জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৬৯

 ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৬৯

জীবজন্তুদের নানা মজার কথা

লেজের কথা
সুমনা সাহা

আজ রবিবার। সকালের মর্নিং ওয়াক সেরে বাড়ি ফেরার পথে রজতবাবু মোড়ের কচুরির দোকানের সামনে দাঁড়ালেন। রোজকার তুলনায় আজ ভিড় বেশি। রবিবারের ছুটির বাজার। সবারই আজ একটু আয়েশ করার দিন। বৌমা তেলে ভাজাভুজি কিনলে অনুযোগ করে, “বাবা এসব আবার কেন? তোমার না এসব খেলে অম্বল হয়?” কিন্তু আজ রজতবাবুর কে জানে কেন, অনেকদিন পরে কড়াইশুঁটির পুর ভরা গরম গরম হিঙের কচুরি খাওয়ার সাধ হয়েছে। তিনি মাথাপিছু দুটো করে মোট দশটা কচুরি কিনলেন, সঙ্গে ঝাল ঝাল আলুরদম ফ্রি। ঘরে ফিরে কচুরির ঠোঙা ডাইনিং টেবলে রেখে পা ধুয়ে বললেন, “মিঠু, চা দাও, আর দেখো আজ বকাবকি কোর না। সবাইকে গরম গরম কচুরি দাও জলখাবারে। এক-আধ দিন খেলে কিচ্ছু হয় না। বুকাই উঠেছে?”
মিঠু রান্নাঘর থেকেই সাড়া দিল, “তোমার নাতি তোমাদের আস্কারা পেয়ে পেয়ে একটি লেজকাটা হনুমান হয়ে উঠেছে। আজ তো তার ক্যারাটে আর সুইমিং-এর ক্লাস। তৈরি হতে বলে এসেছি। দেখো গিয়ে কি করছে?” 
রজতবাবু পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকে দেখলেন, বুকাই কালো কালির পেন দিয়ে নিজের কচি ঠোঁটের উপর একটা গোঁফ এঁকেছে, আর একটা গামছাকে পাকিয়ে পিছন দিক থেকে প্যান্টের ভিতর ঢুকিয়ে ঘাড় বেঁকিয়ে আয়নায় নিজের নকল লেজটা দেখার চেষ্টা করছে। ওকে বকবেন কি, হো হো করে হেসে ফেললেন ওর কাণ্ড দেখে। বুকাই দাদুকে দেখে গম্ভীর ভাবে জিজ্ঞেস করল, “আমার লেজটা কি ভাবে কাটা গেল?” রজতবাবু নাতিকে কাছে টেনে নিলেন, “দূর বোকা, মানুষের কি লেজ থাকে নাকি? ও তো তুই হনুমানের মত লাফালাফি দুষ্টুমি করিস বলে মা অমন বলে।” 
“কেন দাদু? মানুষের কেন লেজ থাকে না? ভুলুর লেজ আছে, মিনির লেজ আছে, টিকটিকিরও তো লেজ আছে, মানুষের নেই কেন?”
“ওরে, লেজ দিয়ে ওরা কত কাজ করে জানিস?”
“কী কাজ গো দাদু?” 
“বনের প্রাণিই হোক বা ভুলু বা মিনির মত ঘরে পোষা —সব জীবজন্তুই তাদের লেজকে নানা ভাবে ব্যবহার করে। ভালবাসা বোঝাতে, চলাফেরার সময় ব্যালেন্স বজায় রাখা, মাছি তাড়াতে। কারো লেজ দেহ অনুপাতে ছোট, কারো বা বড়, কারো লেজ রোমশ, কারো লেজে থাকে পালক, আবার কারো লেজে লোম, পশম কিছুই নেই। আমরা ভালবাসার কথা মুখে বলতে পারি, মশা মাছি হাত নাড়িয়ে তাড়িয়ে দিতে পারি। মানুষ কথা বলতে পারে বলে ভাষা দিয়ে অনেক কিছু বুঝিয়ে দিতে পারে। ওরা তো তা পারে না?”
“ও, তাই? ভুলু যে মাঝে মাঝে অদ্ভুত ভাবে লেজ নাড়ে, মিনি কতরকম করে ডাকে সেসবের মানে আছে তাহলে?” 
“আছেই তো! বন্ধুত্ব বোঝাতে কুকুর লেজ নাড়ায়। লেজ গুটিয়ে নেওয়া মানে বুঝতে হবে ও বশ্যতা স্বীকার করেছে। আর যদি নিচের দিকে কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকে, তার মানে ভয় পেয়েছে, বা রেগে আছে। লেজ যদি খাড়া হয়ে ওঠে, তার মানে ও এখন বিপদের আঁচ পেয়েছে, পালাবে। বিড়াল যখন লেজটাকে উঁচু করে দাঁড়ায়, তার মানে ও বলছে, ‘হ্যালো’। ভয় পেলে ওরা লেজ ফুলিয়ে খাড়া রাখে। বিড়াল কিন্তু ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও অনেকসময় লেজ নাড়ায়, তার মানে ও তখন স্বপ্ন দেখছে।”
“আর মিনি যে মাঝে মাঝে আমার পায়ে লেজ ঘষে দেয়, কেমন একটা গন্ধ আসে তখন, তার মানে কি?” 
