সুমিত্রা ঘোষ
হৃদয় মামাকে তিরস্কার করল কারণ মামা বলেছেন,অক্ষয় বাঁচবে না। ডাক্তার বদ্যি সবই দেখানো হল। সকলের একটাই চিন্তা অক্ষয়কে কিভাবে ভাল করা যায়। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে মাস খানেক ভুগে অক্ষয় মারা যায়। শ্রীরামকৃষ্ণ শোকাতুর চিত্তে অক্ষয়ের পাশে বসে তাকে বললেন, অক্ষয় বলো, গঙ্গা, নারায়ণ, ওঁ রাম। ঐ মন্ত্র তিনবার আবৃত্তি করল অক্ষয়। তারপর সব শেষ। অক্ষয়ের মৃত্যুর পর শ্রীরামকৃষ্ণ চলে গিয়েছেন ভাবভূমিতে। হৃদয় যত কাঁদে, তত হাসে শ্রীরামকৃষ্ণ। নাচেন, গান করেন। অমৃততীর্থে এসে উত্তীর্ণ হয়েছে অক্ষয় ক্ষয়হীন আনন্দধামে। এ দেখে যদি আনন্দ না হয় তবে কী দেখে হবে! পরদিন কালীবাড়ির উঠোনের সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে শ্রীরামকৃষ্ণ দেখলেন অক্ষয়ের নরদেহ-র শেষকৃত্য করে সকলে ফিলে এল। সে দৃশ্য দেখে শ্রীরামকৃষ্ণর বুকের ভিতর দুমরে- মুচরে উঠল। কোন প্রকারে শোক সংবরণ করলেন কারণ সেই মুহূর্তে তাঁর মনে হয়েছিল তাঁর যদি এরকম হয় তবে গৃহীদের শোকে কী না হয়! শ্রীরাম কৃষ্ণ সব জেনে বুঝেও নির্বিকার রইলেন।
এক সময় রাণীর জামাতা মথুরাবাবু শ্রীরামকৃষ্ণকে নানাভাবে দর্শন করেছেন। দু-একটা উদাহরণ রাখা হচ্ছে। একদিন মথুরাবাবু দেখছেন শ্রীরামকৃষ্ণ কালীঘরের বারান্দায় পায়চারি করছেন। এদিক থেকে যখন ওদিকে যাচ্ছেন তখন শ্রীরামকৃষ্ণ শিব, আবার যখন ফিরে আসছেন তখন মা কালী। সেইদিন মথুরাবাবু বুঝেছিলেন, দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরে এমন কিছু ঘটবে যা অন্য কোথাও ঘটেনি। রানিকেও মথুরাবাবু বলেছিলেন আপনার মন্দিরের মা সাধারণ পাথরের মূর্তি হয়ে থাকবেন না। মায়ের জাগ্রত, জীবন্ত উপস্থিতি যে হবে মথুরাবাবু শ্রীরামকৃষ্ণর আচরণ দেখে বুঝতে পারেন। পুজোর আসনে বিভোর পূজারি শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখে রাসমণি ভাবস্থ হতেন। রাসমণি দেবীও সাধিকা। সাধনায় বুঝতে পারতেন তার সামনে বসে আছেন এক দৈবী পুরুষ। তিনি নিজের মতে চলেন, কারুর কথা গ্রাহ্য করেন না।
🍂
আরও পড়ুন 👇
রামকৃষ্ণদের বলেছেন মন নিয়ে কথা। মনেতেই বন্ধ, মনেতেই মুক্ত। মন যে-রঙে ছোপাব সেই রঙে ছুপবে।শ্রীরামকৃষ্ণদেব আমাদের ভেতর সাত্ত্বিক ভাব জাগ্রত করার জন্য বলেছেন — মনেতেই বদ্ধ,মনেতেই মুক্ত....। শ্রী রামকৃষ্ণ আরও বলেছেন “যে ব্যক্তি আমি বদ্ধ, আমি বদ্ধ বলে, সে শালা বদ্ধই হয়ে যায়। শ্রীরামকৃষ্ণদেব ছিলেন নররূপী নারায়ণ অথচ দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে মা ভবতারিণী মাকে না বলে কোন কাজ করতেন না। কোন ভক্ত তাঁর কৃপা চাইলে ঠাকুর সরাসরি বলতেন মন্দিরে গিয়ে মায়ের কাছে মনের কথা জানিয়ে এলে মা-ই সব ব্যবস্থা করে দেবেন। যেমন এক সময় নরেন্দ্রনাথ দত্তকে বলেছিলেন যা মায়ের কাছে গিয়ে তোর মনের আর্তি জানিয়ে আয় মা সব ব্যবস্থা করবেন। রানির রাসমণির জামাই মথুরামোহন বিশ্বাস ঠাকুরের কাছে ভাব সমাধি চেয়েছিলেন। ঠাকুর বললেন, সেকি আমার হাতে? যাঁর হাতে, তাঁকে গিয়ে ধর। মন্দিরে যাও, গিয়ে মাকে বল- মা আমাকে ভাব সমাধি দাও। ঠাকুর নিজেকে উদ্দেশ্য করে মথুরাকে বললেন, আমাকে তো তিনিই দিয়েছেন। তাঁর ইচ্ছে হলে ছুঁচের ফুটো দিয়ে হাতি গলে যায়। ঠাকুরের মুখে এত কথা শোনার পরও মথুরাবাবু শ্রীরামকৃষ্ণ দেবকেই আশ্রয় করে থাকতে চায়। সে যে, রামকৃষ্ণদেবকে একবার শিব, একবার কালী মূর্তিতে দেখেছে, তাই তো মথুরাবাবু জোর গলায় বলতে পারে তুমি শিব, কালী, কৃষ্ণ, রাম, ভগবান - তুমি আমার সব, আর আমি তোমার সেবক। তোমার সেবাই আমার সাধনা, এভাবে নানান কথা বলে মথুরামোহন শ্রীরামকৃষ্ণদেবকে বোঝােতে চেয়েছে আমি অন্য কোথাও যাব না, তুমি পাশ কাটাতে চাইলেও আমি তোমায় ছাড়ব না। তুমি আমার ভাবসমাধির ব্যবস্থা করে দেবে। ঠাকুর মথুরাবাবুকে বুঝিয়েছেন তোর ভাবসমাধি হলে তোর বিষয় আশয় সব রক্ষা করবে কে? বার ভূতে সব যে লুটে খাবে —তখন কি করবি । মথুরাবাবু এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে অটল অবিচল হয়ে থেকেছেন। বলেছেন- সে যা হয় করব, আমার ভাবসমাধি চাই। মথুরামোহন সব উপদেশ শুনেও নিজের সিদ্ধান্ত পালটাননি। বলেছেন আমার শুধু তুমি আছো।ক্রমশ
0 Comments