পশ্চিমবঙ্গের লৌকিক উৎসব, পর্ব -- ৮৯
কোল(হো) জনজাতির উৎসব
ভাস্করব্রত পতি
কোল(হো)দেরও উৎসবের আঙিনা রয়েছে। আনন্দ আছে। মেতে ওঠে নানা লৌকিক উৎসব তথা পূজা পার্বণের জোয়ারে। ১৫ ই পৌষ থেকে ১৪ ই মাঘ পর্যন্ত সময়কালকে কোলরা বলে 'ম্যাগা মাস'। একে প্রথম মাস বলা হয়। এ সময় 'লুকুহাড়াম' এবং 'লুকুবুড়ি' অর্থাৎ আদি বাবা মায়ের মিলন হয়েছিল। তাই অনেকে এই মাসের সময় অশ্লীল শব্দ দিয়ে উৎসব পালন করে। এ সময় ৭ দিন ধরে পালন করা হয়।
কোলদের উৎসবের সংসারে যে যে প্রধান প্রধান উৎসবের খোঁজ আমরা পেয়ে থাকি, সেগুলি হল মাগে বঁগা (মাগে পূজা), মাগে সুন (মাগে নাচ), মাগে পরব (মাগে উৎসব), হেরঃ বঁগা (বীজ বপন করা), হরৌঃ সুন (বীজ বপনের) নাচ), বাঅ সুন (ফুল নাচ), বাঅ বঁগা (ফুল বা বসন্ত পূজা), হেরঃ পরব (বীজ বপন উৎসব), সারাঙ বঁগা (বড় পূজা), কলম উটানী, হ্যারঃ দুরাও (বীজ বপনের গান), অআঃ বঁগা (বাড়ির পূজা), দেশউলী (বেশাউলী), বাআ দুরাঙ (ফুল গান) ইত্যাদি।
বাআ পরব -- সাঁওতালিতে একে বলে 'বাহা পরব'। মাগ্যা পরবের পর ফাল্গুন চৈত্রতে আয়োজিত হয় বাআ পরব। এটি বসন্ত উৎসবের মতো। এসময় ফুল ফল পূজো করা হয়। নতুন জন্মানো ফুল, ফল পূজা করার আগে খাওয়া হয় না। পূজার পরই খেতে হয়।
গ্রামের নির্দিষ্ট জায়গা ‘জায়রা' তান (থান) এ পূজোর আয়োজন করা হয়। প্রতিটি পরিবার থেকে নিজস্ব হাঁড়িকুড়ি নিয়ে এসে নিজেরাই উনুন বানিয়ে ফেলেন সেখানে। প্রত্যেকেই একটি করে মুরগি নিয়ে আসে। সেই মুরগিকে জায়রা তান (থান) এ ‘দেউরী’ বা পূজক পূজা দিয়ে বলিদান করে। সেই মুরগি মাংস হিসেবে ছাড়িয়ে ভাগ বাটোয়ারা করা হয় পরিবারগুলির মধ্যে। মাথাগুলো সবই নেয় দেউরী বা পুরোহিত। কেবল ধড়গুলো পায় মুরগির মালিকরা।
জায়রা থানে তৈরি করা উনুনেই বিভিন্ন পরিবার নিজেদের মতো রান্নাবান্না করেন। রান্নার শেষে একটু ভাত এবং মাংস ঐ দেউরীকে দান করা হয়। তারপর পুরোহিত সেই ভাত এবং মাংস পূজা করে (বোঙ্গা) সেই 'প্রসাদ' ছোট ছোট বাচ্চাদের মধ্যে বিলি করে। তখন বাচ্চারা কাক বা অন্য পাখির মতো কিচির মিচির শব্দ করতে করতে ঐ প্রসাদ নিয়ে চলে যায়। তারপর লাইন দিয়ে বসে একসঙ্গে সকলকে রান্না করা ভাত ও মাংস প্রত্যেকে প্রত্যেক পরিবারকেই বিলিবন্টন করে। এবার ‘দেউরী’ বিদায়ের পালা। তাঁকে নতুন কাপড় দেওয়া হয়। সে সব কাঁধে তুলে মাদল বাজিয়ে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
বাআ দুরাঙ — বাআ পরবের গান। ফুল গান। বাআ দুরাঙ বা দুরাঙ করতে করতে দেউরীকে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর সারারাত ধরে আনন্দ করা হয় হাঁড়িয়া খেয়ে। মদ প্রচলিত নয়। জাতিগত প্রথায় হাঁড়িয়া বা হেঁড়িয়া খাওয়াই রীতি।
