জ্বলদর্চি

বাগদি চরিত (পঞ্চচত্বারিংশতি পর্ব )/শ্রীজিৎ জানা

শিল্পী- আরাধ্যা জানা

বাগদি চরিত  ( পঞ্চচত্বারিংশতি পর্ব ) 

শ্রীজিৎ জানা

আরতি জানে তার মা যদ্দিন বেঁচে আছে তদ্দিনই। বাপ সগ্গে গ্যাছে কবেই। মা'টার চোখ বুজার অপেক্ষা।  হয়তো তারপরেই ভাজের আসল মুর্তি বের হবে। এখনো অব্দি ভাইটার মতিগতি তো ভালোই। পরে কি হবে কে জানে। যত হোক নিজের মায়ের পেটের ভাই। দুঃখ বুজলে সে-ই ত বুজবে। পরের ঝিউড়ি কেনে ঝলকলি পুয়াতে যাবে। আরতি নিজেকে দিয়ে বিচার করতে চায় না। কোন মেয়েই নিজেকে দিয়ে অন্য একটা মেয়ের কথা ভাবে না। সব মেয়েদের একটাই কথা,ভাই আমার ভাল কিন্তু ভাজটা সুবিধার নয। আরতিও অনেকবার অমন কথা বলেছে। যখন জয়রাম নিরুদ্দেশ হল, দু'ঘরে আলোচনায় বসল। আরতি তো বাপের ঘরে থাকতে কোনমতেই রাজি হয় না। তখন আরতির বাপ বেঁচেছিল। শেষমেশ পাঁচজনের আসনে বসে সবার কাছে সে একটা অনুরোধ করে বসে,
— আমি মুখ্যুসুখ্যু মানুষ বাপু, মোর কথা কুনু দোষ ধোরোনি। কপাল ত মোর ফেটেইছে,মেইছেনাটারও মোর অভাগী। তবু যদ্দিন আছি অদের দুটার পেট ঠিক চালাতে পারব। কুন্তু উ ত মোর ঘরকে যেতেই চায়ঠেনি। শ্বশুরের ভিটায় পড়ে থাকবে। তা থাউ, সে ত খুম ভাল, মানা কোরবোনি। তবে লাতিটাকে মোর কাছে রাখার তমরা অনুমতি দাও। থাইলে ছেনাটার টানে অন্তত উ মোর দয়রে জিয়ে দু'দশ দিবন থাকবে খন।
সালিশে বসা অনেকেই দ্বিমত প্রকাশ করে।
— তমার দিক থিকে কথাটা ঠিকই বোলচ। কুন্তু এখুনি যেদি লাতিটাকে লিয়ে যাও, থাইলে উ বউড়িটা ত এগবারে শেষ হই যাবে। সে ত মেইয়াটাকে আধখ্যানা কোরে দিয়েই গ্যাছে। অন্তত ছ্যানাটা কাছে থাকলে তবু এট্টু কষ্টটা উপশম হবে। তবে কিছুদিন যাউ, তারপরে না হয় লিযাবে।
— তা তমরা যেটা বিবেচনা কোরবে কর। মোর খেপি-হাউড়ি মেইছেনাটার মুখের দিকে চাও গো তমরা।
বলেই মেইয়ামানুষের মত হাউহাউ করে কাঁদতে থাকে। বাপের চোখের জল দেখতে পারেনি আরতি। চিৎকার করে কাঁদকেই দাঁতি পড়ে যায়। বাখুলের মেইয়ারা ছুটে এসে মাথায় জল দেয়। জাঁতি দিয়ে দাঁতি ছাড়ায়।  তার মাস তিন- চার পর আরতিকে তার বাপ নিয়ে যায়। 
এর আগে তো সে কতবার বাপের ঘর গেছে। তখনো তার ভাজ ছিল। কতনা হাসিখুশি মুখে রেঁধেবেড়ে খাইয়েছে। মাথায় তেল দিয়ে চুল বেঁধে দিয়েছে। পায়ে আলতা পরিয়ে দিযেছে। শাউড়ির সঙ্গে জসি থেকে আনাজ তুলে ব্যাগ ভর্তি করে তুলে দিযেছে। আরতির চোখে তখন ভাজের কোন খুঁট ধরা পড়েনি। বাপের ঘরের পাড়ায় গর্ব করে বলে বেড়িয়েছে,
— যাই বল, মোর ভাজের মতো বউড়ি কারো হবে নি।  মোর ভাইটি যেন তেমনিটিই হইচে ভাইয়ের বউ। মোর মা-বাপ অনেক পুন্নি করেচে বোলেই ওরকম বউসার হাতে সুখে খায়ঠে। অন্যদের ঘরের শাউড়ি শ্বশুরদের মতো বউমাদের হাতে লাতঝাটা খেতে হয়নি।
সেই আরতি যেবারে তার ছ্যানাকে রাখতে যায,সেবারে তার যেন ক্যামন লাগে ভাজকে। যদিন ছিল বাপের ঘরে তদিন খুব একটা ভাল করে কথা বলেনি। সব সময় যেন মুখটা তার কালো হয়ে ঝুলে আছে। আরতির তখন মনের অবস্থা ভালো নয়। সেইজন্য ভাজের আবভাব নিয়ে অতটা মাথা ঘামায়নি। তার উপরে মা-বাপ যেহেতু আছে,ভাই-ভাজ কি ভাবল তাতে কিছু আসে যায় না তার। তবুও সে মা তো। নিজে যতই  ছ্যানাকে রাগে দুচ্ছাই করুক, অন্য কেউ হেলাফেলা করলে মা হয়ে সওয়া যায না। মা এই বকবে,এই মারবে,আবার এই সোহাগ করবে,অন্যরা কি করবে! সেইজন্যই তো ভাজের মন রাখতে আরতি যখন পারে কিছু কিছু টাকা তার হাতে দিয়ে আসে। মুখে না না করলেও আসলে যে নিতে তার মন ষোল আনা রাজি,আরতি তা বোঝে। তবে তাতে সে কিছু মনে করে না। ছেলেটাকে তার যে করে হোক মানুষ তাকে করতে হবে। তাতে যদি পাঁচজনে পাঁচকথা বলে, সে শুনে নেবে,কিছু মনে করবে না। 
🍂
পরের দিন আরতি ভয়ে জড়সড় হয়ে থাকে। কাউকে তো সে কিছু বলতেই পারবে না। সকাল হতেই ছাগল নিয়ে মাঠকে চলে যায়। ছাগলগুলান ছেড়ে দিয়ে বসে পড়ে আলে। চোখের জল বাধা মানে না তার। নিজেই নিজের সাথে কথা বলতে থাকে,
— ই কি বিপদে ফেলালে গ মোকে ভগমান! আমি যে অমন মেইয়া নয় গ। অমন পাপ কাজ আমি কত্তে পারবোনি।  মোর পুরুষকে ছাড়া কারো দিকে আমি মুখ তুলে তাকায়নি গ। কেনে মোর এমন পরীখ্যা লাউঠ গ ভগমান। মোর ভাগ্যে কি তুমি অপঘাতে মিত্যু লিখেচ? শেষ পোজ্জন্ত কি মোকে অর জ্বালায় মত্তে হবে? মোর ছেনাটাকে থাইলে কে দেখবে গ!  হায়,আমি এখন কি কোরবো গ! ভাসুর,সে ত একটা গুরুিজন লোক,তার কি এমন করাটা সাজেঠে। তার কথায় যেদি রাজি হোই ত আমি পাপে মোরে যাব। আমি পারবোনি গ। ওগো তুমি কুথাকে গেলে! তমার আরতি আর বোধায় নিজেকে বাঁচি রাকতে পারবেনি। তার দিকে কুলজর পড়েছে।কদিন আর সে নিজেকে সামলিয়ে রাখবে। তুমি ত জান,তমার বউ যে অমন নয়। তার পেরনাে বোড়ো ভয়।  বোড়ো লোজ্জা তার।
