জ্বলদর্চি

যেতে যেতে পথে-১০০/ রোশেনারা খান

ক্ষুদিরাম ক্লাব এর  ফিতে কাটলাম

যেতে যেতে পথে

রোশেনারা খান

পর্ব ১০০

  হঠাৎ করে আজ সকাল থেকে জ্বর জ্বর মনে হচ্ছে। ভয়ও করছে। প্যারাসিটেমল খেলাম। ৯ টার সময় স্নান করে কবরস্থান গেলাম। মহলদার সোভান নেই, একটা লোক গাছে জল দিচ্ছে। সে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে সমাধি ভিতরের দিকে আছে, ঝোপে ঢাকা পড়ে গেছে। এই সময় সাহজামাল ফোন করে জানাল, সোভান নাকি তিনটে পর্যন্ত ছিল, এখন আর যেতে পারবে না, পাঁচটায় আসবে। মানে আমাকে আবার পাঁচটার সময় আসতে হবে। লেবারটিকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, সোভান আজ আসেইনি। আমার খুব রাগ হল। সাহজামাল বলল, আমি এখুনি যাচ্ছি। ও আসলে আমি দেখালাম জায়গাটা। আর বললাম, আমি এখানটা মাটি খুঁড়ে দেখতে চাই। জামাল লেবারটিকে সন্ধ্যাবেলা বাড়িতে দেখা করতে বলল।  ও যাব বলেও যায়নি। শুনে আমি বললাম, ওদের করতে হবে না। আমি অন্য লেবার খুঁজব ওই জায়গায় মাটি খোঁড়ার জন্য। আসল সমস্যা হল, কবরস্থানে সবাই কাজ করতে রাজি হয় না, ভয় পায়।

     আজও শরীর ঠিক লাগছে না। কখনো মনে হচ্ছে জ্বর আসছে, কখনো ঘাম দিচ্ছে। স্বাদ গন্ধ সবই পাচ্ছি। চন্দ্রিমার আসার কথা ছিল, বারণ করতে প্রথমে রেগে গেল, পরে বুঝল। দুপুরে ডলিদি (সেজ কাকিমার বোনঝি, জামাইবাবু রশিদ  সাহেব খড়গপুর ইন্দা কলেজে অধ্যাপনা করতেন)ফোন করেছিল, গতকাল আনন্দবাজারে আমার সম্নধে লেখাটা পড়ে খুব ভাল লেগেছে । সেই সময় অনন্যার ফোন এল, বলল, এখানে জজকোর্টের কাছে অটিজম বাচ্চারা অনেককিছু বানায়।  সেইসব জিনিসের প্রদর্শনী চলছে। প্রতি বছরই ওরা আমাকে ডাকে। এবারেও ডেকেছিল, তাই এসেছি। এখান থেকে আপনার আর আমার জন্য দুখানা সাড়ি  আর দুখানা বেডসীট নিয়েছি। একটা ব্যাগ আপনার জন্য আনেকদিন হল কিনেছি, দেওয়া হয়নি। আমি নিজে আপনার হাতে দিতে যেতে পারছি না, ড্রাইভার যাচ্ছে দিয়ে আসবে। জিনিসগুলো হাতে পেয়ে খুব ভাল লাগল, ব্যাগটি খুবই সুন্দর। এতো  শুধু উপহার নয়, এর সঙ্গে মিশে আছে অনেক শ্রদ্ধা, ভালবাসা। মেয়েটার প্রতি   কেন আমি এত দুর্বল? তবে কি ওর মধ্যে আমি কাউকে খুঁজে পাই?  

    এদিকে খড়গপুর ও মেদিনীপুর থেকে  ফোন করে আমার অনুমতি নিয়েছে। আজ সারাটা দিনই ফোনে জেরবার হয়েছি। বিকেল থেকে  রানীর জ্বর। আগামীকালের অনুষ্ঠানটি ভালভাবে হয়ে গেলে স্বস্তি। মনির ফ্যামিলি খড়গপুরে থাকে, ওর মেয়ে মুস্কানকে ওখানে যেতে বলেছি।

    আজ শিক্ষক দিবস। আমি গাড়ি নিয়ে একাই খড়গপুর গেলাম। মুসকান স্কুটি নিয়ে আগেই পৌঁছে গেছে। এখানে এঁদের ক্ষুদিরামের নামে আগে থেকেই একটি ক্লাব রয়েছে। সেটি নতুন বিল্ডিঙে স্থানান্তরিত করা হবে। তাই প্রধান অতিথি হিসেবে আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে নতুন বিল্ডিঙটি উদ্বোধনের জন্য।

    খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে আমাকে বরণ করা হল। আমার বক্তব্য সবাই চুপ করে শুনলেন, এমনটাই মনে হল। আসলে আমি খুব বিষয়টি বুঝে খুব সহজ ভাসায় বক্তব্য রাখি, যা গল্পের মত শোনায়, সবাই বুঝতে পারেন। মাথার উপর দিয়ে চলে  যায়। না।এই কথাগুলি আমার নয়, অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ও শ্রোতাদের কথা। যাইহোক বক্ত্যব্য শেষ হলে ফিতে কাটতে নিয়ে যাওয়া হল, তারপর কেক  কাটলাম। প্রমিলা বাহিনী হুটোপুটি করে ছবিও তুলল। দুপুরে লাঞ্চের ব্যবস্থা ছিল পাশেই এক মেম্বারের বাড়িতে। তারপরেও সঙ্গে বাক্স ভর্তি প্রচুর মিষ্টি দিয়েছিল। এদিকে ‘মেদিনীপুর ছাত্র সমাজ’ একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষক দিবস  পালন করার সঙ্গে সর্বপল্লী সম্মাননার জন্য পাঁচজনের নাম ঘোষণা করেছে।

   আজ বেশ জ্বর, শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা।খুব ভয় লাগছে। রানীরও জ্বর যাচ্ছে না।এর  মধ্যে সুস্নাতর লেখাটাও লিখতে হচ্ছে। রানীর টেম্পারেচার বেড়েই চলেছে।  কী করব, ভেবে পাচ্ছি না। সাহবাজদের বাড়ি থেকে দুবেলা খাবার আসছে।ছবির আসার কথা ছিল, বারণ করে দিয়েছি।

    কেক কেটে ক্ষুদিরাম ক্লাব এর উদ্বোধন।

আনন্দবাজারের আজকের কড়চায় আমার ‘আবর্ত’ বইটির আত্মপ্রকাশের কথা লিখেছে। আমার লেখা প্রায় বন্ধ, সারা শরীরে ব্যথার কারণে বসতে পারছি না। সারাদিন ঘুমোচ্ছি, আর ঘামছি। প্রায় এক সপ্তাহের ওপর দুজনের জ্বর চলছে। রানি আজ বাড়িতেই কোভিড টেস্ট করল, রেজাল্ট পজে্টিত দেখে আমিও করলাম। একই রেজাল্ট, পজে্টিভ। সাহবাজদের বাড়িতে খবর গেলে ওর বাবা শাহজামাল ওদের নিচ তলায় অ্যাপোলো ফার্মেসি আছে। অ্যাপোলোর ডাক্তারের প্রেসকাইভ করা ওষুধ ও প্রোটিন পাউডার ওখান থেকে নিয়ে রানীর আর আমার,  দুজনের জন্য দুটি প্যাকেট করে পাঠিয়েছে। খাবার তো দুবেলাই আসে। আমাদের অসুস্থতার খবর কাউকে জানাইনি।

