শিবালোক দাস
বারো হাত মাটি খুঁড়েও পেলাম না
একটি কাটা বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ,
তবু কাল সন্ধের পর শত মুক্তোর
গুঁড়ো দিয়ে তুলেছিলে বিষদাঁত।
আহা, রক্ত তখন সবুজ অরণ্য,
আমার শয়নকক্ষে ছায়া দেয়।
ভাতের আড়ালের শব্দের ঝংকারের
মতো মাথাচাড়া দেয় জলতরঙ্গ,
চৌকাঠ পার করতেই পারিনি এতদিন।
একটি চুম্বনের জন্য আমাকে এখনও
কি একটু জল দেবে না ? দেবে না
রুইতনে লুকিয়ে রাখা ছকভাঙা আয়ু ?
না, রোমন্থনের জন্য তোমার সজ্জিত
আলিঙ্গনে আমি গোপন করব না কোনো
পোড় খাওয়া শেষ নিপাট চঞ্চু।
লুপ্তপ্রায় নগরীর কাছে আমি জীবন্মৃত কবি।
গুলির পরিবর্তে দক্ষিণের বাতাস বেষ্টন
করেনি আমায়। পায়ে রেখে গেছি স্রোতস্বিনীর
ঋণের জন্য কিছুটা মরুদ্যান। বালির উপর
কেন্দ্রীভূত আমার সাত প্রহরীর দরজা।
কেউ ওদের একটু খুলে দাও দুই হাতের পাতায়।
বারো হাত বাড়িয়ে ফিরিয়ে আনি সমস্ত বর্গ
যারা এক অদৃশ্য বলে হতে চেয়েছিল বর্ষোন্মুখ,
তারা বদ্ধ হতে চায়নি, উন্মাদও হতে চায়নি।
বন্ধ চোখে নিয়েছিলাম মাটির পরতে রাখা
গুঁড়িয়ে যাওয়া একমাত্র অমসৃণ খরোষ্ঠী,
চেয়েছিলাম নক্ষত্রদের দিব্যদৃষ্টি দিতে।
ঠোঁটের বিনিময়ে চাইনি কখনও তোমার
করতল, যেটা আমায় আজও মুগ্ধ করে
জলপ্রপাতের মতো, একবার মনুষ্যজন্মের জন্য
আজ তোমার কাছে দাম্ভিক হতে দাও কবিতা।
মৃত্যুর কাছে মৃত্যুর মতো ভোর চেয়েছি,
একথা এখন সর্বহারার একমাত্র সম্বল।
তার জন্য উন্মুক্ত হবে জেনেই আমি হাত
বাড়িয়ে চাইনি দুটি বিভক্ত আত্মসমর্পণ।
বরং নাও আমার বুকের উপর সদ্য তৈরি
হওয়া রঙিন ছাই, যার জন্য আজ চাঁদ দুঃখিত।
নীল বিষের মতো জোরালো হোক সমস্ত অঙ্কুশ।
এতদিন মাটির ভেতর ক্রমবর্ধমান সরীসৃপ
মুছে দিয়েছে শত আঙুলের দাগ,
শুধু বিষদাঁত রয়ে গিয়েছে।
প্রত্যেক দিন সূর্যাস্তের পর আমাকে শিখিয়েছে
ক্ষয় ও ক্ষুধার প্রকৃত সত্য, সুন্দর, তুমিও নাও।
তুলে নিতে হয় মুক্তোর গুঁড়োয়।
0 Comments