জ্বলদর্চি

আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস (২১শে মার্চ)/দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস (২১শে মার্চ)

দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস সম্পর্কে লিখতে গেলে আমাকে প্রথমে বলতে হয়, কবিতা কি?
কবিতা বা কাব্য বা পদ্য যাই বলি না কেন, তা হল শব্দ প্রয়োগের ছন্দসিক বা অনিবার্য ভাবার্থের বাক্য বিন্যাস, যা একজন কবির আবেগ, অনুভূতি, উপলব্ধি ও চিন্তা করার সংক্ষিপ্ত রূপ এবং তা বিভিন্ন অলংকারের দ্বারা লেখনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা অর্থাৎ এক কথাই বলা যায়, লেখনীর মাধ্যমে মনের উপলব্ধি, অনুভূতি ও ভাবনাকে প্রকাশ করা।

'আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস' কবিতার মাধ্যমে ভাষাগত বৈচিত্রের উদযাপনকে চিহ্নিত করে। সাংস্কৃতির ইতিহাস, ঐতিহ্যর সুন্দর সংমিশ্রণে কবিদের অপরিসীম অবদানকে সম্মান জানাতে প্রতিবছর ২১শে মার্চ 'আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস' পালন করা হয়। 
ইউনেস্কো (জাতিসংঘ শিক্ষা বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা) কর্তৃক ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক কবিতায় দিবস ঘোষণা করা হয়।
প্রকৃতপক্ষে এই দিনটি ১৫ই অক্টোবর মহাকবি ভার্জিলের জন্মবার্ষিকীতে পালিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে ইউনেস্কো এই দিনটি ২১শে মার্চ পালন করে ,ফলে পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস মার্চ মাসের ২১ তারিখে পালন করা হচ্ছে।

প্রত্যেক দিবসের এক, একটা ইতিহাস আছে, ঠিক সেরকম
আন্তর্জাতিক কবিতা দিবসেরও একটা ইতিহাস আছে। বলা হয় যে ১৯৯৯সালে আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস দিনটি প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হয়েছিল। একটু বিস্তারিতভাবে জানালে সুবিধা হয়, যেমন ১৯৯৯ সালের ৩০ তম সাধারণ সম্মেলনের সময় ইউনেস্কো দ্বারা কবিতা দিবসের ঘোষণা করা হয় এবং তা গৃহীত হয়।
আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস গ্রহণের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল, কবিতার মাধ্যমে ভাষাগত বৈচিত্র্য কে সমর্থন করা, যার ফলে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে শিক্ষার প্রচার ও প্রসার করা।
এই দিনটিকে গ্রহণ করা হয়েছিল বিপন্ন ভাষাকে রক্ষা করতে এবং সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত কাব্যিক অভিব্যক্তির মূল্যবান রূপের গুরুত্ব সম্পর্কে আরো বেশি সংখ্যক মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে।
রোমান কবি ভার্জিলের জন্মবার্ষিকী স্মরণে ১৫ই অক্টোবর কবিতা দিবস পালন করা হয় যিনি Aeneid লেখেছিলেন।

এই কবিতা দিবসের একটা তাৎপর্য আছে, বলা যায় যে কবিতা দিবস একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, কারণ অনেক মানুষের মনেতে কবিতার একটি স্থান আছে। বড় হয়ে প্রায় আমরা সবায় কবিতা লিখতে বা কবিদের লেখা পড়তে চেষ্টা করেছি। এছাড়াও বলতে পারি, আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস মানুষের কবিতার জ্ঞান এবং অন্যদের মধ্যে তা ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। তাছাড়া তো উৎসাহহীন যারা কবিতা সম্পর্কে তাদেরকেও একত্রিত করে এই কবিতা দিবস। এই দিনটিতে শিক্ষাবিদেরা মহান কবিদের স্মরণ করেন এবং তাঁদের রচনাগুলি অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেন।

বিভিন্ন মানুষ, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে কবিতা দিবস উদযাপন করে। মূলত দিনটি ইতিহাসের মহান কবিদের সম্মান এবং তাঁদের স্মরণ করে উদযাপন করার দিন। এই দিনটিকে পালন করা হয় বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। বর্তমানে অনলাইনেও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালিত হয় বিশ্বব্যাপী। কবিতা লেখেন যারা, আবৃত্তি করেন যারা, কবিতাকে ভালোবাসেন যারা, তারা একত্রিত হয়ে তাঁদের প্রিয় কবির রচনা সম্পর্কে আলোচনা বা তাঁদের লেখা বিভিন্ন কবিতা, আবৃত্তি করার মাধ্যমে দিনটি পালন করেন।এছাড়াও বলতে পারি এই দিনটি প্রকৃতপক্ষে কবিতা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার দিন। 

🍂

ইউনেস্কো এই দিনে বিশেষ মিডিয়া কিট এবং বিভিন্ন সংস্থান অফার করে যাতে মানুষের মধ্যে কবিতা সম্পর্কে একটা ভালোবাসা জন্মায়। মানুষ কবিতা সম্পর্কে জানতে এবং সেটি সম্পর্কে জানতে আরো উৎসাহিত হয়।
কবিতা দিবসের দিন অনেক ছোট, ছোট সংস্থা এবং কবিদের দ্বারা বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়, সেখানে কবিতা পাঠ, কবিতা নিয়ে আলোচনা, প্রিয় কবি সম্পর্কে বলা ইত্যাদি অনুষ্ঠানগুলি হয়ে থাকে। এছাড়াও সরকারী ,বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কবিতার সম্পর্কে একটা অনুরাগ জন্মানোর চেষ্টা করা হয়।
প্রকৃতপক্ষে কবিতা দিবস পালিত হয় মানুষের মধ্যে যাতে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা যায়, কারণ কবিতা তো সব ধরনেরই হয়। সেখান থেকে আমরা অনেক সামাজিক বার্তাও পেয়ে থাকি, ফলে বিভিন্ন ঘটনা এবং তার ফল সম্পর্কে সচেতনতা ও বৃদ্ধি করা যায় কবিতার মাধ্যমে।

প্রত্যেক দিবসের মতো কবিতা  দিবসেরও একটি করে থিম থাকে প্রত্যেক বছরই। ২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক কবিতা দিবসের থিম ছিল,
 'সর্বদা একজন কবি হন, এমনকি গদ্যেও'। 
প্রতিবছর ইউনেস্কো কবিতা দিবসের জন্য, একটি করে নতুন থিম নির্ধারণ করে। 

কবিতা মানুষকে একত্রিত করে, কবিতা মানুষকে বুঝতে শেখায়, কবিতা মানুষকে প্রতিবাদ করতে শেখায়, কবিতা মানুষকে ভালবাসতে শেখায়, কবিতা মানুষকে এক আকাশের নিচে বাস করতে শেখায়। আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস কবিতার জগতের গভীরে প্রবেশ করার একটি দুর্দান্ত উপলক্ষ বলে মনে করা হয়।

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments