জ্বলদর্চি

পাঁচটি কবিতা /রাহুল পাত্র

পাঁচটি কবিতা 
রাহুল পাত্র

ছন্দে বাঁধা মাছরাঙ্গা

সেদিন দুপুরবেলায়
ডালে বসে মাছরাঙ্গা
তাকিয়ে ছিল আকাশ-পানে
ঠোঁট-টি তাঁর রাঙ্গা।

সারাদিন ধরে ঘুরে ফিরে
হয়নি একটিও শিকার
তাই, খুব ক্লান্ত হয়ে
বসে আছে বেকার।

এখন আমি তাঁরই ছবি
আঁকবো অঙ্কের খাতায়
মাছরাঙ্গা আবার প্রাণ ফিরে পাবে
আমার সাদা পাতায়।

প্রত্যেক দুপুর তোমার জন্য
তাই, ফিরে এসো বারে বারে
যখন আমি কাজ শেষে
থাকবো জানালার ধারে।।


বৃথা ভালোবাসা

এই জীবন আজ শেষের পথে
ফুরিয়ে গেছে চাওয়া-পাওয়া
শীতল হাতের প্রেমের স্পর্শ
মনে করিয়ে দেয় জীর্ণ হাওয়া।

এই জনমে পেলাম না আর
তোমার দেখা, তোমার দেখা
কিন্তু বিধাতা একফালি সুখ দেবেন আমায়
পুনর্জন্মে হবেই হবে আবার দেখা।

হয়তো মানুষ নয় আসবো কাকের রূপ ধরে
ডাকবো জানালার পাশে নিরলস হয়ে
তখন কি আমায় তাড়িয়ে দেবে?
নাকি পুনরায় ভালবাসবে মোরে!

যদি হই পথের ধারের নয়নতারা
মেলে ধরবে কি তখন আমায়?
নাকি এড়িয়ে সেথা যাবে চলে?
সেদিন হবো কাঙ্গাল আমি হবো সাথীহারা।

হলে হতেও পারে তোমার মন খারাপের স্নিগ্ধ রোদ্দুরে
তখন কি মোরে উত্তরীয় পরিয়ে দেবে?
নাকি অন্য কারোর দিকে চেয়ে থাকবে অক্লান্ত ভোরে?
তবুও আমি ক্ষুব্ধ হবো না পতিত হবো ঠিক ভরদুপুরে।

হয়তো তখন আমায় নিয়ে বিদ্রুপ করবে
যদি হই মেঘলা আকাশের উড়ন্ত শঙ্খচিল
সেদিনও মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে চাইবো তোমার পানে
অজান্তেই হবে দুজনার মনের মিল।

শেষমেশ, ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে চলেছি তবে
বলতে পারো পুনর্জন্ম আবার লোভিব কবে?
আসবো-আসবো মনের দ্বোর খোলা রেখো সদাই
সময় যে পেরিয়ে যাচ্ছে, এখন আমি যাই।।

ভূতের রাজা দিলো বর

আজকে রাতে ভূতের রাজা
যদি দেয় চার 'বর'
প্রথমটা-তেই চেয়ে নেব
একটি নির্জন ঘর।

সেই ঘরেতে থাকবে নদী
থাকবে পায়রা, টিয়া
আরও থাকবে পুতুলের সব
দেবো তাঁদের বিয়া।

দ্বিতীয় বরে বলবো সেথা
আমায় চাঁদে নিয়ে চলো
দেখে আসি, চরকা বুড়ির
কাজ কতটা হলো।

দেখবো ওখানে হাজার পাহাড়
আর, লাইকা নামক কুকুর
আরো দেখবো পৃথিবীর মতো
সেখানেও কি হয় দুপুর?

তৃতীয় বরে চাইবো আমি
স্কুল থেকে মুক্তি দাও
তারপর আমায় আদর করে
ঘুম পাড়ানি গান গাও।

চতুর্থ 'বর' চাইতে গিয়ে
কে এক মারলো ঠেলা!
দেখি, বাবা কেবল বলেই চলেছে
ওঠ নারে এই বেলা।।


বীণাপানির চরণে

মাঘ মাসে-তে সরস্বতীর
শুরু হয় আরাধনা
বাড়ির পুজো আর গানের তালে
মন হয় আনমনা।

আলপনায় সাজানো বাড়ির উঠান
চারিদিকে দ্বীপের আলো
বীণা হাতে মত্ত দেবী
দেখতে লাগে ভালো।

দেখো মাগো আমার যেন
লেখাপড়া-টা  হয়
পরীক্ষার আগে দূর করো
যত রাজ্যের ভয়।

শাড়ির বাহার আর পাঞ্জাবিতে
ছেলে,মেয়েদের দারুন সাজ
পুজোর কদিন বেজায় মজা
নেই তো এখন কোন‌ও কাজ।

আবার এসো পরের বছর
আমার এই ছোট্ট ঘরে
তখন আমি শঙ্খ বাজিয়ে
আহ্বান জানাবো তোমারে।।


বন্ধু প্রজাপতি

আপন মনে উড়ে বেড়ায়
বন্ধু প্রজাপতি
নেইকো কোন‌ও বারণ তাদের
করে না কারও ক্ষতি।

রঙ্গিন দুটি ডানা তাঁদের
দৃষ্টি কেড়ে নেওয়ার মতো
যদি হতাম প্রজাপতি
কতই না ভালো হত!

লেখাপড়া নিয়ে আর
কেউ দিত না বকা
বলতো না কেউ আজকে আমায়
খেলতে যাস না খোকা।

তখন আমি খোশ মেজাজে
উড়ে যেতাম তাদের দলে
কেউ করত না শাসন আর
বকা খেতে হতো না স্কুলে।।

Post a Comment

0 Comments