রোশেনারে খান
পর্ব ১০৩
স্পন্দন (নার্সিংহোম) থেকে কাশীনাথ সকালে ব্লাড নিয়ে গিয়ে ছিল, রাতে রিপোর্ট দিয়ে গেল, সবই নর্মাল। আবার সিটিস্ক্যান করাতে হবে, ওর কী রিপোর্ট আসবে? সেটা নিয়েই চিন্তায় আছি। আসাদুল ওর দাদার বিয়েতে নিমন্ত্রন জানাতে এসেছিল। আমি ওকে রানীর বিয়েতে সময় নিয়ে আগে আসতে বলেছি, কখন কি প্রয়োজন হয়। সুদীপ সৌনক, আবু ও ফয়েজ তো থাকছেই। এই জন্যই বলা হয়, ‘যার কেউ নেই, তার খোদা আছে’।
আজ আমার সেজভাই মনির গলায় মাইক্রো সার্জারি হয়েছে, খোকন(Dr.F. R. Khan)নিজে করেছে। আজই রিলিজ করে দিতে পারে, আমি আজ থেকে যেতে বলেছি। রাতে আমার সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট হাতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছবি তুলে বাবলিকে পাঠালাম। ও দেখে বলল, ‘ব্রেনের কিছু নার্ভ শুকিয়ে গেছে, এরপর ডাক্তার বলতে পারবেন’। ডঃ সুচন্দ দাস বলেছিলেন উনি আমার ডাক্তারের appointment নিয়ে দেবেন। সেইমত ওনাকে বলেছিলাম। তারপর ফরটিস থেকেই আমাকে ডেট এবং টাইম জানিয়ে দিয়েছে। ৩ মার্চ বিকেল ৩ টের সময় ডাক্তার দেখবান। বাবলি ওখানের ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছে, এটা নাকি ৬০ বছর বয়সের পর ৯৫% মানুষের হয়ে থাকে। খাওয়া দাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মার্চে আমার প্রচুর কাজ, ৩ মার্চ কলকাতা গিয়ে ডাক্তার দেখানো, ৫ মার্চ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ৪৫ মিনিট লেকচার, ১৫ মিনিট প্রশ্ন উত্তর পর্ব চলবে। অন্যান্য ব্যস্ততার মধ্যে ৫ মার্চের লেকচারের জন্য কয়েকটা পয়েন্ট লিখে নিতে হবে। আগেই জানিয়েছি, আমি দেখে দেখে কিছু বলতে পারিনা। পয়েন্টগুলো এইজন্য লিখে রাখা যে বলার সময় কোন টার পর কোনটা বলব, চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
‘যেতে যেতে পথে’ ধারাবাহিকটির বেশ কয়েকটি পর্ব এগিয়ে রাখতে হবে, কারণ চোখ অপারেশন হলে চোখের কাজ বন্ধ থাকবে। মনি মোটামুটি ঠিক আছে। ১২ দিন মত কথা বলতে পারবে না। ওর চিন্তা ক্ষেতে আলু পেকে গিয়ে মাটি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, লুঠ না হয়ে যায়।
আজ শামসুদ্দিন এসেছিলেন ছোট্ট নাতিকে সঙ্গে নিয়ে। ওর বাড়ি হাওড়ার শিবপুরে।পেশায় শিক্ষক, ভাল লেখে। সাচার কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর শামসুদ্দিন ‘সাচার কমিটির রিপোর্ট ও বুদ্ধিজীবীদের ভাবনা’ শিরোনামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। তাতে ডঃ নজরুল ইসলাম ও আরও অনেকের সঙ্গে আমার লেখাও ছিল। এই শহরে ওঁর বোনের ও মেয়ের শ্বশুরবাড়ি।
