যেতে যেতে পথে
রোশেনারা খান
পর্ব ৯৪
আজ মনি ফোনে জানাল, আগামি বুধবার(১১ আগস্ট) মায়ের বড়কাজ হবে। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল, মৃত্যু যে এভাবে আমাকে আঘাত করবে কোনদিন ভাবিনি। ৫ মাসের ব্যবধানে স্বামী এবং মা চলে গেলেন। কী আর রইল আমার? একটা প্রবন্ধ লিখেছি ‘ভারত বিচিত্রা’ পত্রিকার জন্য, আজ কালের মধ্যে পাঠাতে হবে।এ ছাড়া আর করবই বা কী?
আগামিকাল মঙ্গলাপোতা যাব। পরশু মায়ের কাজ। গতবারে কিছু সাড়ি কিনে রেখে এসেছি, কয়েকজন বিধবা মহিলাকে দেবার জন্য। এবার তার সঙ্গে কিছু টাকা দিতে হবে। শুনছি অনেকে যাবে না। তা না যাক, আমার মায়ের কাজ, আমাকে তো যেতেই হবে। ড্রাইভার বলে রেখেছিলাম, ও কোন কারণে আসতে দেরি করায় আমাদের পৌঁছাতে ১১ টা বেজে গেল। মেজদি এসেছে, মায়ের ছোটছেলে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। ছোটবৌ আসেনি। মনির বৌ জয়নাব ও আসতে পারেনি। বিকেলে বড়দি এল। মায়ের মেজছেলে-বউও বিকেলে এল।
আজ মায়ের কাজ ভাল্ভাবেই সম্পন্ন হল। কভিডের কারণে ছোট করে আয়োজন করা হয়ে ছিল। বড়দি বিকেলেই ফিরে গেছে। আমি রানী আগামিকাল ফিরব।পরদিন সকালেই মায়ের মেজছেলে-বউ চলে গেল। আমাদের দুপুরে খেয়ে বেরোনোর কথা ছিল, কিন্তু ড্রাইভার পাওয়া গেলনা। শেষে সাহবাজকে ফোন করলে, ও আমাদের নিতে গাড়ি পাঠায়। মনিকে বলে এলাম পরে ড্রাইভার দিয়ে আমাদের গাড়িটা পাঠিয়ে দিতে।
আজ ১৫ আগস্ট, আমাদের স্বাধীনতা দিবস। অন্য বারের মত কোথাও যাওয়ার ব্যস্ততা নেই লক ডাউনের জন্য। আজ তানির জন্মদিনও। রানী ঠিক করেছে কয়েকজনকে বাড়িতে ডেকে বোনের জন্মদিনে কেক কাটবে। আমি কোন দায়িত্ব নিইনি। সবকিছু রাণী তানি দুই বোন মিলে করছে। আমি শুধু পায়েসটা করে দিয়েছি। সন্ধ্যাবেলা ওরা খুব আনন্দ করল। আমাদের বাড়িতে এসব বহুদিন বন্ধ ছিল। ওরা করতে চাইলে আমি বাধা দিইনি।
তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক অনন্যা মজুমদার ফোন করে জানতে চেয়েছে আমি সোমবার বাড়িতে থাকব কিনা, থাকলে ও আসবে। আমি ওকে আসতে বললাম। অফিস শেষ হতে ৬ টা ৩০ শে অনন্যা এল।ও মিষ্টি আনতে চেয়েছিল, আমি নিষেধ করেছিলাম, বলে ছিলাম, নেহাতই যদি আনতে চাও তবে ফুল এনো, ফুলই এনেছে। ও শুধু চা নিল। নানা বিষয়ে অনেক কথা হল আমার লেখা ও অন্যান্য বিষয়ে। আমাকে বলল, দিদি আপনার আত্মকাহিনীটা এবার লিখতে শুরু করুন।
আজ পেনশন অফিসে গেছলাম, তন্ময়দাও এসেছিলেন।।কিন্তু কোনও কাজ হল না। ওরা কোনও পেপারস জমা নেবে না। বলল, ‘আমাদের কে? কীভাবে? এসব পেপারস সল্টলেকের অফিসে নিয়ে যাবে? তার চেয়ে ঠিকানা নিয়ে যান, বাইপোষ্টে পাঠিয়ে দেবেন’। অগত্যা ঠিকানা লিখে DTDC কুরিয়ারে পাঠিয়ে দিলাম। দেখা যাক, কাজ হয় কিনা।