হেরঃ পরব — বীজ বপনের উৎসব হল হেরঃ পরব বা হ্যারঃ পরব। বৈশাখ জৈষ্ঠ্যতে অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসব। বীজ বপন করার আগে বীজকে পূজো করে অন্য বীজধানের সঙ্গে মিলিয়ে ছড়ানো হয়। এই পুজো করে মুঠো ধান তোলাকে বলা হয় ‘হ্যারমুট’।
জমনামা — ভাদ্র মাসে যখন আউস ধান কাটা হয় সেই ধানের প্রথম খাওয়ার উৎসবই হল জমনামা বা জমনা। এ সময়ই বছরের প্রথম ধান কাটা হয়।
‘জম’ অর্থে খাওয়া
‘নামা’ অর্থে নতুন
কলম উটাশী — বৈশাখ জৈষ্ঠ্যতে বীজ বপনের পর ধান কাটার শেষে উঠোনে তোলার উৎসবই হল কলম উটাশী। উঠোনে ধান তোলার পর সেই ধান ঝাড়াই মাড়াই করে ধান ঘরে তোলার শেষে হয় উৎসব।
কলম — উঠোন
শারাং বোঙ্গা – এটি পারিবারিক পূজা হলেও দেশের লোককে ডাকতে হয়। ঘরের বাইরে কোনো জঙ্গলে পূজা করা হয়। বাড়ি থেকে দূরে পূজা করা হয়।
তুপুনাম — নবজাতকের নামকরণ ও সাক্ষীকরণ করাকে বলে তুপুনাম বা সাক্ষীনাম। কোল তথা হো জাতির সমাজে শিশু জন্মানোর এক মাসের মধ্যে এই তুপুনাম বা সাকীনাম প্রক্রিয়াটি হয়। ছেলে হলে এক্ষেত্রে তাঁর জ্যাঠামশাই, ঠাকুরদাদা, কাকুদের মধ্যে কোনো একজনকে সাক্ষী করানো হয়। এবং তাঁদের নামেই নবজাতকের নামকরণ করা হয়। তেমনি শিশুটি যদি মেয়ে হয় তবে সেক্ষেত্রে জ্যাঠাইমা, ঠাকুমা, কাকিমা বা মামিমাদের নামে নামকরণ করার রেওয়াজ রয়েছে।
শিশু জন্মানোর পর থেকে নাভি খসানোর দিন ঘরে কাপড় কাচা হয়। পরিষ্কার করা হয়। এই দিনটিকে বলা হয় “তিকি এ্যাড়াঃ’। যতদিন না নাভি খসবে ততদিন তাঁর বংশের বাদবাকিরা কেউ নবজাতকের বাড়িতে খাবেনা। একে বলে ‘জনমবিসিঃ' বা জন্ম অশৌচ পালন। এই জনমবিসিঃ চলে তুপুনাম এর সময় পর্যন্ত।
আঁতুড়ঘরকে বলা হয় 'আদিং'। এই ঘরে কোনো ভিন গোত্রীয় লোক ঢুকতে পারবে না। এই ঘরে বাপ ঠাকুর্দা যাঁরা মারা গেছে তাঁদের পুজো দেওয়া হয়। তুপুনামের সময় নতুন মাটির হাঁড়ি বসিয়ে বলা হয় এই শিশু নবজাতককে আজ থেকে আপন করে নাও। দূরে ঠেলে দিও না। একেই বলে সাক্ষীকরণ। আদিং ঘরকে মন্দির বলেই মনে করা হয়। এঁদের ‘মুখে ভাত' বা অন্নপ্রাশন হয়না। তুপুনামের আগে (আদিং ঘরে ঢোকানোর আগে) যদি কোনো শিশু মারা যায় সেক্ষেত্রে অবশ্য তাঁর শ্রাদ্ধ শান্তি করা হয় না।
বিবাহ কেন্দ্রীক লৌকিক আচার – সাধারণতঃ কোল সমাজে চার ধরনের লৌকিক বিবাহ প্রথার রেওয়াজ রয়েছে।
