জ্বলদর্চি

শ্রী শ্রীর ওয়ালটেয়ারে /সালেহা খাতুন

গুচ্ছ কবিতা:

শ্রী শ্রীর ওয়ালটেয়ারে

সালেহা খাতুন



কৈলাসের খুব কাছে এসে 
চোখ ও মনের দুই 
জানালা দিয়েই দেখছি
ঐ দূরে আলোর মালায় 
সেজে উঠেছে সে।
কাল সকালেই পৌঁছে যাব 
যন্ত্রবাহনের মন্ত্রণায়।

মহাদেবই চান দেখতে আমাদের
অথচ আমাদের দর্শনের ভাবনা।



অন্ধকারের মাঝে চুঁইয়ে 
পড়ছে জল,পিছলে যাচ্ছি আমি
হঠাৎ হাত ছেড়ে দিলে তুমি ...
তলিয়ে যাচ্ছি আরো গভীরে।

লোকে লোকারণ্য চারিধার
শিস দিয়ে উঠছে কৌতূহলীজন
নির্বাক বোরাগুহা গুঞ্জরিত আজ
অজানা ভয় কমালো মনের ভার।

নিষ্পাপ এক শিশু ধরে থাকা হাত
আলোয় এসে দিল ছেড়ে।
আত্মজা আমারে ছাড়েনি
মায়ের থেরাপিস্ট যে সে।



অমৃতাভের পায়ের তলায় 
লেন্সে বন্দি হতে হতে
মরিয়মের বন্দনারত ভক্তদের 
আভূমি নত হওয়া রূপে
মোহিত মন প্যানোরামায় 
খানিক ধরা দিলে।

বালাজীর নীরব নিভৃত
আবাহনের ঘোর 
সেবিকার মৌন নির্দেশে
আচমকা স্তব্ধ হয়ে গেলে
মুহূর্ত ধরে রাখার বাসনা
প্রোথিত হলো গহীন অরণ্যে।

মননে যন্ত্রণা আসে
মেধাও যায় হেরে
খোদার ঘরে প্রবেশ করার 
নেই অধিকার
খোদা তো পুরুষের অধীন
নারীর কভু নয়।

অবশেষে অমিতাভের দ্বারে
থোতলা কোণ্ডায় এসে 
বৌদ্ধমঠ তলে করি বিহার। 
সমুদ্রের সুশীতল ছায়ায় 
অনুভব করি তিনিও তো
ছিন্ন করেছেন নারীর বাঁধন।



জল জঙ্গল পাহাড়ের রূপে  
ভারী হয়ে আসে চোখ,
ব্যথা যন্ত্রণায় করে টনটন
অশ্রু ঝরিয়ে শান্ত করি তাকে। 

ব্লু আই লাইনারে সাজবার
বাসনা করেছি ত্যাগ।
সমুদ্রের নীল জলে ভিজিয়ে 
করে নিই লবণাক্ত মেকআপ।

স্বচ্ছ জলের তলায় জমা পাথর
উঠে এসে ডলফিনের রূপ ধরে
ভয় হয় মনের গহীনের
পাহাড়গুলিও যদি জেগে যায়!

লাইফ জ্যাকেটে আবৃত করে 
চলে যাই মাঝ সমুদ্রে
জীবনেরে রাখিবার তরে
লড়ে চলি ঢেউয়ের তালে তালে।



মাতৃভাষার অপূর্ব মণিজাল 
ছিন্ন হয়ে যায় ভিন্ন ভাষীর কাছে।
আক্কা আন্না বুঝিনা,
বুঝিনা মানুষের ভাষা।

অথচ রাতের শেষ প্রহরে 
পিউ কাহার ডাকে 
আন্দোলিত হই
ঘেউ ঘেউ ডাক ছাড়ে
যে সারমেয় তাকে আপন ভাবি।

প্রকৃতিও গা ঘেঁষে বসে
সমুদ্র শোনায় গান
রাতের ট্রেন আর্তনাদ করে
কুয়াশা মুড়ে দেয় পাহাড়কে
শিশুদের হাসি কান্না বুঝি
অথচ ভাষা যায় ভেসে
সাক্ষর নিরক্ষর আপেক্ষিক 
বহুভাষী এই দেশে।

আরও পড়ুন 
বিজ্ঞাপনের বিকল্প বিজ্ঞাপনই || ঋত্বিক ত্রিপাঠী 

Post a Comment

0 Comments