জ্বলদর্চি

সবুজ পাহাড় ডাকে..(খন্দধর-সুন্দরগড়-কেওনঝাড় ভ্রমণ)/মৌমিতা চ্যাটার্জী

সবুজ পাহাড় ডাকে.........
(খন্দধর-সুন্দরগড়-কেওনঝাড় ভ্রমণ)
মৌমিতা চ্যাটার্জী

চরম ব্যস্ততম বর্তমান জীবনেও, প্রতিটি সাজে, কাজে ধ্বনিত হয় উপনিষদের চরৈবেতির মহামন্ত্র যা ছন্দ তোলে হৃদয়তন্ত্রীতে। চলার আরেক নাম‌ই জীবন। অজানাকে জানতে, অচেনাকে চিনতে, ক্ষুদ্র জ্ঞানের ভান্ডারকে নিত্য পরিপূর্ণ করতে আমরা বেছে নিই ভ্রমণ নামক মহৌষধি। 

গতানুগতিক জীবনের ছন্দ ফেরাতে এবার ভ্রমণের জন্য বেছে নিয়েছিলাম এমন একটি জায়গা যার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য এখন‌ও ইট,কাঠ, পাথরের কোলাহল, থেকে খানিক দূরে রয়ে গেছে। খানিক দূরে এই জন্য‌ই বললাম কারণ প্রদূষণ সেখানে এখন‌ও সেভাবে পাকাপাকি আসন তৈরী করতে পারেনি, সেখানে প্রকৃতির নিবিড় আলিঙ্গনে মনে প্রাণে আসে অদ্ভুত এক প্রশান্তি। 
আমাদের এবারের গন্তব্য ওড়িশার সুন্দরগড় জেলায় অবস্থিত খন্দধর নেচার ক্যাম্প এবং কেওনঝড়। শ্যামবনানীর কোলে লালিত এই অঞ্চলটিতে আমরা ছুটে গেলাম সবুজের টানে, একটু সবুজকে চোখ দিয়ে ছুঁয়ে দেখার উদ্দেশ্যে। 
প্রকৃতির মধ্যে থেকে তার ঔদার্য্য অনুভবের জন্য আমাদের মেয়াদ বরাদ্দ ছিল পাঁচদিন। 
২৬ শে সেপ্টেম্বর, রাত ১১.৪০ মিনিট। 12834 হাওড়া-আমেদাবাদ সুপারফাস্ট, প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে ধীরে ধীরে গতি নিল আর আমরা এগোতে লাগলাম। যাতায়াতে সময় লাগে কমবেশী সাড়ে পাঁচ ঘন্টা কিন্তু ট্রেন ঘন্টাখানেক লেট্ থাকার জন্য ২৭ শে সেপ্টেম্বর রৌরকেল্লা স্টেশানে পৌঁছাতে আমাদের প্রায় সাড়ে ছটা বেজে গেল। স্টেশন সংলগ্ন ওয়েটিং রুমে ঘন্টা আড়াই কাটাতে হল, কারন হোটেলের চেক ইন্ টাইম ছিল দুপুর ১২টা। ওটিডিসি র নথীভুক্ত (রেজিস্টার্ড) এজেন্সি থেকে গাড়ি আগেই বুক করা ছিল। এই ব্যাবস্থা আমরা অনলাইনে আগেই কলকাতা থেকে করেছিলাম। রৌরকেল্লা স্টেশন থেকে খন্দধর নেচারক্যাম্পের দূরত্ব প্রায় ৯০ কিমি। সেপ্টেম্বর মাসে এখানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়, তাই পথের দুপাশে হরিৎক্ষেত্র, সতেজ সবুজের সারি মূহুর্তেই ভুলিয়ে দেয় সব বিষাদ, উদ্বেগ।
🍂
যাওয়ার পথে সাক্ষাৎ হল দেওধর নদীর সাথে। এই নদীটি মতান্তরে ব্রাহ্মনী নদী। চারদিকে সুন্দরগড় অঞ্চলের ঘন জঙ্গলের মাঝে বয়ে চলা নদীর পূর্ণযৌবন প্রকাশ পাচ্ছে বৃষ্টিচ্ছ্বাসে। ধোঁয়া ধোঁয়া মেঘের দল ছুঁয়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝে, মনে হচ্ছিল যেন স্বপ্নরাজ্যে এসে পড়েছি। তবে স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার তখন আর‌ও অনেকটাই বাকি ছিল।
নদীকে রেখে ভায়া রৌরকেল্লা-দেওঘর রোড ধরে, আমরা এগিয়ে চললাম প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরত্বে খন্দধর নেচার ক্যাম্পের দিকে। ক্যাম্পটি দেখাশুনার দায়িত্বে রয়েছে ওড়িশা ট্যুরিজম্ ও ফরেস্ট মিনিস্ট্রি। এখানে রয়েছে ছটি কটেজ ও চারটি টেন্ট হাউজ্। আমাদের আস্তানা ছিল টেন্টহাউজ। টেন্ট হাউজ্ সাজানো গোছানো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
কটেজ ও টেন্ট হাউজের বারান্দায় বসে দূরের জলপ্রপাতের শোভা প্রত্যক্ষ করার স্বর্গীয় অনুভূতি ছিল বিশেষ প্রাপ্তি। 
২৭ তারিখ সারাদিন কাটল টেন্ট হাউজে। এখানে থাকা থেকে প্রাতঃরাশ, মধ্যাহ্নভোজ, সান্ধ্যকালীন জলখাবার এবং নৈশভোজ সব‌ই একটি প্যাকেজের মধ্যে পড়ে। সন্ধ্যেবেলা ঝিঁঝিঁর ডাক, ছাতিম ও নাম না জানা ফুলের সুঘ্রাণ, অদূরের জলধারার গর্জন, গা ছমছমে আলো আঁধারি,পাতা ঝরার খসখস আওয়াজ, মাঝে মাঝে দু একটি রাত্রিকালীন পাখির ডাক, সব মিলিয়ে অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতা। টেন্ট হাউজের পেছনেই ঘন জঙ্গল। এখানকার জঙ্গল গাংপুর ও বোনাইগড় জঙ্গলের অংশবিশেষ।

