জ্বলদর্চি

যেতে যেতে পথে /পর্ব ১১৬/রোশেনারা খান

অনন্যা আমার মেয়ের মত।

যেতে যেতে পথে
পর্ব ১১৬

রোশেনারা খান


রাতে নানা কারণে ঘুম হয়নি, সকাল থেকে ঘুম ঘুম লাগছে। ব্রেকফাস্ট করে শুলাম। দুপুরে স্নান খাওয়া করে আবার ঘুমালাম। কিছুতেই জেট ল্যাগ কাটছে না। বিকেলে চন্দ্রিমা এলে ওদের জিনিসগুলো দিলাম, খুব পছন্দ হয়েছে। সবার জন্যই কিছু না কিছু নিয়ে এসেছি।বিশেষ করে যারা খুব কাছের তাদের জন্য।

    শরীর এখনো ঠিক হয় নি। দুপুরে লেখক অচিন্ত্য মারিক ফোন করে বললেন, একটি অফিসে আপনার নাম পাঠিয়েছিলাম, ওরা আপনার ছবি ও বায়োডাটা চেয়েছেন। আপনি আমাকে পাঠিয়ে দিন। আমার সন্দেহ হল, জিজ্ঞেস করলাম কোন অফিস? মহিলা কমিশন থেকে চেয়েছে কিনা। তারপর ADM এর অফিসে গিয়ে কথা বলে     জানলান আমি যা ভেবেছিলাম সেটাই, মহিলা কমিশন থেকে চেয়েছে। ADM ক্যাম্পা হুনাইয়া বললেন, দিদি আপনি দুজনকে সিলেক্ট করে দিন।  সেই নামদুটিই মহিলা কমিশনে পাঠানো হবে। আমি সেইমত সমাজকর্মী ঝর্ণা আচার্য ও আরও একজনকে ছবি ও বায়োডাটা পাঠাতে বললাম। এই ব্যাপারেই আজ আবার ADM এর অফিসে গেলাম। ঝর্ণা  কুড়মিদের একটি কেসের ব্যাপারে এসেছিল। আমার সঙ্গে গিয়ে ছবি ও বায়োডাটা জমা দিল। এই অফিস থেকে বেরিয়ে পাশেই সৌমনার অফিসে ঢুকে কফি খেতে খেতে কিছুক্ষণ গল্প হল, একজন ফাইল নিয়ে এলে সৌমনা তাঁকে পরে আসতে বললেন। আমি তখন বললাম ‘তুমি কাজ কর’।এই বলে কিছু পরে বেরিয়ে এলাম।
জঙ্গল মহল সাহিত্য উৎসবে একটি আলোচনায় আমি ও অধ্যাপক সুস্নাত জানা।

     ইংল্যান্ড যাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো করে কোথায় লকারের চাবি রেখে গিয়েছি,পাচ্ছি না। যাওয়ার সময় গলার চেনটা হ্যান্ডব্যাগে  রেখেছিলাম। কলকাতাতেও খুঁজে পাইনি, এখানেও পাচ্ছি না। বাজে রকম মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। আজ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩।গতবছর আজকের দিনে বিদ্যাসাগর পুরস্কার পেয়েছিলাম। আমার কাছে আজ একটি  স্মরণীয় দিন। এবার বিদ্যাসাগরের জন্মদিন ২৬ সেপ্টেম্বর পুরস্কার দেওয়া হবে। আমন্ত্রণ পত্র পেয়েছি, ইউনিভার্সিটি থেকে গাড়ি আসবে আমাকে আর অন্নপূর্ণাদিকে নিতে।

     আজ অনন্যা এসেছিল, প্রথমে বলেছিল শনিবার এসে  রবিবার  সকালে আমার এখানে ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে যাবে। গতলাল জানিয়েছে রাতে থাকা হবে না। শনিবারেই ফিরতে হবে। তাই ও সময় বের করে দেখা করবেই। একটা খুশির খবর বলা হয়নি। কয়েকদিন আগে অনন্যা  জানিয়েছে ওঁর প্রমোশন হয়েছে, আর প্রমোশন মানেই অন্য জায়গায়  ট্রান্সফার হতে হবে। অনন্যা মেদিনীপুর পৌঁছে প্রথমেই ওর বন্ধু শেষাদ্রির সঙ্গে  আমাদের বাড়ি আসে ছিল। গল্প হল, ছবি তোলা হল। একটু সেমুই খেয়ে চলে গেল। কারণ সবার বাড়ি যাওয়া সম্ভব নয়, তাই সবাইকে গেস্ট হাউসে ডেকেছে। লাঞ্চ করবে আঝারুল পাঠানের  বাড়িতে। অনন্যা অনেকগুলো কসমেটিক্স নিয়ে এসেছিল। যদিও আমি এসব ব্যবহার করিনা। ভালবেসে দিয়েছে, এটাই আমার কাছে অনেক।
পাঁচবেড়িয়ার  দুর্গপুজো উদ্বোধনে আমি ও সোনালী চৌধুরী।

