জ্বলদর্চি

যেতে যেতে পথে /রোশেনারা খান /পর্ব ১১৫

ড্রাডেল ডোর। প্রাকৃতিক এই আর্চটি দেখতে বছরে৫০০,০০০ স্টুরিস্ট আসেন।

যেতে যেতে পথে
রোশেনারা খান
পর্ব ১০১৫

এরা এত দ্রুত ও বারে বারে মত বদলায় যে আমাদের পাল্লা দেওয়া মুশকিল হয়ে উঠছে। রানীর মেয়ের অন্নপ্রাশন নিয়ে একবার বলছে পাপ, একবার বলছে, ছোট করে করব।কথা হয়েছিল ৩০ জুলাই ওরা দীপকে নিতে এয়ারপোর্ট গাড়ি পাঠাবে ওই দিনই মিঠির অন্নপ্রাশন হবে ।সেটা ক্যানসেল করলে, দীপকে ওদের বাড়ি চলে যেতে বলি। রানীর খুব মনখারাপ। এরা নিজেরাই ঠিক করতে পারেনা কোন রীতিটা মেনে চলবে। মানলাম ইসলাম ধর্মে অন্নপ্রাশনের উল্লেখ নেই।তাতে কী? বাংলার সংস্কৃতি মেনে এটা করা যেতেই পারে। মুসলিমদের ‘আকিকা’ হয়। সেটা হল প্রাণের পরিবর্তে প্রাণ উৎস্বর্গ করে নবজাতকের নামকরণের অনুষ্ঠান করা। এটা যে কোন বয়সে করা যায়।তবে এখানেও পুত্র সন্তানকে এগিয়ে রাখা হয়েছে, পুত্রের ক্ষেত্রে জোড়া খাসি উৎস্বর্গ করতে হবে, কন্যা হলে একটাতেই হবে।  

     আজ (৯ জুলাই) খুব কাছের কয়েকজনকে ডেকে আমাদের বাড়িতে মিঠির মুখে ভাত দিলাম। চন্দ্রিমা, শিবানীদি, মাসতুতো বোন আজরা, মাসির বৌমা মিতু এসেছিল।মিলি আসতে পারেনি। আর ওদের বাড়ি থেকে মিঠির ঠাকুমা, তাঁর মা,  মিঠির জ্যেঠিমা এসেছিলেন, আর মিঠির পাপা তো সারাক্ষণ মেয়েকে কোলে নিয়ে  থাকল। আমি ভাবছিলাম, আমার মেয়ে জামাই নাতনি কেউ উপস্থিত নেই। ওদের টালবাহানার জন্য দীপও নেই।

    আজ আবার আমার সম্রাটের নেমপ্লেটটি সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে বসানো হল।নাজিম(ভাগ্না) এসেছিল, সাহজামাল মিস্ত্রী মেটিরিয়ালস পাঠিয়েছিল।নাজিম হাত দিয়ে আগাছা সরিয়ে যতটা সম্ভব পরিস্কার করতে তবেই কাজ করা যায়।পরিস্কার  করার লোক পাওয়া গেলে, কয়েকমাস অন্তর করানো যায়। কিন্তু লোক পাচ্ছি না।কবরখানায় সবাই কাজ করতে চায় না, ভয় পায়।
বাথসিটির ২,০০০ বছর পূর্বের স্নানাগার।

     সামনের রবিবার ১৬ জুলাই সকালে আমাদের ফ্লাইট। ১৫ জুলাই দুপুরে কলকাতা রওনা হব। শাহবাজ ১৪ জুলাই সন্ধ্যায়  ‘লি্টিল সিস্টার’ রেস্টুরেন্টে মিঠির মুখেভাতের পার্টি রেখেছে। ১৩ জুলাই হঠাৎ সাহজামাল এসে বললেন ১৫ তাং কলকাতার ফ্ল্যাটটা রেজিস্ট্রি হবে। তাই আমাদের সকালেই রওনা হতে হবে। যথারীতি ১৪ জুলাই রাতে মুখেভাত এর অনুষ্ঠান হল, আজ পর্যন্ত ওরা সোনা বা রূপোর কোনো কিছুই নাতনিকে দেয়নি(হয়ত মেয়ে বলেই)। তবে আমাদের তরফ থেকে সোনার চেন, বালা, আংটি, কানের টপ, রুপোর বাটি, চামচ, হাতের ও পায়ের বালা, কোমরের বিছে সবই পেয়েছে।

🍂

     অনুষ্ঠান থেকে ফিরতে রাত হয়েছিল। শরীর আর চলছে না। এই অবস্থায় তাড়াহুড়ো করে সকালে রওনা হলাম। মিনিট ১০ পরেই সাজামালের ফোন, ‘ভাবি,  আধার কার্ড, প্যান কার্ড নিয়েছেন? ওগুলো তো লাগবে। একরাশ বিরক্তি নিয়ে আবার ব্যাক করলাম। সব গুছিয়ে রেখে বেরিয়ে ছিলাম। আলমারি খুলে আবার বন্ধ করলাম, কোথায় কী রাখলাম, জানিনা। রেজিস্ট্রি অফিসে এসে সই করার সময় দেখি সাহাবাজের নামে রেজিস্ট্রি না করে সাহজামাল নিজের নামে রেজিস্ট্রি করাল। সিনক্রিয়েট করতে পারলাম না।সই করে দিলাম, কোন টাকা দিল না। রাতে ওই ফ্ল্যাটে থেকে সকালে ওদের ড্রাইভার এয়ারপোর্টে  পৌঁছে দিয়ে গেল।দিল্লি পৌঁছে ২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হল। হিথরোর ফ্লাইট ৩ টে ১০ মিনিটে, অ্যানাউন্স শুনলাম পৌছাতে সময় লাগবে ৯ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। উইন্ডো সাইড সীট নিয়েছি। অনেকটা সময় লাগল। হিথরোতে ল্যান্ড করল ভারতীয় সময়  রাত ১২ টা ৩০  শে। ইমিগ্রেশনে প্রায় ৫,০০০ মানুষের লাইন। অন্তত আমার তাই মনে হল। ৩ টেতে ট্যাক্সিতে উঠলাম। চেলটেনহা্ম(মেয়ের বাড়ি) পৌছাতে সাড়ে চারটে বেজে গেল।মানে আমাদের দেশে তখন ভোর। নাতনি ঘুমিয়ে পড়েছে। স্নান খাওয়া সেরে ৫ টা ৪৫ শে বিছানায় গেলাম।

    সকালে দেখলাম ঝকঝকে রোদ উঠেছে। বাবলি বেরিয়ে গেল, দীপের আজ  অফ-ডে। জারার এখন টানা ছুটি। সেপ্টেম্বরের ফাস্ট উইকে স্কুল খুলবে। ঘর  ছেড়ে এসে মনে আনন্দ নেই। সম্রাট সঙ্গে থাকলে কিছুটা ভাল লাগত। বাড়িতে কাজ হচ্ছে। ওরা বেরিয়ে যায়, মিস্ত্রীদের কাছে চাবি থাকে, লক খুলে ওরা ওদের কাজ করে আবার লক করে চলে যায়।

     খেয়ে শুয়েই দিনগুলো কাটছে। নটিংহামে যেমন একা একা বেরিয়ে  পড়তাম, এখানে সেটা পারছিনা। মিস্ত্রীরা কাজ করছে, জারাকে একা রেখে কী করে যাই? এভাবেই দিন কাটতে লাগল। দীপ সাংসারিক কাজে বাবলিকে যতটা সম্ভব সাহায্য করে, মেয়েটা আমার সময়ই পায়না। এখন এখানে দিন অনেক বড়। ওরা ফিরে এলে  এক একদিন শহরের মধ্যেই বেড়াতে বেরনো হয়। ৪/৫ মিনিট  গেলেই পাহাড়, জঙ্গল, সুন্দর পার্ক।

      একদিন সুইন্ডন যাওয়া হল। ওখানে কিছু শপিং করলাম। এক সময়ের রেল স্টেশন এখন শপিংমল হলেও সুন্দর করে রেখে দেওয়া হয়েছে ট্রেনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। এক মেঘলা দিনে পাহাড়ে হাঁটার জন্য চারজনে বেরিয়েছিলাম। অধ্যাপক চিত্ত পাণ্ডা একটা মিউজিয়ামের কথা  বলেছিলেন, আমার প্রকৃতির কোলে বেড়াতে বেশি ভাল লাগে।তবে মিউজিয়ামে যাওয়ারও ইচ্ছে রয়েছে।

  আমার আসার আগেই দীপ কর্ণওয়ালে ৫/৬ দিনের জন্য কটেজ বুক করে রেখেছিল। ৩০ জুলাই আমরা সকালের দিকে রওনা হয়ে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে   পৌঁছে গেলাম সমুদ্রের ধারে একটি বিচে। এক সময় এই স্থানটি ‘লু বন্দর’ নামে পরিচিত ছিল। এখনও লু ফিশিং টাউন হিসেবে পরিচিত। দুটি নদী লু ইস্ট, লু ওয়েস্ট এখানে এসে আটলান্টিকে মিশেছে। আমাদের কটেজ মেলনড্রীথ বিচের পাড়ে।  কটেজের জানালা দিয়ে সমুদ্র, পাহাড় সবই দেখা যাচ্ছে। পরদিন দু’ঘণ্টা জার্নি করে আমরা যেখানে পৌঁছালাম এই জায়গাটিকে বলা হয় পৃথিবীর শেষ সীমানা।সামনে  অপার আটলান্টিক, ও প্রান্তে আমেরিকা মহাদেশ। এখানে কোন বিচ নেই। এখান থেকে একটি বিচের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। মেঘলা আকাশ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে।গাড়ি থেকে নেমে বিচের দিকে হাঁটা দিলাম। এই বিচটি বালির, স্নানের জন্য ভাল। দীপ ও জারাকে জলে নামতে দেখে আমারও ইচ্ছে হল। জিন্সের নিচটা ভাঁজ করে আমিও ঢেউয়ের সামনে দাঁড়ালাম। বিচ থেকে ফেরার সময় উঁচুতে উঠতে খুব কষ্ট হল।

     আজ সকাল থেকেই ওয়েদার খারাপ, বিচে একটাও মানুষ নেই। কাছাকাছি আরও কয়েকটা বিচে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হল না। দুপুরে স্নানের আগে আমি আর বাবলি বিচে গেলাম। আমি জলে নামলেও বাবলি নামল না। সারাটাদিন কটেজে বসে আড্ডা দিয়ে কাটালাম।

    আমরা আগেই কটেজ ছেড়ে বেরিয়ে গেলাম এখানে আর ফিরব না বলে।                      প্রায় দু’ঘণ্টা ড্রাইভ করার পর আমরা সেই বিচের কাছে পৌঁছালাম যেখানে সমুদ্রের বুকে প্রাকৃতিক আর্চটি রয়েছে। কারপার্ক থেকে অনেকখানি ঢালুপথ হেঁটে সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে দাঁড়ালাম। এখান থেকে নিচে বিচের মানুষগুলোকে লিলিপুট মনে হচ্ছে।তবুও মাটিতে কাঠের পাটাতন গেঁথে তৈরি করা আঁকাবাঁকা সিঁড়ি দিয়ে ২০০ ফিট নিচে নেমে জলের কাছে গেলাম। ওঠার সময় খুব কষ্ট হল। আজকের রাতের জন্য অন্য একটি শহরে কটেজ বুক ছিল। এখানে রাত্রি যাপনের পর সকালে দীপ বাড়ির উদ্দেশ্যে গাড়ি ছোটাল।

     আজ রবিবার, কাছে পিঠে কোথাও যাওয়াই যেত, কিন্তু ৩ টে ৩০ মিনিটে(ভারতিয় সময় ৭ টা) অনলাইনে আমার একটি প্রোগ্রাম থাকায় সম্ভব হয়নি। সুদীপ্ত দাসগুপ্তের ‘ফোরথ পিলার’ এ অংশগ্রহণ করার জন্য যোগাযোগ  করেছিলেন। বিষয় ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ও মুসলিম সমাজ’।আমার সঙ্গে ছিলেন, নূরে আলম চৌধুরীর কন্যা ডঃ সাবিনা চৌধুরী ও শিক্ষিকা আফরোজা খাতুন। ওঁরা আমার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেছেন।

     এখানে আসার কয়েকদিন আগে আমার পরিচিত একজন নিরুপায় হয়ে বলেছিল তাকে একটা যে কোন ধরণের কাজের ব্যবস্থা করে দিতে হবে । ভদ্র বাড়ির শিক্ষিত ছেলে। লক ডাউনের পর আর কিছু করে উঠতে পারেনি। আমি ২/১ জনকে বলেছিলাম, তার মধ্যে সাহবাজও ছিল। শেষ পর্যন্ত ওর গাড়ির সোরুমে সাহবাজ কাজ দিয়েছে, ৮০০০/= মাইনে আর দুপুরের একটা মিল। ও যে অবস্থায় ছিল। এটাই ওর কাছে অনেক।
Lands end

     আজ রবিবার, আমি আর দীপ ‘স্টোনহেঞ্জ’ দেখতে বেরিয়ে ১ ঘণ্টা ৪৫  মিনিটে যেখানে পৌঁছালাম, সেখানে মিউজিয়াম ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে।  স্টোনহেঞ্জ দেখতে পেলাম না।সেই স্পটে  পৌঁছানোর জন্য টিকিট কেটে বাসে চড়তে হল। অনেকে হেঁটেও যাচ্ছেন। স্টোনহেঞ্জ এর চারপাশ গোল করে ঘেরা রয়েছে।  পাথরগুলির চারিদিকটা ঘুরে দেখতে দেখতে অনেক কিছু ভাবলাম। কিছু ছবি তুললাম, আবার বাসে চড়ে মিউজিয়ামে এলাম। অনেক কিছু দেখলাম ও জানলাম। এখান থেকে অনলাইনে টিকিট করে আমরা বাথ সিটি পৌঁছালাম। বাথ খুব প্রাচীন শহর। চারিদিকে রোমান স্থ্যাপত্যগুলি তাকিয়ে দেখার মত। আমরা এসেছি বাথ সিটির ২০০০ বছরের পুরনো স্নানাগার ও মিউজিয়াম দেখার জন্য। যে মহলে স্নানাগারটি রয়েছে, সেটায় এখন মিউজিয়াম। স্নানাগারে জল আসছে একটি প্রাকৃতিক উষ্ণ প্রস্রবণ থেকে। অনেক কিছুর সঙ্গে তার উৎসমুখটিও দেখলাম।
বাথসাটি

    যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র স্বপ্নদীপের মৃত্যু নিয়ে সংবাদ মাধ্যামগুলি তোলপাড় করছে। ঘটনাটি কয়েকদিন আগের। ভাবতে অবাক লাগছে সদ্য গ্রাম থেকে আসা নতুন ছাত্রটিকে র‍্যাগিং এর কতগুলো ছেলে মিলে খুন করে ফেলল! এতে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের গাফিলতি রয়েছে। পাশ করে বেরিয়ে যাওয়া ছেলেরা হস্টেলে যায়গা পায় কী করে? কেন নতুন ছাত্রদের নিরাপত্যার বিশেষ ব্যবস্থা করা হয় না। অপরাধিরা শাস্তি পাবে কি না জানি না, পেলেই বা কী? বাবা মা তো তাঁদের সন্তানকে ফিরে পাবেন না। তবুও অপরাধিদের এমন শাস্তি হওয়া  উচিত যে ভবিষ্যতে এই ধরণের বিকৃত আচরণ করার কথা ভাবতেও ভয় পাবে।

