জ্বলদর্চি

অরূপ তোমার বাণী থুড়ি জীবনী/ ( নবম পর্ব )/ অরূপ পলমল

  অরূপ তোমার বাণী থুড়ি জীবনী 

               ( নবম পর্ব )

             অরূপ পলমল 


     ফিরে আসি আবার পূর্বের আলোচনায়। আমি এতোটা টাইপ কী করে করলাম ফোনে? তুই নাকি অবাক! good!                                           

      ভোটের প্রচারের সময় আমাদের প্রায় প্রত্যেকের বাড়ির প্রাচীরে বা বাড়ির দেওয়াল -এ রাজনৈতিক স্লোগান লিখে বিভিন্ন মুখছাপ ও ছবিছাপ দিয়ে যায় উন্নয়ন সমিতির সদস্যরা চিরকাল। এবং সারা বছর জ্বলজ্বল করে চোখের সামনে। তাতে কী কখনো এই প্রমাণ হয় যে-  দেওয়াল মালিক কোন পার্টির সমর্থক? হয়? হয় না। বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তার উল্টো হয়। নিজের দেওয়াল কিন্তু মতাদর্শ বা প্রচার অন্যের। ভাবা যায়!

     আসলে, আমরা ভাবি না- কখনোই ভাবি না যে আমার দেওয়াল অন্যের হয়ে যাবে। কিন্তু হয়ে তো যায়। যদি…ভাব…আচ্ছা... একবার তো ভাব...আমাদের প্রত্যেকের  বাড়ির প্রাচীর অথবা বাড়ির দেওয়াল -এ সবাই রবীন্দ্রনাথ. ..  তারাশংকর. ..  বিভূতিভূষণ…শরৎচন্দ্র...মানিক… জীবনানন্দ...শক্তি...বিদ্যাসাগর... রামমোহন...শ্রী চৈতন্য... গুরু নানক... রামকৃষ্ণ প্রমুখ মুনি-ঋষিদের প্রতিচ্ছবি ও তাঁদের নানান বিখ্যাত বাণী দিয়ে সারা বছর  ঘিরে রাখতাম ও অংকন করে রাখতাম তো…"তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?

যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয়

তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?

তুমি বলো..

এই পথ যদি না শেষ হয়

তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?

লাল লা লা লা..." 

     "ভাবো! ভাবো! ভাবা প্রাক্টিস করো!"... আগামী প্রজন্ম ও ভবিষ্যেতের জন্য আমরা একটা কতো সুন্দর 'দৃশ্য দূষণ' মুক্ত নান্দনিক পৃথিবী উপহার দিয়ে যেতে পারতাম! আমরা তা ভাববোও না। করবোও না!

      তাই আমিও তোর দেওয়ালটা ব্যবহার করেছিলাম মাত্র। তাতে তোর কিছু যায় আসে না। তা কখনো তোর কথা বা চিন্তার ধারক বা বাহক হওয়ার কথা না। আর তোকেই বা শুধু শুধু অত শত কথা মুই বলতে যাবা ক্যান? তুই কী মোর শত্রু?আর তুই যদি তোর দেওয়ালটা দু-একদিনের মধ্যে আগড় না পড়িয়ে দিতি; তো বিষয়টা-  এই নব রূপকে "থুড়ি" নাটক রূপে আমার নিজের দেওয়ালে পুনর্মুদ্রণ হয়ে আসতো না! তাই তোকেও ধন্যবাদ অসংখ্য... চাবি তালা মারার জন্য। 

     যাইহোক, মোর একটা ভাইপো বলে- "জায়গা-জমিন...গাছ-পালা…ঘর- বাড়ি….কারোর নয় রে...সবই তাঁর!"

      আমিও মূর্খ…কথাগুলো বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। তাই না ভেবে যেখানে-সেখানে, যার তার ঘাড়ে, মতামত চাপিয়ে - ছাপিয়ে দিয়েছিলাম। এই মূর্খতার  খেসারতও কড়ায় গন্ডায় গুনতে হয়েছে মোকে। সেদিন ঘরে ফিরে দেখি... আকাশটা  থমথমে। প্রথমে মেঘ ভার চব্বিশ ঘণ্টার ওপর। তারপর গর্জন! কিন্তু এইটুকু স্বস্তি যে বর্ষণ হয়নি। "জো মেঘ গরজ্তা হ্যা ও বরষ তা নেহি "! বাঁচোয়া.... 

     কিন্তু এটুকু বুঝেছিলাম -বোমাটা ঠিক জায়গায় হয়তো পড়ে গিয়েছিল। আমার 'নাদানি'র ভুলে…(স্রষ্টার কাছে, ভাগ্যের কাছে প্রশ্ন করেছি / আমার মানুষ হবার সুযোগ পেলাম কই ?/ আমি তো সেই মানুষটি নই!/একটা একটা করে দিন কেটে গেলো আমার / বয়স বাড়লো কই?/ একটা একটা করে দিন কেটে গেলো আমার / মানুষ হলাম কই?)

🍂

'টাইপ'! ফোনে? এতো এতো! সেদিনও. .. আজও...দরকার ছিলো কী? কেমনে সম্ভব?                         জানিস, তোর মতো আমিও অবাক! রীতিমতো অবাক! বিষ্ময়কর!

