জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা।। অলক জানা

গুচ্ছ কবিতা।। অলক জানা 

উপেক্ষা 

একদিন নয়, হাজার বছর
শুশ্রূষা মিশতে চায় দায়িত্বের কাঁধে 
প্রত্যাশা সংকোচ হলেও নুন আদুরে ভাত,
অজুত রাষ্ট্র বিপ্লবের জন্য যথেষ্ট পুষ্টিকর
এই সত্যে মুখ ফেরাতে নেই। 

পুঁজি 

অনিশ্চিত শব্দের গা ঘেঁষে 
প্রতিদিনই সূর্যবার, কেউ না কেউ
আসবে, আসতে পারে----
সব নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিপাতন 
প্রত্যাশায় বেরিয়ে পড়ি পথে
সকাল থেকে সন্ধে কিছু অনুকূল
ব্যর্থ হাতে ফুল রেখে যায়। 

বীতশোক 

একটু আনন্দের জন্য 
চা দোকান থেকে সবজি
মাছ-মাংস বস্ত্রবিপণী
এই মানচিত্রের সঙ্গে জীবনধারণ 
সমাঙ্গ পাতাবাহার একা থাকা মানে 
এক ট্রেনভিড় লোকলস্কর 
এভাবেও কিছু উষ্ণতা ঘরচ হয় প্রতিদিন। 

ডাঙা 

সম্মতিসূচক ঠোঁটের রঙে
হার মেনে যায় চাকরির ইন্টারভিউ 
হাসির তরঙ্গে পেছন সিটে বসা
পড়ুয়ার মেরামত মন, পরের দিনের
পড়া তৈরির কারণ হিসেবে
দিকভ্রান্ত নাবিকের ভূভাগ দেখার 
সঙ্গে অটুট একাকার।


মিথ 

সকাল ন'টার পর লিকার চা-বিস্কুট সমেত 
পান-সিগারেট, সন্ধ্যায় পূণরাবৃত্তি--
জরুরি ক'টি ফোনালাপ, কদাচিৎ
দু-তিন পেগ, আয়রন করা জামাপ্যান্ট
ইশারা নিষেধ না মেনে স্থির জলে
ঢেউ আঁকে, মিড ডে মিলে জ্যোৎস্না ভাতের
গন্ধ পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত হয়, একটি নিঃশর্ত
দূরত্ব নিরাময় ওষুধের সঙ্গে সমানুপতিক

মিত্র 

মহাভারত মতে, মিত্ররাই প্রাণহানির 
প্রধান কারণ, সম্পর্কের গাঢ়ত্ব দেখলে
তীব্র ভয়, বিশ্বাস ও নির্ভরযোগ্যতা 
শব্দ দুটি আদান-প্রদানের সেতুমাত্র, 
যা সময়োচিত ভাঙে বা মচকায়। 

জ্যেষ্ঠ 

আগে সূর্যোদয় দেখার সাহস
প্রথম সঞ্চয়ে তোমার, 
অরণ্য নদীনালা পাহাড় নির্বাচন 
একে একে সবই, 
ভুলের কোন বয়স নেই
এই অনুনয় স্বীকারোক্তি 
নিরাময় রক্ষাকবচের চেয়ে কম কিছু নয়। 

বারাম 

ঘর আছে তো রাস্তা আছে,
ছুঁয়ে থাকা এই পরিমাণ মহাবিশ্ব 
একান্তে উপভোগ করি, এটুকু
নিজস্ব সীমার স্বাধীনতা আবহমান, 
স্টেশনরোড থেকে স্কুলবাজার 
হয়ে শ্মশানঘাট, এই মানচিত্র 
মানুষ জানে, জানে প্রতিটি বারামও।

মদ 

মদের নির্ভেজাল বক্তব্য, শিরা ও মস্তিষ্কের ভেতর বিস্তৃত মিশে আছে, এখন যে নাম মনে পড়ে, যে মুখ চোখে জ্বল জ্বল তিনিও এই পৃথিবীর ভালো কিছু ধ্বংস করে বেঁচে আছে। একটি  চূড়ান্ত আঘাতের পর অসঙ্গত জীবনের দায়িত্ব কেবল বিশ্বস্ত মদ নিয়ে থাকে। 