ক) দুআর -- ইতডু সিন্দুর এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রথা। দেখাশুনার মাধ্যমে দুই পক্ষের ইচ্ছায় বিবাহ দেওয়া হয়। পণপ্রথা রয়েছে। মেয়ের ঘরকে ছেলেরা পণ দেয়। গরু, টাকা ইত্যাদি দিতে হয়। দিনের বেলা ছেলে যায় মেয়ের বাড়িতে বিয়ে করতে। যাওয়ার আগে ‘এ্যারাবোঙ্গা' করা হয় রাস্তার মাঝে। এ আসলে ‘বাধা কাটানো' হয়। যাতে নব দম্পতির বিবাহিত জীবনে অশুভ কিছু না ঘটে। যেখানে পূজা করা হয় সেখানে মাড়িয়ে যাওয়া এবং আসা হয়। এ সময় গান করা হয় বেহাই বেহাইতে (দুই বেহাই মিলে)। এই গান করাকে বলে ‘বালা দুরাং'। সিঁদুর দানের সময় গান হয়। এই গানকে বলে ‘সিন্দুর রাকাব দুরাং'। বিয়েতে বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয় ধামসা, মাদল, বানাম, র্যাতা, রত (বাঁশি) ইত্যাদি।
খ) টুঙ্কি দিপিল – বরের বাড়িতে মেয়েকে পৌঁছে দেওয়া হয় যে বিয়েতে সেটাই টুঙ্কি দিপিল। এক্ষেত্রে কনের বাড়ির অবস্থা তুলনামূলকভাবে বরের বাড়ির চেয়ে খারাপ থাকার কারণে এই পদ্ধতি অনুসৃত হয়। দুই পক্ষের সম্মতিতে এই বিবাহ হয়।
টুঙ্কি—বাঁশের তৈরি পদ্ম
দিপিল—মাথায় বহন করা
এই ‘টুঙ্কি দিপিল' এ বিবাহের যাবতীয় রীতিই পালিত হয়। কিন্তু তা সবই হয় বাপের বাড়িতে।
গ) অপর তিপি -- জবরদস্তি করে যে বিবাহ হয় তা হল অপর তিপিঃ। অর্থাৎ মেয়েকে হরণ করে বা তুলে নিয়ে গিয়ে বিবাহ রীতি। বিয়ের বাকি সব পদ্ধতি একই। মেয়েকে নিয়ে বর নিজের বাড়িতে গিয়ে সেখানে বিবাহের যাবতীয় নিয়মকানুন পালন করেন। এটি টুঙ্কি দিপিল' এরই মতো। কেবল এখানে মেয়ের বাড়ির কোনো সম্মতি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনা বিবাহেচ্ছু পাত্র।
ঘ) ক্যায়া ক্যাপায়া — পরস্পরের পছন্দ অনুযায়ী বিবাহ পদ্ধতিকেই বলে 'ক্যায়া ক্যাপায়া'। এই বিয়েতে কেবল পাত্র এবং কন্যাই নিজেদের পছন্দ করে। অর্থাৎ প্রেম করে পছন্দ করে। বাড়ির অন্যরা এতে 'নাক' গলায় না। তাঁদের পছন্দ বা অপছন্দ করার কোনো বিষয় ধরা হয় না। ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে ভালোবাসা জন্মানোর পর এই বিবাহ অনুসৃত হয় পাত্রের বাড়িতে। 'ক্যায়া ক্যাপায়া' অর্থে ডাকাডাকি করে বিয়ে। বিবাহ রীতি যথারীতি আগের মতোই।
মৃত্যু কেন্দ্রীক লৌকিক আচার -- কোল হো সমাজের কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে সেক্ষেত্রে মৃতদেহ সৎকারে দু ধরনের পন্থা অবলম্বন করা হয়ে থাকে।
পন্থা দুটি হল —
ক) তপা বা মাটিতে পোঁতা বা কবর দেওয়া।
খ) উরুর বা দাহ করা বা পোড়ানো। তবে কোল সমাজের কেউ যদি কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় সেক্ষেত্রে এই দুই পদ্ধতি পারৎপক্ষে অনুসৃত করা হয়না। এক্ষেত্রে মৃতদেহ বনে ফেলে দেওয়া হয় অথবা জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
