(একাদশ পর্ব)
অরূপ পলমল
"আরণ্যক" প্রায় দিনই খালি যেতো। ট্রেনের সিট খালি থাকতো। এক্সপ্রেস ট্রেন- যেহেতু লোকাল যাত্রীরা উঠতো না সচরাচর। ফাঁকা থাকতো কামরা। যদি কোনোদিন ম্যাডামদের পাশের সিট -এ বসে গেছি তো অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতাম।
শোন -প্রথমত তারা দেখতাম 'ফুটবল' খেলছে। হ্যাঁ...রে! সত্যি বলছি 'ফুটবল'! তবে 'পা'- এ না! 'মুখে -মুখে'! ক্যেম্নে? বিশ্বাস হচ্ছে না তো? শুনবি?..."আমার মেয়ে তো কাল স্কুল যাইনি ঠান্ডা লেগেছে" (প্রথম জন l)! দ্বিতীয়জন - "আর বলিস না - আমার ছেলেটার তো জ্বর আর জ্বর একশো দুই !" তৃতীয় জন - "কেনো বলিস? আমার আবার যত মরণ-গত মাসে..রে... রাতের বেলা- রাত দুটো...ডাক্তারখানা যেতে হয়েছিলো! হুঁশ ছিলো না মেয়েটার !” চতুর্থ জন- "তোর তো শুধু মেয়ের। আমার হয়েছে কপাল! মেয়ের ও মেয়ের বাপের! দুজনে বেহুঁশ চারদিন! শুধু আমার যা হুঁশ ছিলো "...ইত্যাদি ইত্যাদি! বেহুঁশ কোথাকার!
এটা বিশেষ কোন জ্বর বা বেহুঁশ নিয়ে না... যে কোন একটা বিষয় উথ্থাপন হলেই হলো। "বল"- মাটিতে পড়বে না... ঘুরবে গোল গোল... সে আলু - পটল - চিংড়ি -ইলিশ -ছাতু - ছাতা - মাথা- স্বামী - শাড়ি - গয়না - শ্বশুর -শাশুড়ি -ননদ - যা কিছুই হোক! ফুটবল - হ্যাঁ ! ফুটবল -
"”আহা কি মধু আছে ওই/ তোমার নামেতে বাবা ফুটবল/ বলো ভাই,/ সব খেলার সেরা বাঙালীর তুমি ফুটবল।/ যার গোলে যাও তুমি তার বুকে পরে বাজ/ যার হয়ে গোল করো সে যে হয় মহারাজ,/ রকে রকে ঝগড়া, ঘরে ঘরে ডাইভোর্স / রকে রকে ঝগড়া, ঘরে ঘরে ডাইভোর্স,/ ইলিশে ঘটিতে রসাতল…
হায় হায় হায় হায়, হায় হায় হায় হায়
সব খেলার সেরা বাঙালীর তুমি ফুটবল-
ফুটবল,/ সব খেলার সেরা বাঙালীর তুমি ফুটবল.../ ফুটবল...."”
একাদশতম :
আমি আজও ছাত্র। পড়ি ও পড়াই।
ছেলে- মেয়েদের সাথে মিশে থেকে লেখাপড়া একসাথে করে যাই। সুস্থ থাকি।
জ্বলে থাকি। এইটুকুই। আর কিছু না।
আমার বড় শিক্ষক ছেলে -মেয়েরাই - বিশ্বাস করি। ওরাই দেবতা আমার। আমি সামান্য পুরোহিত। ভুল ভাল কী সব মন্ত্র বলে চলি সারাক্ষণ... ওরা তাতেই কান পেতে রয়। আর আমার ঋণ বাড়িয়ে দেয় - "গ্রহণ করেছো যত ঋণী তত করেছো আমায় !" আমি তো আর "পাইলট" না । আকাশযান (প্লেন) উড়াই না। চাপার-ই এখনো সৌভাগ্য হয়নি। একবারও। চালানো তো দুরস্ত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাগাসাকি ও হিরোশিমাতে যে এটোম বোমা দুটো পড়েছিল - মানে "লিটিল বয়" আর "ফ্যাট ম্যান" - পড়েছিলাম যে - তার পাইলট নাকি সঠিক জায়গায় ফেলতে অক্ষম হয়েছিলো তবুও। আমি কিন্তু আগের বোমাটা প্রায় সঠিক জায়গায় ফেলেছিলাম....তার আওয়াজও পেয়েছিলাম। এবার দেখি সঠিক জায়গায় ফেলতে পারি কিনা?
সফল হলাম কিনা? লক্ষ্য থাকবে--- নজর থাকবে -ততক্ষণ চল একটা গান শুনে নিই... " আমি কান পেতে রই / ও আমার আপন হৃদয়গহন-দ্বারে বারে বারে/ কোন্ গোপনবাসীর কান্নাহাসির গোপন কথা শুনিবারে--বারে বারে ॥
মাঝে মাঝে তার বারতা আমার ভাষায় পায় কি কথা রে,/ ও সে আমায় জানি পাঠায় বাণী গানের তানে লুকিয়ে তারে বারে বারে ॥"
কিরে? কী ভাবছিস? ভাবছিস তো কিছু– বলবো? তোর ভাবনাটা--দেখ…মিলে যাবে... তুই ভাবছিস---"স্যার - ছাত্র না পড়িয়ে 'পাইলট' হলে একজন ভালো পাইলটও হতে পারতো। তাইতো?"
হা.........
হা……….
হা………..
হো……..
