জ্বলদর্চি

দূরদেশের লোকগল্প—জর্জিয়া (পূর্ব ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার সীমান্তদেশ)বিধাতার বিধান বদলায়নি /চিন্ময় দাশ

দূরদেশের লোকগল্প—জর্জিয়া (পূর্ব ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার সীমান্তদেশ)
বিধাতার বিধান বদলায়নি 

চিন্ময় দাশ

এক দেশে এক রাজা ছিল। রাজামশাইর একটি মাত্র ছেলে। কাছে-দূরে ছোট-বড় যতো রাজ্য, সেসব রাজ্যের যতো রাজকুমারি, সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ল। সবাই তারা এই রাজার ছেলেটিকে বিয়ে করতে চায়।
অবস্থা দেখে, রাজামশাইর তো আনন্দ ধরে না। দেখে-শুনে, বেছে-বেছে একটি মেয়েকে পছন্দ করলেন। দেখতে যেমন অপরূপ সুন্দরী, তেমনি গুণবতীও মেয়েটি।
রাজামশাই তাঁর কলমচিকে পাঠিয়ে দিলেন। সুন্দর একখানা ছবি আঁকিয়ে আনা হোল মেয়েটির। দেখলে, চোখ তোলা যায় না ছবিটি থেকে। ছেলেকে ডেকে, বললেন— দ্যাখো, এই মেয়েটিকে নির্বাচন করেছি তোমার জন্য। একেই বিয়ে করো তুমি।
রাজকুমার এক কথায় নাকচ করে, বলল—এই মেয়েটির সাথেই বাঁধা পড়তে হবে, এটা আমার ভাগ্য হতে পারে না । এ মেয়েকে আমি বিয়ে করব না।
রাজামশাইর মনে কষ্ট হোল। কিন্তু চুপ করে রইলেন। একদিন রাজকুমার রাজাকে বলল—বাবা, আমি দেশ ভ্রমণে বেরবো। নিজের ভাগ্য আমি নিজে খুঁজে দেখতে চাই। 
রাজামশাই ভারি খুশি। রাজপুরোহিতকে ডেকে, দিন ঠিক করা হোল। বেছে বেছে সেরা ঘোড়াটি আনা হোল ঘোড়াশাল থেকে। জিন চাপল ঘোড়ায়। রাজকুমার চেপে বসল ঘোড়ার পিঠে। 
রাজামশাই মোহর ভরা তিনটি থলে ধরিয়ে দিলেন ছেলের হাতে—এই রইল তোমার রাহা খরচ। মন যেমন চাইবে, খরচ করবে।
রাজকুমার রওণা হয়ে গেল। নির্দিষ্ট গন্তব্য নাই। কেবল সামনের দিকে মুখ করে এগিয়ে চলা।
চলতে চলতে একসময় এক পথিকের সাথে দেখা হোল ছেলেটির। আসলে সে এক পরী। মানুষের রূপ ধরে রাজার ছেলের সামনে এসেছে। 
লোকটি জানতে চাইল—কোথায় চলেছ গো তুমি? কিসের খোঁজে পথে নেমেছ?
কোনদিন না দেখা, পথের অচেনা বন্ধু। রাজার ছেলে সব কথা খুলে বলল তাকে। বলল—আমি জানতে চাই, বিধাতা পুরুষ কোন কথা লিখে রেখেছেন আমার ভাগ্যলিপিতে।
লোকটি বলল—এসো আমার সাথে। 
খানিক দূর এগিয়ে, বিশাল এক প্রাসাদের সামনে নিয়ে এলো পথিক—ঐ প্রাসাদে ঢুকে পড়ো। মনের বাসনা পূরণ হবে তোমার। নিজের ভাগ্যলিপি নিজেই পড়ে নিতে পারবে ভেতরে গেলে।
প্রাসাদে ঢুকে পড়ল রাজকুমার। ভেতরে পেল্লাই উঠোন। অবাক হয়ে গেল ছেলেটি। কত ভাগ্যলিপি ছড়িয়ে রাখা আছে এত বড় উঠোন জুড়ে। একটা একটা লিপি খুঁজে দেখতে লাগল সে। 
নিজের লিপিটা না পেয়ে, যখন একেবারে হয়রান অবস্থা, প্রাসাদের ভেতর থেকে একটি লোক বেরিয়ে এলো। একেবারে সামনে এসে পড়ল লোকটি—কী চাও গো? কী খুঁজছো এখানে?
