শিশির পাল ও সৌমেন রায়-এর অণুগল্প
চিত্র- সম্পা সেনাপতি
জন্মদিনের কবিতা || শিশির পাল
মিতির জন্মদিনে একটা করে নতুন কবিতা লিখত তুর্য। এটাই ছিল ওর নেশা। অন্য কোনো গিফ্ট দেওয়া বা হৈ হুল্লোড় করে রেস্তোরাঁতে খেতে যাওয়ার থেকেও এতে বেশি আনন্দ পেত ও। মিতিও খুশি হত। ভীষণ।
আজ মিতির জন্মদিন। তুর্য ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছে। চাঁদের দিকে। আজ পূর্ণিমা। বিশাল বাড়িটা নিস্তব্ধ।
"তোমার কবিতাটা আমাকে দাও বাবা", আমি পড়ব। তুর্যর হাতটা ধরল তৃষা। তুর্য কোলে তুলে নেয় ক্লাস থ্রি'র তৃষাকে। । মিতির সঙ্গে যেদিন ডিভোর্স হয়েছিল, আদালতের নির্দেশে তৃষাকে কাছে রাখার অধিকার পেয়েছিল তুর্য।
চাঁদের আলোয় ভিজতে থাকে বাবা মেয়ে। তুর্যর দু'চোখ জুড়ে জল।
পাশের বাড়ি থেকে ভেসে আসছে তৃষার মতো মেয়েটির গলা ".....তারপরে আর গানের কথা মনে নাই।"
বহমান
সৌমেন রায়
নার্সিংহোম থেকে বেরিয়ে সিগারেট ধরাল সৌগত। ভেতরে আর থাকা যাচ্ছিল না। বাবা ভর্তি হয়েছে বেশ কিছুদিন, জটিল স্নায়বিক অসুস্থতা। নাকে রাইলস টিউব, হাতে সেলাইন ; বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত। সৌগত মায়ের জন্য রাতের খাবার এনেছিল। স্বামীকে ছেড়ে এক মুহুর্ত থাকবে না, যদি জ্ঞান ফিরে খোঁজাখুঁজি করে! নিজের খাবারেরই খানিকটা ভাত ডাল মেখে চামচে করে বাবার মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে মা ক্রমাগত বলে চলেছে,’ 'এক চামচ খাও না গো। সেই কবে এক পলা দুধ খেয়েছো।একটু খাও।' নেমে এসেছে সৌগত, জানে মাও রাতে খাবে না। এক একটা বর্ণময় জীবন কেমন ----
হঠাৎ কানে এলো, 'আর একবারটি খাও , প্লিজ।‘
সম্বিত ফেরে সৌগত'র। পাশের দোকানে এক তরুণী এক চামচ আইসক্রিম তুলে ধরেছে প্রেমাস্পদের দিকে।
বিনা আবাহনে পুড়ে যাওয়ার সিগারেটটা ফেলে মোটর বাইক স্টার্ট দেয় সৌগত।
🍂
0 Comments