 বিশ্বাস করো- নিজেই নিজের প্রতি! আসল কথা হলো গিয়ে -বাঁচার সূত্রটা বা সমীকরণটা হাতড়াচ্ছি বেশ কয়েকদিন ধরে. ..খুঁজছি...আসলে অনেক শুনেছি এই ছোট জীবনটাতে। শুনেই গেছি এতদিন। খুব কম বলেছি।ভেবেছি কিন্তু বলিনি। ভাবলাম এবার বলার সময় এসে গেছে। না হলে আর কত শুনবো? আর কবেই বা বলবো?মেঘে মেঘে তো অনেক বেলা হলো...সূর্য তো পশ্চিম আকাশের দিকে ঝুঁকে গেছে। আজ আছি হয়তো কাল নাও থাকতে পারি। নিঃশ্বাসকে তো বিশ্বাস নেই। তাই না?  তাহলে কী আমার একান্ত নিজস্ব ভাবনাগুলো আমার সাথেই চিতায় উঠে যাবে? পুড়ে শেষ হয়ে যাবে? এতো যে ধার দিয়ে দিয়ে অস্ত্রটা শানিয়ে রাখলাম - সেকি শুধু নিজেই রক্তাক্ত হবো বলে? কাওকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করবা না?তাই কিছুদিন যাবৎ বাঁচার সমীকরণটা বদলে দিয়েছি--জানি, শুনিয়ে কোন লাভ নেই। শুনবেও না কেউ। সবাই নিজের কথা বলিতে ব্যাকুল। বক্তা। শ্রোতা কম। নেই বললেই চলে। অন্তত আমার দুনিয়ায়! 

আর আমিও কাওকে শোনাতে চাই না।                                            পারি না। তা তো তোকে আগেই বলেছি… আমি সুবক্তা না। কখনোই না। এখনও না।

হতেও চাই না। তাহলে পথ -- লিখবো। দু -একটা পাঠক অন্তত পাবো। তোর মতো।

তাই এতো...এতো...টাইপ! অবাক আর হবি না 'খুকু'! সবাক হও বরং!                        এই শুভেচ্ছা ও কামনা থাকলো!

     যারা একদিন- আমি একটু অন্য রকম ভাবতে পারি বলে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছিলো তারাই আজ কতো দূরে?  

হুম্ রে--সত্যিই..." আমার এ পথ তোমার পথের থেকে অনেক দূরে গেছে বেঁকে॥

আমার ফুলে আর কি কবে তোমার মালা গাঁথা হবে,/ তোমার বাঁশি দূরের হাওয়ায়   কেঁদে বাজে কারে ডেকে॥/শ্রান্তি লাগে পায়ে পায়ে বসি পথের তরুছায়ে।/সাথিহারার গোপন ব্যথা বলব যারে সেজন কোথা--পথিকরা যায় আপন-মনে,   আমারে যায় পিছু রেখে॥"-- আর তারাই ভাবে আজ- আমি "উন্মাদ !পাগল !!"

আর তুই বা তোরা?এই শোন - আমি তোদের পৃথিবীর বাসিন্দা না! তোদের কেনাকাটা...ঘোরা...একা একা আনন্দ উপভোগ করার...বাসিন্দা না! বিরিয়ানি গন্ধ মাখা--- কাটলেট...ধুর! মাথা খারাপ! 

ধ্যাৎ!

      কবি বলিয়াছিলেন - "এ মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না"! আবারও বলছি কবিকে সম্মান দিয়েই - "তোদের বিরিয়ানি কাটলেট গন্ধ মাখা ফুরফুরে রেস্টুরেন্ট দেশের আমি বাসিন্দা না। আমার দেশ না।"

     ভয় হয় মাঝে মাঝে! জানিস--তোদের এই 'আত্ম-অহমিকাময়' বা 'আত্ম- প্রতিষ্ঠা' পাওয়া অহংকার -এর মুহুর্মুহ বিস্ফোরণ আর আমিত্বের বুঝ্বুজ পৃথিবী থেকে আমি ছিটকে যাবো না তো? হারিয়ে যাবো না তো?

      আমি ঠিক নাকি আমি ভুল?-- আজকাল ভীষণ এই সংকটে ভুগি?

 সংকট...গভীর সংকট! তখন অবশ্য রবির শরণাপন্ন হই। যিনি বিশ্বকবি অথচ কতো নির্দিধায়- নিঃসংকোচে বলতে পারেন -

"আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার  চরণধুলার তলে।/সকল অহংকার হে আমার

 ডুবাও চোখের জলে।/ নিজেরে করিতে গৌরব দান/নিজেরে কেবলি করি অপমান,/আপনারে শুধু ঘেরিয়া ঘেরিয়া/ঘুরে মরি পলে পলে।

      সকল অহংকার হে আমার/ডুবাও চোখের জলে।/আমারে না যেন করি প্রচার/আমার আপন কাজে;/তোমারি ইচ্ছা করো হে পূর্ণ/আমার জীবন-মাঝে।

    যাচি হে তোমার চরম শান্তি,/পরানে তোমার পরম কান্তি,/আমারে আড়াল করিয়া দাঁড়াও/হৃদয়পদ্মদলে।/সকল অহংকার হে আমার/ডুবাও চোখের জলে।"

 -- এই 'শব্দব্রম্ভে'র কাছে যখন গিয়ে দাঁড়াই তখন মনে হয় - এই তো ঈশ্বর! ঈশ্বর দর্শন প্রাপ্ত হয়! (যার উঠোনে দাঁড়িয়ে দু-ফোঁটা চোখের জল ফেলতে পারি - ডুকরে ডুকরে কাঁদতে পারি নিশ্চিন্তে -- সেই তো আমার "প্রিয়া"! আমার "ঈশ্বরী"!)

   [ধারাবাহিক/ পরবর্তী অংশ বিরতির পর।] 

                

Post a Comment

0 Comments