জ্বলদর্চি

বিশ্ব ভল্লুক দিবস (২৭শে ফেব্রুয়ারী)/দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে


বিশ্ব ভল্লুক দিবস (২৭শে ফেব্রুয়ারী)
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

প্রতিবছর বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন দিবস পালিত হয়। এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বব্যাপী জন সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং ক্ষেত্রবিশেষে কোন অতীত ঘটনাকে স্মরণ করা

প্রতিবছর ২৭শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক 'মেরু ভালুক দিবস' এর মাধ্যমে বিশ্ব উষ্ণায়ন সমুদ্রতলের উষ্ণতা বৃদ্ধির মত বিষয়গুলি মেরু অঞ্চলের জীব বৈচিত্রে ধাক্কা খাওয়ার অন্যতম কারণ গুলি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বিশেষভাবে পালিত হয়।

আন্তর্জাতিক মেরুভালুক দিবস হলো একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান যা প্রতিবছর ২৭শে ফেব্রুয়ারী পালিত হয় সেই সময়কালের সাথে সামঞ্জস্য করার জন্য যখন মেরু ভালুকের মা এবং শাবক তাদের ঘাঁটিতে ঘুমিয়ে থাকে এবং মেরুভালুকের সংরক্ষণের অবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে দিবস টি পালন করা হয়।
বিশেষ করে মেরু ভালুকের সংরক্ষণের অবস্থার প্রয়োজনীয়তার উপর দৃষ্টি রেখে এই দিনটি পালনের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এই দিবস টি পালনের আরো কারণ হলো, মেরু ভালুকের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জ এবং কার্বন ফুট প্রিন্ট হ্রাস গুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। 
জলবায়ু পরিবর্তন মেরু ভালুকের অস্তিত্বের জন্য একটি গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি করে, তাই আমাদের অবশ্যই তাদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হবে। 
'পোলার বিয়ার্স ইন্টারন্যাশনাল' কর্তৃক আন্তর্জাতিক মেরুভালুক দিবসের আয়োজন করা হয়। মেনু ভালুকের সংখ্যার উপর বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং কমে যাওয়া সমুদ্রের বরফের প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এই দিনটি মানুষকে তাদের কার্বন আউটপুট কমানোর উপায় খুঁজে বের করতে উৎসাহিত করে এবং তাদের থার্মোস্ট্যাট বন্ধ করে দিয়ে বা কম গাড়ি চালিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে।
এই দিনটি বিভিন্নভাবে পালন করা হয়ে থাকে, যেমন-অনেক চিড়িয়াখানা এই দিনটিকে মেরু ভালুক সংরক্ষণ সম্পর্কে শিক্ষিত করতে এবং মেরু ভালুকের প্রদর্শনীতে যেতে উৎসাহিত করতে ব্যবহার করে। ইউনিভার্সিটি অফ সাসকাচোয়ান ২০১৬ সালে ঘোষণা করেছিল যে, এটি আন্তর্জাতিক মেরু ভালুক দিবসের সম্মানে গ্রীষ্মে তার থার্মোস্ট্যাট গুলিকে দুই ডিগ্রি উপরে এবং শীতকালে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে দেবে এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্বন নিঃসরণ ২০০০ টন কমে যাবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বছরে দুই লাখ ডলারের বেশি সাশ্রয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

মেরু ভালুক যেগুলিকে সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়, তারা তাদের শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখে, আর্কটিক মহাসাগরের সামুদ্রিক বরফের জল প্রতিরোধে আবরণ, মেরু ভালুকের শরীরের চর্বির ঘন স্তর বহন করে তাদের শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখে এবং তারা আর্কটিক মহাসাগরের সমুদ্রের বরফের মুখোমুখি হয়। যেহেতু তাদের আবাসস্থলে বরফ গলতে থাকে বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে তাই আন্তর্জাতিক 'মেরু ভল্লুক দিবস' একটি বাস্তব উদাহরণ স্থাপন করে এই মহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করার তাৎপর্য কে বোঝানোর জন্য।

🍂

প্রত্যেকটি দিবসের যেমন একটা ইতিহাস আছে এই দিবসের সেরকম ইতিহাসটি হলো, মেরু ভালুকের উৎপত্তি বিজ্ঞানীদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিক রহস্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু নরওয়েতে সাম্প্রতিক একটি আবিষ্কারে হয়তো সমাধানটি প্রকাশ করেছে ২০০৪ সালে  নরওয়েজিয়ান দ্বীপপুঞ্জে একটি অস্বাভাবিক চোয়ালের হাড়ের আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের আনুমানিক ১৫০০০০ বছরে এই গ্রহে প্রথম যে সময়ে বসবাস করেছিল তা অনুমান করতে সক্ষম করেছিল।
মেরু ভালুক শিকার করা সহস্রাবদ্ধ ধরে আর্থিক আদিবাসী সংস্কৃতির একটি অংশ করে আসছে। যার ফলে আর্কটিক ইকোসিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণে অবদান রাখে।

 অষ্টাদশ শতাব্দীতে সবকিছু পরিবর্তিত হয় যখন উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং রাশিয়ার শিকারিরা মেরু ভালুকের সংখ্যাকে আশঙ্কা জনক হারে ধ্বংস করতে শুরু করে। বিধিবিধান ছাড়া ব্যক্তিরা এই প্রজাতির ক্ষতির জন্য সীমাহীন ভালুককে শিকার  করতে থাকে।

জীবাশ্ম জ্বালানির প্রসারিত ব্যবহারের ফলে ১৯৫০ এর দশকে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে,কয়লা তেল ও গ্যাস পোড়ানোর ফলে সমুদ্রের বরফ দ্রবীভূত হয় ফলে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পায় এবং মেরু ভালুকের আবাসস্থল পরিবর্তন হয়। মেরু ভালুকের পক্ষে পরিবেশবাদী সংগঠন গুলি প্রতিরোধের সূচনা করেছিল কিন্তু সরকার গুলি বৃহত্তর আর্থিক সুরক্ষা এবং বর্ধিতভাবে মেরু ভালুকের কল্যাণের জন্য তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করার কারণে তাদের দাবি গুলি প্রায় অনুপস্থিত ছিল।
এরপর ১৯৭৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ডেনমার্ক,নরওয়ে এবং প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বারা মেরু ভালুক এবং তাদের বাসস্থান সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার চুক্তির অধীনে মেরু ভালুককে বিপন্ন হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করে, যা বাণিজ্যিক শিকার নিয়ন্ত্রণ করে 'পোলার বিয়ার্স ইন্টারন্যাশনাল( পিবিআই)' একটি অলাভজনক সংস্থা, যা ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

এখন বিশ্বের মেরু ভালুকের সংখ্যা  প্রায় ২৬০০০ এবং১৯ টি এলাকায় তাদের বাসস্থান। সাধারণত উত্তর মেরু প্রদেশ, কানাডার উত্তরভাগ, আমেরিকার আলাস্কা, গ্রিনল্যান্ড, রাশিয়ার উত্তর ভাগে এবং নরওয়ে এই কটি জায়গায় দেখা মেলে। দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে কাজ চলছে এই বিপদজনক জলবায়ু থেকে মেরু ভালুক কে বাঁচানোর।

২০১১ সাল থেকে যখন আন্তর্জাতিক মেরু ভালুক দিবস প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন থেকে মেরু ভালুক হত্যা অনেকটাই কমেছে বলে মনে করা হয়।


Post a Comment

0 Comments