জ্বলদর্চি

যেতে যেতে পথে-১০৮/রোশেনারা খান

যেতে যেতে পথে

রোশেনারা খান

পর্ব ১০৮

আজ সন্ধ্যায় ইউনিভার্সিটি থেকে ইংলিশের অধ্যাপক ইন্দ্রনীল আচার্য ফোন করে  নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, ‘২২ সেপ্টেম্বর আপনাকে নিতে গাড়ি যাবে। আপনি আমাদের সঙ্গে এখানেই লাঞ্চ করবেন’।আরো জানতে চাইলেন আমি ভেজ না ননভেজ? অনেকের সঙ্গেং আজ মধূপদা, বিবেকানন্দবাবু শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। 

     শরীরটাকে আলসেমিতে পেয়ে বসেছে। বেশিক্ষণ লিখতে পারছি না। কিছু করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। এগুলো সবই ওষুধের সাইড এফেক্ট। কষ্ট হলেও আমাকে লিখতে হবে। আগামিকাল সকালের মধ্যে লেখাটা শেষ করতে হবেই। আর এ রকম চাপের লেখা নেবনে।

এই সপ্তাহে কলকাতা যাবনা ভেবেছিলাম, কিন্তু ডঃ দাসকে ডঃ  সঞ্জয় গর্গের অ্যাপয়েণ্টমেন্ট নিতে বলেছিলাম। আজ ফরটিস থেকে জানিয়েছে ৮ সেপ্টেম্বর অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া গেছে।অতএব যেতেই হবে। চন্দ্রিমা এবারে যেতে পারবে না। খোঁজ করতে হবে কাকে সঙ্গে নিয়ে  যাওয়া যায়।

    আজ ৮ সেপ্টেম্বর ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দিন।সকালে গাড়ি বার করতেই দেখা গেল একটা চাকায় হাওয়া নেই। গতরাতে গাড়ির কাগজ ঘেঁটে গাড়ির পলিউশন চেক করা  হয়েছিল ২০২১ এর এপ্রিল মাসে। আজ না করালে কলকাতা রওনা হওয়া যাবে না।বাড়ি থেকে ১০ টাতে বেরিয়ে, গাড়ির সবকিছু ঠিক করতে হল। বিশেষ করে দুর্গাপুজোর  আগে পুলিশ মামারা খুব বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ছুতোই নাতাই  গাড়ি বাইক আটকে তোলা  আদায় করে, জরিমানা আদায় করে।

     গাড়ি ঠিক করে শহর থেকে বের হলাম যখন তখন ১১ টা বেজে গেছে। আমরা কৈখালীর ফ্ল্যটে গিয়ে কিছু জিনিস নিয়ে বালিগঞ্জে ফরটিসে পৌঁছাতে ১২ট বেজে গেল ডাক্তার আমার কাজকর্ম লেখালেখি্র খবর নিলেন একটা টনিক দিয়েছেন। ৬ মাস পরে আসতে বললেন। তখন প্রথমের ওষুধটা বন্ধ করে দেবেন।

      অশিক্ষিতদের থেকে তথাকথিত শিক্ষিতরা যে বেশি ক্ষতিকারক, তার প্রমাণ আগেও পেয়েছি, আজও পেলাম।  আমার পুরস্কারের খবর  ছড়িয়ে পড়তে অনেকের সহ্য হচ্ছে না।নানা ভাবে নিজেদের মনের বিষ উগরে দিচ্ছে। দুঃখের বিষয় সেই বিষে নিজেরায় জ্বলে মরছে।যাক, ওসব নিয়ে ভাব্বার সময় কোথা আমার?                                                                                       আজ স্বপ্নাকে ফোন করে জানলাম ওর চোখে সার্জারি হয়েছে।তবে ২২ ডিসেম্বর ও যাবেই। অনেকেই যেতে চাইছেন, কিন্তু এক্সট্রা কার্ড না পেলে কীভাবে নিয়ে যাব? কার্ড দিলে অবশ্যই ওঁদের দেব।

     আজ কোনরকমে ৩৬ পর্ব শেষ করে জ্বলদর্চিতে মেল করলাম। দুপুরে পাঞ্চালীও প্রাক্তন কাউন্সিলার অর্ঘবাবু(মেদিনীপুর পৌরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর)এসেছিলেন পাঞ্চালীর অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানাতে।২০ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র নিলয়ে অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় শান্তনু ব্যানারজি ওর এক ছাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দেখা করতে এসেছিল। ও কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রাম কলেজ প্রায়দিন যাতায়াত করে। মেদিনীপুরে ওর কিছু স্টুডেন্ট আছে। ওর স্ত্রী কাকলি বেশ কিছুদিন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছে। যাইহোক, ওঁদের সঙ্গে সম্পর্কটা স্নেহ ভালবাসার। শান্তনু আমার সঙ্গে ছবি তুলে নিয়ে গেল। কাকলির সঙ্গে ভিডিও কলে কথাও বলিয়ে দিল।