আত্মজীবনীটা লিখতে শুরু করেছি। প্রকাশের জন্য কোথায় পাঠাব ভেবে উঠতে পারছি না। ভাবছি লেখা কিছুটা এগিয়ে নিয়ে তারপর পত্রিকা ঠিক করব। সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি রহিম বক্সের মেয়ে গতকাল হাসপাতালে মারা গেছে। কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিল, ডাক্তার বলেছিল টাইফয়েড। গতকাল সন্ধ্যায় শ্বাসকষ্ট শুরু হলে বাড়ির লোক হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু রাতেই মারা যায়। আমাদের বাড়ির পিছনে একটা বাড়ির পরে ওদের বাড়ি, মেয়েটি স্বামী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই থাকত। মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে কিশোরী মেয়েটি গলা ছেড়ে কাঁদতে শুরু করলে জানতে পারি কিছু একটা ঘটেছে। পরদিন সকালে সব নিস্তব্ধ হয়ে যায়, যখন হাসপাতাল লাশ দিতে অস্বীকার করে। জানিনা ওরা মেয়েটির দেহ কী করল। এদিকে আমাদেরও আতঙ্ক বাড়ছে। বাবলি আজ ফোনে জানাল ৩ সেপ্টেম্বর ওদের ওখানে সমস্ত স্কুল খুলে যাবে। জারাটাকে নিয়েই চিন্তা। সব রকম সাবধানতা নিয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে।
🍂
রাজীব ঘোষ অনেকটাই নাচনের(বাবলির কাঁথির বন্ধু) বাবার মত দেখতে, তাই ওনাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ছিলাম। উনি ‘আজকাল’এ কাজ করেন। আমাকে ৮০০ শব্দের মধ্যে ‘তবলিক জামাত ও কোর্টের রায়’ এর ওপর একটি লেখা চেয়েছেন। দেখি কোথায় তথ্য পাই। লেখাটা তাড়াতাড়ি দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কপি শুভজিৎ বাগচি পাঠিয়েছেন। রাজীবও পাঠিয়েছেন। লেখা নিয়ে আজ দুজনের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে, তার মধ্যে একজন কলকাতার বিখ্যাত আইনজীবী। আইনি ঝামেলার ভয়ে রাজীবকে জানিয়ে দিলাম, ওই বিষয়ে লেখা যাবেনা। কেন যাবে না, সেটাও বললাম। কিন্নর বললেন, ‘ঠিকই করেছ।’
আজ মহরম উপলক্ষ্যে সাহবাজদের বাড়িতে নেমন্তন্ন আছে। রানী আগেই চলে গেছল, সাহবাজ আমাকে রাতে এসে নিয়ে গেল। অনেক রাত হল বাড়ি ফিরতে। ইচ্ছে না থাকা স্বত্বেও যেতে হয়েছিল।
জঙ্গলমহল নিয়ে একটা লেখা শুরু করেছি। কিছু তথ্যের প্রয়োজনে প্রিয়ব্রতকে (জঙ্গল মহল উদ্যোগ এর জেনেরেল সেক্রেটারি)ফোন করে পেলাম না। কিছু পরে ও রিং ব্যাক করে। অনেক কথা হয়, ও বলে, ‘আমি আপনার ফ্যান, আপনার কথাবার্তা, হাঁটাচলা, সাজপোশাক মুগ্ধ হয়ে দেখি। আপনার কোনও লেখা বাদ দিইনা, সব পড়ি। আপনাকে এসব কথা বলার আগে সুযোগ হয়নি, তবে অনেকের কাছেই আপনার কথা বলেছি’। যাইহোক ও কিছু তথ্য দেবে বলেছে।