--নিজের ভাগ্যলিপিটা আমি পড়ে দেখতে চাই। 
--সে তো খুব ভালো কথা। কিন্তু এখানে কেন? এগুলো সব তো কেবল গরীব-গুর্বো প্রজাদের জন্য। রাজারাজড়াদের লিপি কি আর উঠোনে পড়ে থাকবার জিনিষ গো? ভেতরে গিয়ে খোঁজ। পেয়ে যাবে।
আলো ফুটে উঠল রাজকুমারের চোখেমুখে। বলল—ভেতরে গেলে পেয়ে যাবো?
লোকটি বলল—এসো আমার সাথে। আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।    
ভেতরে ঢুকে পড়ল দুজনে। লোকটি খুঁজে-পেতে একটি ভাগ্যলিপি এনে ধরিয়ে দিল রাজকুমারের হাতে—এই নাও গো। এটাই বিধাতার লিখন, তোমার জন্য। 
লিপিটাতে চোখ পড়তে, চমকে উঠল ছেলেটি। জ্বলজ্বল করে ফুটে আছে লেখাগুলো—এ দেশের রাজার ছেলের বিয়ে হবে এক তাঁতির মেয়ের সাথে। ভয়ানক অসুস্থ সেই মেয়ে। রোগে কাহিল হয়ে, টানা ন’ বছর শুয়ে আছে বিছানায়।
চিৎকার করে উঠল রাজকুমার—না। এ হতে পারে না। কিছুতেই হতে দেব না আমি। নিজের ভাগ্য আমি নিজের হাতেই বদলে দেব। একজন তাঁতির অসুস্থ মেয়ের সাথে রাজার ছেলের বিয়ে? কিছুতেই হতে পারে না।
ভাগ্যলিপিটা তুলে নিল রাজকুমার। ঘোড়ার পিঠে চেপে, লোকটিকে জানতে চাইল—তা সেই তাঁতির মেয়ে থাকে কোথায়, বলতে পারো, বন্ধু?
লোকটির মুখে হাল্কা হাসি—উতলা হয়ো না গো। ঘোড়ায় বসো। ঘোড়া নিজেই নিয়ে যাবে তোমাকে।
ঘোড়া চলেছে। লাগামখানা রাজকুমারের হাতে ধরা। তবে, সে কেবল ধরাই। টানটোন কিছুই নাই। ঘোড়া চলেছে তার নিজের মতো। চলতে চলতে ঘন বনের ভিতর ঢুকে পড়ল ঘোড়া। 
বনের ভিতরেই এক সময় সূর্য ঢলে পড়ল পশ্চিমে। আকাশ ছোঁয়া বিশাল বিশাল বৃক্ষ সব। তাদের ফাঁক গলে গলে আঁধার ছড়িয়ে পড়ল বন জুড়ে। এখন তো কোথাও একটা আশ্রয় চাই। রাতটুকু কাটাতে হবে তো। 
অবশেষে দূরে একটা মিট্মিটে আলো দেখা গেল। আলো আছে, তার মানে, মানুষও আছে নিশ্চয়। ঘোড়া এনে হাজির করল সেখানে। 
ছোট্ট ভাঙ্গাচোরা একটা কুঁড়েঘর। ঘোড়া থেকে নেমেছে রাজকুমার। মানুষের সাড়া পেয়ে, বাড়ির মালিক বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে। রাজকুমার বলল—রাতটুকুর জন্য একটু থাকতে দেবে আমাকে?