        আজ সামান্য হলেও ভাল আছি। রানীর আবার ঠাণ্ডা লেগে কাশি  হচ্ছে। দুদিন ভাত রান্না করিনি, আজ করব। রুটি ভাল লাগছে না। এখন স্বাদ গন্ধ সবই পাচ্ছি। শরীরের ব্যথাও কমেছে, তবে শরীর খুব দুর্বল। সিঁড়ি দিয়ে ওঠা  নামা করলে হাঁফিয়ে যাচ্ছি। কাশিটাও কমছে না। এই অবস্থায় ওনার শেষের দিকের অবস্থাটা মনে হলেই জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে করে। মনে হয় আমার  আরও খেয়াল রাখা, কাছে থাকা উচিত ছিল।

     কাজ তো বেড়েই চলেছে। সবারই দেখছি রোশেনারাদিকেই চাই। আজ নিশীথ এসেছিল তার একটি স্ক্রিপ্ট লিখে দেবার অনুরোধ নিয়ে। কিন্তু আমার সময় কোথায় ? ১৭ সেপ্টেম্বর কমলেশ ওর বাড়িতে ডেকেছে। একটি বইয়ের মলাট উন্মোচন হবে। লেখক দেবব্রত চ্যাটারজি আমার উপস্থিতি চেয়েছেন।  লেখকের উল্লেক্ষযোগ্য বই ‘মহিমের ঘোড়াগুলি’।

🍂

    ইনভাটারের ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে। পালকো থেকে নেওয়া হয়েছিল, তাই উদয় পালকে ফোন করলাম। বললেন ব্যাটারি ও গ্যারেন্তি কার্ড নিয়ে কাউকে পাঠিয়ে দিন। মনি এসেছিল, ওকেই পাঠালাম। সন্ধ্যাবেলা কমলেশের (কবিতিকা প্রকাশনাটি কমলেশের) বাড়ি গেলাম। বিপ্লবদা(মাজি), সৌমিত্র, দেবদ্রত বাবু ও ওনার স্ত্রী ছাড়াও আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। আমার হাত দিয়েই বইটির মোড়ক উন্মোচন হল। বইটির নাম ‘নিজস্ব জানালা’। বেবব্রত বাবুর বাড়ি খড়গপুরে। বাড়ি ফেরার সময় ওনারাই আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে  গেলেন

      ৩ অক্টোবর সুস্নাত জানার গ্রামের বাড়িতে মালিবুড়ো উৎসবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অরিজিতের সঙ্গে যাওয়ার কথা হয়েছে, অবশ্যই গাড়ি নিয়ে। মেদিনীপুর ছাত্র সমাজ থেকে ভাস্কর ফোন করে বলল, দিদি আপনার মানপত্রটা লিখেছি, যদি একবার দেখে দেন।দেখলাম ও মানপত্রটি লিখেছে আরবি, ফার্সি ও  বাংলা শব্দ মিশিয়ে কবিতার আকারে। ওকে  জিজ্ঞেস করে জানলাম, ও প্রতিটি শব্দের মানে জেনে তবেই লিখেছে।

     শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ নয়, তার ওপর শুরু হয়েছে ‘খ্যাতির(?) বিড়াম্বন’। কথাটা হয়ত আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, আমার মনে হল, তাই লিখলাম। কেন লিখলাম সেটাই লেখা হয়নি। মৃত্যুঞ্জয় সামন্ত ‘Future care society’ থেকে ফোন করে বলল, ‘দিদি ৩ অক্টোবর প্রদ্যোত স্মৃতি মন্দিরে আমাদের সারাদিন ব্যাপী অনুষ্ঠান রয়েছে। চিঠি দিয়ে আসব, আপনাকে কিন্তু আসতেই হবে’। আমি ওকে ওইদিন সুস্নাতর  বাড়ির অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা বললাম। ও বলল, আমাদের তো সকাল ১১ টায় উদ্বোধন, তারপর আপনি চলে যাবেন।