     আজ অক্সফোর্ড গেছলাম, অনেক কিছুই দেখলাম।শহর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অনেকগুলিই কলেজ, লাইব্রেরি ও মিউজিয়াম। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে আনুমানিক ১১০০ খৃষ্টাব্দের শেষে, বা ১২০০ খৃষ্টাব্দের শুরুতে। তখন  এটি ছিল শ্বেতাঙ্গ পাদ্রীদের কলেজ। অন্যদের এখানে প্রবেশাধিকার ছিল না। সম্ভবত ১৫৫৫ খৃষ্টাব্দে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিতি লাভ করে। মহিলারা এখানে প্রবেশাধিকার পায় অনেক পরে। বর্তমানে অক্সফোর্ড বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়।

     ২৬ আগস্ট আমরা সবাই মিলে নটিংহাম হয়ে ডার্বি গেছলাম। ওখানে দুদিন ধরে কলকাতা মেডিকেল কলেজের যারা স্টুডেন্ট ছিলেন তাদের ফ্যামিলির গেট টুগেদার ছিল। থাকা খাওয়ার সঙ্গে নাচ, গান, নাটক, কুইজ ইত্যাদির প্রতিযোগিতাও ছিল।এসবের জন্য জন প্রতি মোটাটাকা চাঁদা দিতে হয়েছে।মাত্র দুদিন আগে বাবলিকে নাচের জন্য অনুরোধ করা হয়। যে মেয়েটির নাচের কথাছিল, সে নাটকে অভিনয় করছে বলে নাচ করবে না। এই অল্প সময়ের মধ্যে বাবলি অনলাইনে প্র্যাকটিস করেছে। চার জনের গ্রুপ, সবার শেষে ওর নাচ ছিল। তিনটি  মেয়ে গান গাইল, ও নাচল। চারজন বিচারক ছিলেন। তাদের একজন ও অডিয়েন্স থেকে দুজন উঠে এসে নাচে যোগ দিল। ব্যালট বক্সের মাধ্যমে বিজেতারা নির্বাচিত হবেন। আমরা সবাই ভোট দিয়ে বেরিয়ে এলাম। রেজাল্ট রাতে জানা যাবে। সকালে দীপ বলল, বাবলিদের গ্রুপ ফাস্ট হয়েছে।

     আগস্ট মাসও শেষ হয়ে গেল। আজ লন্ডন গেছলাম কোহিনূর মণি দেখতে। মণিটি রাখা আছে ‘The Crown Jewels’ এখানেও লম্বা লাইন। আমি আর বাবলি ভিতরে প্রবেশ করলাম। একসাথে এত হিরে জহরত দেখে আমার তো ভিরমি খাওয়ার জোগাড়! দেখলাম কোহিনূর মণি রানীর মুকুটে নয় , বাহুবন্ধে  আছে। এত বড় বড় সোনার পাত্র দেখা দূরে থাক, কানেও শুনিনি। ওখান থেকে বের হয়ে আমরা টেমসের টাওয়ার ব্রিজের ওপর একপাক দিয়ে টেমসের পাড়ে বসে লাঞ্চ করলাম। তারপর ক্যাব বুক করা হল, কারণ আমরা ট্রেনে লন্ডন এসেছি।
চেলটেনহাম