“বিড়ালের লেজের গোড়ায় একটা গ্ল্যান্ড থাকে, সেখান থেকে একটা বিশেষ গন্ধ বের হয়। ঐ গন্ধ তোমার পায়ে লাগিয়ে দিয়ে ও তোমাকে একটা চিহ্ন দিয়ে দেয় যাতে অন্য বিড়াল তোমার কাছে না আসে। ও শুধু তোমার। ভালবাসার জনের ক্ষেত্রে বিড়াল খুব হিংসুটেপনা করে। এইরকম গন্ধ শেয়ালরাও জঙ্গলে গাছের গায়ে লাগিয়ে রাখে, যখন ওরা সঙ্গিনী খোঁজে, তখন এইভাবে এলাকা ভাগ করে নেয় গন্ধ দিয়ে। আবার জানো, হরিণের লেজের বাইরের দিকটা বাদামী রঙের। কিন্তু উলটো পিঠের রঙ সাদা। হরিণ লেজ উঁচু করে যখন ঐ সাদা অংশ দেখায়, অন্য হরিণ সেই সংকেত দেখে বুঝে যায়, বিপদ আসছে, পালাতে হবে। উদবিড়াল নামে একটা প্রাণি আছে, তুমি দেখোনি, ইংরাজিতে বলে বীভার। তাদের গায়ে খুব লোম, বিড়ালের মতোই বাচ্চা হয় তাদের, বাচ্চাদের মায়েরা দুধ খাইয়ে বড় করে। তারা যেমন গাছে থাকতে পারে, আবার জলে সাঁতারও কাটতে পারে। জলের উপর ওরা যখন ছপাৎ ছপাৎ করে লেজের বাড়ি মারে, তার মানে বন্ধুদের বিপদ থেকে সতর্ক করছে। আবার ঐ লেজের ভিতরেই ওরা চর্বি জমিয়ে রাখে শীতকালের জন্য। উত্তর আমেরিকার লোমশ স্তন্যপায়ী প্রাণি রেকুন কি করে জানো? ওরা যখন গাছের ডালে বসে থাকে, লেজটা নিচে ঝুলতে থাকে। ওদের গায়ের রঙ ছাই ছাই, আর লেজে গায়ের ছাই রঙের হালকা আর গাঢ় দুটো রঙের ব্যান্ডের মতো এমন নকশা থাকে যা পরিবেশের সঙ্গে একেবারে মিলেমিশে যায়, দূর থেকে দেখলে শত্রুর চোখে ধাঁধাঁ লেগে যায়। তাই সহজে ধরতে পারে না। শীতের দেশের শেয়াল আর কাঠবিড়ালির বুরুশের মতো ঘন লোমশ লেজ কম্বলের মত গায়ে পেঁচিয়ে গুটিসুটি মেরে ওরা ঘুমায়। জলের ভিতর বেগে সাঁতার কাটার জন্য মাছেরা, তিমিমাছ আর ভোঁদড়রা জোরে জোরে লেজ নাড়িয়ে চলে। বাঁদরের তো হাত নেই। চারটেই পা। কিন্তু সামনের দুটো পা ওরা হাতের মতোই ব্যবহার করে। চার পায়ে গাছের ডালে চড়ে বেড়ায় আর বসে যখন খাবার খায়, সামনের দুটো পা তখন হাত হয়ে যায়। তবে লেজ হল এদের পঞ্চম পা বা হাত যাই বলো। লেজের আঁকড়ে ধরার ক্ষমতা আছে। তাকে পরিগ্রাহী অঙ্গ বলা হয়। লেজের সাহায্যে এরা গাছের ডাল আঁকড়ে ঝুলে থাকতে পারে। গরু, ঘোড়া, হাতি এইসব বড় প্রাণিরা লেজ নাড়িয়ে দেহের পিছন দিকের আর কান নেড়ে দেহের সামনের দিকের পোকামাকড় মাছি তাড়ায়। 
পাখিদের লেজ থাকে না, তাদের লেজের অংশে বড় পালক থাকে। অনেক পাখিদের এই লেজের পালক অনেক বড় আর রঙচঙে হয়, তাকে পেখম বলি। যেমন ময়ূরের পেখম। চিড়িয়াখানায় তুমি ময়ূর দেখেছ তো? ওরা আবার পেখম তুলে নাচে ময়ূরীর মন ভোলাতে। কাঠঠোকরার লেজের পালক এত শক্ত হয় যে ও যখন গাছের ডালে বসে কাঠ ঠোকরায়, লেজটাতে ঠেস দিয়ে খাড়া গাছের কাণ্ডে সোজা বসে ঠোকরাতে পারে।”
বুকাই এতক্ষণ একমনে দাদুর কথা শুনছিল। এখন আবার তার লেজের দুঃখ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, “দাদু, একটা লেজ থাকলে কি ভাল হত!”  
