সৌমেন রায় ও সন্দীপ দত্ত-র অণুগল্প
আড়াই প্যাঁচ ।। সন্দীপ দত্ত
মাথা চুলকে মুক্তোর মতো সাদা গজদন্ত বের করে প্রথমে মনের সুখে কিছুক্ষণ হেসে নিলেন অভিরূপ। তারপর বললেন,"দেশ যেখানে উচ্ছন্নে গেছে,মানুষ তো সেখানে ফায়দা নেবেই। আড়াই প্যাঁচ বোঝেন? আমরা এখন প্রত্যেকেই আড়াই প্যাঁচের মানুষ। মন্ত্রী থেকে ফিল্মস্টার,পুলিশ থেকে সাংবাদিক। পুরো পৃথিবীটাই এখন জিলিপি ম্যাডাম। রস নিতে গেলে আগে প্যাঁচ কষতে হবে।"
সংবাদ মাধ্যমে চাকরি। দশটা লোককে অহংকার করে বলার মতো। ইন্টারভিউতে সিলেক্ট হয়েও তবু চাকরিটা নিতে রাজি হল না শীর্ষা। এই মন্দার দিনেও। যেখানে ভিখিরিদের ভাতের থালার সামনে বসিয়ে একটা ভাতও খেতে না দিয়ে শুধুমাত্র উন্নয়নশীল সমাজের ছবি তোলার জন্য ব্যবহার করা হয়,সে চাকরিতে আর যা কিছু থাক,অহংকার নেই।
ইন্টারভিউ রুম থেকে মাথা নিচু করে নয়,শীর্ষা বেরিয়ে এল চোয়াল শক্ত করে।
হ্যাঁগো মা, কাঁদি কাঁদি || সৌমেন রায়
বেতাল তলায় শালিখগুলো প্রাক সন্ধ্যা কলকাকলি ভুলে অবাক হয়ে শোনে বধূ কাকলি। পাড়ার প্রান্তে এক বুড়ো বেলগাছ অসম আবেগে জড়িয়ে আছে এক নবীন তালগাছকে। গাঁয়ের পঞ্চবধূ প্রতি গোধূলিতে একবার সেখানে কিশোরী হতে আসে। তেল- হলুদের কথা, পলাশ - বকুলের কথা সব এখানেই। স্বামী, পরিবারের মধ্যে গ্রাম্য টানা পোড়েন ডিঙিয়ে এ এক অস্বাভাবিক বন্ধুত্ব। এই আসরে কৃতিকা স্মিত হাসির ছায়া মাখা মুখে শোনে সব ,বলে কম। আজ কিন্তু সবাই চেপে ধরেছে কৃতিকাকে।
‘ চাকুরে বউয়ের সঙ্গে তোর এত গলাগলি কি করে রে কিতা ?’
প্রশ্ন দিয়ে প্রশ্ন ঢাকে কৃতিকা, ‘তোদেরই বা এত খটাখটি কিসের ভাই?‘
এইপথ দিয়েই ফেরে কৃতিকার বৌমা। উস খুস করে সে। এ কথা, সে কথা বলতে বলতে হাজির বৌমা।
‘ দেখ মা, তালগাছে গাছে কেমন বেল ধরেছে দেখ ।‘
বুড়ো বেলগাছের ফাঁকে অস্তরাগ রাঙা আকাশের দিকে তাকায় কৃতিকা।
বলে , ‘হ্যাঁগো মা, এ তো কাঁদি কাঁদি !’
সংগ্রহ করতে পারেন 👇
0 Comments