ডাক দিয়েছে কেউ
অর্থিতা মণ্ডল
তমাল গাছ ছড়িয়ে দিল শান্ত নিবিড় ছায়া
ডাল জুড়ে তার স্নেহ মাখা, পাতায় পাতায় মায়া!
শীতের রোদে আগল ঠেলে আয় বাইরে ওই -
ও ছেলে ও মেয়েরে তোরা, কোথায় গেলি? কই?
দে ছড়িয়ে চোখের তারায় রোদের ঝিলিক আলো
যে পায়নি ভালোবাসা বাসিস তাকে ভালো।
তমাল গাছের জড়িয়ে আদর, ভরিয়ে দিয়ে ছবি,
রঙ তুলিতে সাজুক যে ভোর, মনের ভেতর কবি!
যে শেখেনি আঁকতে আজো, যে জানে না লেখা,
রোদের ঝিলিক ভালোবাসার, অ আ তাদের শেখা-
শহর জুড়ে গাছে গাছে ভরিয়ে দিবি আয়,
উঠুক গড়ে নতুন শহর পাখি যে গান গায়।
অঙ্কুশ দাস, অষ্টম শ্রেণি, সোদপুর হাই স্কুল, উত্তর ২৪ পরগণা
ধারাবাহিক ভ্রমণ
উৎসব মরশুমে আমেরিকাতে
বাসবদত্তা কদম
পর্ব ৫
নায়েগ্রা থেকে ফিরে পরদিন প্রায় কিছুই করার নেই। আমি বিরিয়ানি বানালাম। বৌদি ক্রোসেন্ট আর পেকান কেক। ক্রোসেন্ট একধরনের মুচমুচে ব্রেড। মাখন লাগিয়ে বেক করা। এখন আমাদের দেশেও অনেক দোকানেই পাওয়া যায়। পেকান এক ধরনের বাদাম। দেখতে অনেকটা আমাদের সাধারন চিনা বাদামের মতো। বাদামের থেকে একটু বড়। শুনলাম আমেরিকায় এই উৎসব মরশুমের মেনুতে পেকান কেক একেবারেই স্পেশাল। থাকতেই হবে। আমাদের কাছে এই কেক একেবারেই নতুন। দাদা বানালো চিকেন। তোমাদের আঙ্কেল আর ভাইপো মিলে স্যালাড। সব মিলিয়ে বেশ একটা ফিস্ট হলো।
সেদিন সন্ধ্যায় বৌদি বললো তোমরা দূরের অনেক কিছু দেখছ বটে, এই কিং অফ প্রাসিয়া তে বেশ কিছু দেখার মতো জায়গা আছে। কাল সকালে তোমাদের নিয়ে যাবো ভ্যালি ফোর্জ পার্কে। যেটা আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে শুধু জড়িত তাই নয় এখানে একসময় জর্জ ওয়াশিংটন থাকতেন। তাঁর একটা ছোট্ট বাড়িও আছে।
যেহেতু এ সময়ে ওদেশে লোকজন প্রচুর ছুটি নেয় হয়তো কাজের চাপও খানিক হালকা থাকে, দাদা বৌদি দুজনেই আমাদের নিয়ে ঘুরছিল প্রায় রোজ। সেদিন সকাল হতে না হতে আমরা সবাই মিলে গেলাম ভ্যালি ফোর্জ পার্কে। একেবারেই ওদের বাড়ির কাছে।
এই পার্কের পুরো নাম ভ্যালি ফোর্জ ন্যাশনাল হিস্টোরিকাল পার্ক। এটার ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। কিন্তু দেখার পর বুঝলাম এটা না দেখলে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার অনেককিছুই হাতের সামনে পেয়েও দেখা হতো না। এই একটা কারণেই স্থানীয় মানুষ চেনা থাকলে বেড়ানোটা খুব উপভোগ্য হয়ে ওঠে।
প্রথমত এটা একটা বিশাল পার্ক সাড়ে তিন হাজার হেক্টরের কাছাকাছি। আমরা যখন গেলাম তখন অজস্র রঙিন পাতা নিয়ে গাছেরা দাঁড়িয়ে আছে। এর ভিতর একটি নদী, নদীর পাশেই রেলওয়ে স্টেশন। এই স্টেশন থেকে কাছেই জর্জ ওয়াশিংটনের বাড়ি আর আছে একটি চ্যাপেল। পার্ক জুড়ে রয়েছে অজস্র লগ হাট। কাঠের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি ছোট ছোট বাড়ি। এই বাড়িগুলোতে আমেরিকার স্বাদীনতা যুদ্ধের সৈনিকেরা থাকতেন। শীতের হাত থেকে বাঁচতে এই পার্ক হয়েছিল তাদের আশ্রয়। সম্ভবত এই কাঠের গুঁড়ি দ্রিয়ে তৈরি ঘরগুলি প্রতীকী কারণ ১৭৭৭-৭৮ থেকে এখনো এগুলো টিঁকে থাকা সম্ভব নয় নিশ্চয়ই।চিত্রগ্রাহক - বাসবদত্তা
শুনলাম বারো হাজার ট্রুপ সেনা সেই সময় এখানে আশ্রয় নিয়েছিল।