“আমাদের লেজ ছিল তো! মানুষের যে এককালে লেজ ছিল, তার প্রমাণ শিরদাঁড়ার একেবারে শেষে টেইল বোন বা কক্সিস। মেরুদণ্ডের তিন থেকে পাঁচটা হাড় একসঙ্গে জুড়ে গিয়ে কক্সিস তৈরি করে, যেটা আমাদের সোজা হয়ে বসতে সাহায্য করে। লেজের ভাষা থেকে জন্তু জানোয়ারদের মনের অনেক গোপন কথা জানা যায়। তবুও সবটা কি আর জানা যায়? এই যেমন তুমি এখন মনে মনে দুষ্টুমির কি ফন্দি ভাঁজছ, মাকে কি আর বলবে? ওরাও ওদের সব কথা আমাদের বলে না। একটুখানি বুঝিয়ে দেয়, বাকিটা টপ সিক্রেট!” 
মিঠু ডাকে, “তোমরা সবাই ডাইনিং টেবিলে চলে এসো। আজ গরম গরম কচুরি।”
বুকাই বলে, “দাদু, ভুলুকে যে আমি ভালবাসি, ভুলু কি বুঝতে পারে?”
“হ্যাঁ, সেসব ওরা খুব বোঝে। আর সেও তো তোমাকে কত ভালবাসে, নানাভাবে বুঝিয়ে দেয়। কি, তুমি বুঝতে পার না? পশুপাখিরা খুব প্রভুভক্ত হয়, জানো তো বুকাই বাবু?” 
“প্রভুভক্ত মানে কি দাদু?”
“মানে হল, যে ওকে পোষে, খেতে দেয়, আদর করে, সে ওর প্রভু, ইংরাজিতে মাস্টার বলে। পোষা জীবজন্তুর প্রভুভক্তির কত গল্প আছে!” 
“আমাকে সেইসব গল্প বলো না দাদু?”
“সব বলব, আগে চলো, খেয়ে আসি, মা ডাকছে। তারপর তুমি সুইমিং আর ক্যারাটে ক্লাস করে ফিরে এসো, সন্ধ্যাবেলা বলব।”

জঙ্গল মহলের গল্প
চলো, বনে নয় ঘরে থাকি
চিন্ময় দাশ

সে অনেক অনেক কাল আগের কথা। মোরগ-মুরগিরা তখন বনে থাকত, ঘরে নয়। অন্য অনেক জীবজন্তু যেমনটি থাকে। গ্রাম, সেখানকার মানুষজন, তাদের ঘরবাড়ি—কিছুই জানা ছিল না তাদের। 
পলকা শরীর মোরগ-মুরগিদের। কিন্তু বনের মধ্যে বাস করত একেবারে রাজার হালে। কাউকে ভয়ডর তো করতেই হোত না। উলটে তাদেরই ভয় করত সবাই। ছোট্ট ব্যাঙ থেকে একেবারে বাঘ-ভালুক পর্যন্ত, বনের সকলেই এড়িয়ে চলত মোরগ-মুরগিকে।
এমন অদ্ভূত ব্যাপারের কারণ? কারণ হোল আগুন। আগুনকে ভয় পায় না—এমন কেউ আছে না কি দুনিয়ায়? বিশেষ করে বনের পশুপাখিরা, সব্বাই ভীষণই ভয় পায় আগুনকে। 
মোরগ আর মুরগির মাথায় একটা করে ঝুঁটি আছে। মাগো মা, কী টকটকে লাল রঙ সেগুলোর! সবার ধারণা, ঐ ঝুঁটিগুলোর ভেতর আগুন লুকিয়ে রেখেছে মোরগ আর মুরগিরা। 
শুধু কি ঝুঁটি? কানের লতিগুলোও কী বড় মোরগের! তার ভিতরেও আগুন আছে। এই আগুনের ভয়েই, মোরগ আর মুরগিকে সমীহ করে চলে সবাই।
মোরগ-মুরগিও ওই ভয়টাকে ভাঙিয়ে খায়। দারুণ রোয়াব তাদের। তাদের দাপটকে উপেক্ষা করবে, এমন বুকের পাটা কারও নাই বনের ভিতর। 
কেউ সামান্য বেগড়বাঁই করলে, অমনি তাকে নিয়ে কৌতুক করে মোরগ বা মুরগি—মাথায় কি সামান্য ঘিলুও নাই তোর? না কি, আগুনকে ভয় পাস না? আমার কথামত না চললে, পুড়িয়েই মেরে ফেলব, সেটা জানিস না? সারা জীবন টকটকে আগুনের গোলা বয়ে বেড়াই মাথায়, চোখে দেখা যায় না, নাকি?
একদিন একটা মা-চিতা শিকারে বেরিয়েছিল। ফিরতে দেরি হয়েছে কিছুটা। শিকার নিয়ে ফিরল যখন, দেখল, তার উনুনের আগুন নিভে গিয়েছে। তিন-তিনটা বাচ্চা তার ঘরে। রান্নাবান্না করতে হবে তাদের জন্য। আগুন না হলে চলবে কী করে?
