, মানসিক ও সামাজিক চাপের মাঝে যখন ভুলে যাই সেই  দীর্ঘদিন আগে হারিয়ে যাওয়া শৈশবের সুখ স্মৃতিগুলো, মৌসুমী বায়ুর মতোই বোন মৌসুমী আমাদের ফিরিয়ে দেয় শৈশবের সেই মনোরম, চাপমুক্ত, শুধু হাসি খেলার মিষ্টি দিনগুলোকে,  তার সম্পাদিত "জ্বলদর্চি" ই-ম‍্যাগাজিনের মাধ‍্যমে।

এই পত্রিকা সুস্থ জীবন গড়ার ভাবনা গুলোকে দেয় প্রাধান্য, কবিতা, গল্প ও চিত্রকলার মাধ‍্যমে নৈতিকতার বীজ বপন করে চলেছে নির্মল নিষ্পাপ বঙ্গ শিশুমনে।  এই দুর্বিষহ বর্তমান  সামাজিক অবক্ষয় রোধে মাথা উঁচু করে, বহু প্রতিকূলতার মধ‍্যেও পত্রিকাটি এগিয়ে চলেছে অদম‍্য গতিতে।

শেষে বোন মৌসুমী ও তার সন্তানসম "জ্বলদর্চি" ছোটোবেলার দীর্ঘজীবন ও সাহিত‍্য জগতে শীর্ষ স্থানে অবস্থানের শুভকামনা জানাই।

Post a Comment

0 Comments