সাপের কামড়ে বা কোনো অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে সেক্ষেত্রে মৃতদেহ দাহ করা হয় বা পুঁতে ফেলা হয়। কোলরা শ্মশানকে বলে 'শাসন'। দাহ বা পোঁতা উভয় ক্ষেত্রেই সৎকারের পর পাথর এনে সৎকার স্থানে চাপা দেওয়া হয়। সৎকারের সময় দক্ষিণ দিকে মাথা এবং উত্তর দিকে পা করে পোড়ানো হয়। পোঁতার সময় মৃতদেহকে শুইয়ে (চিত করে বা উপর দিকে মুখ করে) পোঁতা হয়। এই পোঁতাকে বলা হয় 'তপাঃ'। পোড়ানোর পর আত্মাকে ডেকে আনার সূত্রে ওখান থেকে জুন ঘাস পায়ে (বাম পা) করে টেনে আনা হয়। এই জুন ঘাসকে বলা হয় 'চিরু'। পাঁচ বা সাত পা (পাউড়ি) টেনে এনে হাতে তুলে নেওয়া হয় চিরু। এরপর আত্মাকে ডেকে আনা হয় ধরে। সেই ঘরের বাইরে একটা হাঁড়িতে এই চিরুটি রেখে চাপা দেওয়া হয়। এখানে প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় দুপুরে ঐ মৃত ব্যক্তির ব্যবহার্য জিনিস দেওয়া হয়। দাঁতনকাঠি, ভাত ইত্যাদি দেওয়া হয়। আত্মাকে ঢোকানো হয় আদিং ঘরে। হাঁড়িটিকে বলা হয় 'চাটু"। মৃত্যুর পর কোনো নির্দিষ্ট দিনে শ্রাদ্ধ হয়না। কোনো নির্দিষ্ট দিন অন্তর হয়না। মোটামুটি ১৫ দিন থেকে ১ মাসের মধ্যেই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করা হয়। ন্যাড়া হওয়ার প্রথা রয়েছে। মৃত্যুর দিনেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কত তারিখে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হবে। ততদিন পর্যন্ত তেল মাখা, আমিষ খাওয়া বারণ থাকে।
শ্রাদ্ধের দিন আত্মীয় কুটুম্বদের ডাকা হয়। বেহাই কুটুম্ব প্রথমে এসে মাথার চুল কাটলে তারপর ন্যাড়া হওয়ার কাজ শুরু হয়ে যায়। সামান্য পরিমাণ হলেও বাড়ির মহিলাদেরও নোখ চুল কাটার নিয়মবিধি পালন করতে হয়।
নোখ — সারসার, চুল— বালে, চুল ছাঁটা -- হয় অ
এই 'হয় অ' করে 'বালাসাকা' বা বেহাই কুটুম্ব। এরপর স্নান করে নতুন বস্তু পরানো হয়। বেহাই কুটুম্বই প্রথম বস্ত্র পরায়। এরপর গ্রামের মানুষই তেল মাখা এবং আমিষ খাওয়ার ছাড়পত্র দেয়। একে বলা হয় 'আঁইসপুটাঅ'।
আদিং ঘরে আত্মা প্রবেশ করানো হয়। একে বলে 'রআঁ ক্যায়া আদ্যার'। আদিং ঘরে নতুন হাঁড়িতে ভাত রান্না করে সাজিয়ে রাখা হয়। শালপাতার বাটি তথা 'পুর' তে ভাত ও তরকারি সাজানো থাকে। দরজায় ছাই কুলায় রেখে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘরের ভিতরে একজন বা দুজন থাকে। বাকিরা সবাই আদিং ঘরের বাইরে থাকে। সন্ধ্যার পরে যখন আত্মাকে ডাকা হয় তখন এটি করা হয়।
সেসময় যেখানে কাকবোল দেওয়া হত সেই জায়গা থেকে তাঁর বাড়ির লোক মিলে যার যেমন সম্পর্ক তেমন অনুযায়ী ডেকে বলা হয় 'এসো, আর বাড়ির বাইরে থেকো না। এবার ঘরের মধ্যে এসো'। কিন্তু, ঘরের দরজা পর্যন্ত এসে ঘরের মধ্যে থাকা দু'জনকে জিজ্ঞাসা করা হয় (কোনো আলো জ্বালানো হয় না তখন) 'দুকু কি সুকু'? বা 'দুঃখের না সুখের'?