মা-চিতা তার একটা বাচ্চাকে বলল— চট করে একবার মোরগের বাড়িতে যা তো, বাছা। একটু আগুন চেয়ে নিয়ে আয়। বলবি, এক টুকরো আঙরা (জ্বলন্ত কাঠকয়লা) হলেই চলবে। আমি আগুন বানিয়ে নেব। 
বাচ্চাটা চলল মোরগের বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখল, মোরগ-মুরগি দুজনেই ঘুমিয়ে আছে। এই ভর দুপুরে তাদের ডেকে তোলাটা ঠিক কাজ হবে না। এই ভেবে, সে বাড়ি ফিরে চলে এলো।
মা-চিতা শুনে ভারি খুশি। --ঠিক কাজ করেছিস, বাছা। ঘুম না ভাঙিয়ে, বিবেচনার কাজই হয়েছে। এক কাজ কর বরং। আর একবার যা ওদের বাড়িতে। 
ছানাটা আবার বলল—আবার যাবো? সেই তো ডেকে ঘুম ভাঙাতে হবে, মা। 
🍂

--না, না। ঘুম ভাঙাতে হবে না। মা-চিতা বলল—এবার তুই একগোছা শুকনো ঘাস নিয়ে যাবি সাথে। সাবধানে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকবি। যাতে তাদের ঘুমের ব্যাঘাত না হয়। মোরগের মাথার ঝুঁটি বড়। শুকনো ঘাস তো, ঝুঁটির উপর ধরলেই, আগুন জ্বলে উঠবে। যা,বাবা। দেরি হয়ে গেছে। আগুন নিয়ে এলে, তবে না তোদের খাবার তৈরি করব।
বাচ্চাটা মাথা নেড়ে দিল—না, মা। আমি একা যাব না। ভয় করছে আমার।
মা-চিতা অবাক—ভয় কেন রে? এতে কিসের ভয় তোর?
--আগুন চুরি করতে গিয়েছি, যদি ওরা টের পেয়ে যায়? জেগে উঠলেই তো ধরে ফেলবে। আমাকেই পুড়িয়ে ফেলবে আগুনে। আমি একা যাব না, মা।
অগত্যা ছেলেকে সাথে নিয়ে, চিতানি নিজেই এলো মোরগদের ডেরায়। নিজেদের আড়ালে রেখে, উঁকি দিয়ে দেখল—মোরগ-মুরগি তখনও ঘুমিয়েই আছে। 
হামাগুড়ি দিতে চিতারা ভারি ওস্তাদ। বিশেষ করে শিকার ধরবার আগে, পেট ঘষটে এগোতে দেখা যায় তাদের। এখনও খুব সাবধানে, হামাগুড়ি দিয়ে, মোরগদের ডেরায় ঢুকে এলো চিতানি। 
মোরগ মুরগি ঘুমিয়ে আছে। ঘাসের গোছাটা এগিয়ে নিয়ে মোরগের ঝুঁটির ওপর ধরে রাখল চিতানি। আগুনের একটু ফুলকি দেখলেই, নিয়ে বেরিয়ে যাবে। মনের এই ভাবনা।
কিন্তু কোথায় আগুন, কোথায় কী? ধরে আছে তো আছেই। আগুন তো দূরের কথা, এক বিন্দু ফুলকিও জ্বলে উঠছে না। চিতানি তো পড়ল আকাশ থেকে। এমন বড় আর টকটকে লাল ঝুঁটি। আগুন তো জ্বলে উঠবার কথা। 
ধন্দে পড়ে গেল চিতানি। ঘাসের গোছা রেখে, একটা থাবা বাড়িয়ে, আলতো করে ঝুঁটিটা ছুঁয়ে দেখতে গেল। কতটা তাত আগুনের, নিজের হাতেই পরখ করে নিতে চায় সে।
কিন্তু না তো! তাতের কোন লক্ষণই নাই ঝুঁটিতে। মোরগের দুটো কানে দুটো লম্বা লতি। সেগুলোতেও তো আগুনই থাকবার কথা। ছুঁয়ে দেখল, কোন তাপ-উত্তাপ নাই সে দুটোতেও। একেবারে জলের মতো ঠাণ্ডা সেগুলো। হোল কী ব্যাপারটা?
মাথার মধ্যে চিড়িক করে উঠল চিতানির। এতো দিন তাহলে ঠকিয়ে এসেছে মোরগ? ধোঁকা দিয়েছে আমাদের? মিথ্যেমিথ্যি ভয় দেখিয়ে রেখেছে বনের সবাইকে?