২৮ তারিখ সকাল ১১.১৫ নাগাদ আমরা র‌ওনা হলাম খন্দধর জলপ্রপাতকে আর‌ও সামনে থেকে উপভোগ করতে। ক্যাম্প থেকে ঢালু রাস্তা নেমে গেছে। তার থেকে আর কয়েক পদক্ষেপ- ব্যস্ তারপরই জলধারার কাছাকাছি পৌঁছানো। প্রথমে পড়বে একটি সুন্দর সাজানো উদ্যান। তারপর‌ই জঙ্গলকে দুপাশে রেখে পাহাড়ী পথে পাথুরে সিঁড়ি। প্রায় ৭০০ সিঁড়ি অতিক্রম করে তবে তাকে ছোঁয়া যায়। এখানে উল্লেখ্য প্রথম ৩০০ ধাপ অনয়াসে পার করা গেলেও পরবর্তী ৪০০ ধাপ যথেষ্ট খাড়া এবং অতিক্রম করতে বেশ বেগ পেতে হয়। সঙ্গে পর্যাপ্ত জল, গ্লুকোজ বহন করা প্রয়োজন। যাদের হার্ট কিংবা সিওপিডি জাতীয় সমস্যা আছে তাদের এখানে না আসা‌ই ভালো। 
সিঁড়ির পাশে বসে বিশ্রাম নেবার জায়গা আছে। এই সিঁড়ি অতিক্রম করতে আমাদের সময় লাগল প্রায় ২ঘন্টা। দুপুর ১টা ১৫ নাগাদ আমরা জলপ্রপাতের কাছাকাছি পৌঁছালাম।
কোরাপানি নালা খন্দধর পাহাড়ের প্রায় ২৪৪ মিটার উচ্চতা থেকে নেমে এসেই সৃষ্টি করেছে খন্দধর জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাতটি ওড়িশার দ্বিতীয় উচ্চতম এবং ভারতের নবম উচ্চতম জলপ্রপাত। পাহাড়ের ওপর থেকে সবেগে নেমেছে গলিত রজতধারা। শীতল হাওয়ার ঝাপট মনে শান্তির বার্তা বহন করে আনে। আহা! যদি সত্যি হত কবির অমোঘ বাণী! যদি সত্যি ধরিত্রীর তপ্ত বুকে ঝরে পড়ত এমন শান্তিবারি, তাহলে হয়ত কোনো দ্বন্দ্ব, বিভেদ, ঈর্ষা আর স্বমহিমায় বিরাজ করত না। 
এরপর নামল বৃষ্টি। জলধারার তখন সেকি উচ্ছ্বাস! সৃজন ছন্দে, পরমানন্দে সে নৃত্যরত। প্রকৃতির এই সার্থক রূপ দেখতে দেখতে কেটে গেল আর‌ও এক ঘন্টা। এরপর পালা অবতরণের। ধীরে ধীরে পিচ্ছিল পথ ধরে আমরা আবার নেমে এলাম আমার অস্থায়ী ঠিকানায়। এরপর যথারীতি মধ্যাহ্নভোজন, সামান্য দিবানিদ্রা, সান্ধ্যকালীন অন্ধকারের শোভা উপভোগ, নৈশভোজ ও ঘন শ্যামবনানীর নিকষ কোলে রাত্রিযাপন। কেটে গেল গোটা দিন। অন্ধকারের‌ও একটা নিজস্ব সৌন্দর্য থাকে, তার উপলব্ধি হল এই দুদিনে।