এই পার্কের মধ্যে আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্টের বাড়িটিও বিশেষ বড় কিছু নয়। ছোট্ট একটা দোতলা বাড়ি। নীচে রান্নাঘর খাবার ঘর। একটা বসার ঘর। ওপরে শোবার ঘর। এইখান থেকে তিনি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিতেন।
এখন এই পার্কে একটি মিউজিয়ম আছে। আমাদের মত ট্যুরিস্টদের পার্কটি ঘুরিয়ে দেখাবার জন্য বাস সার্ভিস রয়েছে। আমরা যেদিন গেছিলাম সেদিন কোনো একটি বিশেষ দিন ছিল। লগ হাটে বিভিন্ন অস্ত্র এবং সৈনিকেরা কিভাবে থাকতেন, সৈনিকদের জন্য রান্না কিভাবে হতো, সেসবের প্রদর্শনী চলছিল।
ভিতরের চ্যাপেল টি জর্জ ওয়াশিংটনের স্মরণে তৈরি হয়েছিল অনেক পরে। এর প্রতিটি দেওয়ালের কাজ অসাধারণ।
পার্কটি পেনসিলভেনিয়া রাজ্যে হলেও ১৯৭৬ সালে পেনসিলভেনিয়া তাদের দেশকে এই পার্কটি উপহার হিসেবে দেয়। সম্ভবত তারপর থেকেই এটি আমেরিকার জাতীয় সম্পদ।
আমেরিকার প্রতিটি রাজ্যেরই ক্ষমতা এবং স্বাধীনতা অত্যন্ত বেশি। তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব নিয়ম আছে যা সেই রাজ্যের বাইরে প্রযোজ্য নয়। শুনতে বা বুঝতে আমাদের খুব অসুবিধা হয় কারণ আমাদের দেশে এরকম কিছু হয় না।
এর পরের গন্তব্য ফিলাডেলফিয়া শহর। শুনলাম একটা পুরো দিনেও পুরোটা দেখে ওঠা মুশকিল তাই ঠিক হলো পরদিন সকালেই বেরিয়ে পড়তে হবে সেটা দেখার জন্য। আমাদের ও হিউস্টনে ফেরার সময় এগিয়ে আসছিল।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাজধানী ছিল ফিলাডেলফিয়া। তারপর বিভিন্ন কারণে তা স্থানান্তরিত হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি তে।
এটা আমরা একা একা ঘুরবো ঠিক করলাম। রোজ দাদা বা বৌদি অফিস কামাই করে আমাদের নিয়ে ঘুরছে, এটা একটু কেমন কেমন লাগছিল।
দাদা এসে নামিয়ে দিয়ে গেল কিং অফ প্রাসিয়ার স্টেশনে। সে এক খেলনা স্টেশন যেন। ছোট্ট একটা বাগান, পাশেই এক কফি আর কেকের দোকান। তার পাশেই প্ল্যাটফর্ম। ট্রেনের দেরি আছে দেখে, কফি কেক খেতে বসলাম আমরা। কফির দোকানদারই বললেন আমাদের ট্রেন এসে গেছে। ট্রেন এসে গেছে শুনে দৌড়নোর অভ্যাস আমাদের। দৌড়ে প্ল্যাটফর্মে এসে দেখি একটা ছোট্ট দু কি তিন কামরার ট্রেন। কিন্তু তার সামনে পেছন পাশে দরজা কোথায় কে জানে। সে ট্রেন একটু এগোয়, একটু পিছোয়; ভাবলাম গেল বুঝি ট্রেন মিস হয়ে। এদিকে পুরো প্ল্যাটফর্মে আমরাই যাত্রী। ফিলাডেলফিয়া যাওয়া বোধহয় হলনা এ যখন ভাবছি, ড্রাইভার নেমে এসে দরজা খুলে দিলেন। তিনিই ড্রাইভার, তিনিই টিকিট চেকার।
উঠলাম ট্রেনে। ড্রাইভার বেশ গল্প করতে শুরু করলেন আমাদের সঙ্গে। এ ও হয়। আমরা অবাক। তারপর ট্রেন চালু হবার আগে আরো দু তিন জন যাত্রী এলেন। দেখলাম তারাও ড্রাইভারকে দিব্যি চেনেন। বোধহয় নিত্য যাত্রী। তবে তারা আমাদের সঙ্গে বেশি কথা বললেন না। সম্ভবত গায়ের চামড়ার রঙ দেখে। এ জিনিস ওদেশে ভয়ানক ছোয়াচে রোগের মতোই আছে চিরকাল।
ট্রেন চলতে শুরু করলো। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই সে ট্রেন আমাদের পৌঁছে দিল ফিলাডেলফিয়া স্টেশন। ট্রেন থেকে নেমে চোখ ধাঁধিয়ে গেলো, এ স্টেশন এতটাই বড়ো। এত গেট, এত এসকালেটর কোনটা দিয়ে বের হলে আমরা সঠিক জায়গায় পৌঁছাবো সেটা বুঝতেও বেশ খানিকটা সময় চলে গেল। এরপর পা রাখলাম ফিলাডেলফিয়া শহরে। আমেরিকার এক সময়ের রাজধানী এ শহর আর জনসংখ্যায় এখনো নিউ ইয়র্কের আশেপাশেই। অত সকালেও জনসমুদ্র।