     আজ সুদীপ টাকা নিতে এসেছিল। খান সাহেবের নামে একটি পুরস্কার দেব, কুইজ প্রতিযোগিতায় প্রথম তিন জনের একজনকে।দ্বিতীয় পুরস্কারের ৪০০০/ টাকাটা দিলাম।এমাসে অনেক টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে, কিছু করার নেই। বিকেলের দিকে ফোনে একটা মিসড কল দেখলাম। রিং ব্যাক করে জানলাম ও গড়বেতা এলাকার সাংবাদিক (আনন্দবাজার)রূপশঙ্কর। একটি ধর্ষণের ঘটনায় ৫ জনের মধ্যে   একজন নাবালক ছিল।ও জানতে চায় নাবালক বলে এসব মামলায় আইনি সুবিধা পাওয়াটা কি ঠিক? আমি আমার মত জানালাম। কথা প্রসঙ্গে আরও বলল, ‘কিছুদিন আগে এখানে একটি অনুষ্ঠানে আপনার প্রসঙ্গ দিয়ে বক্তব্য শুরু করেছিলেন একজন লেখক। নাম জিজ্ঞেস করতে বলল,মঙ্গলাপ্রসাদ মাইতি’। সন্ধ্যায় ইউনিভার্সিটি থেকে সিপ্রা নামে একটি মেয়ে ফোন করে আমার ঠিকানা জানতে চাইল.২২ তারিখ আমাকে দেখাশোনার দায়িত্ব ওকে দেওয়া হয়েছে। এর আগে একটি ছেলে এসে   ৮ খানা গেস্টকার্ড দিয়ে গেছে, আমার সঙ্গে কেউ যেতে চাইলে তাঁদের  জন্য।

     মেদিনীপুর কুইজকেন্দ্রের সারাদিন ব্যপি অনুষ্ঠানে দুবার যেতে হল। শুরুতে  গিয়ে বক্তব্য রেখেছিলাম। লাঞ্চের পর বাড়ি চলে এসেছিলাম ডঃ নির্মল পালধির সঙ্গে।উ নি পাঁচবেড়িয়া থেকে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে এসেছেন। আমার বাড়ি আসার কারণ আমি ওনার অনুষ্ঠানে যেতে পারিনি, তাই আমার বাড়িতে এসে আমার হাতে  সম্মাননা হিসেবে ফুলের বোকে একটি সুন্দর ম্যামেন্টো ও একবাক্স সন্দেশ আমার হাতে তুলে দিলেন।ওনার সুযোগ্য পুত্র মুহূর্তটিকে ফোনবন্দি করে রাখল।

     বিকেলে সৌনক এসে আমাকে নিয়ে গেল। সারাদিন যে কুইজ প্রতিযোগিতা হল।এবার সেই বিজেতাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার পালা, আমি খান সাহেবের নামাঙ্কিত কাপটি দ্বিতীয় পুরস্কার বিজেতাদের হাতে তুলে দিলাম।

   আজ ২২ সেপ্টেম্বর, এইদিনটি আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে  থাক্ববে।আজ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি বিদ্যাসাগর পুরস্কারে ভূষিতা হলাম। এটা আমার লেখালিখি ও কাজের জীবনে বিশেষ প্রাপ্তি। স্বপ্নেও ভাবিনি কোনো পুরস্কারের কথা, যেমন ভাবিনি প্রথম গ্রন্থ প্রকাশের সময় কেউ আমার বই কিনে পড়বেন, সেই বই স্টুডেন্টদের গবেষণার কাজে লাগবে। জাইহক, অনুষ্ঠান বিকেলে হলেও আমাকে ১১ টায় নিয়ে গিয়ে গেস্টরুম রেখেছিল। আমার সঙ্গে রানীও গেছল। সিপ্রা সবসময় আমাদের সঙ্গে ছিল। লাঞ্চের সময় অন্যান্য অতিথি প্রতুলদা, নলিনীদা, অমর মিত্র, নাট্য অভিনেতা গৌতম মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হল, নলিনীদার সঙ্গে কথাও হল।