২৯ তারিখ আমরা যাত্রা শুরু করলাম সকাল ১০টায়। সুন্দরগড়-খন্দধর থেকে কেওনঝড়ের উদ্দেশ্যে। পথে সবুজের সমারোহ ও বোনাইগড় রেঞ্জের মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ার মত। ওড়িশা সরকারের ঝকঝকে রাস্তা যাত্রাপথকে আর‌ও সুগম করে। আঁকাবাঁকা মসৃণ পথ গিয়ে মিশেছে ৪৯ নং জাতীয় সড়কে। এই রাস্তা ধরেই কেওনঝড় পৌঁছাতে হয়। প্রথমে পৌঁছে গেলাম খন্দধর জলপ্রপাতের দ্বিতীয় শাখাটির মনোরম রূপ দেখতে। প্রথম শাখার মত বিস্তৃতি না হলেও উচ্ছ্বাস‌ কম কিছু নয়। খন্দধর পাহাড়ের সামনের অংশ পড়েছে সুন্দরগড় জেলার বোনাইগড়ে এবং পশ্চাৎদেশটি পড়েছে কেওনঝড় জেলায়। সুন্দরগড় সংলগ্ন বিশাল জঙ্গলটি বোনাইগড় জঙ্গলের‌ই একটি অংশ বিশেষ। 

এইদিন আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল বৈতরণী নদীর উৎসস্থল। ওড়িশার ছয়টি প্রধান নদীর মধ্যে বৈতরণী অন্যতম। নদীটির উৎপত্তিস্থল গুপ্তগঙ্গা পাহাড়, যেটি অবস্থিত গোণাসিকা নামক গ্রামে। এই নদীর 
প্রায় অর্ধেক কিলোমিটার ভূমির অভ্যন্তরে প্রবাহিত হয়েছে এবং বাইরে থেকে দৃশ্যমান নয়। তাছাড়া এখানকার জল গঙ্গার মত‌ই পবিত্র মনে করা হয়, তাই একে গুপ্তগঙ্গাও বলা হয়। এখানে রয়েছে মা বৈতরণী মন্দির। এই মন্দিরের অভ্যন্তরে রয়েছে একটি গাভীর মুখ (কিংবদন্তি অনুযায়ী মহাদেবের বাহন নন্দীমহারাজের মুখ) যার নাসাছিদ্র থেকে ব‌ইছে এই জলধারা। এর উৎপত্তি কবে কিভাবে হল তা কেউই জানেনা। এই জলেই মন্দিরে অবস্থিত ভগবান শিবের জলাভিষেক হয়। আশেপাশে ঘন জঙ্গল, পরিবেশ অত্যন্ত গম্ভীর এবং মনোরম। 
গোণাসিকা থেকে প্রায় ৪১কিমি পাহাড়ী রাস্তা পেরিয়ে ৪৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে আমরা এরপর পৌঁছালাম কেওনঝড় বম্বেচক্ টাউনে। এখানে ইন্ডিয়া হোটেল- আপাতত দুদিনের জন্য এটাই আমাদের অস্থায়ী ঠিকানা।