লোকটি হাঁ করে চেয়ে আছে। বলল—দেখে তো কোনও রাজার ছেলে বলেই মালুম হচ্ছে। এই ভাঙা কুঁড়েয় ঠাঁই দিই কী করে? তোমাকে আপ্যায়ন করবার মতো কিছুই নাই আমাদের। তবুও অতিথি হোল ভগবানের দূত। আমাদের যা আছে, তাই তুলে দেব তোমাকে।
রাতে দুজনে খেতে বসেছে। রাজকুমারের মনে হোল, পাশের ঘরেও যেন কেউ একজন আছে।
খাওয়া শেষ হোল। রাজকুমার থাকতে না পেরে বলল—কিছু মনে কোর না। একটা কথা জানতে চাইছি। এই ঘরে কি আরও একজন কেউ আছে?
করুণ ছায়া পড়ল লোকটির মুখে—আমি একজন তাঁতি। সারা দিন মাকু ঠেলে ঠেলে, কোন রকমে দুটি ভাতের জোগাড় হয়। এই ঘরে আমার একটি মেয়েও আছে। তবে…
গলা বুজে এলো লোকটির। রাজকুমার বলল—কী হোল? থামলে কেন? বলো।   
--কিন্তু আমার মেয়েটি পঙ্গু। বিধাতার করুণ লিখন তার কপালে। টানা ন’বছর বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে আছে বেচারি।
গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল রাজকুমারের। একেবারে সঠিক জায়গায় এনে হাজির করেছে ঘোড়াটি। প্রাসাদের লোকটি তাকে ঠিক কথাই বলেছিল।  
রাজকুমার জানবে কী করে? প্রাসাদের লোকটিও আর কেউ নয়, সেই পরীই। এবারে হাজির হয়েছিল প্রাসাদের ভিতর থেকে।
সারা রাত দু’চোখের পাতা এক হোল না ছেলের। মনে একটাই ভাবনা। রেহাই পেতে হবে এই মেয়ের হাত থেকে। যে করেই হোক। নিজের হাতে বদলে দিতে হবে বিধাতার ভাগ্যলেখাকে। 
রাত নিঝুম। বাবা আর মেয়ে ঘুমোচ্ছে নাক ডাকিয়ে। চুপি চুপি উঠে পড়ল রাজকুমার। তাঁতির মেয়ের ঘরে ঢুকে, বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। ভারি রোগা চেহারা বিছানায় মিশে আছে যেন।
বিপদের বীজ উপড়ে ফেলতে হবে নিজের হাতেই। সামান্য সুযোগও রাখা যাবে না বিধাতার কেরামতির জন্য। ছোরা গোঁজা ছিল কোমরে। বের করে সজোরে গেঁথে দিল মেয়েটির বুকে।
সব শেষ। এবার নিশ্চিন্ত। যেমনটি এসেছিল, তেমনই চুপিসারে বেরিয়ে এলো বাইরে। রাজার দেওয়া তিন থলে মোহর ছিল সাথে। দরজার গোড়ায় নামিয়ে রেখে দিল থলে তিনটা। রুগ্ন মেয়ের ভার নেমেছে ঘাড় থেকে। এবার মোহর নিয়ে সুখে দিন কাটুক মানুষটার। দিন রাত আর মাকু ঠেলতে হবে না তাকে।
বাড়ি ফিরে এলো রাজকুমার। কপাল লিখন পড়ে এসেছে, জানালো রাজামশাইকে। তবে, তাঁতির মেয়েকে ছুরি মেরে এসেছে, সে কথা জানালো না। 
এভাবে কিছুদিন গেলো। রাজামশাই দেখছেন, মনমরা হয়ে আছে ছেলেটা। একদিন ছেলেকে ডেকে বললেন, রাজার ছেলেরা এভাবে ঘরে বসে থাকে না। বাইরে বেরোও না কেন?