      বৃষ্টি হয়েই চলেছে, বানভাসি মানুষগুলো কী করবে? কোথায় যাবে? এ তো ডাঙায় বাঘ জলে কুমিরের মত অবস্থা। একদিকে করোনা, আর একদিকে বন্যা। নিজেকে নিয়েও ভাবনার শেষ নেই। শরীর ঠিক হতে কতদিন লাগবে  জানিনা। মুখের স্বাদ পুরোপুরি ফেরেনি, তবে কাশিটা গেছে। কিন্তু মনখারাপটা  যাচ্ছে না। আজ একটু বেশিই মনখারাপ। অনন্যা ফোন করেছিল, ওর বদলির অর্ডার এসে গেছে।দক্ষিন ২৪ পরগনার আলিপুরে পোস্টিং। এই মাসটা থাকবে।  যাওয়ার আগে একদিন আমার কাছে আসবে।বলেছে, ‘খেতে যাব’।

    ছোট দেওরের ফোনে জানলাম খুড়তুতো দেওর মুজিবরের কোলন ক্যানসার ধরা পড়েছে। চিকিৎসার জন্য ব্যাঙ্গালুরু নিয়ে গেছে। আমার বিয়ের বছরে ১৯৭১ সালে জন্ম। এসব খবর শুনতে ভাল লাগে না। তবুও শুনতে হয়। ক্যানসার এখন সর্বত্র ছরিয়ে পড়েছে। এরপর প্রতি বাড়িতে বা পরিবারে ক্যানসার যাবে   

      শালবনি কলেজের অধ্যাপক মইনুদ্দিন আমাদের একটা বাড়ি পরেই ভাড়া থাকতেন, তাই চেনা। আজ ও ফোন করে আমাকে একটি প্রস্তাব দেয়, বলে  ‘আপনি রাজি থাকলে আমাদের প্রিন্সিপ্যাল আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। সরকারি নির্দেশে কলেজে যৌন হয়রানি রুখতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেই কমটিতে আমাকে একজন সদস্য হওয়ার জন্য বললেন। আমার অরাজি হওয়ার   কারণ ছিল না। ওঁরা আমার নাম, ঠিকানা ও পরিচয় নিল, শিক্ষা দপ্তরে পাঠানোর জন্য। পরদিন এই একই প্রস্তাব পেলাম মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর শিক্ষক শিক্ষণ কলেজ থেকে। এখানেও রাজি হলাম।

     আজ অনন্যা জানাল ওকে আগামি সোমবার চলে যেতে হবে। যেভাবে হোক মঙ্গলবার নতুন অফিসে  জয়েন করতেই হবে। চিন্তায় পড়ে গেলাম, ওকে কী করে বিরিয়ানি খাওয়াব? ও তো আফিস থেকে বের হতে পারবে না। ও বলল,  আমি যেতে না পারলে কী হবে? ড্রাইভার গিয়ে নিয়ে আসবে। আমি সময় সুযোগ মত ঠিক খেয়ে নেব।

     ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির সোশিয়লজির বিভাগীয় প্রধান সবিতা সামন্তর সঙ্গে ফোনে অনেকক্ষন কথা হল। ও একদিন ওর স্টুডেন্টদের  ভার্চুয়াল লেকচারের জন্য সময় দিতে বলছে। লক্ষ্মীপুজো ও কালী পুজোর মাঝখানে ডেট করতে চায়। অফিসিয়ালি পরে জানাবে।

    রাতে সুদীপকে ফোন করেছিলাম, কথা প্রসঙ্গে বলল, ‘মেদিনীপুর B Ad কলেজের প্রিন্সিপ্যাল আপনার নাম্বার নিয়েছেন’। বললাম, ‘হ্যাঁ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, এদিকে অরিজিত বলছে, ‘আমার স্যারের(সুস্নাত)বাড়ি যাওয়া হবে না’। ছেলেটা  মোটেও নির্ভর যোগ্য নয়।