    এবারের(২০২৩)বিদ্যাসাগর পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠান গত বছরের মত হয়নি, এবার পুরস্কার পেলেন, আবুল বাসার, ইয়াসিন পাঠান ও ঝুমুর গানের রচয়িতা ললিত মোহন মাহাত। খুব অল্প সময়ে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করতে হয়েছে বলে মানপত্রটিও বাঁধিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি।

    বাচিক শিল্পী বৃষ্টি মুখার্জি ফোন করে বলল, ১৫ অক্টোবর ওর আবৃত্তির অনুষ্ঠান আছে, আমাকে প্রধান অতিথি করতে চায়।মেয়েটিকে আমি খুব স্নেহ করি, কভিডে আক্রান্ত হয়ে ওর বাবা মারা গেছেন। মা আর মেয়ে থাকে। সামনের বৈশাখে ওর বিয়ে, একজন ভাল জীবনসঙ্গীর ও ভাল পরিবারের ওর খুব প্রয়োজন। যারা ওকে বুঝবেন,এগিয়ে যেতে সাহায্য করবেন।

     আজ ১ অক্টোবর দীপের জন্মদিন, what,s app এ ওকে উইস করলাম। সকালেই ভগবতী দেবী স্কুলে গেছলাম।ওখানে কর্নেলগোলা আদি দুর্গাপুজা কমিটির সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ছিল। অনুষ্ঠানটির উদ্বোধনের জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

    কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হয়েই চলেছে, নিম্ন চাপের বৃষ্টি, তাই থামার নাম নেই। বাইরে বের হওয়া যাবে না, তাই লিখতে বসলাম। কবে যে ধারাবাহিক লেখাটি শেষ করতে পারব, জানিনা। আর ধৈর্য থাকছে না। তবে যারা আমার লেখাটি পড়েন, তাঁরা তাড়াহুড়ো করে শেষ করতে নিষেধ করছে। যেখান থেকে আমার লেখাটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে, সেই জ্বলদর্চি পত্রিকার সম্পাদক ঋত্বিক ত্রিপাঠীও বলছেন, আমি  তো আপনাকে বলিনি স্লট ছেড়ে দিতে, যতদিন চলে চলুক’। আমার ডিসেম্বরে শেষ করার ইচ্ছে ছিল, সেটা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। ২০২৪ শে ঢুকতেই হল।

   বাংলা একাডেমী মেদিনীপুর কলেজে জঙ্গলমহল সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করতে চলেছে। তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর থেকে নাম পাঠানো হয়েছে। প্রথমবার আমার আর মধুপদার নাম পাঠানো হয়নি, কেউ মনে করিয়ে দেওয়াতে পাঠানো হয়।একদিন বাংলা একাডেমী থেকে ফোন পেলাল, জঙ্গলমহল সাহিত্য উৎসবে অংশগ্রহণ করার জন্য what’s app আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হয়েছে। কিছু সাম্মানিক দেওয়া হবে, তাই ব্যাঙ্ক   ডিটেলস পাঠাতে বললেন।                                                                                                                           
     নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় এই সময়কার একজন প্রতিষ্ঠিত কবি। ও বলল, ‘দিদি আমি এখনো কোন চিঠি পাইনি।আর কবে আসবে’? আমি বললাম, ‘ঠিক এসে যাবে’। হলও তাই, কবিতা নিয়ে আলোচনায় ওকে থাকতে হবে। আমি আধিকারিক বরুণ মণ্ডলকে ফোন করে কিছু বিষয়ে জানতে চাইলাম। আমাকে রাখা হয়েছে যে আলোচনায়, বিষয় হল ‘জঙ্গল মহলের সাহিত্য চর্চার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’। বরুণের কাছে জানলাম এই  আলোচনায় যে সব পণ্ডিত ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করবেন, তাঁরা হলেন  বিপ্লব মাজি, সুস্নাত জানা, লক্ষ্মণ কর্মকার, মধুপ দে,অভিজিত গুহ প্রমুখ। আমি ও সব নিয়ে ভাবছি না।