বেলা ডিঙিয়ে ঘরকে আসে আরতি। লোখা চিল্লামিল্লি শুরু করে দেয়,
— তমার কি চোখ টোক নাই! দেকতে পাওনি কত ব্যালা হইচে। সকাল থিকে ত দাঁত কিছু কাটনি। বাসি মুখ ধুইচ নাকি কে জানে। এই অবেলায় এসে পুকুরে ডুবে চাট্টি ভাত খেই লিবে। ব্যাস্,  পিত্তি পড়া পেটে ভাত খেয়ে রোগ বাঁদি লাও। বাখুলের লোকে মোকে পাঁোচকথা ঠেস মেরে বোলু। আমরা তাকে ছাগল চরাতে পাঠাই। ডেকে হেঁকে খেরতে দিইনি। বোলু এরকম চাট্টি কথা। তমার খুম ভাল হউ। তুমি কি ভেবেচ বল দিখি!
লোখাকে সে ভাল করে চেনে। তার এই দেওরটি চটকা-রাগী। এখুনি কিছু বলা মানে তিলকে তাল করে ছাড়বে। তাছাড়া কিইবা বলার আছে তার। কেন আজকে সে মাঠ থেকে ফিরতে চায়নি,সেকথা কখনোই বলতে পারবে না। তাই কিছু উত্তর না করে ছাগলছাড়ে অবলা প্রানী গুয়ানকে বেঁধে দিয়ে পুকুর ঘাটের দিকে চলে যায়। ময়না সবদিনের মতো আজও আরতির পক্ষ নিয়ে লোখাকে গালমন্দ করে,
— জান ত সে মেইয়াটা ওরকম। তার উবরে তুমি যা আনাড়ি, তমার সঙে কথা বলাই মুখ্যামি। ক্যানে থাইলে তাকে অতকথা শুনানার দরকার আছে,বল দিখি। সবেতেই সে একটু মাঠো গোছের। বউদি হয় ত তমার! অত মুখ দেখাতে যেওনি। ব্যাছারি মনে কষ্ট পাবে!
— তুই খজরাশালি, টকেও আছু ঝোলেও আছু! তাকে কি মোর ভালর জন্নে বোলিঠি, তার জন্নেই বলা। ব্যালা-অব্যালা বুজবেনি, খাবে। কিছু হলে ত মোদেরকেই কথা শুনাবে লোকে।
— লোকের আর কি লিবে। কাজ নাই ত খই ভাজ! মোদের নাম চচ্চা লিয়ে ত আছে বাখুলের লোক। থাউ পাল্লে, তায় মোদের কিছু যায় এসেনি। মাথার উবরে যিনি আছে, তিনি ঠিক দেকচে।
— লে, তোকে আর বোকতে হবেনি। এখন চ দিখি যেথায় বেরিচু। ছেনাগুলান আবার কুথা চলে গেল।
আরতি চান করে তুলসীথানে জল দেয়। যত বেলা হোক,সবদিন ঠাকুরথানে জল না দিয়ে সে দাঁতে কিছু কাটে না। ঠাকুর প্রনাম করতে করতে দেখে ময়না সেজেগুজে বেরিয়েছে। জল দেওয়ার পিতলের ছোট্ট বামুনা- ঘটিটা কলঙায় রেখে ছোট জা'কে জিগ্যেস করে,
—তরা কুথাকে যাবি বলে বেরিচু? 