আজ হঠাৎ ক্যানিং থেকে শুভশ্রী ফোন করে বলে, আমার অফিসে একজন এসেছেন, তোমার সঙ্গে কথা বলতে চান। কথা বলে জানলাম ও আমার মাসতুতো ভাই আজিজ। ও একসময় ইংরেজি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করত। এখন অনেকদিন যোগাযোগ নেই। ও কেমন যেন বোহেমিয়ান টাইপের। প্রথমে এক জাপানি মেয়ে বিয়ে করেছিল। তার দুই ছেলেমেয়ে। মাঝে মাঝে মেদিনিপুরে এসে থাকত। বাচ্চারা এ বাড়ির সবার সঙ্গে বেশ মিশে যেত। তারপর কী হল জানি না, ওদের ডিভোর্স হয়ে গেলে মা তার ছেলেমেয়ে নিয়ে জাপান ফিরে যায়। আজিজ গাজিয়াবাদে দ্বিতীয় বিয়ে করে। এই পক্ষের দুই মেয়েকে নিয়ে কলকাতায় থাকে বলে শুনেছি। বাড়ির সঙ্গেও ওর যোগাযোগ খুব কম। যাইহোক, শুভশ্রী নারী পাচারের ওপর কাজ করে, তাই কিছু তথ্যের জন্য গিয়েছে হয়ত। ওর কাছে গিয়ে যখন বলেছে ওর বাড়ি মেদিনীপুরে। শুভশ্রী তখন আমাকে চেনে কি না জিজ্ঞেস করে জানতে পারে আমি ওর মাসতুতো দিদি। তারপর কথা বলতে চেয়েছে।
আজ রবিবার, পৌরসভার ভোট ছিল, সকালেই দিয়ে এসেছি। সুদক্ষিণা যে এই রবিবারেই আমাকে ‘সঞ্জয় মুখারজি এডুকেশন এন্ড ট্রেনিং ইন্সটিটিউট’ যাওয়ার কথা বলেছিলেন, আমার খেয়াল ছিল না। তবে ঠিক সময়েই পৌঁছে গেছলাম। ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে ভাল লাগল। ওরাও খুব খুশি। খুশি সুদক্ষিণাও।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিবাজীপ্রতিম বসুর সঙ্গে ফোনে আলাপ হল। ইন্দ্রদীপ সিনহার হাতে ওনাকে আমার একখানা বই পাঠিয়েছি, সে বিষয়েই সামান্য কথা হল। রাতে ফেসবুকে বাসবী ৫ মার্চ আমার ছবিসহ লেকচারের পোস্ট দিয়েছে। অনেকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এখন রাতের দিকে কাজ করতে খুব অসুবিধা হয়। নতুন চশমা না পাওয়া পর্যন্ত এই অসুবিধা ভোগ করতে হবে।
আজ এক ভদ্রলোক ফোন করে বললেন, ‘আমি হাওড়া জেলার তৃণমূল পার্টির সংখ্যালঘু সেলের প্রেসিডেন্ট। শামসুদ্দিনের কাছ থেকে আপনার বিষয়ে জেনে ফোন করছি। কী ভাবে কী করলে মুসলিম মহিলাদের উন্নতি হয়, সেই বিষয়ে আপনি যদি আমাকে কিছু পরামর্শ দেন’। আমি বিশেষ কিছু বললাম না। আসলে এভাবে কাজ হয় না। উনি আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। এই মুহূর্তে আমার দেখা করার সময় হবে না, জানিয়ে দিয়েছি। আমি সিটিস্ক্যানের রিপোর্ট নিয়ে চিন্তায় আছি। আগামী বৃহস্পতিবার কলকাতা যাব। আমার সঙ্গে চন্দ্রিমা যাবে। আজ ও বলছে, ‘কলকাতা যাব কিন্তু আমার ডাক্তার দেখানো হবে না। তুমি ফরটিসে দেখাবে, আমার তো এপোলোতে’। বল্লাম, ‘আমার তো বিকেলে তোর তো ১২ টার মধ্যে হয়ে যাবে’ তখন বলছে, ‘আগে কেন এই বুদ্ধিটা দিলে না’। এখন তো কিছু করার নেই, সকালে একবার চেষ্টা করব। পরদিন নিউরোলজিস্টের সেক্রেটারি গীতাকে ইমারজেন্সি বলে রিকোয়েস্ট করে আগামীকালের জন্য চন্দ্রিমার নাম এন্ট্রি করালাম। এটা সম্ভব হয়েছে পরিচিতির সুবাদে।