      তিনটের কিছু আগে আমাদের  ইউনিভার্সিটির বিবেকানন্দ   হলে নিয়ে আসা হল। তারপর নাম ও পরিচয় ঘোষণার মাধ্যমে   উপাচার্য শিবাজিপ্রতিম বসু রেজিস্টার জয়ন্তকুমার নন্দী ডিন সত্যজিৎ সাহা ও অরুপ বাবু প্রমুখর সঙ্গে গতবছর যারা বিদ্যাসাগর পুরস্কার পেয়েছিলেন এবং এবার যারা পাবেন তাঁদের নিয়ে এসে মঞ্চে বসানো হয়। সমবেত সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।বিদ্যাসাগরের প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ অর্পণ করে মূল অনুষ্ঠান শুরু হল।                            

মাননীয় উপাচার্য মহাশয় এই পুরস্কারের বিষয়ে জানান, ২০১৯ থেকে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় এই পুরস্কার চালু করে। মাঝখানে কভিডের জন্য বন্ধ ছিল।২০২১ থেকে আবার শুরু হয়েছে। এই সরকারি পুরস্কারটি আগে কলকাতা থেকে দেওয়া হত। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় দেওয়া শুরু করাতে কলকাতার পুরস্কারটি বিদ্যাসাগর ও দিনময়ী দেবীর   নামে দেওয়া হয়ে থাকে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন পদ্ধতিতে পুরস্কার প্রাপকদের নির্বাচন করা হয়েছে, তার দীর্ঘ প্রক্রিয়াটি পড়ে শোনানো হয়।মানপত্রগুলি উপাচার্য মহাশয় পাঠ করে শোনান। গত বছর যারা পুরস্কার পেয়েছিলেন, তাঁরাই এক এক করে আমাদের হাতে পুরস্কার তুলেদেন। প্রতুলদা গৌতম মুখোপাধ্যায়ের হাতে, নলিনীদা অমর মিত্রর   হাতে, অন্নপূর্ণাদি আমার হাতে পুরস্কার তুলে দেন।প্রথমে উত্তরীয় পরিয়ে ফ্রেমে বাঁধানো মানপত্রটি হাতে তুলেদেন, তারপর এক এক করে  রৌপ্য পেটিকে, বিদ্যাসাগরের লেখা তিনটি গ্রন্থ ও একটি খামেভরা চেক  (২৫,০০০/) হাতে দেওয়া হয়।। অন্যদের মত আমাকেও কিছু বলতে হল। আমার পুরস্কার গ্রহণের সময় সবচেয়ে বেশি করতালি শোনা গেছে। তার কারণ তাঁদের  কাছে  আমি মেদিনীপুরের ভুমিকন্যা। এজন্য তারা  গর্বিত। প্রতুলদার ‘আমি বাংলায় গান গাই......’ গান দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

      আজ(২৩সেপেম্বর)আনন্দবাজারসহ কয়েকটি সংবাদপত্রে  বিদ্যাসাগর পুরস্কার প্রদানের খব্র প্রকাশিত হয়েছে । লোকাল  সংবাদপত্র, চ্যানেল১৮ সহ যে সব টিভি চ্যানেলগুলিও এই খবর প্রকাশ করেছে সব জায়গাতেই আমাকে  মেদিনীপুরের ভূমিকন্য হিসেবে উল্লেখ  করা হয়েছে। সোশাল মিডিয়াতেও সুদীপ, সৌনক পোস্ট দিয়েছে। গতকাল থেকে ফোনে, মেসেঞ্জারে, কত যে শুভেচ্ছা বার্তা পেয়েছি, তার হিসেব নেই। অনেকে জানতে চাইছেন, কী কী পেয়েছি? কত টাকার চেক পেয়েছি? আরও অনেক কিছু।                       

      আজ ছন্দমের অনুষ্ঠানে গেছলাম। প্রনব্ বাবু(নাট্য ব্যক্তিত্ব)খুব  খুশি হয়ে অভিনন্দন জানালেন। সঞ্চালককে বার বার আমার পুরস্কার প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করতে শুনে খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। দুপুরে বিবেকানন্দ বাবু মেসেজ করেছেন, ‘যোগ্য মানুষই পুরস্কৃত হয়েছেন’।

      চন্দ্রিমা কয়েকদিন চুয়াদাঙ্গায় বুড়ো পিরের দরগা যেতে চাইছিল ,তাই গেছলাম। ওখান থেকে সারদা আশ্রমে এলাম। সঙ্গে চন্দ্রিমার বন্ধু সম্পা ও সম্পার মেয়ে বিহু ছিল। মেয়েটি ভারি মিষ্টি। আজই বিকেলে কর্নেলগোলার দুর্গাপুজো উদ্বোধনে আমন্ত্রণ ছিল, যাওয়া সম্ভব হয়নি।

