জ্বলদর্চি

শ্রীরামকৃষ্ণের সন্ন্যাসী সন্তানেরা-১০১/প্রীতম সেনগুপ্ত

পর্ব ১০১
শ্রীরামকৃষ্ণের সন্ন্যাসী সন্তানেরা

প্রীতম সেনগুপ্ত

 জোসেফিন ম্যাকলাউড, মিসেস সারা বুল ও মার্গারেট নোবল ভারতবর্ষে একত্রিত হলেন বিবেকানন্দের আদর্শে নিজ জীবন উৎসর্গের অঙ্গীকার নিয়ে। স্বামীজী এঁদের ট্রিনিটি বা ত্রিমূর্তি বলতেন এবং তিনজনেরই ভারতীয় নাম দিয়েছিলেন।‌ জো'কে ডাকতেন ‘জয়া’ বলে, সারা বুলকে ‘ধীরা মাতা’ এবং মার্গারেট নোবল পরবর্তীতে হন‌ নিবেদিতা। এই তিনজন দক্ষিণেশ্বরের অদূরে কামারহাটিতে এক জ্যোৎস্নার রাতে গোপালের মা'কে দর্শন করতে যান। গোপালের মা ছিলেন একজন সিদ্ধ সাধিকা, যিনি শ্রীরামকৃষ্ণের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের গোপাল-রূপ দর্শন করতেন। তাঁদের এই দর্শন বিষয়ে প্রব্রাজিকা প্রবুদ্ধপ্রাণা মাতাজী লিখছেন -- “এক জ্যোৎস্না রাতে জো এবং তাঁর দুই সঙ্গী কামারহাটিতে গোপালের মাকে দর্শন করতে  গিয়েছিলেন।‌ বেলুড় থেকে নৌকায় যেতে আধঘন্টা লাগল। চাঁদের আলোয় গঙ্গা ভেসে যাচ্ছে। ( সেই অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে করতে ) তাঁরা একে একে কাশীপুরের মহাশ্মশান, দক্ষিণেশ্বরের দ্বাদশ শিবমন্দির এবং উদ্যান, দেব মণ্ডল ঘাট, কয়েকটি বাগানবাড়ি, একটি শ্মশানঘাট এবং দক্ষিণেশ্বরের প্রাচীন শিব মন্দির পেরিয়ে গেলেন। অবশেষে কামারহাটি পৌঁছালে স্নানের ঘাটে তাঁদের নৌকা ভেড়ানো হল। নৌকা থেকে নেমে একটি উঁচু জমি ও বাগান পেরিয়ে তাঁরা গোপালের মা'র ঘরে গেলেন।
 গোপালের মা'র আনন্দ আর ধরে না! ওঁদের তিনজনকে তিনি অভ্যর্থনা করে, চিবুক ছুঁয়ে আদর করে তাঁর নিজের বিছানায় বসালেন। তারপর তাঁদের মুড়ি এবং অন্য যা কিছু ঘরে ছিল, তা খেতে দিলেন। নিজের দর্শনের কিছু কথাও তাঁদের বললেন। এসব দেখেশুনে জো'-রাও পুলকিত।‌ জো ধরে বসলেন তাঁকে কিছু মুড়ি দিতে হবে, সেই মুড়ি তিনি আমেরিকায় নিয়ে যাবেন।‌ বিবেকানন্দকে যখন তাঁরা সব কথা বললেন, তখন তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘সনাতন ভারতবর্ষকে তোমরা দেখে এলে; প্রার্থনা এবং অশ্রুজলের ভারত, রাত্রিজাগরণ এবং ব্রত-উপবাসের ভারত, এ চলে যাচ্ছে, আর ফিরে আসবে না।” ( জোসেফিন ম্যাকলাউড, প্রব্রাজিকা প্রবুদ্ধপ্রাণা, শ্রীসারদা মঠ, দক্ষিণেশ্বর )
 ভারতে আগত পাশ্চাত্য জনেদের কাছে তাঁর প্রাণের ভারতকে সম্যকরূপে তুলে ধরতে সর্বদাই সচেষ্ট থাকতেন স্বামীজী।‌ ভোগবাদী পাশ্চাত্য সমাজে থেকে আগত জনেদের ত্যাগভূমি, অধ্যাত্মভূমির মহান ভাবে অনুপ্রাণিত করতে প্রয়াসী হতেন। তাঁর নিজস্ব জীবনযাপনে এর অদ্ভুত প্রতিফলন ঘটেছিল। ভোগৈশ্বর্যপূর্ণ, সংঘর্ষ ও প্রতিযোগিতায় লিপ্ত পাশ্চাত্যভূমিতে কখনও কখনও হাঁফিয়ে উঠতেন স্বামীজী। যেটা খুবই স্বাভাবিক। এর প্রতিকার করতেন কীভাবে! তা এক কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়। স্বামীজী পাশ্চাত্যে সবসময় নিজের কাছে এক বোতল গঙ্গাজল রাখতেন, যাতে দরকার হলেই গায়ে মাথায় ছিটিয়ে নিতে পারেন, দেহশুদ্ধির জন্য কয়েক ফোঁটা পান করতেও পারেন! সেটা করতেনও !  