আজ ৩১/০৮/২০২০)ভারতের প্রথম ও একমাত্র বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রনব মুখোপাধ্যায় ইহলোক ত্যাগ করলেন। বয়স হয়েছিল, ৮৪ বছর।ইন্দিরা গান্ধী খুন হয়ার(৩১/১০/১৯৮৪)পর অনেকেই ভেবেছিলেন এই মুহূর্তে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা একমাত্র প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আছে। কিন্তু সেটা হয়নি। পরিবারতন্ত্রের জয় হয়েছিল। প্রধান মন্ত্রীর চেয়ারে বসানো হয়েছিল ইন্দ্রিরার পুত্র রাজীব গান্ধিকে।
একজনের ব্যবহার কয়েকদিন ধরে খুব কষ্ট দিচ্ছে। কিছু করার নেই, এর মাঝেই কাজ, লেখা চালিয়ে যাচ্ছি। তাপস মাইতি তাঁর শর্ট ফিল্মের সিডি পাঠিয়েছেন।অনেকেই বলছেন, খুব সাবলীল অভিনয় হয়েছে। আজ শিলা দত্ত ফোন করে বললেন, ‘আপনাকে ভীষণ ভাললাগে। আপনার সবকিছুই ভাল লাগে। আপনার লেখাগুলো তো ভীষণই ভাল লাগে’। ওর বাড়ি এই শহরেই, বিধান নগরে।
আমি চন্দ্রিমাকে আসতে নিষেধ করেছি। তাতে বিশেষ কিছু লাভ আছে বলে মনে হয় না।কারণ বাইরের জিনিস তো বাড়িতে আসছে। সবকিছু ধোয়া সম্ভভ হচ্ছে না। তবুও যতটা সম্ভব সাবধানে থাকার চেষ্টা করছি।
গোপা আমার একটি কবিতায় কণ্ঠ দিয়ে ভিডিও করেছে। প্রচুর ভিউ হয়েছে। বাবলি তো ফোন করে কবিতার কথাই আগে বলল। আজ একটা বেশ মজার কাণ্ড হয়েছে। অনলাইনে একটি লাইভ গানের প্রোগ্রাম হচ্ছিল। গায়ক বিদেশে গান করার কথা বলতে গিয়ে বললেন, আমি ইংল্যান্ড থেকে স্কটল্যান্ড গাড়ি চালিয়েছি। আমি তাঁকে লিখলাম, আপনি লাইসেন্স পেলেন কীভাবে? অনুষ্ঠান শেষে ওঁরা আমাকে প্রশ্নটি নিউজ ফ্রন্টে পাঠাতে বললেন। আমি পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু কোনও উত্তর আসেনি, ওদের কাছে উত্তর ছিলনা।
গতকাল একটা আর্টিকেল লেখা শুরু করেছিলাম, আজ শেষ করে আজকাল এ পাঠিয়ে দিলাম। এটা শেষ করতে গিয়ে স্নান খাওয়া শেষ করতে ৪ টে বেজে গেল। আগামিকাল আবার অন্য লেখা শুরু করব। এদিকে ব্যাঙ্কের কাজ শেষ হয়েও শেষ হচ্ছে না। তন্ময় বাবু মেসেজ করেছেন, কাল ব্যাঙ্কে যেতে হবে ফ্যামিলি পেনশনের যে সমস্ত পেপার হেড অফিসে পাঠানো হয়েছে, তাতে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এক জায়গায় সই করতে ভুলে গেছেন। আমারও একটা ছবিতে সই নেই। তাই আবার পাঠাতে হবে। পরদিন গিয়ে সই করে দিতে আবার পাঠানো হল। সৌনক এসে আজ মিষ্টি আর চিকেন দিয়ে গেছে।পরদিন সফিক (রানীর বাবা) তালের বড়া, বাদশাভোগ চাল আর মাছ নিয়ে এসেছিল। এত করে খেয়ে যেতে বললাম, খেল না, আমি কাঊকে ১/২ বারের বেশি অনুরোধ উপরোধ করতে পারিনা।
গতকাল থেকে অনলাইনে রানীর পরীক্ষা শুরু হয়েছে।আমাকে একাকেই সব কাজ করতে হচ্ছে।জঙ্গল্ মহল নিয়ে লেখাটা শুভাশীসকে(সহজপাঠ প্রকাশনা) পাঠিয়ে ছিলাম, ও একটি অনলাইন পত্রিকা সম্পাদনা করছে, আমাকে বলল, লেখাটা খুব ভাল হয়েছে দিদি। কয়েকটা ছবি পাওয়া গেলে ভাল হত।আমি কয়েকটা ছবি পাঠিয়ে দিলাম।