     দেশে ফেরার দিন এসেই গেল। আগে থেকেই গোছগাছ শুরু করেছিলাম। প্রতিবারের মত এবারেও জিনিস বেড়েছে, একটা লাগেজ বেড়েছে। একা যেতে হবে, এটাই চিন্তার। বাবলি ও দীপ এয়ারপোর্টে এসেছিল। লাইন দিয়ে বোডিঙ পাশ নেওয়ার পর হুইল চেয়ারে আমি ভিতরে চলে গেলাম। ওরা ওখানেই থেমে গেল। চোখের জল লুকোতে মুখটা ফিরিয়ে নিয়েছিলাম। চেক ইনের পর বসে বসে ভাবছিলাম, ওদের সঙ্গে আর দেখা হবে কি? ফ্লাইটে সীটে বসে ফোন করে বাবলিদের জানিয়ে দিলাম। মনটা ভীষণ ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে। বাইরে তাকিয়ে বার বার চোখ মুছছিলাম.১১ টা ৩০ শে ফ্লাইট উড়ান দিল। ওয়েদার খারাপ  থাকায় দিল্লিতে ল্যান্ড করতে দেরি হল। এখানে আবার চেকইন হল। এসব ঝামেলা আমি নিতে পারব না বলেই হুইল চেয়ার নিয়েছি। ওর উপস্থিতিতেই ওয়াস রুমে গেলাম, তারপর ছেলেটি চা, কফির জন্য আমাকে নিয়ে গেল। এককাপ কফি ও একটা ক্রসার দাম ৫৪৫ টাকা শুনে আমার আর খেতে ইচ্ছে হল না। ভাবছি কী খাওয়া যায়? বাবলি ফোন করে জানতে চাইল আমি কিছু খেয়েছি কি না, ওকে বললাম ৫৪৫ টাকার কথা। ও বলল, এয়ারপোর্টে এইরকমই দাম মা। তা বলে না খেয়ে থাকবে? 
অক্সফোর্ড

   ওখানেও কয়েকটা স্টল ছিল।সেখানেই মুখরোচকের একটা প্যাকেট ১০৫ টাকা, এককাপ কফি ১৯০ টাকা দিয়ে নিলাম। রানী ও ছবিকে ফোন করে বললাম দমদম এয়ারপোর্টে সময় মত গাড়ি পাঠায় যেন। ঘোষণা শুনে সবাই লাইনে   দাঁড়াচ্ছেন দেখে পাশ দিয়ে এগিয়ে গিয়ে বললাম, আমি হুইল চেয়ারের প্যাসেঞ্জার, আমাকে সামনে ডেকে নিলেন। ফ্লাইটে চড়ে নিজের সীট খুঁজে উইন্ডো সাইডে বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম, আর চিন্তা নেই। ফ্লাইট সন্ধ্যা ৬ টায় ল্যান্ড করল। ফ্লাইটেও সহযাত্রীদের থেকে সাহায্য পেয়েছি। অসমীয়া এক ভদ্রলোক আমার কেবিন লাগেজ ওপর থেকে নামিয়ে বাইরে পৌঁছে দিলেন। হুইল চেয়ার পেয়ে গেলাম।ও লাগেজ নামিয়ে বাইরে নিয়ে এল। তানি  এসেছে, ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে এলে হুইল চেয়ারের ছেলেটিকে ২০০ টাকা বকশিস দিয়ে বিদায় করলাম। দিল্লিতে এদের ৫০০ টাকা না দিলে মন ওঠে না। এটাই আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের দস্তুর, উপরি টাকা না পেলে কেউ কাজ করবে না। বাবলিকে ফোন করে জানিয়ে দিলাম। বাড়ি  পৌঁছালাম ৯ টা ৪০ শে। এতক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসার ফলে পা ফুলে ঢোল। স্নান  খাওয়া করে বিছানায় গেলাম যখন ঘড়ির কাঁটা ১১ ছুঁই ছুঁই।

                        ক্রমশ

Post a Comment

0 Comments