হো……….. হো…………
যবনিকা পতন :
বিগত তিন দিন যাবৎ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে। সারা দিন সারা শরীর ব্যথা । মাথা ধরা। তার থেকেও অধিক যন্ত্রণা।
হ্যাঁ! বুকে…একশো দুই - তিন জ্বরের ঘোরে কী সব ভুলভাল বোকে চলেছি! আমি আদেও কিছু বলিনি ও লিখিনি। আমার একশো তিন জ্বর - এর ঘোর ও যন্ত্রণা ও প্রদাহ আমায় ভুল বোকালো সব সবই।
আমি সুস্থ মস্তিষ্কে বলবো - এর দায় আমার না। আমার জ্বর -এর। [ সব দোষ আমার ওই "ধড়কন ২"- শুটিং এর। না শুটিং এ যেতাম। জল ঘাটতাম। না জ্বরে পড়তাম। না ঘোরে যেতাম। না এতো সব ভুল কথা বকতাম]
হা হা হা !!...
( तुम दिल की धड़कन में
रहते हो तुम रहते हो
तुम दिल की धड़कन में
रहते हो रहते हो
तुम दिल की धड़कन में
रहते हो रहते हो
मेरी इन साँसों से
कहते हो कहते हो
बाहों में आ जाओ
सपनों में खो जाओ
तुम दिल की धड़कन में
रहते हो रहते हो...)
হা হা হা....
ওঁ শান্তি!
॥ পুজোর বোনাস : ফ্রিসাজেশন ॥
[নিতেও পারিস... নাও পারিস]
চল, এবার সবাই "মা" এর অষ্টমী পুষ্পাঞ্জলিতে মন্ত্র পাঠ করি -"পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি/ এ জীবন মন সকলি দাও,/
তার মত সুখ কোথাও কি আছে?/ আপনার কথা ভুলিয়া যাও।/ পরের কারণে মরণেও সুখ,/ ‘সুখ-সুখ’ করি কেঁদো না আর;/ যতই কাঁদিবে যতই ভাবিবে,/ ততই বাড়িবে হৃদয়-ভার।
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী পরে
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।"
- বড্ড বড় ও বুড়ো হয়ে গেছি আমরা। চল. .. ছোটবেলাকার একটা কবিতা মন্ত্র দিয়েই মায়ের পুষ্প অর্ঘটা সাজাই এবার...
ব্রাম্ভণ- এর মন্ত্র জপে জপে তো এতদিন কাটলো... এবার না হয় কবিতা দিয়েই হোক না অষ্টমী!
জানিস, কবিতাটা কার লেখা? কামিনী রায়! মহিলা কবি! আর কী কারণে তিনি বিখ্যাত জানিস? জানিস না তো? মুই ও বলবা না। মুই কী গুগোল? তোর ফোন ও নেট কী শুধু অপরের হৃদয়হরণ ও নিজের হৃদয়দানের বার্তার বাহকের ব্যবহারের জন্য? এবার তো আর আমায় এক্ষেত্রে "নারী বিদ্বেষী" বলতে পারবি না? হা হা হা…
##
আর শুনুন…স্যার. .. শুনুন… বাবুমশাইরা....আপনি - আমি সবাই এক। এটা ভাবতে হবে। আপনি "রাজা" আর আমরা "প্রজা" ভাবটা ছাড়তে হবে।ছোট থেকে গানটা শুনেননি - "আমরা সবাই রাজা"!
তাও যদি না মানেন তো...অগত্যা সত্যজিতের শরণাপন্ন হতে হবে...
"দড়ি ধরে দেব টান / রাজা হবে খান খান"
সরকারি জায়গা। আমরা সরকারি কর্মচারী। সরকার না। সরকারের কাজ ভুলভাল বুঝিয়ে মানুষকে মূর্খ করে রাখা।
আপনি জাদুকর পি. সি .সরকারও না। সবাইকে ভুল দেখিয়ে বুঝিয়ে মোহ আবিষ্ট করে চিরকাল রেখে দেবেন।
আপনি ওঝা বা গুনিনও না - যে সাপের ফণাকে মন্ত্র বলে নামিয়ে রেখে দেবেন চিরকাল।
আপনি মানুষ চিনেন - মানলাম - কাদের কী বলে বোঝানো যায় --আপনার থেকে কে ভালো জানে? ওখানে এই অধম বালক মাত্র! কিন্তু আপনার দুর্বলতা - আপনি পাগল চিনেন না। আপনার হাঁটাচলা সতত - শিক্ষিত পণ্ডিত মহলে। তাই "মূর্খ -অল্প শিক্ষিত -আধ -পাগলা- ক্ষ্যাপা -উন্মাদ" -দের আপনি চিনতে ভুল করেন-- করে দিয়েছেন।
উঁ হু হ্ …হু ... হু ...হু …"ধন্য আমি ধন্য হে .. ..পাগল তোমার জন্য হে...."
না ! এই গানটা ভালো না... মা আসছেন...
সামনেই মহালয়া...আসুন--
"এই তোরাও আই রে…মায়ের আগমনীতে মন ও কান পাতি...."প্রণমি বরদা, অজরা অতুলা/ প্রণমি বরদা, অজরা অতুলা
বহু-বলধারিণী রিপুদলবারিণী জাগো মা।
শরণময়ী চন্ডিকা শংকরী জাগো,
জাগো মা,
জাগো অসুরবিনাশিনী, তুমি জাগো।
জাগো, তুমি জাগো,
জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী
অভয়াশক্তি বলপ্রদায়িনী তুমি জাগো।
জাগো, তুমি জাগো.."”
!! মা !!
শান্তি বজায় রেখো মা...
["অথ অরূপ কথা" - "সমাপ্ত"]
সংগ্রহ করতে পারেন 👇
0 Comments