সকাল বেলায় একটা দুঃসংবাদ পেলাম, গত রাতে বাবলুদা হার্টফেল করে মারা গেছেন (১৬/০৯/২০)। বাবলুদা আমার ছোটকাকার বড়ছেলে। খুলনার একটি কলেজে অধ্যাপনা করতেন, রিটায়ার্ড করার পর বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়ে ছিলেন। মেয়ে থাকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে, ছেলে দুবাইয়ে।বউদি তো আগেই মারা গেছেন, সংসারের কোন বন্ধন ছিল না।করোনার কারণে দীর্ঘদিন বিদেশে আটকে থেকে একমাস আগে রাজশাহীতে নিজের বাড়ি ফিরেছিলেন। কাকার সেজচেলে নীলকে ফোন করে জানলাম।রাত দেড়টার সময় হার্টঅ্যাটাক হয়ে তখুনি শেষ। এখানে একটা কথা বলা হয়নি। মাস্কুরার কথা আগেই বলেছি। আমার লেখা পড়ে অস্ট্রেলিয়ার যে অধ্যাপক ওর পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছিলেন তাঁর নাম আলি কাজি। উনি ক্যানবেরার একটি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। বাবলুদা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মাস্কুরা আর আলি কাজির বিষয়ে আগেই জেনে ছিলেন।তাই সিডনি যাওয়ার আগে আমার থেকে ওনার ফোন নাম্বার নিয়েছিলেন দেখা করবেন বলে। আমি কাজি সাহেবকে বাবলুদার কথা বলে রেখেছিলাম। তারপর একদিন বাবলুদা ফোন করে বললেন, ‘বেবি, কাজি সাহেব তো আমার সঙ্গে দেখা করতে রাজি হলেন না’। আমি কী বলব ভাবছি, তখুনি বাবলুদা হাসতে হাসতে বললেন, ‘নাও, কথা বল’। ফোনের ওপ্রান্ত থেকে কাজি সাহেব বললেন, ‘কী ভাবছিলেন’? যাই হোক আনেক কথা হল। খান সাহেবের খবর নিলেন।বাবলুদাকে খুবই আপ্যায়ন করেছিলেন। দুজনে একসঙ্গে ছবি তুলেও পাঠিয়েছিলেন। শুধু মাস্কুরাকেই নয়, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করেন। বিশ্ব জুড়েই তাঁর পরিচিতি রয়েছে।দিল্লির বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে সেমিনারে যোগ দিতে আসেন।
আজ নারী শক্তির ওপর নির্মিত ‘আরশি’র একটি ভিডিওর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গেছলাম। গোটা অনুষ্ঠানটি রোশেনারাদি রোশেনারাদি করেই শেষ হল। আমিই নাকি এই শহরে নারী শক্তির জ্বলন্ত উদাহরণ।
আজ নানা কারণে মনটা ভাল নেই। কেউ অকারণে ভুল বুঝলে খুব কষ্ট হয়। এই বয়সে কারো সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি, মনোমালিন্য ভাল লাগে না।আমার কালকের বক্তব্য নিয়ে আজ সোশ্যাল মিডিয়াতে খুব চর্চা চলছে। আরশি র অয়ন আমাকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র বানানোর কথা বলছিল। একথা শুনে ইন্দ্র বলছে, আমি তোমাকে নিয়ে তথ্যচিত্র বানাব, পাগল আর কাকে বলে।
শেষপর্যন্ত ব্যাঙ্ক্যে গিয়্বে আজ নতুন একাঊন্ট খুলে পাশবুক নিলাম।আজ সকালে শুনলাম হেনামাসি (আজহারউদ্দীন খানের বোন)মারা গেছেন। ফোন করে জানলাম জ্বর হয়েছিল। হাসপাতালে মারা গেলে মৃতদেহ নিয়ে হয়রানির সীমা থাকছে না। তাই অনেকেই বয়স্ক মানুষ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন না। পাড়ার মানুষজন তেমন কেউ দেখতে জাচ্ছেন না। কয়েকজন আত্মীয় এসেছেন, তারাই কবরস্থান নিয়ে গেলেন।