    আজ দুপুরে অনন্যার অফিসে দেখা করতে গেছলাম। আমার দুখানা বই দিয়ে এলাম। গিয়ে ওর থেকেই জানতে পারলাম আমাদের ঘনিষ্ঠতা  নিয়ে অনেকে বলেছেন, আপনি রোশেনা্রাদির  বাড়ি যান, আপনার সব খবর উনি আগে জানতে পারেন, কী করে? অল্প পরিচিত এক বয়স্ক মহিলা অফিসে এসে ওকে  ‘তুমি’ সম্বধন করায় ও আপত্তি জানিয়েছে। তখন তিনি বলেছেন, আপনি বয়সে অনেক ছোট, তাই তুমি বলেছি। ক্বেউ কেউ বলেছেন, ‘আমাকে এই এই জায়গায়  অনুষ্ঠানে ডাকে, আপনি কেন ডাকেন না? এই প্রশ্ন তারা একজন সরকারি আধিকারিককে আদৌ করতে পারেন কিনা, সে বোধ  ছিলনা তাদের, যাই হোক এসব কথার উত্তর দিতে অনন্যা বাধ্য ছিল্পনা। তবুও বলেছে,  রোশেনারাদির মধ্যে নিশ্চয় এমন কিছু দেখেছি বা পেয়েছে, যে জন্য তাঁকে আমি  শ্রদ্ধার আসনে  বসিয়েছি।

     আসলে অনন্যা আধিকারিক হিসেবে যেমন দক্ষ ছিল, তেমন ছিল তার ব্যবহার। যে কারণে ওই গুটিকয়েক মানুষের কথা বাদ দিলে  প্রত্যেকেই  ওকে ভাল বাসতেন, শ্রদ্ধা করতেন। দেখলাম ওর কেবিন উপহারে ভরে গেছে। এই শহরের মানুষের ব্যবহারে ও নিজেও আপ্লুত।

    আজ শ্রীরামপুরের বারগোদা গেছলাম, সুস্নাতর বাবা ‘মালিবুড়ো’র প্রয়াণ তিথিতে আয়োজিত সাহিত্যানুষ্ঠানে যোগ দিতে। অনুষ্ঠানে গিয়ে খুবই ভাল লাগল। আতিথেয়তায় কোনও ত্রুটি ছিলনা। বাড়িতে বানানো নাড়ু, মিষ্টি খেলাম। মঞ্চে বসিয়ে হাতে স্মারক তুলে দেওয়া হল। বক্তব্য রাখলাম, কবিতা শোনালাম। অনেক পরিচিত জনের সঙ্গে দেখা হল। একসময় এই অনুষ্ঠানে বহু বিদগ্ধ ব্যক্তিরা সেচ্ছায় যোগ দিয়েছেন, তাঁদের কথা ভেবে রোমাঞ্চিত হলাম। সময়টা খুব ভাল কাটল। ওখান থেকে তাড়াতাড়ি ফিরলেও ‘ফিউচার কেয়ার’ এর অনুষ্ঠানে যাওয়া হয়নি।  

      আজ অনন্যা চলে গেল, মেয়েটার প্রতি কেন যে এত মায়া, জানিনা। রাতে বাড়ি রওনা হয়ে ফোন করেছে, ‘দিদি সারাদিন সময় পাইনি, এখন খাচ্ছি’। আমি ওকে বার বার ফোন করে খাওয়ার কথা বলেছি। সন্ধ্যাবেলা নিশীথ আর সুমন্ত এসেছিল ফিল্ম নিয়ে আলোচনা করতে। নিশীথ টলি পাড়ার অভিনেতা। কিন্তু আমি তো কেউ নই, কিছুই নই। তবুও কিছু কথা হল।

       কর্নেলগোলা আদি সার্বজনীন দুর্গোৎসব উদ্বোধনে।

আজ পঞ্চমী, কর্নেল গোলার পুজো উদ্বোধনে যেতে হয়েছিল। চন্দ্রিমাও গেছল। মন অবসাদে ভারাক্রান্ত, কত কথা মনে পড়ছে। বুকের ভিতরটা হু হু করে উঠছে। সে সব কেউ বুঝবে না। আড়ালে বলে বেড়াচ্ছে, আমি খুব মস্তিতে আছি। যদিও ওদের বলাতে কিছু এসে যায় না।