    আজ ২৬ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন উপলক্ষে ঝাড়গ্রাম সেবায়তন B Ad কলেজে গিয়েছিলাম। আমিই একমাত্র আমন্ত্রিত বক্তা ছিলাম। এই কলেজের অধ্যক্ষ ও মেদিনীপুর কলেজের একজন প্রাক্তন অধ্যাপকও মঞ্চে ছিলেন। শুনলাম উনি এই কলেজকে ভালবেসে   প্রায়দিন আসেন। অধ্যক্ষ ও উনি কিছু কথা বলার পর আমি বক্তব্য রাখলাম। আমার বক্তব্যে বিদ্যাসাগরের সাংসারিক জীবনের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করে ছিলাম। কলেজটির চারিদিকে জঙ্গল, খুব সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ, বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী নিম্নবিত্ত পরিবারের বলেই মনে হল।মানসিক দিক দিয়েও উন্নত নয়। ওরা কেউ এগিয়ে এসে কথা বলল না।দূরে দূরেই থাকল।এরকম অভিজ্ঞতা আগে হয়নি।

     আজ আনন্দবাজারের জেলার পাতার কড়চায় এবারের বিদ্যাসাগর পুরস্কারের বিষয়টি আবার প্রকাশিত হয়েছে। এত কাজের চাপ বেড়ে  গেছে যে নিজের লেখা লিখতে সময় পাচ্ছি না.২৮ সেপ্টেম্বর ভীমপুরে একটি আদিবাসীদের স্কুলে যেতে হবে। আজ  বিকেলে সৌমনা এসেছিল,   ও এখন রুরাল ডেভালাপমেন্টের দায়িত্বে আছে। ও বলল, দিদি আপনার  সব ছবি, পোস্ট দেখি, আত্মকাহিনীটা সবসময় পড়া হয়ে ওঠেনা।আপনি এটা একটা বই আকারে প্রকাশ করুন। বললাম, সেই উদ্দেশ্যেই লিখছি,  সন্ধ্যায় অনুভবের বাবা ফোন করে আমার বইয়ের ছবি তুলে পাঠাতে বললেন কেন, জানিনা।

      ‘ভীমপুর এ বি এম সাঁওতাল গার্লস হাইস্কুল’টি মিশনারিদের প্রতিষ্ঠিত স্কুল। ভাঙাচোরা বিল্ডিংগুলি আজও ইতিহাসের সাক্ষ্যি বহন করে চলেছে। এখানে না এলে জঙ্গলের মধ্যে এরকম একটি প্রাচিন স্কুলের কথা, যা কিনা মেয়েদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, জানতামই না। বাল্য বিবাহের কুফল সমন্ধে বলতে এসে আশ্চর্য হয়েছি শিক্ষিকা ও  ছাত্রীদের উদ্যম ও প্রচেষ্টা দেখে। তবে খারাপ লাগল সরকারের   অবহেলার কথা শুনে। স্কুলের হস্টেলটি সরকার বন্ধ করে দিয়েছে।      যে কারণে দূরের ছাত্রীরা ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও স্কুলে পড়তে পারছে না।

🍂
     দুর্গাপুজো আর বেশি দূরে নেই দুপুরবেলা চন্দ্রিমাদের বাড়ি গিয়ে পুজোর সাড়ি জামাকাপড় দিয়ে এলাম। পরে শুনলাম শিবানীদি খুশিতে কেঁদে ফেলেছেন। বলেছেন, ‘এরাই প্রকৃত অর্থে আত্মীয়, আপনজন’। জন্মসূত্রে বা বিবাহসূত্রে সবসময় আত্মীয় হয়ে ওঠা যায় না। আত্মার সঙ্গে মিল হতে হয়।

     আজ পঞ্চমী, বিকেলে কর্নেলগোলার আদি দুর্গোৎসব উদ্বোধনে গেছলাম। মুখ্যমন্ত্রী যদিও ভারচ্যুয়াল উদ্বোধন করেছেন, তবুও আমাদের  আমন্ত্রণ করা হয়েছিল।আমি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, চন্দন বসু ,দুলাল  আঢ, বিবেকানন্দ বাবু, প্রসেঞ্জিত, সাহা প্রমুখ। আমি বক্তব্য রাখার  সময় মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া  এলেন। আমাকে থামতে হল,যতই হোক রাজ্যের মন্ত্রী বলে কথা।।তাতে তাঁর ভাষা যেমনই হোক। উনি মঞ্চে বসে আমাকে বললেন, ম্যাডাম, আপনি শুরু করুন। আমি অল্প কথা  বলব’। আমি আমার বক্তব্যে হোসেন শাহ্‌ সোরাবরদির মা খুজিস্থা বানুর কথা উল্লেখ করলাম। উনি বক্তব্য রাখার সময় সোরাবরদির বিষয়টি ছুঁয়ে গেলেন।