৩০ তারিখ সকাল ১০.৩০ টায় র‌ওনা হলাম কেওনঝড়ে বিখ্যাত তারিণী মন্দিরের উদ্দেশ্যে। বম্বেচক্ থেকে বেড়িয়ে ২১৫ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে আমরা চললাম ঘাঁটগাও তারিণীমায়ের মন্দির দর্শন করতে। কেওনঝড় টাউন থেকে মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিটার। কথিত আছে, কেওনঝড়ের রাজা পুরী থেকে মাকে রাজবাড়িতে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। মা এই শর্তে রাজী হন যে রাজা সামনে ঘোড়ায় চড়ে যাবেন এবং মা পেছনে আসবেন। রাজা কোনো অবস্থাতেই পেছন ফিরে দেখবেন না। মায়ের পায়ের নুপুরনিক্কণ‌ই তাঁর আগমনের বার্তা দেবে। শর্তানুযায়ী মা আসতে থাকলেন। একসময় ঘাটগাঁও র কাছে জঙ্গলের বালিতে মায়ের নুপুর আটকে যায়। রাজা আওয়াজ শুনতে না পেয়ে পেছন ফিরে তাকান। অঘটন ঘটে যায়, মা ওখানেই থেমে যান। পরবর্তীকালে জঙ্গল সংলগ্ন অঞ্চলে মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন মহারাজ। এখন‌ও গভীর জঙ্গলে মায়ের আদিমূর্তি রয়েছে। সেখানে কেউ যায় না। বাঘের উপস্থিতি সেখানে প্রবল। শুধুমাত্র বছরে একবার পয়লা বৈশাখের দিন তারিণী মাতা মন্দিরের মূল পুরোহিত সেখানে যান এবং মায়ের পুজো করেন। মন্দিরের নির্মল পরিবেশ মনের সব গ্লানি দূর করে। এখানে মায়ের মূল ভোগ নারকেল। শুধু মন্দির চত্বর থেকে কিনেই নয় দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা চাইলেই নারকেল পাঠাতে পারেন। ওড়িশাগামী যেকোনো বাসে নারকেল দিলেই তারা দায়িত্ব সহকারে মন্দিরে নারকেল পৌঁছে দেন। ভোগ খাওয়ার ব্যাবস্থাও আছে। জনপ্রতি মাথা পিছু ৭০টাকা। এখানে সুস্বাদু ভোগ গ্রহণ করে এরপর আমরা র‌ওনা দিলাম ভীমকুন্ডের উদ্দেশ্যে।

তারিণী মন্দির থেকে ভীমকুন্ডের দূরত্ব প্রায় ৩৬ কিলোমিটার। ২০ নম্বর এবং ২২০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে আমরা পৌঁছে গেলাম ভীমকুন্ডে। কেওনঝড় ও ময়ূরভঞ্জ জেলার সীমাবর্তী অঞলে অবস্থিত এই ভীমকুন্ড। এটি একটি ঝরণা যা ওড়িশার বৈতরণী নদীর‌ই অংশ। কিংবদন্তি আছে বনবাসকালে তৃতীয় পান্ডব ভীম এই কুন্ডটি খনন করেন গদার আঘাতে, স্নানের জন্য। এই অঞ্চলে রয়েছে সুন্দর পিকনিক স্পট, সুইমিং পুল। প্রকৃতিতে ছড়িয়ে আছে শুধু সবুজ। 