(ক্রমশ)
স্মরণীয় দিবস।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস (১লাজানুয়ারি)
কলমে-দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে
প্রতিবছর পয়লা জানুয়ারি 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' হিসেবে পালিত হয়। মানুষের মধ্যে শান্তি ও ঐক্যের বার্তা নিয়ে নতুন বছর শুরু করার জন্য।
১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের সদস্যরা বছরের প্রথম দিনটিকে 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপনের আমন্ত্রণ পান। ২০০১ সালে ১লা জানুয়ারি দিনটিতে একটি বার্ষিক ইভেন্ট করা হয়েছিল এর সাফল্য এবং প্রভাব দেখার মতো ছিল। লিন্ডা গ্রোভার একজন শান্তি কর্মী, যিনি বিশ্বব্যাপী 'পরিবার দিবস' টি প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের দ্বারা বিশ্ব পরিবার দিবসের ধারণাটিকে সমর্থন করা হয়েছিল, যা 'একটি দিন শান্তিতে ১লা জানুয়ারি ২০০০ নামে' একটি বই প্রকাশ করেছিলেন। সেই থেকে প্রতি বছর ১লা জানুয়ারি পালন করা হয় 'গ্লোবাল ফ্যামিলি ডে' বা 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' হিসেবে। বলা যেতে পারে, মানুষের মধ্যে বিশ্ব ঐক্য, শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বের বার্তা নিয়ে নতুন বছর আসে এবং সারা বছর যেন সেই ঐক্যের মাধ্যমে সকলেই কাটাতে পারে।
বিশ্বজুড়ে মানুষ যেমন ২০২৩ সাল কে অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে স্বাগত জানায় এবং সেই সঙ্গে এটিও আশা করা হয় যে, বিশ্ব পরিবেশ দিবস ঐক্য ও সম্প্রীতির ধারণা প্রতিষ্ঠা করে।
বিশ্ব পরিবার দিবস প্রধানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদযাপিত হলেও এই উপলক্ষের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সারা বিশ্বে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে 'বিশ্ব পরিবার দিবস' পালন করা হয়। কিছু স্থানীয় গোষ্ঠী পরিবারগুলিকে একত্রিত করতে এবং ঐক্য সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়।
একটা জিনিস লক্ষ্য করা যায় যে, পরিবার দিবস টি বছরের প্রথম দিনে পালন করা হয়, যাতে করে পরিবারের সকলে একসঙ্গে মিলিত হতে পারে এবং পরিবারের সঙ্গে দিনটি উদযাপন করতে পারে।
একটু বৃহৎ অর্থে যদি বলি, তাহলে বলা যায় যে, 'পৃথিবী একটি বিশ্বব্যাপী পরিবার'-যা আমাদের গ্রন্থেই বলা আছে, 'বাসুদেবা কুটুম্বাকাম'।
যখন আমরা নতুন বছরে প্রবেশ করি তখন আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের জন্য সুখ-সমৃদ্ধির কথা ভাবি।
প্রত্যেকটা দিবসের একটা করে আলাদা থিম থাকে ২০২৩ এরও এরকম একটা থিম ছিল 'ডেমোগ্রাফিকট্রেন্ড এন্ড ফ্যামিলি' জাতিসংঘের মহাসচিব কর্তৃক মানব উন্নয়নের একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত এই যুগান্তকারী ঘটনাটি মানুষের জীবনকাল প্রসারিত করে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে।
আশা রাখতে পারি যে, ২০২৪ সাল যথার্থভাবে 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' এবং বছর হিসেবে পালিত হবে। মানুষ আরও বেশি করে শান্তি, ঐক্য মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবে।
0 Comments