মোহাড় বাজার 

একবার ঘুরে এলে শরীর ও মনের তাগদ বেড়ে যায়, মাদুর হাট চৌরাস্তা পেরিয়ে দূরগামী বাস প্রয়োজন ফেরি করে গন্তব্যে, বন্ধুত্বের অধিকার হেমন্ত বেলায় খাটো হয়ে আসে---তবুও পাশাপাশি কিছু অনর্থক নিরবতা সিগারেটের সঙ্গে পুড়ে গেলে চাপা খণ্ড খণ্ড অভিমান রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ায়, ঘর থেকে প্রিয় বাজারের দূরত্ব এক শরীরী আকার, যাতায়াত রক্তচলাচল সুস্থতার অন্য একটি অব্যর্থ ওষুধ। 
🍂

বর্ণপরিচয় 

কবেই ফেলে এসেছি বর্ণপরিচয় শেখার ক্লাস
সারাদিন সতর্কতার মধ্যেও কিছু ভুল বেশ পীড়িত করে, আরো কত বড়ো হলে ভুল বিদায় নেয় ? যতক্ষণ ভাবছি, সেই মুহূর্তে নির্ভুল শব্দটি এক পলক দেখে নেয়, চোখে জল ? 
চলনে ভুল ? দৃষ্টি ও জীবনের জন্য সুখকর এইসব মিথ কেবল বর্ণপরিচয় জানে। 

স্পর্শ 

দেখা হবে এই প্রত্যাশায় 
অপেক্ষার বয়স এখন বছর শেষের চৈত্রসেল
সময়ের এই দীর্ঘ পরিবার ঠেলে
প্রিয় সাক্ষাতের জন্য প্রহরপাঠ 
ভুলভাল ছেলেমানুষি ? মোটেও না
অনুভূতিহীন স্পর্শকে প্রণয় ভেবে যারা 
প্রতারিত, কেবল তারাই অপেক্ষার ছোবলে অভ্যস্ত মাধুকরী। 

হাওয়া 

হাওয়া বইতে দিতে হয়,
জীবন, যৌবনও উৎসর্গ করি
অন্তহীন ভালোবাসার হাত ধরে 
হেঁটে যায় ঘৃণা, হাওয়ার মুখে 
দেওয়াল তুলে দ্যাখো,
শুদ্ধতার সঙ্গে কেমন অবিকৃত ধুলো থাকে
লেগে ? গাণিতিক হাওয়ার ফলাফল। 

মনেপড়া 

অসুখের সঙ্গে অভ্যাসের সম্পর্ক মাখোমাখো 
যতবার মুখ ফেরাতে চাই ততবারই
সুযোগ নিয়েছে মন, মনেপড়া একটি 
সহজাত অপরাধ, যা দীর্ঘ হলে 
অসুস্থতা, জীবনের অন্যতম একটি উপহার। 

পাঠাগার 

নির্জনতা পাহারা দিচ্ছে বহুজাতিক বই
তুমি নেই, রুটিনে জুটে যায় বিবিধ অজুহাত
মেনে নিয়েছি দূরত্বের মধুচন্দ্রিমা, 
একঘরে বই সব পরাজিত দলের নিঃস্বতায়
প্রসঙ্গ থেকে দূরে সরে গ্যাছে, তুমি মানে প্রিয় বইয়ের তালিকায় আলমারিতে সযত্ন সমাদর। 

খেসারত 

এভাবেই ব্যবহার করি পরাজয় 
সুযোগ সুবিধার বিপরীতে অবহেলিত বিষাদের প্রস্তুত করি তালিকা, পোস্টেরে পোস্টেরে ছয়লাপ দিগন্তদশ, সর্বাধিক সমর্থন 
চিরসত্যেরও পাঁজর খসিয়ে দিতে পারে।


Post a Comment

0 Comments