তখন ভিতরের মানুষ উত্তর দেন 'দুকু' অথবা 'সুকু' যে কোনো একটি উচ্চারণ করে। যদি 'দুকু' বলা হয় তবে এঁরা, আবার ফিরে যাবে। 'সুকু' বললে লম্ফ জ্বেলে ছাইয়ের ওপর কোনো 'ছাপ' পড়েছে কিনা তা পরখ করে দেখা হয়। যদি কোনো ছাপ না পড়ে তখন ফের সেই কাকবোলের স্থানে গিয়ে ডাকতে হয়।
যদি ছাপ পড়ে, তবে বিশ্বাস হয় যে মৃতের আত্মাটি ঐ আদিং ঘরে প্রবেশ করেছে। এই ছাপটি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। ছাপ দেখা গেলে পরে আদিং ঘরে মুরগী বলি দেওয়া হয় ঐ মৃত ব্যক্তির নামে। তবে এক্ষেত্রে সেই মুরগী বলি দেওয়া হয় যেটি এখনও ডিম দেওয়া শুরুই করেনি। তাছাড়া 'কালটি মুরগী' বা লাল রঙের মুরগী খোঁজা হয়।
মুরগী — সিম
কোল(হো)দের উৎসব, অনুষ্ঠান, আচার পরবের এই দীর্ঘ তালিকায় আজকাল ঢুকে পড়েছে অন্য সংস্কৃতির ছোঁয়া। বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলতায় মানুষ আজ বেসামাল। ভিন্নতর ভাষা, ভিন্নতর সংস্কৃতি এবং ভিন্নতর পরিবেশ এখন কোল সমাজের অন্দরমহলে জোরকদমে নাড়া দিতে শুরু করেছে। এমতাবস্থায় সেইসব বাইরের সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে নিজেদের সম্পূর্ণ নিজস্ব সংস্কৃতিকে ধরে রাখা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যান্য সমাজের মতো কোল সমাজেও অনুপ্রবেশ ঘটেছে ভিন্ন সংস্কৃতি। মানুষের হাতে সময় কম। সংস্কৃতির আগ্রাসন তাই অতি সহজে ঘটছে। লুপ্ত হয়ে পড়ছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল এবং সেকেলে ধ্যানধারণার সংস্কৃতিগুলো। আধুনিক যুগের শিক্ষিত সমাজ আর মন থেকে মেনে নিতে চাইছেনা প্রাচীনপন্থীদের তৈরি সামাজিক নিয়ম কানুনগুলো। তাই কোল সমাজেও ক্রমশঃ ব্রাত্য হওয়ার পথে হ্যারঃ দুরাঙ, মাগে দুরাঙ, সারাঙ বঁগা, হরৌঃ সুন, বাঅ বঁগা ইত্যাদি পার্বণগুলি। এভাবেই চলতে চলতে এক সময় এসব হারিয়ে যাবে চিরতরে।
0 Comments