স্বামীজীর ভাষায় বিষয়টি এইরকম -- “...সে বিলাসক্ষেত্র, অমরাবতীসম প্যারিস, লণ্ডন, নিউ ইয়র্ক, বার্লিন, রোম -- সব লোপ হয়ে যেত, আর শুনতাম -- সেই ‘হর হর হর’, দেখতাম -- সেই হিমালয়ক্রোড়স্থ বিজন বিপিন, আর কল্লোলিনী সুরতরঙ্গিনী যেন হৃদয়ে মস্তকে শিরায় শিরায় সঞ্চার করছেন, আর গর্জে গর্জে ডাকছেন -- ‘হর হর হর’!!” ( স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, সপ্তম খণ্ড)
 অসম্ভব আকর্ষণীয়ভাবে পাশ্চাত্যজনের কাছে বর্ণনা করেছেন ভগবান বুদ্ধকে। এই বিষয়ে নিবেদিতা লিখছেন -- That was a great hour indeed, when he spoke about Buddha; for, catching a word that seemed to identify him with its anti-Brahminical spirit, an uncomprehending listener said, “Why Swami, I did not know that you were a Buddhist!" “Madam” he said rounding on her, his whole face aglow with the inspiration of that name, “I am the servant of the servants of the servants of Buddha. Who was there ever like him? -- The Lord -- who never performed one action for Himself -- with a heart that embraced the whole world! So full of pity that He -- prince and the monk -- would give His life to save a little goat! So loving that He sacrificed himself to the hunger of a tigress! -- to the hospitality of a pariah and blessed him! And he came into my room when I was a boy and I fell at His feet! For I knew it was the Lord Himself!”
🍂
 Many times he spoke of Buddha in this fashion, sometimes at Belur and sometimes afterwards. ( Notes of some wanderings with Swami Vivekananda, Sister Nivedita, Udbodhan office, Kolkata )
 স্বামীজীর কৃপায় ভারতকে অতি গভীরভাবে চিনতে ও জানতে পেরেছিলেন বলেই নিবেদিতার অতি স্বাধীন চিন্তাপ্রসূত সুগভীর ভাবসম্পৃক্ত গ্রন্থগুলির নির্যাস আমরা গ্রহণ করতে পারি। হিন্দু দর্শন বিষয়ে তাঁর ভাবনার সঙ্গে পরিচয় ঘটে আমাদের, যেখানে তিনি লিখছেন -- ‘Hinduism is, in fact, an immense synthesis, deriving it's element from hundred different directions, and incorporating every conceivable motive of religion. The motives of religion are manifold. Earth- worship, sun-worship, nature-worship, sky-worship, honour paid to heroes and ancestors, mother-worship, father-worship, prayers for the dead, the mystic association of certain plants and animals: all these and more are included within Hinduism. And each marks some single age of the past, with its characteristics conjunction or invasion of races formerly alien to one another. They are all welded together now to form a great whole. ( Myths of the Hindus & Buddhists by Sister Nivedita and Anand K Coomaraswamy, London, George G Harrap & Company )

Post a Comment

0 Comments