— বাপের ঘর যাব যে। তমাকে সেদিনে বোল্লম নি। মা অনেকবার ডেকে পাঠিচে। তমার দেওরের জন্নেই ত যাবা হইনি। তাপরে কালকে সে বলেঠে, তুই বাপের ঘর যাবি বোলছুলু যে,থাইলে চল। এখন ত তেরমন কাজ নাই।
কথাটা শুনা মাত্রই আরতির ছাতির ঢিপঢিপানি শুরু হয়ে যায়। কোথায় কি তার খিদা! আগত ভয় তাকে যেন বাঁশঝাড়ের শিকড়ের মতো কামড়ে ধরে। তবু একটু ভরসার আলো পেতে পরক্ষনেই শুধায়,
— ছেনা দুটাকেও লিয়ে যাবি?
— অরা কি থাকার ছেনা! তাবাদে অরাও কদিন থিকে মামাঘর যাব,মামাঘর যাব, বলে যেন ছিঁড়ে খায়ঠে।
— বোড়োটাকে নাইলে মোর কাছে রেখে যা না। উ ত থেকে যায় মোর কাছে।
—- দিনের বেলাটা থেকে যাবে কুন্তু রাত্তে যেদি জত্তুরু ধরে! তমাকে তখন নাকাল করাবে। উ আবার ছোটোর চেয়েও বেশি ডিংরা। তারচে যাও, পোরশু বিকালা চলে এসব। তুমি খে'লাও। ভালভাবে থাকবে, ছাগলছাড়ে চাবি দিবে মনে করে। হাঁস মুরগীর ছাড়ে কপাট দিবে। রাতে বেড়ায় চাবি দিয়ে শুবে।
ময়নার কোন কথা-ই যেন তার কানে ঢুকতে চায়ছে না। অন্য চিন্তা তার মাথার ভিতরে বিড়ালের আঁচড় কাটার মতো আঁচড় কাটছে। কলের যন্ত্রের মতো শুধু যাবার সময় ছেনা দুটার চুম খায় আরতি। আর ময়নার দিকে চেয়ে শুকনো স্বরে বলে, 
– দেখেশুনে যা থাইলে। ছেনা গুলানকে সাবধানে লিয়ে যাবি। 

আরতি সেই দুটা দিনের কথা কাউকে কোনদিন বলতে পারবে না। নিজেকেও নিজে ঘৃণা করে। এমনকি মরে যেতে পর্যন্ত চেয়েছিল সে। ঘরে বাঁশের কড়িকাঠে গামছার ফাঁস করে ঝুলে পড়বে বলে সব ঠিকও করেছিল কিন্তু ছোট ছেনাটার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই বন্ধ ঘরে চিৎকার করে কেঁদে উঠে। সেই দুটাদিন আরতির কাছে ছিল অভিশাপের। 
ময়নারা চলে যেতেই আরতির ভয় যেন বাড়তে থাকে। অথচ এর আগে তার ঘরে একা থাকতে মনের ভিতরটা কোনদিন এমন করেনি। সন্ধেটাও যেন ঝপ করে নেমে আসে। তাড়াতাড়ি তুলসীথানে সন্ধ্যা দিয়ে দুয়ারে চাবি ঝুলিয়ে দেয়। চারদিকের আলো জ্বালিয়ে দেয়। ঢোলের প্রায় ঘরে ইলেকট্রিকের আলো জ্বলে এখন সন্ধ্যায়। চারদিকে কান পেতে রাখে আরতি। মন তার জানে, পুরুষ মানুষের লোভ বড় বেয়াড়া। বিড়ালের মতো তার স্বভাব। যতই তাকে তাড়াও,বঁটি- কাটারি ছুঁড়ে তাড়া কর,তখুনি আবার ছুঁকছুঁক করবে। সকাল থেকে তার পেটে কিছু পড়েরনি। বার কয়েক শুধু জলই খেয়েছে। বাটিতে করে চাট্টি চালভাজা নিয়ে খেরতে শুরু করে। আর