      অক্টোবরের ৭ আর ৮ এই দুদিনের সাহিত্য সভার আজ   প্রথম দিন। উদ্বোধন করতে এসেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্র্যাত্য বসু, এছাড়াও এসেছেন সুবোধ সরকার, শ্রীজাত, প্রচেত গুপ্ত, মন্ত্রী বীরবাহা,ও আরও অনেকে। আলাপ হল প্রচেত গুপ্ত ও শ্রীজাতর সঙ্গে, ছবিও হল। সস্ত্রীক শিবাজীপ্রতিম বাবুর সঙ্গে দেখা হল।  

      আজ জঙ্গলমহল সাহিত্য উৎসবের শেষদিন। আমাদের আজ   ‘জঙ্গল মহলের সাহিত চর্চার বর্তমান ও ভবিস্যৎ’ নিয়ে আলোচনা হল, বিপ্লবদা আসেননি, আগে যাঁদের নাম উল্লেখ করেছি তাঁরা ছাড়াও আরও দুজন অধ্যাপক শান্তনু পণ্ডা ও লক্ষ্মীন্দর পালুই অংশগ্রহণ করেছিলেন। সঞ্চালনায় ছিলেন, সন্তু জানা। মঞ্চ থেকে নেমে যখন চলে আসছিলাম তখন একজন আদিবাসী ভদ্রমহিলা আমার হাত ধরে বললেন, ‘দিদি,আপনার কথা মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম, মনে হচ্ছিল আপনি যেন,   আমাদের কথাই বললেন’। বাকুড়ার দুজন ভদ্রলোকও প্রশংসা করে বললেন,আপনাকে আমরা নিয়ে যেতে চাই, যাবেন তো? আমার কন্ট্রাক্ট নাম্বার নিলেন। লক্ষ্মীন্দর পালুই বললেন, আমার সাথে আগে আলাপ  হয়েছে। উনিও ওনাদের কলেজে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেন।

     নীচ তলার দেওয়াল ভিজে যাচ্ছে। আজ মিস্ত্রী এসে দেখে গেছে,  দেয়ালের প্লাস্টার ছাড়িয়ে নতুন করে প্লাস্টার করতে হবে। রবিবার  থেকে কাজে লাগবে। ডেক্সটপটা আবার বিগড়েছে, অমিত এসে ব্যাটারিটা খুলে নিয়ে গেছে। যদি সারানো না যায়, তাহলে কিনতে হবে।আজ বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ থেকে কার্ড দিয়ে গেছে.১৭ ও ১৮, দুদিন প্রোগ্রাম রয়েছে। আমি যাবনা ভেবেছিলাম। কিন্তু রাতে প্রধান শিক্ষিকা স্বাতী ব্যানার্জি ফোন করে বলেন, ‘দিদি আপনার তো ১৮ অক্টোবর প্রোগ্রাম আছে, আপনি ১৭ অক্টোবর আসুন’।

     আজ প্লাম্বার মিস্ত্রী এসেছিল, গলা কেটে নিয়ে চলে গেল। বহুদিন ধরে আমাদের বাড়িতে কাজ করছে। আজ একটা পাইপ লাগাতে ৩০০০/ টাকা চেয়ে বসবে, ভাবতে পারিনি। রাজমিস্ত্রি আবার কত চাইবে কে জানে? টাকা খরচ হচ্ছে জলের মত।

    রবীন্দ্র নিলয়ে বৃষ্টির অনুষ্ঠানে গেছলাম, আমি, বাচিক শিল্পী অমিয় পাল মালবিকাদি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করলাম, কিছু কথা বললাম। কবিতাও শোনালাম।

     যাইহোক, বাড়ির কাজ তো দেখতেই হবে, তাই বলে বাইরের কাজে অবহেলা করতে পারি না। আজ সারদা কল্যাণ ভাণ্ডার গেছলাম ছাত্রীদের ইন্টারভিউ নিতে। আমি আর রিনাদি (মেদিনীপুর উইমেন্স কলেজের ইতিহাসের HOD)ছিলাম। অন্য বারের মত রেখাদি তাঁর   চেয়ারে ছিলেন না। শেষের দিকে তপতিদি এলেন। বিমল আমাদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেল।

