জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা ১৯ / শুভশ্রী রায়

গুচ্ছ কবিতা ১৯ / শুভশ্রী রায়


জলের পরী

টলটলে আর্সির ওপর ঝুঁকে পড়ে তুমি মুখ দেখ,
জলের স্বচ্ছতা তোমাকে টানে,
রূপটান সমেত তুমি জলের আয়নায় ভেঙেচুরে যাও।

বেড়াতে যাওয়া এক সময় শেষ হয়,
নদী ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা ফুরিয়ে আসে,
প্রবাহকে বিদায় জানিয়ে তুমি গাড়িতে উঠে বসো;
জলেরও একটু মনখারাপ হয় বৈকি,
তোমার ছায়াটিকে সে জলপরী করে বুকে রেখে দেয়।


নিত্য

চকচকে চোখে মাছুনি কাটেন মাছ,
মুগ্ধ হয়ে দেখি তাঁর আমিষ নিপুণতা,
আশেপাশে একাধিক সাংসারিক বেড়ালের স্থিতি-
দৃষ্টিতে সম্যক হিংস্রতা ও লোভ;
এমন খাদ্য প্রতীক্ষা, এই চিরায়ত চতুরতা
কোন অন্ত্যমিল দিয়ে পরিবেশন করব,
বুঝতে পারি না।

মাছের আঁশের সঙ্গে রক্ত,
মেছো গন্ধে জায়গাটা ভরে যায়,
থকথক করে স্বাদের সম্ভাবনা,
ভাতের গালগল্প ছড়ায়...
আমিও সাগ্রহে বঁটির ধারে যাই,
কোপে পড়ি না যদিও।

রান্নাঘর অবধি মাছের মুড়ো, পেটি, ডিম, তেল
এ ওর সঙ্গে ঢলাঢলি করে,
কী ভীষণ উৎসাহ নিয়ে উনুন জ্বলছে!

যখন অপরাহ্ণ

ঘুঘুর ডাক কী অপরাহ্ণকে আরো নিঃস্ব করে তুলছে?
বৈরাগীর মতো দুপুরের হাবভাব পুরো-
নিজের ছায়ার সঙ্গে দুপুর কত কথা বলে......
তার ভেতর দিয়ে একটা দিনের খানিকটা পার
কলের জলে শহরের রটনা বয়ে যায়;
ফেরিওয়ালা পাঁচ রুপেয়ায় কিছু একটা দিতে চাইছে,
ঘুমচোখে পাড়া শুনে নেয়, কেনে না মোটেই 
দুপুর শান্ত থেকে অতি শান্ত হয়ে
সুস্থ স্বাভাবিক বিকেল প্রসব করে ফেলে
ভাঙাফাটা বারান্দার ওপর।


আস্তাকুঁড়

আবর্জনার জায়গায় মারাত্মক ডামাডোল!
গর্ভপাতের ভ্রূণ ফেলে গিয়েছে কেউ,
এ বাড়ি ও বাড়ি থেকে মেয়েরা আগে হেসে উঠল..
নীতিবায়সেরা কা কা করে যথারীতি পাক দিচ্ছে ওপরে,
ছিঁড়তে চাইছে পাড়ার সমস্ত কুকুর...

এলাকার একমাত্র পাগলি কিছুতেই দেবে না
রক্ষা করছে প্রাণপণে ;
যে কারোর ফেলে দেওয়া ভ্রূণকে
সে পুতুল করতে রাজী।

Post a Comment

3 Comments

  1. শুভশ্রী রায়ের কবিতাগুচ্ছ ভালো লাগল।

    ReplyDelete