গতকালই ড্রাইভারকে ১০ টার পরিবর্তে ৬ টাতে আসতে বলেছিলাম। কলকাতা যাওয়ার পথেই ফোন পেলাম, ৫ মার্চ যুদ্ধ বিরোধী পদযাত্রায় সামিল হতে হবে।গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে। তারপর আর থামছে না। নিরপরাধ শিশু থেকে বৃদ্ধ, প্রাণ হারাচ্ছে। সম্পত্তির ক্ষয় ক্ষতি হচ্ছে।তবু যুদ্ধ থামছে না। যাইহোক এপোলোতে চন্দ্রিমার ডাক্তার দেখানো হয়ে গেলে আমরা গড়িয়াহাটে এসে লাঞ্চ করলাম। তারপর ফরটিসে গিয়ে প্রাথমিক কাজগুলো করে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে কিছুসময় ঘোরাঘুরি করলাম। পাশের একটা সাড়ির দোকান থেকে কয়েকটা সাড়ি কেনা হল।
কখন ৩ টে বেজে গেছে, ডাক্তার এখনো আসেননি। হঠাৎই ডঃ দাসের সঙ্গে দেখা, কথাও হল। আমার ডাক্তার সঞ্জয় গরগ রিপোর্ট দেখে বললেন, ‘ভয়ের কিছু নেই, ব্রেনের সাইডের কিছু নার্ভ শুকিয়ে গেছে। বয়স হলে ওটা অনেকেরই হয়ে থাকে। চিন্তা করবেন না একটাই মেডিসিন দিচ্ছি। ওতেই ভাল থাকবেন’। আরও বললেন, কিছুক্ষণ আগে ডঃ দাসের সঙ্গে আপনাকে নিয়েই কথা হচ্ছিল’।গতবারে ওনার সেক্রেটারির কাছে আমার একটি বই দিয়ে এসেছিলাম। সেই প্রসঙ্গ তুলে বললেন, ‘আমি বাংলা বলতে পারলেও ভাল পড়তে পারিনা। আমি বললাম, ‘আপনার কোন বাঙালি বন্ধুকে দিয়ে দেবেন’। তখন বললেল, ‘না, কাউকে দেব না। আমার কাছেই রাখব’।
আগামিকাল ৫ মার্চ, এই দিনটা ভাল্ ভাবে কেটে গেলে অনেকটা স্বস্তি মিলবে। যদিও এই লেকচার দেওয়া ও স্টুডেন্টদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, সবটাই আমার খুব ভাল লাগে। ৪ মার্চ দুপুরে বিদ্যাসাগর টিচার ট্রেনিং কলেজ থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানাল। যেহেতু ওদের একটি কমিটির মেম্বার, তাই বললাম, আমি ১১ টা থেকে ১২ টা, এই ১ ঘণ্টা সময় দিতে পারি। কারণ দুপুরে কর্ণগড়ে একটি প্রোগ্রাম আছে। ওঁরা রাজি হলেন।
আজ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশিওলজি বিভাগে দুপুরে বক্তব্য রাখলাম ‘মুসলিম মহিলা ও আইন’ বিষয়ের ওপর। বক্তব্যের পর ২০ মিনিট প্রশ্ন উত্তর পর্ব চলেছে। স্টুডেন্টরা নাকি খুব উপভোগ করেছে। বাসবী তো তাই বলল। সোশাল মিডিয়ার পোস্টে বাসবী ‘ওয়াণ্ডারফুল লেকচার’ বলে উল্লেখ করেছে। আমি একটু সময় রেস্ট নিয়ে পঞ্চুরচক গেলাম, যুদ্ধ বিরোধী পদযাত্রায় যোগ দিতে। যেতেই হবে।বার বার ফোন আসছে, তাছাড়া প্রতিকার করতে না পারলেও প্রতিবাদটা তো করা যায়। পৌঁছে দেখলাম লাইন সাজানো হচ্ছে। আমি শেষের দিকে থাকতে চেয়েছিলাম। ছেলেমেয়েরা জোর করে সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাল। রবীন্দ্র মূর্তির পাদদেশ থেকে পদযাত্রা সুরু হল, গান্ধী মূর্তি প্রদক্ষিণ করে রাস্তার পাশে দাঁড়ালাম। এখানে সাংবাদিকরা অপেক্ষা করছিলেন। মহিলারা সাংবাদিক দেখে হুড়োহুড়ি লাগিয়ে দিয়েছে ক্যামেরার সামনে এসে বাইট দেওয়ার জন্য। জয়ন্ত সবাইকে সরিয়ে দিয়ে বললেন, কাউকে বলতে হবে না, যা বলার রোশেনারাদি বলবেন।
