জ্বলদর্চি

লোকমাতা রানি রাসমণি —৩৯/সুমিত্রা ঘোষ


লোকমাতা রানি রাসমণি —৩৯

সুমিত্রা ঘোষ 

জমিদার বাড়ির  গৃহলক্ষ্মী হয়েও রানি বাপের বাড়ির কথা এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারেনননি। পিতা হরেকৃষ্ণ দাস, পিসিমা এবং দুইদাদার স্নেহছায়ায় বড় হয়ে উঠেছেন যে বালিকা সে হঠাৎ করে বিপুল ঐশ্বর্যের মধ্যে থাকলেও তার শিকড়ের টান ছিল পূণ্যতীর্থ হালিশহরের উপর। সেখানকার প্রতিটি মানুষ রানির একান্ত প্রিয়জন ছিল। হালিশহরের মানুষজন রানির কতখানি প্রিয় ছিল তার একটা উদাহরণ তুলে ধরা হচ্ছে। রানি সদ্য নববধূ বেশে জানবাজারে জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করেছেন। ইতিমধ্যে ঠিক হল রাজকন্দ্র দাস এবং রানি হালিশহরে যাবেন রানির মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে। উভয়ে সেখানে পৌঁছলেন সঙ্গে সঙ্গীসাথী- লেঠেল ইত্যাদিও গেল। তখনকার দিনে রাস্তাঘাট অতি দুর্গম ও ভাস্কর বিপদজনক ছিল। যাহোক সেবারে স্বামী রাজচন্দ্র দাসের সাহচর্যে রানির মায়ের নামে ঘাট তৈরি হয় গঙ্গার গা ঘেঁষে। এর ফলে পাড়ের জমি খুব সামান্য নেওয়া হয়েছিল। এই জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে তখনকার জমিদার অর্থাৎ বাড়ুজ্যে পরিবার তীব্র আপত্তি তোলে। তাদের বক্তব্য পাড় লাগোয়া ঐ জমি জমিদারের এবং জমিদারের জমি দখল করে রানির মায়ের  (রামপ্রিয়ার) স্মৃতিফলক বসানো হয়েছে। জোর গন্ডোগোল শুরু হয় ঐ স্মৃতিফলক বসানো নিয়ে। ইতিমধ্যে ফলক উদ্বোধনের পর রাজচন্দ্র দাস তাঁর কোন এক তালুকে চলে গিয়েছেন ব্যবসাপত্র দেখাশোনার জন্য। 

🍂

বাড়ুজ্যে পরিবার যখন লোকলস্কর সঙ্গে নিয়ে এসে ঐ স্মৃতিফলক রাখা যাবে না বলে। কারণ রানির মায়ের স্মৃতিফলক তৈরি করা হয়েছে দশআনা/ ছয়আনা বাড়ুজ্যে জমিদারিতে — এই নির্মাণ বেআইনি হয়েছে। গণ্ডগোল চরমে পৌঁছানোর সময় রানি বাবা - দাদাদের মাঝখানে এসে বললেন ঘাট তৈরি নিয়ে জমিদারের গন্ডোগোল কর মোটেই শোভা পায় না কারণ জমিদার যখন প্রজাদের ভালমন্দ দেখেন না তাদের অবহেলা করছেন। তাই রানি এগিয়ে এসে স্বামী রাজচন্দ্র দাসকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছেন হালিশহরের কোণা গ্রামের প্রজ দের মঙ্গলের জন্য। কোন ঘাট না থাকায় গঙ্গায় ডুবে মানুষ জন মারা যায়। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটা ঘাট তৈরি হোক, যাতে মানুষ-জন নির্বিঘ্নে স্নানপর্ব সারতে পারে। রানি বলেন মা গঙ্গা কোন জাতবিচার করেন না। তারই পরিপেক্ষিতে রানি স্বামীর সহায়তায় ঘাট বাঁধাই করেছেন যাতে সর্বশ্রেণীর মানুষ  নির্বিচায় হালিশহরের ঐ গঙ্গার ঘাটে ব্যবহার করতে পারে। রানি বলেন নদীর পাড় ঘেঁষে ঘাট বাঁধাই হয়েছে।ঘাট লাগোয়া সমস্ত জমি তথা সম্পত্তি মা গঙ্গার। জমিদারে ক্ষমতা নেই ঘাট বাধাইয়ের বিরোধিতা করে, জমিদার যদি  প্রজাদের কথা ভাবতেন তবে আগেই ব্যবস্থা নিতেন। তিনি প্রজাদের কথা ভাবেন না। প্রজাদের দুঃখে জমিদারের মন কাঁদে না। গঙ্গার ঘাট বাঁধাতে রানির পরিবারকে সাহায্য করেছিলেন হালিশহরের ন্যায়রত্ন - তর্কালঙ্কার মহাশয়। যিনি রানিকে অত্যধিক স্নেহ করতেন এবং রানির পরিবারের ভাল মন্দও দেখতেন।

কোনা গ্রামে রামপ্রিয়ার স্মৃতিতে ঘাট হয়ে গেল। রাজচন্দ্র দাস তালুকে থাকলেন । রানি জানবাজার ফিরে গেলেন, ইতিমধ্যে বাড়ুজ্যে জমিদার রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বেলেঘাটার আড়তে আগুন ধরিয়ে দেয়। সর্বস্ব ছাই হয়ে যায়। রাজচন্দ্র দাস যখন খবর পান তখন সব ছাই । রাধাকান্ত দেব বাহাদুর মাড়বাড়িতে আসেন বাড়ুজ্যের জমিদারের হয়ে ওকালতি করতেআসেন। কেন হালিশহরে বাড়ুজ্যেদের জমিদারির জমিতে ঘাট বাঁধানো হল?


 

Post a Comment

0 Comments