🍂

     আজ বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে গেছলাম। উপস্থিত একজন বিচারপতি, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, DSP,     পৌরপিতা, অনেকই সম্মানীয় অতিথিরা উপস্থিত হয়েছেন। দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকা মাননীয়রা কিছু পরে চলে গেলেন। কিন্তু স্বাতী আমাকে ছাড়লনা। বক্তব্য রাখলাম, কৃতি ছাত্রীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিলাম। তারপর বাড়ি  ফিরলাম।

    আজ দাসপুরের গৌড়া গেছলাম ‘সান রাইজ ক্লাব’এর দুর্গাপুজো উদ্বোধনে।সঙ্গে তানিকেও নিয়ে গেছলাম। কলকাতা থেকে এসে ছিলেন সোনালী চৌধুরী ও অনুশিলা দেবী। শোনালি টিভি সিরিয়ালের অভিনেত্রী,  অনুশিলাদি গান শেখান। ওনার আর একটা পরিচয়,উনি সোমনাথ চ্যাটার্জির কন্যা।দুজনেই মেকআপ নিয়ে ব্যস্ত, বিশেষ করে অনুশিলাদি। আমি মেকাআপ করি না, আমার চিন্তাও নেই।

      আমাদের প্রথমে ডঃ নির্মল পালধির ক্লিনিকে বসানো হল। ওখানে চা পানের পর কিছুক্ষণ রেস্ট নেওয়া হল। তারপর আমাদের মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনজন মিলে ফিতে কেটে মণ্ডপে প্রবেশ করলাম। মনে হচ্ছে যেন রাজস্থান থেকে কোনো মহল তুলে নিয়ে আসা হয়েছে। দারুণ কারুকার্যময় মণ্ডপ। প্রতিমা দেখার পর আমাদের নিয়ে এসে মঞ্চে বসানো হয়। অনেক বিশিষ্ট অতিথিরা উপস্থিত হয়েছেন, এক এক করে আমাদের সবাইকে বরণ করা হল।

    আমি বক্তব্য রাখলাম। অনুশিলাদি গান শোনালেন, কিছু কথাও বললেন। সোনালি নৃত্য পরিবেশন করল। এর পরেই আমরা বাড়ির পথে রওনা হলাম। তানি কয়েকটা ছবি তুলে ছিল, সেগুলো খুব একটা ভাল নয়। তাই ছবির জন্য নির্মল বাবুকে ফোন করে ছবির কথা বলতে উনি একটা ভিডিও পাঠিয়ে পাঠিয়েছেন।‘স্থানিয় সংবাদ’ নামে একটি লোকাল চ্যানেল আমার সম্পূর্ণ বক্তব্য প্রচার করে লিখেছে, ‘পাঁচবেরিয়ায় পুজোর উদ্বোধনে এসে এই লেখিকার কথা তাক লাগিয়েছে সকলের’। এই বক্তব্যটি অনেককে পাঠিয়ে ছিলাম। সবারই ভাল লেগেছে। ‘কারিগর’ প্রকাশনার কর্ণধার দেবাশীষবাবু লিখেছেন, ‘আপনি এত ভাল বলেন, জানা ছিল না’।
সেদিন বিদ্যাসাগর পুরস্কার প্রাপক ইয়াসিন  পাঠানের সংগে।

    অনেকে আমাকে ফিলিস্তাইন নিয়ে লিখতে বলছেন।আমার ওই  মৃত্যুর মিছিল নিয়ে লিখতে ভাল লাগেনা।রোজ কত শত শিশু ও নিরপরাধ মানুষ এই যুদ্ধে প্রাণ হারাচ্ছে। সন্তান হারা বাবা মায়ের বিলাপ সহ্য করতে পারছি না। আজকের খবর, ১৮ দিন ধরে ইসরাইল ও প্যালেস্তাইনের মধ্যে যে যুদ্ধ চলচ্ছে, তাতে কত শিশু মারা গেছে তার ইয়ত্তা নেই, খবরে জানা যাচ্ছে গতকালের হানায় মৃত ৭০০ জনের মধ্যে ৩০৫ শিশু।