আসলে, একটা পঙ্গু মেয়েকে রাগের বশে ছুরি বসিয়ে আসাটা যে ঠিক কাজ হয়নি, এখন ভালোই বুঝতে পারছে ছেলেটি। ভারি অনুশোচনা হচ্ছে মনে মনে। কাউকে বলতেও পারছে না। 
রাজামশাই বললেন—আমি ঘোড়া বের করতে করেছি। যাও,শিকার করে এসো। 
মৃগয়ায় চলেছে রাজকুমার। যেতে যেতে এক বনের ভিতর ভারি সুন্দর একখানা বাড়ি চোখে পড়ল তার। একেবারে ছোটখাটো একটা প্রাসাদ যেন।
ভারি কৌতুহল হোল ছেলেটির। এখানে এমন সুন্দর একটা বাড়ি এলো কোথা থেকে! 
কাছাকাছি হতেই, সুন্দরী এক মেয়েকে চোখে পড়ল বাড়িটাতে। কাঁচা সোনার মত গায়ের রঙ সে মেয়ের। ছেলেটা তো চোখ ফেরাতে পারছে না কোন মতেই।
দূর থেকে দেখে মন ভরে না। একেবারে সামনে গিয়ে হাজির হোল। তখন ভারি অবাক। এতো সুন্দরী কাউকে আগে দেখেনি কখনও। ঘোড়া থেকে নেমে, মেয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো রাজকুমার।
--এ দেশের রাজার ছেলে আমি। তোমাকে দেখে, ভারি ভালো লেগেছে আমার। তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি আছো?
রাজকুমারের কথা শুনে, হাসি ফুটে উঠল মেয়েটির মুখে। মাথা ঝাঁকিয়ে জবাব দিল—রাজার ছেলের সাথে বিয়ে হবে, আপত্তি করব কেন?
অমনি আর দেরি নয়। ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে, সোজা রাজবাড়ি। রাজামশাই জানলেন, নিজের মেয়ে নিজেই পছন্দ করেছে রাজকুমার। শুনে ভারি আনন্দ হোল তাঁর। 
🍂

রাজবাড়িতে সাড়া পড়ে গেল। রাজার ছেলের বিয়ে বলে কথা। মহা ধুমধাম শুরু হয়ে গেল। বিয়েও হয়ে গেল একদিন। টানা সাত দিন ধরে ভূরিভোজ খেলো প্রজারা। 
বিয়েবাড়ির হৈ-হট্টগোল মিটেছে। একদিন বসে বসে বউয়ের সাথে গল্প করছে রাজকুমার। নতুন বউ বলল—সত্যি করে বলো তো, তুমি আমাকে ভালবাসো?
--বাসিই তো। এ আবার বলবার কথা না কি? নইলে, বিয়ে করলাম কেন? 
--তাহলে কথা দাও, আরও সুন্দরী কাউকে দেখলে, আবার তাকে বিয়ে করে বসবে না।
রাজকুমার হাসি মুখ করে বলল—নাগো, না। আর বিয়ে করবো না কাউকে।
বউ বলল—এমনি এমনি বললে হবে না। আমার বুকে হাত দিয়ে বলো কথাটা। 
--আচ্ছা বাবা, আচ্ছা। তাই বলছি। বলেই, মেয়েটির বুকে হাত দিয়েছে রাজকুমার। হোল কী, সাথে সাথেই হাত সরিয়ে নিল সে। ভয়াণক অবাক হয়ে গিয়েছে রাজার ছেলে। চোখেমুখে বিস্ময়। বউ বলল—কী হোল গো?
রাজকুমার বলল—তোমার বুকে কী ওটা? শক্ত একেবারে পাথরের মতো! 
