বিস্মৃতপ্রায় সাহিত্যিক সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত
নির্মল বর্মন
প্রাবন্ধিক সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ইংরেজি সাহিত্যের ব্যতিক্রমী অধ্যাপক,ও শেক্সপীয়র বিশেষজ্ঞ এবং প্রাঞ্জ সাহিত্য সমালোচক। ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যে সুচিন্তিত অবদান উল্লেখযোগ্য। অন্তিম পর্যায়ে ইংরেজি ও বাংলা সমালোচনার জগতে সুবোধচন্দ্র'কে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হতো। বিশেষত শেক্সপীয়রের সাহিত্য সমালোচনার বিভিন্ন দিক তিনিই উন্মোচন করেছেন। এছাড়াও রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্রের বিভিন্ন রচনা সম্পর্কে সুবোধচন্দ্র বিশ্লেষণধর্মী গ্রন্থ রচনা করেছেন। শেকসপীয়র সম্পর্কে বিশ্বের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অন্যতম তাঁর লেখা 'অ্যাসপেক্টস অফ শেক্সপীয়রস্ ট্রাজেডি' পুস্তকটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সুখপাঠ্য। কেবলমাত্র ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্য বা পাশ্চাত্য দর্শন নয়, ভারতীয় দর্শন, মার্ক্সবাদ, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের নন্দনতত্ত্ব সব বিষয়েই তাঁর সুবিশাল পাণ্ডিত্য ছিল। 'ধ্বন্যালোক ও লোচন' তাঁর অনূদিত বিখ্যাত গ্রন্থ।
১৯০৩ এর ২৭শে জুন ঢাকা তে পিতা হেমচন্দ্র সেনগুপ্ত ও মাতা মৃনালিনী দেবীর কোল আলো করে পৃথিবীর মুখ দেখেছিলেন সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত । মেধাবী ছাত্র ছিলেন। বর্তমান প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম অধ্যাপক ছিলেন। অবসরের পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। পাশাপাশি রামকৃষ্ণ মিশন রেসিডেনসিয়াল কলেজ (অটোনমাস), নরেন্দ্র পুর এর অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৯৮ এর ৩ রা ডিসেম্বর কলকাতা তে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সাহিত্যিক সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্তের উল্লেখযোগ্য বিখ্যাত গ্ৰন্থ হল:-
অ্যসপেক্টস অফ সেক্সপীয়ান কমেডি,১৯৫০
দ্য ওরিলি গিগ অফ টাইম , দ্য প্রবলেম অফ ডিউরেশন
ডিউরেশান ইন শেক্সপীয়ান প্লেজ
শেক্সপীয়ারস হিস্টোরিক্যাল প্লেজ-১৯৬৪
অ্যসপেক্টস অফ শেক্সপীয়ান ট্রাজেডি,১৯৭২
দ্য আর্ট অব বার্নাড শ,১৯৩৬
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র, বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ও কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র সম্বন্ধেও সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত'র গ্রন্থ গুলি বাংলা সমালোচনা সাহিত্যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ--
শরৎচন্দ্র: ম্যান অ্যান্ড আর্টিস্ট-১৯৭৫
দ্য গ্রেট সেন্টিনাল: এ স্টোরি অফ রবীন্দ্রনাথ টেগোর,১৯৪৮
বঙ্কিমচন্দ্র চ্যাটার্জী, ১৯৯৬
প্রাবন্ধিক সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত'র অন্যান্য বই:-
কিটস: ফ্রম থিওরি টু পোয়েট্রি
বিবেকানন্দ অ্যান্ড ইন্ডিয়ান ন্যাশনালিজম
টু ওয়ার্ডস এ থিওরি অফ ইমাজিনেশন,১৯৫৯
অ্যন ইন্ট্রোডাকসন টু অ্যারিস্টটল পোয়েটিক্স
ইন্ডিয়া রেস্টেড ফ্রিডম, ১৯৮২
‘শরৎচন্দ্র' গ্রন্থটি শরৎসাহিত্যের বিভিন্ন অনুষঙ্গ বিষয়ে তুলনামূলক সমালোচনা। ‘রবীন্দ্রনাথ' গ্রন্থটিও রবীন্দ্র সাহিত্যের নানাবিধ দিকের তুলনামূলক আলোচনা। যেমন 'কল্পনা' কাব্যের নিসর্গ চেতনার আলোচনায় শেলি-র 'ওড টু দ্য ওয়েস্ট উইন্ড' কবিতার সাদৃশ্যতা খুঁজেছেন।
🍂
