জ্বলদর্চি

দুটি কবিতা /বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

দুটি কবিতা 
বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

মা-এর আগমন

চাল চুলোহীন গরিবের ঘরে-
 আসছো মা তুমি আজ,
থাকো চারদিন জৌলুস হীন -
এখানে করো মা রাজ,
চার ছেলে মেয়ে সঙ্গে আনছো -
বৈভবহীন কালে,
কত অসুবিধা হবে মা তাদের-
জল ভরা নদী, খালে।।

ঘোর বর্ষায় আসছো মা তুমি -
চারিদিকে শুধু জল,
কোথায় তোমায় আবাহন করি-
মন বড়ো চঞ্চল।
বিপদসীমায় নদীরা বইছে,
 আছে বন্যার ভয়,
আবহাওয়াটা নাকি ভালো থাকবে না ,
পন্ডিত জনে কয়।।

টানা বৃষ্টিতে ভাসছে মা দেশ,
চারিদিক জলময়,
উঁচু স্থান হতে নামছে মা জল
,বৃষ্টিই শুধু নয়।
পথ আর ঘাট টই টম্বুর,যাতা
-য়াত পথ নাই,
ঘরেতেও জল ঢুকছে, সবাই -
গেছে উঁচু জায়গায়।।

জলেতে বন্দী অনেক মানুষ,
ভরসা কোথাও নাই,
খাদ্য ও জল অভাব,এসব -
কোথায়ই বা তারা পায়?
আছে প্রশাসন,ত্রাণ বন্টন -
পর্যাপ্ত তা নয়,
চারিদিকে ত্রাস,শুধু হা হতাশ
 শুধু উদ্বেগ ভয়।।

বন্টনে নাকি দুর্নীতি আছে অনে
-কেরই অভিযোগ,
দুর্নীতি নিয়ে সদা অভিযোগ, 
এটাও আজ এক রোগ ।

পরিবেশ বিধি মানছে না কেউ ,
সকলেই হামবড়া,
প্রতিবাদ করে লাভ তো হয় না ,
মিছে প্রতিবাদ করা।
সাধ করে কেউ বিবাদ কি 
আনে? বিদ্বেষ ভরা ধরা,
প্রতিবাদ মানে কলহ বিবাদ -
হিংসার মুখে পড়া।।

অতিমারী সেই আতঙ্ক আজ 
নাই আর দেশময়,
নাগরিক তবু সাবধানে থাকো 
মনে যেন থাকে ভয় ।

জটিল এই কাল সমস্যা জাল -
রয়েছে দেশকে ঘিরে ।
যাবে নাতো যাওয়া খেয়াল খুশিতে
 মেলা জনতার ভিড়ে ।

অনেকে আছেন জ্ঞানী গুণী জন(?),
ছড়ান শুধু বিভেদ,
ঐক্যমন্ত্রে বিশ্বাসী নন,
মনেতে তাঁদের ক্লেদ।

মানবিক যাঁরা লুকিয়ে থাকেন 
অদেখাই থেকে যান,
হতাশার বশে পর্যুদস্ত,
এভাবে রাখেন মান ।

হিংসা ও দ্বেষ পরিব্যাপ্ত 
এখনও এ দেশময়,
সন্ত্রাস বাদ বেরিয়ে এসেছে 
দেখায় সবকে ভয়।

আঁধার রজনী,ওগো মা জননী 
বাঁচাও সবার প্রাণ,
বিপদের স্রোত দ্রুত ছুটে আসে 
করো মা পরিত্রাণ ।

গভীর আঁধারে ছেয়েছে এ দেশ
 দেখাও সবারে দিশা।
দূরীভূত  হোক কলুষিত পাপ, 
দূর হোক অমানিশা।

🍂

ছন্দ কবিতা

মেনকা এলেন অতি সকাতরে 
পতি গিরীশের কাছে,
বললেন," আমি আবারও এলাম,
ভুলে যাও তুমি পাছে ।

হে পাষাণ রাজ, পাষাণ  কি  তুমি ?
কথাই তোলো না কানে ,
মেয়ের জন্য ভাবনা কি নাই তোমার-
পাষাণ প্রাণে  ?

মেয়ে কি আমার একার হে স্বামী,
তোমার সে কেউ নয় ?
এনে দাও তাকে আমার কাছেতে-
রাখি দিন কতিপয় ।

যাও গিরিরাজ ফেলে সব কাজ,
ত্বরা যাও কৈলাশে,
সেখানে আমার উমা মা যে কাঁদে,
চোখের জলেতে ভাসে ।

সারা দিন ধরে একা কাজ করে,
দাস দাসী কেউ নাই ,
স্বামীটি তো তার খুব হতচ্ছাড়া,
ঘুরেই শুধু বেড়ায় ।

সে যে ভোলানাথ, পিনাকী, ভূতেশ,
ভূত প্রেত নিয়ে ঘোরে ,
লজ্জা শরম কিছু নাই তার  ,
গাঁজা খেয়ে থাকে ঘোরে ।

শ্রীময়ী, রূপসী আমার এই মেয়ে,
দেখে না সে তাকে চেয়ে,
নিজেকে নিয়েই সদা সে ব্যস্ত,
থাকে গাঁজা ভাঙ খেয়ে ।

এবার আমার উমা এলে ঘরে,
পাঠাবো না আর তারে ,
ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকবে এখানে,
দেখি কি করতে পারে ।

নাড়ু ,ক্ষীর সব ঘরেতেই আছে,
খাবে উমা বড়ো সুখে ,
মেয়েকে সে সব খাওয়াবো যত্নে,
জড়িয়ে ধরবো বুকে ।

কতো কথা মনে জমা হয়ে আছে,
বলবো সে সব তারে ,
শুনবো তারও যতো কথা আছে,
বুকে চেপে ধরে তারে ।

মা ও মেয়ের মনের দুঃখ বুঝতে 
চায় না লোকে ,
হতবাক হয়ে চেয়ে শুধু ভাবে  ,
কেন কাঁদে এরা শোকে ?

তুমি তার বাবা  পর কেউ নও,
একটু তো মায়া করো ,
মেয়ের জন্য ব্যাকুল হও স্বামী,
ভালোবাসা করো জড়ো ।

Post a Comment

0 Comments