সামান্য জলযোগের পর ভীমকুন্ড থেকে বেরিয়ে ২২০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে র‌ওনা দিলাম সানঘাঘরা ফলস্ এর দিকে। দুটি স্থানের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। প্রায় ১৯৫০ ফুট থেকে লাফিয়ে নেমে আসা জলরাশি এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। এর জলধারা মিলিত হয়েছে বৈতরণী নদীর সাথে। জলপ্রপাতের চারিদিকে ছড়িয়ে আছে ডলোরাইট পাথর। প্রকৃতির কোলে, পর্ণমোচী বৃক্ষের সমারোহে, তৈরী হ‌ওয়া গভীর সবুজের সারিতে শেষ বিকেলের কনে দেখা আলো আর গুটিগুটি পায়ে হেঁটে আসা আঁধার মিলেমিশে তৈরী করে এক মায়াময় পরিবেশ। জলপ্রপাতের জলধারার একটি অংশ থেকে থেকে তৈরী হ‌ওয়া জলাধারের ঠিক মাঝখানে অবস্থান করছে ভগবান শিবের বিরাট প্রশান্ত মূর্তি।
বলদেবজীউ মন্দির- 
পুরাতন কেওনঝাড় শহরের এক প্রান্তে অবস্থিত
প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো এই মন্দির। 
এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন কেওনঝাড় ভঞ্জ রাজপরিবারের ২৫ তম রাজা শ্রী লক্ষ্মীনারায়ণ ভঞ্জ। কেওনঝাড় ভঞ্জ রাজপরিবারের প্রথম রাজা ছিলেন আদি ভঞ্জ। তাঁর ছোটো ভাই জ্যোতি ভঞ্জ। আদি ভঞ্জ ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার প্রতিষ্ঠাতা, যা কেওনঝাড় জেলার পূর্বে অবস্থিত। দোর্দন্ডপ্রতাপশালী এই পরিবারের বর্তমানে আর তেমন কিছুই অস্তিত্ব নেই। বর্তমান রাজা হলেন ৪২ তম রাজা। তিনি অত্যন্ত সাধারণভাবে জীবনযাপন করে থাকেন। বাকী সদস্যদের কেউকেউ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে থাকেন আবার অনেকে অন্যরাজ্যে বা বিদেশে থাকেন।
" চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়।
আজিকে যে রাজাধিরাজ কাল সে ভিক্ষা চায়" কতখানি সত্য এই গান।
ভগ্নপ্রায় রাজবাড়ীটি রাজপরিবারের নিঃশেষিত ঐশ্বর্য, আভিজাত্য ও ক্ষয়িত আত্মাভিমানের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

১লা অক্টোবর:
ব্যাগভর্তি সাজপোষাক আর ম্মৃতিসুধায় ভর্তি মনপাত্র নিয়ে এবার ফেরার পালা। চোখ যত সামনের পিচ রাস্তা ধরে এগোচ্ছে মন তত ঢেকে দিচ্ছে পাহাড়ী মেঘ কুয়াশা। মনে পড়ছে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে মনভাসানোর প্রথমদিনটির কথা। 
হোটেলে প্রাতঃরাশ সেরে বেলা ১১.৩০ মিনিটে আমরা র‌ওনা দিলাম জাজপুর স্টেশনের উদ্দেশ্যে। আমাদের ট্রেন বিকেল ৪টে বেজে ৫ মিনিটে, পুরী-হাওড়া 22896 বন্দেভারত।
বিদায় শ্যামবনানী।
বিদায় মেঘবাড়ী, বিদায় পাহাড়িয়া মিঠেল সুর। নির্মল প্রকৃতির কোলে নিশ্চিন্তে কাটানো এই কয়েকটি দিনের কথা আজীবন থেকে যাবে মনের মনিকোঠায়। একটা শেষ মানে, একটা নতুনের শুরু। এই চক্রেই আবর্তিত হোক জীবন, আর জীবনের প্রত্যেক ছন্দে ধ্বনিত হোক 'চরৈবেতি' মন্ত্র।

সংগ্রহ করতে পারেন। হোয়াটসঅ্যাপ -৯৭৩২৫৩৪৪৮৪

Post a Comment

0 Comments