ভাবে,তাকেও কারো মে ধরে। কী আছে তার শরীরে। অযত্ন, অবহেলায় তার দেহের নারী চিহ্ন গুলান তো সৌন্দর্য হারিয়েছে। কোন আকর্ষণ তো থাকার কথা নয়। তেমন কোন শিহরণ তো সে অনুভব করে না। তবে কোন কোন দিন জয়রামের কথা মনে ভাসে। ঘুমের ঘোরে সে যেন তার সারাগায়ে সোহাগ ঢেলে দেয়। তারপরই আচমকা ঘুস ভেঙে যায়। মনটা মুষড়ে পড়ে। চোখ ভিজে আসে। সে যে একটা মেয়ে মানুষ সেইটুকু বুঝতে পারে শুধু মাসের ওই কটা দিন এলে। কী এমন দেখল লোকটা। এর আগে ত কোনদিন সে মুখ তুলে তার দিকে তাকায়নি!  সে তো অন্য বেগদা মেইয়ার মতো গা -মাথা খুলে রাখেনি। কেন তবে তার দিকে নজর পড়ল লোকটার! এইসব ভাবতে গিয়ে হাতের খামলে চালভাজা রয়ে যায়। আবার ঘটঘট করে ঘটি ধরে জল খেয়ে শুয়ে পড়ে বিছানায়। সারাদিনের না খাওয়া আর রাজ্যের চিন্তায় শরীরটা নেতিয়ে ছিল তার। বিছানা পেতেই ঘুমে ঢলে পড়ে সে। ঘরের দরজা হাঁ হাঁ করছে। কারেন্টের আলো ক্যাটক্যাট করে জ্বলছে। আরতি ঘুমে নিঃসাড়। 
হঠাৎ সেই স্বপ্ন তার চোখ জুড়ে। জয়রাম এসেছে তার বিছানায়। তার শরীর থেকে কাপড়ের সরিয়ে দিচ্ছে, ব্লাউজের সেপটিফিন খুলে বুকটাকে আলগা করে দিচ্ছে। তারপর সারাগায়ে সোহাগ ঢেলে দিচ্ছে সে। আহা কী অপূর্ব সেই আদর! কেঁপে উঠছে তার শরীর! শিরশির করে আশ্চর্য এক শিরণ বহুদিন পর তার সারা শরীরকে নাড়িয়ে দিচ্ছে! আর্ধমৃত তার নারী চিহ্নগুলো আবার বেঁচে উঠছে উল্লাসে। শামুকের মতো তার স্তন ভারী হয়ে উঠছে। ধাড়ীটার দুধের বাঁট যেমন করে টেনেঝুনে খায় ছাগলছেনা গুলান। তেমন রকম অনুভূতি হচ্ছে তার বুকে। আর সে নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না। রোগা দুটো হাতের বেড়ে জাপ্টে ধরতে চায় জয়রামকে। মোচড়ে পিষে দিতে চায় দেহের সঙ্গে। এখন যেন তার অন্যদিনের মতো কিছুতেই ধুম না ভাঙে। নিজের দেহের উপর এখন তার আর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। জয়রামের অধিকারে তার রোগাপাতলা শরীরটা। পুতুলের মতো হয়ে গেছে সে জয়রামের শক্ত হাতের বেষ্টনিতে। আবরণহীন শরীরে সে অনুভব করছে জ্বলন্ত আঁচের উত্তাপ। তার জীবনের প্রথম রাতের মতো। কিন্তু জয়রাম তো তাকে এভাবে কোনদিন সোহাগ করেনি। সোহাগের ধরণ তার কাছে অনাস্বাদিত এবং আলাদা। জয়রামের পুরুষ চিহ্নও যেন নতুন। তার কি ঘুম ভেঙে যাওয়া উচিত। নাকি এই নতুন উত্তাপের দহনে ছাই হওয়া ভালো! ভাবনাটা আসতেই চমক ভাঙে তার।  আর চিৎকার করে ওঠতেই মুখ চেপে ধরে একটা শক্ত হাতে থাবা।
