জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/ ঝানকু সেনগুপ্ত

গুচ্ছ কবিতা 

ঝানকু সেনগুপ্ত 

দোলন

আমি না চাইলেও হারিয়ে যায় 
আমার প্রিয় বই 
কবিতার খাতা
আমাকে দেয়া তোমার কথাগুলো
মেহগনি গাছের ফল 
রজনীগন্ধার মালা 
ধূপের গন্ধ 
দুলতে থাকা নৌকোর আশ্রয়।

আমি না চাইলেও সব কিছু হারিয়ে যায় বলে
এসব নিয়ে আর ভাবি না আজকাল!



 হারিয়ে যাওয়া গল্প 

হারিয়ে যাওয়ার আগেই ওরা হারিয়ে যায়
বস্তিতে তেলচিটে বালিশের গন্ধ ভেসে আসে
এই একটু আগেই পাশের ঘরের মালতি                     
জলের লাইনে বালতি ছুঁড়ে মারল গোপালের দিকে

পুষে রাখা অভিমান বেয়ে কাঠবিড়ালিটা 
ভাঙ্গা টালির নিচে ফুঁসছে
একফালি রোদের জন্য গর্ভস্থ লাউয়ের ভ্রূণ 
অপেক্ষায় থাকে 

গাঁয়ের ভিটের  আঙ্গিনায় উলুধ্বনি ও শঙ্খ নিনাদ

হারিয়ে যাওয়ার আগেই গল্প হয়ে উঠল !



 আজ সভা 
                                        
আজ সভা।
নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মাছিটা একবার উঁকি দিয়ে গেল।
কনভয় ছুটছে ! 

এইতো গতকাল অথবা পরশুর আগের দিন
বুড়ো বাপের জন্য কম্বল নিতে গিয়ে                             শীত ঘুমে চলে গেল মেয়েটি 
মেয়েটির নিষ্পাপ  মুখে একটা বাসি মাছি               অনবরত ঘুরে বেড়াচ্ছে 

মেয়েটির মুখে এখন সমস্ত প্রশ্ন                                প্রলম্বিত ছায়া মেলে প্রতীক্ষায় আছে 
যদি কোনোদিন আরও একটা সভা করা যায়
যেখানে মানুষেরা কথা বলতে পারে

নিরাপত্তার জন্য কোনো বন্দুক না নিয়েই! 


এখনও মেঘ জেগে আছে
                        
তোমার সপ্তসিন্ধু নীড়ে
এখনও মেঘ জমে আছে

আমার এই বাবুইয়ের বোনা ঘরে
এখনও জোনাকির আলো

স্থিতাবস্থা বজায় রাখার চেষ্টায় 
ত্রুটি খুঁজে চলে যাওয়া

আঙিনায় সাতরঙা রঙ হাতে 
পেয়ালার স্বাদ পেতে চেয়েছিলে

সময়কে বুঝিয়ে বললে
সেও মেনে নিতে পারতো
তেমনটা হয় নি, তবু

থাকতেই পারতে আর কিছুদিন!

এখন সময় নেই
                      
ওসব ভাববে পরে
আদৌ কেউ কারো ছিলো কিনা

এখন সময় নেই। চল ওই জলপ্রপাতের কাছে গিয়ে বসি।

ওদের ইতিহাস 
বড় হয়ে ওঠা আর কলধ্বনি

এইসব আরো কত জল মেপে যাওয়া
ওসব ভাববে পরে
হিমবাহ গলতে শুরু করছে 
সময় নেই 

এস, দুদণ্ড পাশাপাশি বসি।


 আমার গোধূলীর রঙ 
                                                
আমার চারিদিকে একটা মনখারাপের দেয়াল 
আপন খেয়ালে ক্রমশ বাড়ছে।

স্থিতাবস্থা বজায় রাখার চেষ্টায়, কাউকে না পেয়ে, 
অগত্যা একটা শালিকের সাথে বন্ধুত্ব পাতাবো বলে 
যেই না ওর দিকে ফিরেছি,
পাখিটি ফুঁথ করে বলে বসলো, উফ্ কী গরম বলো তো!

হুম্, গরম তো বটেই,
তো, তুমি কি কিছু শুনতে পাচ্ছো ?

বোমা আর গুলির শব্দ কিন্তু আমি শুনিনি,
ফালতু হ্যারাস কোরো না যেন,
তোমাদের বাপু বিশ্বেস নেই, এই আছো, এই নেই।
ঘন ঘন দল পাল্টানো!

মন খারাপটা কেমন যেন অন্যরকম হয়ে উঠল!
একটা মিষ্টি হাওয়া 'র গন্ধ ভেসে আসছে,
কুয়ো থেকে জল তুলে ঠাণ্ডা স্নানের কথা মনে হতেই
সন্ধ্যা হয়ে এল।

ফিক করে একঝলক জ্যোৎস্না হেসে উঠল,

আমি বললাম,
আকাশে ঘুড়িটা কী উড়বে?

সে বললে, ভালোই তো!

তারপর, কি যেন কী সব হয়ে গেল!
দ্রোহ শুরু হলো!
আমি বললাম, চলো, মিছিলে যাই ...

এই পর্যন্ত বলার পরই শালিক পাখিটা বলে উঠল,
জানি, জানি,

কী জান ?
ওই তো সেই পুরোনো গল্প, সোজা কথায় ল্যাঙ খেলে-

ভ্যাট, বনিবনা নাই হতে পারে,

শালিক বলল, হুম্।

তারপর পাখিটা চলে গেল!
                                      
কদম গাছের পাতাগুলো
কেমন যেন শুকিয়ে যাচ্ছে!                                            একটা গুলির শব্দ!
চারটে বোমা আর একটা অরাজনীতির মিছিল থেকে
বিশ্রী গন্ধ ভেসে আসছিল !

আমি কিছুই শুনতে পেলাম না !
দেখতেও পেলাম না !

আমার গোধূলির রঙ কে যেন চুরি করে নিয়ে গেল!!

সংগ্রহ করতে পারেন। হোয়াটসঅ্যাপ -৯৭৩২৫৩৪৪৮৪

Post a Comment

0 Comments