ভয়াণক রাগ চড়ে গেল চিতানির মাথায়। বিরাট এক গর্জন বেরিয়ে এল মুখ থেকে। গোটা এলাকা কেঁপে উঠল সেই শব্দে।
মোরগ আর মুরগির তো প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার জোগাড়। চোখ মেলে দেখে, সামনে সাক্ষাত যম। মুখখানা হাঁ করা। বাজ পড়বার মতো একটা বিকট আওয়াজ বেরোচ্ছে মুখ দিয়ে। ঠকঠক করে কেঁপে উঠল দু’জনে। 
চিতানি বলল—নিজে ছুঁয়ে দেখেছি, এক বিন্দু আগুনও নাই তোদের ঝুঁটিতে। মিথ্যে বলে এসেছিস এতোদিন। আজই বিচার হবে তোদের। উচিত শিক্ষা পেয়ে যাবি। 
মোরগ-মুরগির তো কথা সরছে না মুখ দিয়ে। গলা শুকিয়ে কাঠ। কাঁপছে থরথর করে। চিতানি বলল—একটু সবুর কর। সবাইকে ডেকে আনছি আমি। সবার সামনে বিচার হবে তোদের। শাস্তিও হবে সবার সামনে।
বাচ্চাটাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল চিতানি। 
এমন বিপদ জীবনে আসেনি। মোরগ ঘাবড়ে বসে রইল না। তার মন বলল—এমন মওকাও জীবনে সবে না। সরে পড়ো এক্ষুনি। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। আর এক মূহুর্তও দেরি নয়। চটপট করে বেরিয়ে পড়ল মোরগ-মুরগি। ছুট ছুট। যত তাড়াতাড়ি পারা যায়, পালিয়ে যেতে হবে বন ছেড়ে। প্রাণ নিয়ে পালাতে লাগল দুটিতে। 
ছুটতে ছুটতে , ছুটতে ছুটতে এক সময় গ্রামে এসে হাজির হোল মোরগ-মুরগি। সামনে এক গেরস্ত বাড়ি পেয়ে ঢুকে পড়ল সেখানে। বাড়ির মালিক বসেছিল দাওয়ায়। দুটো মোরগ-মুরগিকে এভাবে হুড়মুড়িয়ে উঠোনে ঢুকে পড়তে দেখে, লোকটা অবাক। বলে উঠল—কীরে, বন ছেড়ে, তোরা হঠাৎ আমার বাড়িতে কী মনে করে? ব্যাপারখানা কী? 
মোরগ বলল—নাগো, বনে আর থাকব না আমরা। ভারি অনিয়ম সেখানে। দুর্বলদের জীবনের কোন দামই নাই বড়দের কাছে। গ্রামেই থাকতে এসেছি আমরা।
লোকটা একটু থমকে গেল—তা, এসেছিস যখন থাক। কিন্তু খাবার-দাবার? সেসব জোটাবি কোত্থেকে?
--কেন গো, তোমার বাড়িতে থাকব, খাবার-দাবার তুমি জোগাবে। কেমন গেরস্ত তুমি?
লোকটা বলল-- শুধুমুধু দুজনের খোরাকি জোটাতে যাব কেন আমি?
--শুধুমুধু নয় গো, ভালোমানুষ। রোজদিন ডিম পাড়ব তো আমরা। সে ডিম খাবে তোমার বাড়ির ছেলেপুলেরা। তাতে গায়ে-গতরে বাড়বে তারা। তোমরাও খেতে পারবে। তুমি আমাদের খাবার দেবে, আমরা তোমাদের খাবার দেব। মোরগ বলল—অতোটুকু পেট আমাদের। কতোটুকু আর খাবো? লাভই হবে তোমার।
লোকটা রাজি হয়ে গেল। মোরগ বলল—শুধু একটা দাবী আছে আমাদের।
গেরস্ত লোকটা বলল—বল শুনি, কী দাবী তোদের?
মোরগ বলল—বেশি কিছু নয়। দিনের বেলা যেমন তেমন। রাতের বেলায় আগলে রাখতে হবে আমাদের। মানে, কোথাও একটা ঢুকিয়ে, আগল দিয়ে রেখো। কেবল রাতের বেলাটুকু। বনের শেয়াল, হায়েনা বা আরও কেউ কেউ চলে আসতে পারে তো, তাই।
চিতার নাম মুখেও আনল না মোরগ। গেরস্ত ঘাবড়ে যেতে পারে। তখন যদি ভয়ে পেয়ে পিছিয়ে যায়? 