ওহাইদ মির্জা ছেলেটি বেশ উদ্যোগী। ওর উদ্যোগে তিন টুকরো হয়ে যাওয়া মেদিনীপুর জেলার মূলত বাঙালি মুসলিমদের নিয়ে একটি সংগঠন তৈরি হয়েছে। ‘অস্তিত্বের খোঁজে’ শিরোনামে একটি স্মারক পত্রিকাও প্রকাশিত হতে চলেছে। পত্রিকা ও সংগঠনের নাম আমার দেওয়া। আজ সকাল ৯ টায় মোমিনমহল্লায় একজনের বাড়িতে মিটিং ছিল, সেখানে গেছলাম। রাতে মিলির বাড়িতে রানীর শ্বশুরবাড়ির সবার ও আমাদের নিমন্ত্রণ আছে।
🍂
আরও পড়ুন 👇
আমি শুধু আমার কাজের কথাটুকুই বলার চেষ্টা করছি। এর বাইরেও অনেক কিছু থেকে যাচ্ছে, যা সময়ে মনে পড়ছে না। আবার কিছু কথা আজ আমার কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। আমার ‘যেতে যেতে পথে’ পাঠকদের ভাল লাগছে বলেই তো মনে হচ্ছে। অনেকে কমেন্ট করে জানাচ্ছেন। তবে বেশিরভাগ পাঠক পড়ে থাকলেও লাইক বা কমেন্ট করেন না। যখন এবিষয়ে কোনও প্রশ্ন করেন, তখন জানতে পারি। জানতে পারি আরও নানাভাবে। আত্মকাহিনীর সঙ্গে অন্যান্য লেখাও চলছে।
আজ সকাল থেকেই ব্যস্ত। ১১ টায় মেদিনীপুর বি এড কলেজে গেলাম। বিদ্যাসারের মূর্তিতে মাল্যদান করলাম। প্রথমে অধ্যক্ষ মনোরঞ্জন ভৌমিক বক্তব্য রাখলেন, তারপর আমি বললাম। খুব খারাপ লাগছিল। স্টুডেন্টদের অনুরোধ উপেক্ষা করে আমাকে শিরোমণি রওনা হতে হল। ওখানকার বিসড়া গ্রামে সংকল্প ফাউণ্ডেশন আয়োজিত আন্তর্জাতিক নারীদিবসে যোগ দেবার জন্য। পৌঁছে দেখলাম একজন অধ্যাপিকা বক্তব্য রাখছেন। তাঁর দীর্ঘ বক্ত্যবের পর ওঁরা আমাকে বরণ করলেন। প্রচুর গ্রামের মহিলারা এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। আমার পর আরও কয়েকজন বক্তব্য রাখলেন। একদিকে মধান্য ভোজন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ডঃ ধাড়া সস্ত্রীক এসে পৌঁছেছেন। লাঞ্চের পর আবার বাড়ি ফেরার তাড়া। আরও দুটি নারী দিবসের অনুষ্ঠান রয়েছে। আসার সময় কোনদিকে তাকাইনি। ঠিক সময়ে পৌঁছানো নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। এখন শৈশবের স্মৃতি উস্কে দিল রাস্তার দুধারের চেনা দৃশ্য। খড়ের চাল থেকে কচি কচি লাউডগা ঝুলে রয়েছে। উঠোনের আমগাছে বাঁধা বাছুরটা ডাগর চোখে তাকিয়ে আছে।দুপাশে ঘন সবুজ ধান ক্ষেত। আমাদে্র শৈশবে বর্ষাতেই ধান হত। এখন সেচের সুবিধার জন্য সারা বছরই ধান বা কিছু না কিছু চাষ হয়। গাড়ি শহরে ঢুকে পড়েছে। পাল্টে গেছে রাস্তার দুই পাশের দৃশ্য। অধ্যাপিকা নেমে গেলেন নির্দিষ্ট স্থানে। এখানে টোটো পেয়ে যাবেন। আমিও কয়েক মিনিটের মধ্যে বাড়ি পৌঁছে গেলাম।
সন্ধ্যা ৬ টার সময় আইস এন্ড পাইস এ DCCI এর অনুষ্ঠানে গেলাম। দেখলাম অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। আমাকে মঞ্চে বসাতে দেখি আমার অনেক পরিচিতজন রয়েছেন। বাংলা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা, উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষা, অতিরিক্ত জেলাশাসক, প্রাক্তন মহিলা বিচারপতি প্রমুখ। এছাড়াও বিভিন্ন পেষার সঙ্গে যুক্ত প্রচুর মহিলারা উপস্থিত হয়েছেন। এই আন্তর্জাতিক নারী দিবসে DCCI এর পক্ষ থেকে কয়েকজন মহিলাকে বিশেষ সম্মান জানানো হল। বক্তব্য রাখার পর আমরাই ওঁদের হাতে সম্মাননা তুলে দিলাম। খড়গপুর যাওয়া হল না। যাওয়া সম্ভব ছিল না।