বউ বলল—সে এক দারুণ ঘটনা। শোন তাহলে। 
পুরাণো কথা বলতে শুরু করল মেয়েটি— খুবই সাধারণ বাড়ির মেয়ে আমি। আমার বাবা ছিল একজন গরীব তাঁতি। আমিও ভারি রুগ্ন ছিলাম। টানা ন’বছর বিছানায় পড়েছিলাম পঙ্গু হয়ে। বেশি দিনের কথা নয়। একদিন এক যুবক এসে হাজির হোল বাড়িতে। রাতটুকুর জন্য আশ্রয় নেবে বলে।
একটু থামল সেই মেয়ে। তার পর বলল—গভীর রাত। পাশের ঘরেই শুয়েছিলাম আমি। সে ছেলে আমার ঘরে ঢুকে, একটা ছোরা আমূল বসিয়ে দিয়েছিল আমার এই বুকে।
কথা থেমে গেল তার। রাজকুমার বলল—থামলে কেন, বলো। তার পর কী হোল।
--কেন যে খামোকা একজন অচেনা অজানা দুর্বল মেয়েকে মারতে চেয়েছিল মানুষটা, আজও জানা যায়নি সে রহস্য। তবে জানো, ভারি দয়ালু ছিল মানুষটি। এক রাতের ঐটুকু সময় বিশ্রামের জন্য, তিন-তিনটে মোহর ভরা থলে দিয়ে গেছল আমাদের। 
--তাই না কি?
--হ্যাঁ, তাই তো। তাতেই তো অবস্থা ফিরে গেল আমার বাবার। অতো বড় একটা বাড়ি হয়েছে। জমি-জিরেত, একপাল ভেড়া—কত কিছু হয়েছে সেই মানুষের দয়ায়। এই বয়সে বাবাকে আর হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটতে হয় না। 
মুখ দিয়ে কথা সরছে না রাজকুমারের। কী বলবে। উত্তর জোগাচ্ছে না তার। কোন রকমে বলল—কিন্তু তোমার বুকের অবস্থা এমনটা হোল কেন? 
সেও তো আমরা ঠিক জানি না। ভোর বেলা আমাকে দেখে, বাবা হাত বুলিয়ে দিয়েছিল, ক্ষতের জায়গাটায়। তাতেই রক্ত ঝরা বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু ঝরে পড়া যত রক্ত জমে গিয়ে, কাঠ হয়ে আছে আজও। 
কথা শেষ করল মেয়েটি। স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে, সে অবাক। রাজকুমারের দু’চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে অঝোরে। 
সে ব্যস্ত হয়ে বলল—হলটা কী তোমার? কাঁদছো কেন তুমি? 
রাজার ছেলে বলল—তোমার কাহিনী শুনলাম। আমার কথা শোন এবার। 
গড়গড় করে সেদিনের ঘটনা বলে গেল বউকে। বিধাতার কপাল লিখন বদলে দিতে গিয়েছিলাম আমি। তাই তো তোমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম। 
কথা শেষ করে রাজকুমার বলল—তোমরা মাপ করো আমাকে। খুব বড় অপরাধ করেছিলাম আমি।
তা শুনে বউ তো আহ্লাদে আটখানা। বলল-- মাপ চাইছো কেন গো? তুমি ছোরা মেরেছিলে, তাতেই না আবার সেরে উঠলাম আমি। দেখতেও কত না সুন্দর হয়েছি। তাই তো তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাইলে। মোহরের থলে রেখে এসেছিলে তুমি। তাতেই না সব দুর্দশা দূর হয়েছে আমার গরীব বাবার। আমাদের কাছে তুমি তো আস্ত ভগবান।
ছেলের মন থেকে কিন্তু যায় না। সে বলল—কিন্তু তোমার বুকের এই পাথর?
মেয়েটি বলল-- এ আর এমন কী কথা। তোমার ছোরার ঘায়ে রক্ত ঝরেছিল। তাতেই পাথর হয়েছে। এবার তুমি হাত বুলিয়ে দাও। পাথর গলে যাবে। মিটে গেল ঝামেলা। 
আহা,কী সহজ আর সরল গরীবের এই মেয়ে। কী গভীর বিশ্বাস তার! রাজকুমারের বুকের পাথরও নেমে গেল তার কথা শুনে।

Post a Comment

0 Comments