লোকটা বলল—এই কথা। এ আর এমন কী? সে ব্যবস্থা আমি করে দেব। 
সেই থেকে গাঁয়েই থাকে মোরগ-মুরগিরা। মানুষের পোষ মেনে নিয়েছে তারা। মানুষজনও যত্ন করে আগলে রাখে তাদের। যাতে কোনও বিপদ না আসতে পারে।
এজন্যই বলা হয়—সমঝোতায় এলে, লাভ হয় দু’পক্ষেরই।
লাচুঙের নেকড়ে (পর্ব-আটত্রিশ ) 
-শ্রীকান্ত অধিকারী 
 
প্রাচীন ব্রহ্মদেশ (বার্মা-মায়ানমার) থেকে ভারতবর্ষের পূর্ব দিকে থাইল্যান্ড কাম্বোডিয়া একেবারে সাউথ চাইনা সাগরের পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত পরবর্তীতে বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটার আগে প্রাচীন ভারতবর্ষীয় বিষ্ণু উপাসনার যে চল ছিল, সাতমাথাওলা বাসুকিনাগের চিত্র বা ভাস্কর্যে তার প্রমাণ মেলে। -অমরবাবু খুব ধীরে ধীরে সোমেশ্বরদের ইতিহাস শোনাচ্ছিলেন। পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে প্রাচীন ভারতবর্ষের কী নিগূঢ় সম্পর্ক ছিল।  
-আমি তো শুনেছি বাসুকিনাগ মহাবিষ্ণুর সঙ্গে জড়িত। কাম্বোডিয়ায় অঙ্কোরোয়াট মন্দিরের গায়ে এই সাত মাথাওলা বাসুকির চিত্র আছে,- রামসিঙের মা বলে। 
- সাহি বাত। লেকিন সাত মাথাওলা সাপ যেটা মহান বুদ্ধের ছত্রধর। সেটাই মুচলিন্দ! একটা সাপ বিষ্ণুর, আরেকটা বুদ্ধের। বুদ্ধের আরো তিন ধরনের মূর্তি দেখা যায়- লোকেশ্বর, বুদ্ধ এবং প্রজ্ঞাপারমিতা। 
-কিন্তু আরেকটা সাপ আছে-শেষ নাগ।
-ইয়েস। শেষনাগ। শেষনাগশায়ী বিষ্ণু মূর্তি। 
-সে তো অঙ্কোর কিংবা এখন নমপেন শহরের মন্দিরে এবং প্রাচীন যে সব সাঁকো রয়েছে তাদের রেলিং বা দেয়ালে এই সাত মাথাওলা সাপের কথা শুনেছি। কিন্তু এখানে কেন? তার মানে এখানে এই লেপচাদের সঙ্গে কোনো রিলেশন বা অন্য কিছু আদান প্রদান? সোমেশ্বরের কপালে ভাঁজ পড়ে। সে আর দেরি না করে কাছেই যে ঘরটা এতক্ষণ ভাল ভাবে দেখা যাচ্ছিল না অথচ কাম্বোডিয়ান খমের ভাষায় কথা ভেসে আসছিল সেই ঘরে সটান ঢুকে যায়। কারণ দরজা সেভাবে লক ছিল না। আলগা ভাবে ফাটা কাঠের দরজা ঠেলতেই সোমেশ্বর থমকে যায়। এত মেশিনারি! হাজারো তারের জট। ছোট ছোট ফাইবারের মেশিন। প্রত্যেকটাতে লাল সবুজ এল ই ডির মত লাইট জ্বলছে। বাড়িতে ওয়াউফাই অ্যাডাপ্টার কিংবা ওয়ারলেশ রাউটার মেসিনের মত সব। প্রায় সব কটাতেই মিনি স্পীকার। ব্রডকাস্ট ওয়েব মেসিন। অদ্ভুত লাগল যে এই ঘরের এ দু’জন ছেলে ওকে দেখে চমকে গিয়ে ওর দিকে যে যন্ত্রটা উঁচিয়ে দাঁড়ালো সোমেশ্বরের চেনা। অন্তত  এই কদিনে বেশ ভাল ভাবেই সেরগিলের সাহেবের কাছে দেখেছে।  
আরো আশ্চর্যের লাগল এক জনকে আগে সে দেখেছে। অদ্ভুত আলোছায়ায় ছেলে দুটো দাঁড়িয়ে ছিল তা স্বত্তেও ‘হোয়াইট লিলি’ হোম স্টের রাতে যে ছেলেটা রামসিঙের গায়ে মক ভাইপার সাপ ছুঁড়ে দিয়েছিল। কিন্তু সে এমন বাংলাদেশের চোয়াডাঙার ভাষায় কথা বলছিল তাতে বাংলাদেশের লোক বলে মনে হলেও এখন তো ওর অরিজিন কোথায় সেটায় বোঝা যাচ্ছে না। তবে যতই এক মুখ দাড়ি উধাও হয়ে যাক কিন্তু রাতের আবছা অন্ধকারে দেখা সেই তির্যক ক্রূর দৃষ্টি মন থেকে মুছে যায় না। সোমেশ্বরের চোখদুটো বিস্ফারিত অথচ ঘবড়ানো দেখাচ্ছিল। যদিও সে আর হাল ছাড়তে না রাজ। 