শ্বশুর বাড়ির সম্পত্তি এখনো শ্বশুর মশাইয়ের নামেই রয়েছে। এর মধ্যে জমি বিক্রি করা হলেও তাঁদের রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়নি। তাই সেইসব জমি যে রেজিস্ট্রি হবে তাতে সব অংশীদারের সই লাগবে। আমি চাইছিলাম সামনের সোমবার (১৪ মার্চ) কাজটা হয়ে গেলে ভাল হয়। এসবের কিছু বুঝি না। এই জমি জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ের থেকে আমি তাড়াতাড়ি মুক্তি পেতে চাই। এদিকে চন্দ্রিমা ওর মেয়েকে দেখতে ভুবনেশ্বর যাবে, আমাকেও যেতে বলছিল। আমি গেলে ওর মাকে নিয়ে যাবে। গাড়িতে এতখানি রাস্তা য়াওয়া আবার তখুনি ফিরে আসা, আমার শরীর এত ধকল নিতে পারবেনা।
গতরাতে খুব কেঁদেছি, জানি আমৃত্যু আমাকে এই শোক বহন করে যেতে হবে। সকাল হতেই নিজেকে ব্যস্ত করে তোলার চেষ্টা করছি। ভোরবেলা ছাদে দাঁড়িয়ে আধো অন্ধকারে চারপাশটা দেখতে দেখতে ভাবতে লাগলাম, কোথাও কোনও পরিবর্তন নেই।শুধু আমার জীবনটাই টুকরো টুকরো হয়ে বদলে গেছে। ভিতরে ভিতরে অহরহ ক্ষত বিক্ষত হচ্ছি।
১৬ মার্চ সুরেন্দ্রনাথ কলেজে লেকচারের জন্য কলেজ থেকে যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু এখনো কোনও চিঠি পাইনি। এটাতে শান্তনু আর ওর স্ত্রী আছে। দুজনেই অধ্যাপনা করে। দুজনেই ছেলে মানুষ। আজ ৫১ তম বিবাহবার্ষিকী আমাদের, সারাদিন মনখারাপ করে কাটালাম। এখনো ওনার সমাধি উদ্ধার করতে পারিনি। যাইহোক পরিচিত একজনকে(রোটারি ক্লাবের মেম্বার) দিয়ে নামটা বুধবারের জন্য লিখিয়ে রেখেছি। যে ডাক্তারকে চোখ দেখাব, তিনি সবদিন এখানে বসেন না। সুরেন্দ্রনাথ কলেজে সামনের বুধবার না হয়ে পরের বুধবার সেমিনারটি হবে। এদিকে জমি রেজিস্ট্রির ডেট হয়েছে ২৫ মার্চ।
সন্ধ্যায় ‘এই সময়’ খবরের কাগজ থেকে ফোন করে একজন বললেন, তনভিরদিকে জিজ্ঞেস করছিলাম, কর্ণাটক আদালত যে হিজাব মামলা খারিজ করে বলেছে হিজাব ইসলাম ধর্মে অবশ্যই পালনীয় নয়। এই বিষয়ে কে ভাল বলতে পারবেন?’ উনি আপনার নাম্ বললেন। তাই সুমন ভট্টাচার্যর থেকে আপনার নাম্বার নিয়ে ফোন করছি’। এরপর আমাকে What’s App এ তিনটি প্রশ্ন পাঠানো হয়। তারপর উনি প্রশ্নের সঙ্গে আমার উত্তর রেকর্ড করেন, ‘পডকাস্ট’ এর লিঙ্ক দেবেন। ওটা ফেসবুকে শোনা যাবে।
আজ ’রোটারি আই হসপিটাল’ এ গিয়ে ইন্দ্রনীল দেবকে চোখ দেখালাম। দুই চোখেই ছানি পড়েছে, সার্জারি করতে হবে। তার আগে কিছু টেস্ট করাতে হবে দুটি টেস্ট এখানেই হবে। আর কয়েকটি অপারেশনের সময় হবে। সব থেকে দামি প্যাকেজ ৩০,০০০/ টাকা। এতেই করাব, তবে দামি বলে নয়, গুণগত মানও ভাল।
ক্রমশ
0 Comments