     আজ আবার শাহবাজদের বাড়ি গেছলাম, বিয়ের ডেট নিয়ে ঝামেলা কাটছে না, ২৭ ডিসেম্বর ডেট করতে বাধ্য হয়েছিলাম, কিন্তু আজ ওর কলেজে ফোন করে জানলাম ওদের ওই সময় পরীক্ষা চলতে পারে। রানী খেপে লাল। কাল শ্বশুর শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলতে যাবে। ডেট ফ্যাইনাল হচ্ছে না বলে তানির ফ্লাইটের টিকিট করতে পারছি না। লজও বুক করতে পারছি না। অনেক টালবাহানার পর শাহজামাল নভেম্বরের শেষ দিকে দুটি ডেট দিয়েছে. ২৬ শে গায়ে হলুদ, ২৭ শে বিয়ে। ওরা কবে কী করবে? সেটা নিয়ে আমি ভাবছি না। বেশ বুঝতে পারছি, নভেম্বরে বিয়েতে সাহবাজের মা, দাদা, বউদি খুব একটা খুশি নয়। রানীর পরীক্ষাটার কোনও গুরুত্ব নেই ওদের কাছে।

     এবার আমাকে দ্রুত প্রস্তুতি নিতে হবে। ওর বাবার কোন খবর নেই।দুই    মামার মত বাবাও আমার লিস্ট থেকে বাদ। কাউকে কিছু করতে হবে না। শাহ্‌  বাড়ির সঙ্গে অনেক কথা ক্লিয়ার হয়নি। ক’খানা সাড়ি লাগবে? কনে সাজানোর দায়িত্ব ওদের, অতএব পার্লারের খরচ ওরা দেবে। বরের  ড্রেস দিতে হবে। বিউটিশিয়ান ও ক্যামেরাম্যান অনেক টাকা চাইছে। ৩০ থেকে ৪০ হাজারের মত। এত টাকা কী করে দেব? বাবা তো থেকেও নেই। এমন বাবা পৃথিবীতে দুটি খুঁজে পাওয়া যাবে না।

   ক্যামেরাম্যানের বিষয়টা সাহাবাজ বুঝে নেবে। ওরা ‘আড্ডা’ ছাড়া অন্য  কোনও লজে যাবে না। শুনছি ওরা এখন নাকি বিয়ের সপিং করবে না। কিন্তু এখন না করলে ব্লাউজগুলো কাটানোর সময় পাওয়া যাবে না। মুসলিমদের বিয়েতে মেয়ের বাড়ি থেকে বর পোশাক না দিলেও চলে। তবে পাত্রেপক্ষকে  যাবতীয় পোশাক, প্রসাধন সামগ্রী, গহনা দিয়ে  সাজিয়ে  নিয়ে যেত হয়।

    হাতে গোনা কয়েকজনকে ছাড়া তেমন কাউকে বিয়েতে বলতে পারছি না। শুধু টাকার অভাবে। আমি চাইছি ছোট করে করব, যাতে প্রত্যে্কেই ভালভাবে আপ্যায়ন করতে পারি। ভয় এটাই, আমার কাছে মাত্র ১,৫০,০০০/ টাকা আছে। সেটা হয়ত দুই লাখে তুলতে পারব। যদিও বাবলি বলেছে, কম পড়লে জানাতে। এখন শেষ ভরসা বাবলিই। আসা যাওয়া ইত্যাদি খরচ আমাকেই করতে হচ্ছে। ১১৮ গ্রামের মত সোনা আমি ওর মা আর বাবলি, তিনজন মিলে কিনেছি। ওর খোকনমামা  মৌমামি একদিন এসে ওর হারে একলাখ টাকা দিয়ে গেছে ওর প্রয়োজন মত গহনা বা অন্য কিছু কেনার জন্য।

                                   ক্রমশ

   

Post a Comment

0 Comments