    আজ শামসুদ্দিন ফোন করে ছিল, জানিয়ে দিলাম, এত অল্প  সময়ে লেখা দেওয়া সম্ভব নয়।এবার থেকে ভেবেচিন্তে সময় নিয়ে লেখা দেওয়ার কথা দিতে হবে। রাতে শুভজিতের সঙ্গে আনেকক্ষণ চ্যাট এ কথা হল। উনি সোরাবরদির পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইছিলেন। সারা বিশ্বে সোরাবর্দির আত্মীয়স্বজন ছড়িয়ে আছে। এটা জানার পর উনি  মেদিনীপুরের এই পরিবারটির ইতিহাস জানতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আমাকে বললেন, তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে পারলে উনি আমার সাখ্যাৎকার নিয়ে বাংলাদেশের একটি পত্রিকার জন্য লেখা তৈরি করবেন। ওদেশের  মানুষ ওনার বিষয়ে জানতে খুব আগ্রহী।

  সারাদিন আজ লেখা খুঁজতেই সময় চলে গেল, লেখা হয়নি। এদিকে অনেক লেখা জমে গেছে, আর একটা বই হয়ে যাবে। কিন্তু আত্মকাহিনী  লেখা শেষ না করে কিছু করা যাবে না। রাতে ছবি মাইতি এসেছিল। ওর বাড়ি ঝাড়গ্রাম জেলার জঙ্গলে ঘেরা ধানঘোরী গ্রামে। খুব লড়াকু মেয়ে।বর্তমানে  মানিকপাড়ার বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা। আমাদের বাড়ির কয়েকটা বাড়ি পরেই ওর দাদুবাড়ি,  সোশাল মিডিয়ায় পরিচয়ের পর অনেকের (মহিলা) সঙ্গে সম্পর্কটা ফেসবুক ছাড়িয়ে যায়। জানি না কী কারণে আমার প্রতি অনুরক্ত হয়ে ওঠে। আমি নিজেও এইসব লড়াকু মেয়েদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করি।

      পুজো শেষ, বিজয়ার পর্ব চলছে এখন। আজ অনন্যা বিজয়ার প্রণাম জানাতে ফোন করেছিল। অনেকক্ষণ কথা হল। সন্ধ্যায় সুস্মিতাও ফোন করে বিজয়ার প্রণাম জানাল। ওকে আমাদের বাড়ি আসতে বললাম শনিবার বা শুক্রবার।

     আজ মঙ্গলাপোতা গেছলাম। রানীর জন্যই যাওয়া। ছবি পুজোর  সময় গিয়ে থেকে গেছে। ওদের ড্রাইভার আসতে এত দেরি করল যে পৌঁছাতে দুপুর হয়ে গেল। সরবত খেয়েই ভাতে বসতে হল, আয়োজন ভালই ছিল। উচ্ছেভাজা, ডাল, পালংশাকের ঘণ্ট, দেশি মুরগির ঝোল আর স্যালাড। তবে এখানে মন ছিল না। সবই মাথার ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছিল। বেশি কিছু ভাবতে চাইলে বুকের ভিতর  অব্যক্ত্য যন্ত্রণা খোঁচা  দিচ্ছে। চারিদিকে শুধু নাই নাই নাই।সন্ধ্যা ৬ টায় রওনা হয়ে রাত ৮ টার পর বাড়ি ঢুকলাম। প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা রাস্তা দিলনা, তাই অনেক ঘুরে আসতে হল।

    শনিবার সুস্মিতা এসেছিল। চন্দ্রিমার নিয়ে আসা খাবার খেতে খেতে  ভালই আড্ডা হল। ব্যাঙ্কে চেকটা জমা দিয়ে এসেছি।এখন লেখার ফাঁকে ফাঁকে  সাড়িতে এমব্রয়ডারি করছি। সামসুদ্দিনের লেখাটাও শুরু করেছি। এদিকে রানীর শ্বশুর শাশুড়ি ডেলিভারির পর রানী ও বাচ্চকে আমার বাড়িতে রাখার জন্য বলছে। এসব অন্যায় আবদার। আমি কত দায়িত্ব নেব? কোন আক্কেলে বলছেন জানিনা। আজ ভাস্কর পতি ফোন করে বলল, আগামিকাল আমার ইন্টারভিউ নিতে আসবে ।

                            ক্রমশ

Post a Comment

0 Comments