সুমিত্রা ঘোষ
রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রানির পরিচয় হয়েছিল যেখানে বজরা থেমেছিল সেই ভাগীরথীর তীরে গঙ্গার পশ্চিমকূলে। রানিরা জানবাজারে ফিরে এলেন। লোকমুখে রানির স্বপ্ন পাওয়ার কথা প্রচারিত হতে থাকে। গুটিকয়েক লোক ছাড়া বেশির ভাগ লোকই প্রচার করতে লাগল সব মিথ্যা কথা, মা আর লোক পেলেন না শূদ্রাণীর হাতে পুজো পাওয়ার জন্য তাঁকে মন্দির প্রতিষ্ঠা করার আদেশ দিয়েছেন, হতেই পারে না। সব মিথ্যা প্রচার। তখনকার দিনে ব্রাহ্মণ সমাজপতিরা এগিয়ে এসে বাধা দেবেন বলে রনিকে শাসিয়ে গেলেন। শূদ্রাণীকে দিয়ে মন্দির প্রতিষ্ঠা করলে ঘোর অমঙ্গল হবে এমন নানাবিধ অকথা কুকথা প্রচার করতে লাগল। ব্রাহ্মণ পণ্ডিতরা নানাভাবে রানিকে হেনস্থা ও অপমান করতে লাগল। যে ব্যক্তি পণ্ডিতশীর্ষ ব্রাহ্মণ ছিল সে আত্মাহুতি দিয়ে মন্দির তৈরি বন্ধ করবে বলে ভয় দেখান। আত্মাহুতি দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। মা ভবতারিণী তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে। রানির ঘরশত্রু ছিল খুড়ো মশাইয়ের পুত্র অভয় দাস, অভয় বিষয়সম্পত্তি গ্রাস করবার আশায় বরাবর রানির সঙ্গে শত্রুতা করেছে। রানি অভয়কে ভাই ছাড়া সম্বোধন করেননি এবং তার নায্য পাওনা দিতেও দ্বিধা করেননি। তবুও অভয় শত্রুতা করতে ছাড়েনি। অভয়-এর মা বরাবর রানির প্রতি শত্রুতার ভাব পোষণ করেছে। অভয়-এর প্রথম স্ত্রী খুব ভাল মনের মানুষ ছিল এবং বড়-জা রানি রাসমণিকে নিজের দিদির মত শ্রদ্ধা-ভক্তি সহকারে ভালবাসা উজাড় করে দিয়েছে। এত সুন্দর চরিত্রের স্ত্রীকে অভয় মানিয়ে নেয়নি। তাকে ত্যাগ করে কমল নামে একজনকে আবার বিয়ে করে জানবাজারের বাড়িতে বসবাস করতে থাকে এবং রানির বিরুদ্ধাচরণ করতে থাকে।
অভয়চরণ দাসের পিতার নাম ছিল কালীপ্রসাদ দাস, ইনি প্রীতরাম দাসের ছোটভাই এবং রাজচন্দ্র দাসের কাকা। অভয়চরণের পিতা সৎ চরিত্র এবং সদগুণের অধিকারী ছিলেন। অভয়করণের মা খলচরিত্র এবং হিংসুটে ধরণের ছিল। অভয় মায়ের গুণে গুণান্বিত হয়ে সর্বদা বিদ্বেষের বীজ রোপন করত এবং রানিকে অতিষ্ঠ করে মারত। রানি গৃহদেবতা রঘুবীরের সামনে বসে জপধ্যান করে মনের শান্তি খুঁজে পেতেন।
🍂
যেহেতু গঙ্গার তীরে মন্দির হবে সেজন্য প্রথমে ঠিক করা হল যেদিকে মন্দির তৈরি হবে সেদিকে গঙ্গার ঘাট বাঁধানো হবে। রানি সেই মত আদেশ করলেন যাতে সুষ্ঠুভাবে ঘাট বাঁধানো হয়। মাল-মশলা এনে জমিদারের কুঠিবাড়িতে জমা করা হল। নির্দিষ্ট দিনে কাজ শুরু করা হল। কিন্তু ঘাট বাঁধানোর কয়েকদিনের মধ্যে বাঁধানো ঘাট চূর্ণ- বিচূর্ণ হয়ে গেল।
ক্রমশ
0 Comments