– একদম চেঁচাবেনি। আমি খুদা। তমার কাছে বহুদিন ধরে এসতে চেইছিলম। সাগরীকে মোর ভাল লাগেনি। উ মোকে রাক্কসীর মতো গিলে খায়। মোর দ্বারায় অকে সামলানা অসম্ভব। তুমি কত শান্ত। কত ভাল! আর উ অচন্ড। কুনু সুক পাইনি অর কাছ থিকে। মোকে ঠেলি দাওনি। কেউ কিচ্ছু জানবেনি। তমার কুনু অভাব রাকবোনি। ছেনাটাকেও দেকব। তমারও কি সক-আল্লাদ নাই? সেসব আমি পূরণ কোরে দুব। সাগরী মোকে আর পুছে নি। উ অন্যর সঙে ভেটেছে। মোকে ফিরি দিও নি তুমি।
আরতির উপরে তখন খুদার পুরো শরীরটা পাষাণের মতো চেপে বসে আছে। আরতি নড়তে পারছে না। শুধু সে পা দুটা পিটছে বিছানায়। আর মাথাটাকে জোর করে নাড়াতে চাইছে। চেপে রাখা অস্পষ্ট স্বরে বোলছে,
– মুখ থিকে হাতটা সরাও। নামো গো মোর উপর থিকে নাইলে দম বন্ধ হয়ে মরে যাব।
— থাইলে বল চেঁচাবেনি!
— না গ,চেঁচাবোনি! নামো তুসি আগে। মোকে ছাড়!
খুদা হাতটা সরিয়ে বিছানায় একটা কাত হয়ে হেলতেই তক্তাপোশ থেরকে বিদ্যুৎবেগে নেমে পড়ে। ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘর। হাতড়ে বিছানা থেকে কাপড়টা নিতে চায়। হাতে সায়া উঠে আসে সেটাকেই গায়ে ঢেকে নেয়। আর রাগে খরিশের মতো গর্জন করতে থাকে। 
– বেরো লওঠা,গুরবেটা তুই বের হ। তোর সব্বনাশ হউ। তুই পোক্ষাঘাতে পোড়বি! পাপে তোর কুষ্টিবেদ্দা হবে। এখ্যুনি ঘর থিকে ব্যারা। নাইলে বাখুলের লোককে ডাকব। কালকেই তোর মাগকে ডেকে বোলব সব। হ্যানেচ্যারা লোক। ভাদর বউয়ের ইজ্জত লিউঠু,তোর নরকেও ঠাঁই হবেনি। বের হ ঢ্যামনা। মোকে বাজারি মেইয়া পেইচু তোর মাগের মত। তাই তুই হাত গনাও! মা মনসার পুজা কোরু! লোককে জড়িজাটকল দিও!মোর যে সব্বনাশ কোল্লু তার জোন্নে তুই অধঃপাতে যাবি রে উচ্ছুন্না।
খুদা লক্ষ্য করে বন্ধ ঘরে তার সামনে একটা ছায়ামূর্তির চোখ যেন কটাশের মতো জ্বলজ্বল করছে। তার দিকে উগরে দিচ্ছে শাপশাপান্ত। খুদা তার শাপশাপান্তে বিচলিত নয় তবে সাগরীর নামে শাসানিতে চমকে উঠে। সত্যিই যদি আরতি বলে দেয় সাগরীকে,যদি বখুলের লোক জেনে যায় তবে কেলেঙ্কারি হবে। ভাবতেই কেঁপে ওঠে সে। উত্তপ্ত শরীরটা নিমেষে শীতল হয়ে যায়। ঘর থেকে বেরোনোর আগে বলে যায়।
— শাপশাপান্ত তুমি যাই কর, কুন্তু কাকেও বোলোনি গ তুমি৷ থাইলে দুজনেই বিপদে পোড়বো।

Post a Comment

0 Comments