জ্বলদর্চি

কয়েকটি কবিতা /সুমিত্রা মাহাত

কয়েকটি কবিতা
সুমিত্রা মাহাত



শীত

কুয়াশায় মোড়া চারিদিক-
ভোর ভোর উঠে যাওয়া কুকুরটাও 
কুন্ডলী পাকিয়ে শরীরের উত্তাপ বাড়ানোর চেষ্টা করে।
এবছর বৃষ্টি কম তাই শীত বেশি,
হিসেব বরাবর করে দিয়েছে প্রকৃতি,
আনাচে কানাচে ঢল নেমেছে ভ্রমণপিপাসু মানুষের-
কুয়াশার আবরণ ছিঁড়ে সূর্য উঁকি দেয়,
উষ্ণ রোদের মৌতাত ছড়িয়ে পড়ে-
পাটলির মাঝে ধানের চারা,
যেন একখণ্ড সবুজ রুমাল!
বৃষ্টি না হওয়ায় বেশ জমেছে সব্জির পসরা।
রমরমিয়ে চলছে খেজুর গুড়ের বেচা-কেনা,
সরষে বীজ ডাঁশা হয়েছে,জাঁকিয়ে শীত পড়েছে।।


কন্যা

আমার অন্তর থেকে উৎসারিত দীপশিখার খন্ড রূপ তুমি-
আমার অজান্তেই কখন আমার আমি , তুমি হয়ে উঠেছো,
কখনও তোমার মনের প্রসারতা দেখে,
সম্মানে মাথা ঝুঁকে যায়-
কখনও বিষয়ের গভীরতা দেখে 
বিস্ময়ে হই হতবাক, 
আপন খেয়ালে গড়তে গড়তে কখন যে সীমা অতিক্রম করেছো!
বৃহৎ আমির একফোঁটা , তুমি!


কোনো একদিন 

বুনো পথের লোভ, সামলানো যায় না কিছুতেই 
নিমরাজি হয়েও রাজি হই,
সময় বাঁচানোর দায় ছিল না,তবুও-
রাস্তা সর্পিল পথে বন ভাগ করে চলে যায়-
শাল বন ছোঁয়ার আগে সারি সারি সরষে ক্ষেত। 
ঝলমলে ফুলের আনন্দ ভাগ করে নিতে,নেমে পড়ি ক্ষেতে।
শাড়ীর কমলা রঙে আকৃষ্ট হয়ে ঘিরে ধরে পতঙ্গেরা-
দলে দলে মৌমাছি,কালো ভ্রমর, 
তাদের একটানা ভোঁ ভোঁ শব্দে, মনে উঁকি দেয় ছন্দ,
হলুদে হলুদময় চারিদিক!
হলুদের হাতছানি উপভোগ করি,
বাঁধপাড় দিয়ে লাল মাটির রাস্তা,
রাস্তার ধারে ধারে ফুটে অতসী ফুল,
কুঁচ ফল ফেটে লাল কালো দানা উঁকি দিচ্ছে , যেন সাজানো আলপনা,
বাঁধের অপর পাড়ে সারি সারি ছাতিম গাছ,
ঝোঁকা ঝোঁকা ফল বাতাসে দুলছে;
কিছুতেই এ দৃশ্যপটের বদল চায় না মন।


এলোমেলো 

কুয়াশাচ্ছন্ন তিন দিন,
দুদিন উঠেই , ঝুপ করে ডুবে গেছে সূর্য, 
শেষ দিনে তার দেখাই পাওয়া গেল না।
কুয়াশা ও ঝিরঝিরে বৃষ্টি,
এ যেন কালিম্পং!
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব কার?
মানুষ নাকি প্রকৃতির-
মানুষ এক অদৃশ্যলোকে তার দায় ঠেলে দেয়,
সূর্য যদি আর , না ওঠে কোন দিন, 
একবারো কি ভেবে দেখেছে মানুষ?


নেই সূর্য 

তোমার আশায় ভেজাই নি চুল,
দিই নি রোদে লেপ-
পাখ - পাখালি কুঁকড়ে মরে
ভরবে কীসে পেট?
ঢের হয়েছে এবার ওঠো-
চলছে না তো আর,
ঝিরঝিরানি বৃষ্টি,সাথে
কনকনানি জাড়।।

Post a Comment

0 Comments