জ্বলদর্চি

'কীলক লিপিতে ভূমি ও ভূমা' কাব্যগ্রন্থটির পাঠ প্রতিক্রিয়া' /সুবর্ণা নাগ

'কীলক লিপিতে ভূমি ও ভূমা' কাব্যগ্রন্থটির পাঠ প্রতিক্রিয়া'

 সুবর্ণা নাগ

আমি কলম নিয়ে বসে আছি প্রায় আধ ঘন্টা। কি ভাবে শুরু করব ভাবতে ভাবতে , ভাবলাম 'সত্যি' দিয়ে শুরু করি। বিশিষ্ট কবি ও প্রাবন্ধিক শ্রী ঋত্বিক ত্রিপাঠী মহাশয়ের লেখা ও আনন্দ পাবলিশার্স দ্বারা সদ্য প্রকাশিত 'কীলক লিপিতে ভূমি ও ভূমা' কাব্যগ্রন্থের পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখবে কে? না আমি। এই সাহিত্য জগতে সদ্যই যার পদার্পণ এবং যার লেখা ও শেখার এখনও অনেক বাকি। কিন্তু কবি শ্রী ঋত্বিক ত্রিপাঠি মহাশয়ের প্রতিটি লেখা (সে অনলাইন মাধ্যম হোক বা ম্যাগাজিন থেকে বা তাঁর লেখা বই পড়ে) চেটেপুটে পড়ি, বারবার পড়ি কারণ ওনার লেখার একটা অনবদ্য স্টাইল বা ঘরানা আছে আর আছে সূর্যালোকের মতো স্পষ্ট  অভিব্যক্তি। হেঁয়ালির প্রসাধন নেই তাঁর বক্তব্যে। 'কীলক লিপিতে ভূমি ও ভূমা'ও ব্যতিক্রম নয়। আমি তাঁর গুণমুগ্ধ পাঠক বা একলব্যের মতো শিষ্যও হতে পারি। তাই পাঠ প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যদি পাঠক হিসেবে আমার তত্ত্ব অনুধাবনে কোনো ভুল থেকে থাকে, গুরু নিশ্চয়ই তা মার্জনা ও সংশোধন করে দেবেন।

প্রথমে বলি কাব্যগ্রন্থের নামকরণের স্বকীয়তা নিয়ে- নামকরণে প্রায় ৩২০০ বছর আগে সুমেরিয়দের আবিষ্কৃত কীলক লিপি বা কিউনিফর্মের ব্যবহার কবির আবেদনকে একটা অন্য সারিতে দাঁড় করিয়েছে। ভূমি থেকে ভূমা অর্থাৎ সর্বব্যাপী পুরুষ বা এক থেকে বহুত্বে পৌঁছানোর যে গভীর দর্শন তা যেন ভোরের কুয়াশার মতো আধো স্পষ্ট এক মায়ার টান। উৎসুক পাঠককে পাতা ওল্টাতে বাধ্য করে এমন এক প্রচ্ছদও বটে তার।  আর রত্নখচিত গুহায় যেমন হারিয়ে যায় লোভাতুর মন, চেনা বা অচেনা কবি ঋত্বিক ত্রিপাঠী-র কবিতার কাব্যগ্রন্থেও হারিয়ে যাবে সাহিত্য পিপাসু হৃদয়, এ আমার বিশ্বাস। জানি না, আমি পাঠক হিসেবে কতটা কবির চিন্তনের কাছাকাছি পৌঁছতে পেরেছি, তবু কিছু ভালো লাগা ব্যক্ত করতে চাই আর কিছু প্রশ্ন রেখে যেতে চাই কবির কাছে।

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

কবির কবিতায় কবিতায় সমাজ থেকে মনন থেকে প্রতিবাদ বা কখনো গভীর দর্শন বা সূক্ষ্ম অনুভূতির চড়াই উৎরাই, গঠন- ভাঙ্গন, বৃত্ত বা পিরামিড বা জীবন- মৃত্যুর স্পর্শ রয়েছে অবিরত। কবি যা ভেবেছেন তার চেয়ে ভাবিয়েছেন বহুগুণ। আমার ক্ষেত্রে এক একটি কবিতা পড়তে হয়েছে বেশ কয়েকবার, আর অন্যমনস্ক হয়েছি বারবার।

"কীভাবে টুকে নিতে হয় বেদবাক্যসম বিজ্ঞাপন.....
স্রোত অনিবার্য "- 'ব্যাকরণ' কবিতার এই পংক্তি যেন মস্তিষ্কে টোকা দিয়ে  গা-ভাসানো গণতন্ত্রের কথা বলে।আবার কবি লিখছেন "মানুষের কথা মানুষকেই বলতে হয়, বেশি করে।" মনুষত্বের দায়ভারের খাতিরে এ এক বাণী যেন! মুগ্ধ হয়েছি সরল ভাষার নদীর গভীরতা দেখে।" বস্তুত, সময়ের দ্বিধা নিয়েই মানুষ থেকেছে মানুষের পাশে।" সত্যিই তো পাশে থাকা না-থাকার দ্বন্দ্ব তৈরী করে দেয় সময়। সহস্র পরিস্থিতিকে কবি এক পংক্তিতে তুলে ধরলেন যেন সহস্র মানুষের এক পতাকার মতো। 'মানুষের কথা' সার্থক হলো। 'ডিসেম্বর' কবিতা শুরু হচ্ছে অমোঘ তবুও লোক চক্ষুর আড়ালে থাকা একটা সত্য দিয়ে "একক লুকিয়ে দশকে, দশক ঢুকে পড়ে শতকে...." আমরা'র মধ্যে আমি থাকি, শত'র মধ্যে আমিও এক, তুমিও এক। তাই আরও স্পষ্ট করে লিখছেন " প্রত্যেকেরই স্বতন্ত্র একক ভাব"। কুর্নিশ জানাই কবিকে।

তবু এই পাঠকের অনেক গুলি অবুঝ প্রশ্ন আছে, তার মধ্যে একটি-  "সূচিপত্রে লেখা থাকবে অনিবার্য প্রত্যর্পন, বিনাশ!" -কেন শেষে বিনাশই অনিবার্য? না কি পাঠক আমি ভুল সূত্র প্রয়োগ করছি? 

এই 'কীলক লিপিতে ভূমি ও ভূমা' কাব্যগ্রন্থ নিয়ে আলোচনায় কয়েকটা সন্ধ্যা পার হতে পারে অনায়াসে। কবির এই আয়াস বিহীন, সত্য ও প্রায় দ্বিধাহীন লেখনী সমৃদ্ধ , সুন্দর শব্দ চয়ন ও গভীর মনস্তত্ব ও চোখের আরাম প্রচ্ছদ খানি নিয়ে এই কাব্যগ্রন্থটি শোভা পাক কবিতা প্রেমী বাঙালিদের বইয়ের তাকে আর অন্তরের মণিকোঠায়, এই শুভেচ্ছা রইলো। 

🍂

Post a Comment

0 Comments