সাহবাজদেরন বাড়িতে ওর মা ইয়াসমিন আর বৌদি সুরভী দুজনের খুব জ্বর, জানিনা কীসের জ্বর? ওরা তুকতাকে খুব বিশ্বাস করে।একজনের(সাহিত্যিক) সঙ্গে সব মিটিয়ে ফেললাম।আমারও ধৈর্যের সীমা আছে।এটা ওর বোঝা উচিত ছিল। ওর প্রতি আমি কিছুটা মোহগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলাম। উনি অন্যের সমালোচনা করেন,নিজেকে বিশাল মাপের ভাবেন।আমি আজ ওকে আয়না দেখিয়ে দিয়েছি। এরকম বন্ধুর আমার প্রয়োজন নেই।
কিছু ভাল লাসগছে না।আজ শীর্ষর ব্যপারে বিশ্বনাথ বাবুকে বললাম। সব শুনে উনি বললেন, ‘আপনার লেখা বাতিল করেছে? আমি তো ভাবতেই পারছি না। আপনি একজন প্রতিষ্ঠিত লেখিকা, আপনার লেখার গুরুত্ব অনেকখানি।আপনি ক্ষেত্র সমীক্ষক। আপনার লেখায় সময়,সমাজ অনেক কিছুই ধরা পরে’।বাতিল লেখাটি বিশ্বনাথ বাবুকে পাঠালাম পড়ে দেখার জন্য। উনি পড়ে বললেন, লেখা তো ঠিকিই আছে। কেন এটা করেছে, বুঝতে পারছি না। আমি ওর সঙ্গে কথা বলব।ওর বসের কাছে কমপ্লেন করব। ‘ঠাকুর বাড়ির পঞ্চনারী’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ ‘ভারত বিচিত্র’তে পাঠিয়েছিলাম, আজ সম্পাদক জানালেন, নারীদের নিয়ে কয়েকটি লেখা জমা আছে। আপনার লেখাটি একটু দেরিতে যাবে।
যা ভয় পেয়েছিলাম তাই হয়েছে। সাহবাজের মা, ও বৌদির করোনা পজেটিভ। ওর মা আর বৌদিকে শালবনীর কোভিড হাসপাতালে এডমিট করে এসেছে। ওর দাদার আর টেস্ট করেনি, পজেটিভ ধরেই নিয়েছে। এই হাসপাতালে খুবই অব্যবস্থা এবং অপরিচ্ছন্ন। ওদের কথায় দুরগাপুরের মিশনারি হাসপাতালের সিইওর সঙ্গে কথা বলেছিলাম, এখন বলছে কলকাতা নিয়ে যাবে। সিইও বলেছেন যখন প্রয়োজন মনে করবেন,তখন ফোন করবেন।দুবেলাই ওদের বাড়িতে খাবার পাঠাচ্ছি। নইলে বাইরের খাবার খেতে হবে। সেটা হতে দেওয়া যায় না।
পাশের বাড়িতে এত লোকজন কেন? বুঝতে পারছি না। সবাই নিচু স্বরে কথা বলছে।সকালে জানলাম ওবাড়ির ছোটছেলে নাজিম কিছুদিন আগে একটি হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছিল। মেয়েটির বাবা নেই, মা মেয়ে মামাবাড়িতে আশ্রিতা ছিল। সেই মেয়েটি গতকাল দুপুরে দোতলায় নিজের রুমে গলায় ওড়নার ফাঁশ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ছেলেটি সিভিক ভলেন্তিয়ারের কাজ করে।তাই পুলিশের সহায়তা পেয়েছে। তবে ডেডবডি ওদের দিতে অস্বীকার করে। কিন্তু মেয়েটির মামার বাড়িতে খবর পাঠালেও কেউ আসে না। তখন পুলিশ বাধ্য হয়ে ওদেরকেই ডেডবডি নিয়ে যেতে বলে। ওরা নিয়ে এসে মুসলিম রীতি মেনে দেহ সৎকার করে। কী কারণে মেয়েটি এই পথ বেছে নিয়েছিল,তা অনেক ঘটনার মত অজানাই থেকে গেল।
ক্রমশ
0 Comments