সোমেশ্বর কোনো রকম ভণিতা না করেই কিংবা সেই উঁচিয়ে থাকা পিস্তলকে তোয়াক্কা না করেই জোরালো গলায় পরিষ্কার বাংলায় বলে,-আমার বাচ্চাটা কোথায়? বল নইতো… আর কোনো কথা নয়, সোজা লঙ জাম্প দেওয়ার মত প্যাডেল সুয়িং করে ছেলেটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এমন ভাবে সোমেশ্বর যে ওদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে রামসিঙের মা বা ওখানে যারা ছিল তার কেউই বুঝতে পারে নি। ঘটনার আকস্মিকতায় ছেলে দুটোও সেকেণ্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তৎক্ষণাৎ পরপর দুটো গুলি ছুটে বেরিয়ে যায়। একটা চিৎকার। অসহ্য যন্ত্রণার। তারপরেই পরিষ্কার ইংরেজি শোনা যায়-সিক্কিম ফর সিক্কিমিজ। সিক্কিম ফর ওনলি লেপচাস! বলেই লুটিয়ে পড়ে একটা ছেলে। ততক্ষণে আরেক টাকে জাপ্টে ধরে ফেলে গ্যাটসো। অন্ধকারের হুটোপুটিতে প্রথম দিকে কিছু বোঝা না গেলেও এমন চিৎকারে তখন সবাই ঘরে ঢুকে দেখার জন্য ব্যাকুল হডয়ে পড়ে। রামসিঙের মা আর অমরবাবু দরজা আগলে দাঁড়িয়ে। লুটিয়ে পড়া ছেলেটার দিকে চম্পা ছুটে যেতেই গ্যাটসোও পরিষ্কার ইংরাজিতে ধমক দিয়ে বলে,-ডোন্ট মুভ। অমরবাবু প্লীজ হেল্প মি। আপনার মোবাইল থেকে সেরগিল সাহেবকে কল করুন। 
হঠাৎ এমন করে অঝোরে বৃষ্টি নামবে আপার জঙ্গুর লেপচারাও আগাম বুঝতে পারে নি। এখানে এই পাহাড়ি এলাকার যখন তখন বৃষ্টি নামা ভৌগোলিক পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে। তেমন অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু তা বলে এমন ধারা! ঝটিকা সফরে আসে আবার ক্ষণিকের জন্য নেচেকুদে আবার কোথায় চলে যায়। আকাশ ফর্সা। কিন্তু তারও একটা পূর্বাভাস থাকে না তা নয়। কিন্তু এখন এইভাবে এমনতর বৃষ্টিতে সেরগিল সাহেবের প্লানটাই না ভেস্তে যায়! 
যে লোকগুলো বাইরের দিকে ছিল অর্থাৎ মুটে বইয়েরা আর তিনজন কন্সটেবল তাড়াতাড়ি ঘরের মধ্যে ঢুকে যেতেই সেরগিল সাহেব খ্যাক করে ওঠে,- আভি কাম খতম নেহি হুয়া। পজিশন মত ছোড়ো। 
বড়মামা আর দীপকবাবু দ্রুত সেরগিলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, কী ব্যাপার মশাই, ঘুম ভাঙল? 
সেরগিল সাহেব শুধু মুচকি হেসে বললেন, বৃষ্টি না হলেই ভাল হত। লেকিন ক্যায়া করুঁ ওয়েট করনা পরেগা।  দীপকবাবু আপ তো রেডি ? 
সব ঠিক আছে লেকিন ক্যায়া বাত হ্যায় সেরগিল সাহেব? কুছ তো বাতা দিজিয়ে। আমাদের ধৈর্য হাত গলে পালিয়ে যাচ্ছে যে।- বড় মামা এবার যেন সত্যিই আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। অদ্ভুতভাবে সেরগিল সাহেবের দিকে তাকিয়ে থাকে। ততক্ষণে ম্যাডাম শবনম ছেত্রী এবং দুটো কন্সটেবল এসে পাশে বুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়েছে। দোচালার মধ্যে যে টিমটিমে বাতিটা ছিল সেটা হঠাৎ দপ করে নিভিয়ে যেতেই সারা ঘরময় গভীর অন্ধকারে ডুবে গেল। বাইরে তখন শুধু সোঁ সোঁ করে ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি। দাপুটে বৃষ্টি।  
 সেরগিল সাহেব চার্জার টর্চটা অন করে চট করে দীপকবাবুর দিকে ফেলে একবার লাইটের তীব্রতাকে পরখ করে নিলেন। দীপকবাবু কোমরে হাত দিয়ে সব ঠিক ঠাক আছে কিনা দেখে নেন।  এই প্রথম বড় মামা দীপকবাবুর কোমরে জ্যাকেটবন্দী যন্ত্রটাকে দেখলেন। বড় মামা চোখগুলো আলো আঁধারে চকচক করে ওঠে এবং জেগে ওঠে একটা বিষ্ময়! মনে মনে হীনমন্যতায় জাগে,-দীপকবাবুরটা পিস্তল– ম্যাগাজিনে ভরা থাকে গুলি, সেমি অটোম্যাটিক। ওর নিজেরটা রিভলভার! ম্যানুয়েলি গুলি ভরতে হয় সিলিন্ডারে। তা হোক, কাজের সময় ঠিক কাজ দেবে। নিজেরটাও একবার ছুঁয়ে দেখে নেয়। এই যন্ত্র থাকলে মনে শরীরে আলাদা আমেজ তৈরি হয়। নিজের মনেই হেসে ওঠে,-বলিয়ে তো সেরগিল সাব, কব কাঁহা ক্যায়া করনা হোগা! 