     আমাদের রাজ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালইয়ের হত্যাকাণ্ডে আজ ১২ জনের বিরুদ্ধে চার্জসিট জমা পড়েছে। মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন বার বার উঁকি দিচ্ছে, সন্তানহারা স্বপ্নদীপের বাবা মা ন্যায় বিচার পাবেন তো?  কারণ আমাদের দেশে মামলার রায় বের হতে এত সময় লাগে যে তখন আগুণ স্তিমিত হয়ে যায়,ঘটনাও ইতিহাস ও কালের স্রোতে বিলীন হয়ে যায়।  

     নীচ তলার সব কাজ হয়ে গেছে, নতুন ভাড়াটিয়াও এসে গেছে।  ১,০০০/ টাকা কমেই দিলাম, কারণ আমার বাড়িতে লোক থাকাটা জরুরি। সেই জন্যই ভাড়া দেওয়া।

   রাতে খবর পেলাম মেজ জামাইবাবু মেদিনীপুর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। খোকনকে খবর দিলাম, বিকেলে হাসপাতাল গিয়ে দেখি, কী নোংরা পরিবেশ। দিদিকে ৫০০০/ টাকা দিয়ে ফিরে এলাম।রাতে  খোকনকে (FRKhan)বিস্তারির জানালাম।

     একদিন কথা প্রসঙ্গে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য সুশান্ত চক্রবর্তীকে আমার একটি বই ইংলিশে অনুবাদের কথা বললাম, শুনে উনি বললেন, ‘করা যেতেই পারে, আপনি জলির সঙ্গে কথে বলুন’। আমি তখন এই বিষয়ে ইন্দ্রনীল ও জলির সঙ্গে যা যা আলোচনা হয়েছিল সবই বলি।তখন উনি বললেন, ‘আপনি জলিকে বলবেন, এই বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতে’। জলি সব কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে বলে, ‘এটা আমার কাছে একটা দারুণ উপহার! তুমি আমার কাজটা অনেক সহজ করে দিলে। আমিও কিছুদিন ধরে এই বই অনুবাদের কথাটা বলতে গিয়েও বলে উঠতে পারিনি, এই ভয়ে, যদি মুখের ওপর না করে দেন? যাই হোক, কথাটা ইন্দ্রনীল আচার্য কেও জানালাম। শুনে  উনিও খুশি হলেন। এই বই অনুবাদের বিষয়টি উনিই প্রথম উত্থাপন করেছিলেন। বলে ছিলেন, কাজটা হলে স্টুডেন্টরা উপকৃত হবে।
সৌমনা বিদায়বেলা দেখা করতে এসেছিল।

     সৌমনা ব্যানার্জি ও মিঃ ব্যানার্জির বদলির অর্ডার হয়েছে কুচবিহারে।২/৩ দিনের মধ্যেই চলে যেতে হবে।তাই গতকাল দেখা করার  জন্য আসতে চেয়েছিল, কিন্তু আমাকে তীর্থঙ্কর বাবুর ওখানে যেতে হয়েছিল। তাই আজ অফিস থেকেই এক ফাঁকে এসে দেখা করে গেল।আমার জন্য এনেছিল ডেল কার্নেগী রচনা সমগ্র। সময় কম হলেও ওর মধ্যেই কথা হল, ছবি তোলা হল, মিষ্টিমুখ হল। ইংল্যান্ড থেকে নিয়ে আসা ছোট ছোট কয়েকটা গিফট দিলাম ওর মেয়েদের জন্য। ও চলে যাওয়ার পর মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠল। অনন্যা চলে যাওয়ার  সময় আরও বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম। ওর সঙ্গে অনেক বেশি দিনের সম্পর্ক বলে কষ্টটাও বেশি হয়েছিল।

    সন্ধ্যাবেলা রানী এল মেয়েকে নিয়ে। কিছু পরে সুদীপ এল বিজয়ার প্রণাম করতে। আরও পরে তপস্বিনী এল ওর স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে। তপস্বিনী একজন প্রতিষ্ঠিত নৃত্যশিল্পী। ওর নাচের স্কুলের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি বড় প্রোগ্রামের আয়োজন করতে চলেছে। এই উপলক্ষে  সুভেনিরও প্রকাশ করবে, আমাকে একটি লেখা দিতে হবে। অনুষ্ঠান হবে ৩০ ডিসেম্বর। সময় আছে অনেকটাই, কিন্তু লেখাও আছে অনেক। তবুও আবদার রাখতে একটা লেখা দিতে হবে।

                              ক্রমশ

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

Post a Comment

0 Comments