প্রাবন্ধিক সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য সমালোচনার ধারার আলোচনায় সুবোধচন্দ্র অদ্বিতীয়। পাশ্চাত্য দেশে প্লেটো ও প্রাচ্যে ভরত কাব্য শাস্ত্র আলোচনার মুখপাত্র ও পথিকৃৎ। কিন্তু এই দুই ভাবনার সমন্বয় আমাদের দেশে ঘটেনি তা সাহিত্যিক আক্ষেপ করেছেন। সুবোধচন্দ্র 'পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য সমালোচনার ধারা' প্রবন্ধের মূল সূত্রগুলি হল : (অ) 'ইউরোপীয় সাহিত্য শাস্ত্রের উদ্ভব প্লেটোর জিজ্ঞাসায়'। (আ) ‘প্লেটো তাঁহার রিপাব্লিক' নামক গ্রন্থে কাব্যের বিরদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করিয়াছিলেন এবং তাঁহার আদর্শ রাষ্ট্র হইতে কবিদিগকে নির্বাসিত করিতে চাহিয়াছিলেন।' (ই) ‘অ্যারিস্টটলের প্রধান অবদান অনুকরণবাদের রূপান্তরীকরণ' (ঈ) 'সফোক্লিসের নাটক অ্যান্টিগোনের মধ্যে হেগেল দেখিয়েছেন দুইটি পরস্পর বিরোধী ভাবের সংঘাত এবং তিনি এই নাটকের মধ্যে সংঘাতের সমন্বয়ের সূত্রেরও সন্ধান করিয়াছেন।' (উ) ‘সাম্প্রতিককালে পাশ্চাত্ত্য সমালোচনায় একটা নতুন সুর ধ্বনিত হইতেছে। নানাকারণে দার্শনিক ও সাহিত্যতত্ত্ববিদদের দৃষ্টি ভাষার বৈশিষ্ট্যের দিকে নিবদ্ধ হইয়াছে। দর্শন ও তর্কশাস্ত্রে এক সম্প্রদায় গড়িয়া উঠিয়াছে যাহারা বাক্যগঠনকে প্রাধান্য দিয়া থাকে।'
সাহিত্যিক সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্তে'র সংস্কৃত সাহিত্যে সমালোচনার পরিচয় দুর্লভ। যা আছে তা হল টীকা বা ব্যাখ্যা। সংস্কৃত সাহিত্যতত্ত্ববিদদের মতে ‘কাব্য কাব্যই, তাহা ইতিহাসও নয়, শাস্ত্রও নয়; আর ইহার আস্বাদ অ-লৌকিক।' এক্ষেত্রে জনৈক সমালোচকের অভিমত হল : ---
"কাব্য বাস্তবের অনুগমন করে, না বাস্তবকে রূপান্তরিত করে—এই প্রশ্ন প্লেটো-অ্যারিস্টটল প্রবর্তিত সাহিত্য শাস্ত্রের গোড়ার কথা। কিন্তু আমাদের দেশের সাহিত্য শাস্ত্রের এই প্রশ্ন উত্থাপিত হইয়াই অপনীত হইয়াছে"।
তথাপি সেনগুপ্ত সাহেব আনন্দবর্দ্ধন ও অভিনব গুপ্তে'র ধ্বনিবাদের সঙ্গে কোচের অভিব্যক্তিবাদের সাদৃশ্যের কথা জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে শেক্সপীয়রের নাটকে ব্যাকরণগত ভুল যে কাব্যসমালোচনার পরিপন্থী তাও জানিয়ে দিয়েছেন।
সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত'র সমালোচনার ধারায় মূলত শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুসারী। বিদেশি সাহিত্যের প্রভাবে যে ভারতীয় সাহিত্যকে উজ্জীবিত করেছিলেন এ বিষয়ে দুজন একমত। তবে তুলনামূলক সাহিত্য বিচারে অধ্যাপক সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ,শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে বেশি নির্মল , স্পষ্ট, পরিচ্ছন্ন ও পরিমিত, যেখানে শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্টাইলে রয়েছে গুরুভার। অধ্যাপক সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত সম্পর্কে বর্তমানে রামকৃষ্ণ মিশন রেসিডেনসিয়াল কলেজ (অটোনমাস) এর অধ্যাপক ,
প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক, গবেষক ও কবি অসীম মন্ডল মহোদয়ের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য:-----
"Subodh Chandra Sengupta, popularly known as S.C. Sengupta in English fraternity, was a great Shakepeare scholar and critic on his own right. His readings on Shakespearean drama earned a huge accolades even from the abroad. He came to teach at Ramakrishna Mission Residential College (Autonomous), Narendrapur after his illustrious teaching career at Presidency College, Calcutta , accepting the warm invitation from Swami Lokeshwarananda, the then Secretary of Ramakrishna Mission Ashrama, Narendrapur. The department is nestled in the rich legacy of such great masters of literature." ।
সংগ্রহ করতে পারেন। হোয়াটসঅ্যাপ -৯৭৩২৫৩৪৪৮৪
0 Comments