 শবনম ম্যাডাম কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তার আগেই দীপকবাবু বলেন, প্লান ক্যায়া হ্যায় স্যার? 
-ওয়েট অ্যান্ড ফলো দ্যা নেক্সট অর্ডার প্লীজ। সেরগিল সাহেব ঘর থেকে দু পা দূরে ঘন অন্ধকারে বিভীষিকার মত দাঁড়িয়ে থাকা পর্বতশ্রেণীর দিকে চেয়ে থাকে, যেন কোন অভেদ্য রহস্যের ভেত র ডুবে যেতে চায়!  
(ক্রমশ)
মানালী সরকার 
বেথুয়াডহরি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় 
বেথুয়াডহরি, নদিয়া 
সপ্তম শ্রেণি
উৎসব মরশুমে আমেরিকাতে বাসবদত্তা কদম

পর্ব ১৪ ম্যানহাটান শহরের সেন্ট প্যাট্রিক্স ক্যাথিড্রাল দেখতে প্রতিদিন অজস্র ভ্রমনার্থী আসেন। তাঁরা শুধুমাত্র খৃস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ নন। ১৮৭৮ খৃষ্টাব্দে তৈরী এই ক্যাথলিক চার্চটি জার্মান, ফ্রেঞ্চ এবং বৃটিশ গথিক শৈলীতে তৈরী একটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য। মূল দরজাটি ব্রোঞ্জের। মুগ্ধ হয়ে দেখতে হয় এর গঠনশৈলী। যথারীতি আমার ক্যামেরায় বন্দী করার চেষ্টা করলাম এই সুন্দর চার্চটিকে।  
সেন্ট প্যাট্রিক্স ক্যাথিড্রাল দেখে আমরা এগোলাম এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং এর দিকে। এটা এখান থেকে দেড় কিলোমিটার মতন। এই সেই বিল্ডিং যার উপরের অবসার্ভেটরি থেকে পুরো নিউ ইয়র্ক শহরকে দেখা যায় একসঙ্গে। ১৯৩০-৩১ সালে একশো দুই তলা এই বাড়িটি তৈরী হয়েছিল। তখন এটিই ছিল পৃথিবীর সব থেকে লম্বা বাড়ী(উচ্চতায়)। তারপর ১৯৭০ সালে এর থেকেও লম্বায় উঁচু, তৈরী হল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বিল্ডিং। যা ধ্বংস হয়ে গেল ২০০১ সালের সেই আতঙ্কবাদী হামলায়। এই হামলার কথা আগের একটি পর্বে বলেছি। এখন এই বাড়িটির থেকে উঁচু উঁচু খান ছয়েক বাড়ি খোদ নিউইয়র্ক শহরেই আছে; সারা পৃথিবীতে তো অবশ্যই আরো অনেকগুলো আছে। 
চিত্রগ্রাহক - বাসবদত্তা

এ বাড়িতে ঢুকতে রীতিমতো লাইন দিয়ে টিকিট কাটতে হয়। অনলাইনেও কাটা যায়। এর ছিয়াশি তলায় একটি আর একশো দুই তলায় আরেকটি অবসার্ভেটরি আছে। এর যে কোনো একটির জন্য টিকিট নেওয়া যায়। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত খোলা। এখানে গিয়ে যে কোনো দর্শক যতক্ষণ খুশি বসতে পারেন। ছিয়াশি তলার থেকে নিউইয়র্ক শহর, তার সেন্ট্রাল পার্ক, ব্রুকলিন ব্রীজ, এককথায় পুরো শহরটাকে দেখা যায় একসঙ্গে। 
এই বাড়িটিকে অজস্র হলিউডি সিনেমায় দেখা গেছে। আরেকটা মজার কথা যা শুনে অবাক হয়েছিলাম- এই বিশাল বাড়িটি তৈরী হতে সময় লেগেছিল একবছর কয়েক মাস। দেড় বছরও নয়। তাও সেই ১৯৩০ সালে। ভাবলে সত্যিই অবাক হতে হয়।
এরপর শহরের স্রোতে ভেসে আমরা চললাম সেন্ট্রাল পার্ক। এমন ব্যস্ত শহরের মাঝখানে যে এত বিশাল একটা পার্ক থাকতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। চারিদিকে অজস্র আকাশ ছোঁয়া বাড়ি, যাকে সবাই আমরা চিনি স্কাই স্ক্রাপার নামে আর তার ঠিক বুকের মধ্যে আটশো তেতাল্লিশ একরের এক পার্ক। 
তবে এই পার্কের যে অঞ্চল শুনলাম সেখানে ছিল কালো মানুষদের এক গ্রাম। ১৮৪০-৫৭ ধীরে ধীরে তাদের উচ্ছেদ করেই এর সৃষ্টি।

Post a Comment

1 Comments

  1. মানালি খুব ভালো এঁকেছে।

    ReplyDelete