জ্বলদর্চি

'কীলক লিপিতে ভূমি ও ভূমা' নিয়ে আলোচনা করলেন অনামিকা তেওয়ারী

'কীলক লিপিতে ভূমি ও ভূমা' নিয়ে আলোচনা করলেন অনামিকা তেওয়ারী 

"কীলক লিপিতে ভূমি ও ভূমা"  নামটির মধ্যেই বিরাজমান অদ্ভুত এক আকর্ষণ! নামকরণের সাথে সাযুজ্য রেখেই শিল্পী দেবাশিস সাহা নির্মাণ করেছেন বইটি'র প্রচ্ছদ। এক ঝলক দেখলেই মনে হয় ঠিক যেন প্রাচীন কোনো লিপির মুখোমুখি পাঠক! মনে হবারই কথা, কারণ কীলক বা ছোট্ট তীরের মতো দেখতে যে প্রাচীন লিপির আবিষ্কারক ছিলেন সুমেরীয়রা, তার নাম কিউনিফর্ম বা কীলক লিপি। বিশিষ্ট কবি এবং সম্পাদক ঋত্বিক ত্রিপাঠী, তাঁর কাব্যগ্রন্থের এরূপ নামকরণের মাধ্যমে পাঠকের কৌতূহলী দৃষ্টি আকর্ষণের প্রাথমিক এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পন্ন করেছেন। কবি হিসেবে এখানেই তাঁর বিশেষত্ব। তাঁর কলম কর্ষণ অযোগ্য ভূমি ও ভূমাকেও জাগিয়ে তুলতে পারে। 

কবি বইটি উৎসর্গ করেছেন প্রখ্যাত কবি এবং কথাসাহিত্যিক অনিতা অগ্নিহোত্রীকে। শুধু তাই নয় যদি খুব একটা ভুল না করে থাকি, তাহলে তাঁর কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা "আত্মস্বীকার" কবি অনিতা অগ্নিহোত্রীকে স্মরণে রেখেই রচিত। এই ভাবনা সত্যিই অনুসরণযোগ্য।

বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇

কবিতাগুলি পড়তে পড়তে ধীরে ধীরে পাঠকের মনে ধরা দিতে থাকে কবি মনের অনন্যসাধারণ ভাবনার আত্মপ্রকাশ সমূহ। কোথাও তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন নির্মোহ জীবনের চরম সত্য, কোথাও বা ফিরতে চেয়েছেন স্মৃতির বরফে অবিকৃত অতীতের কাছে। ঋণী থাকতে চেয়েছেন সেইসব স্মৃতির কাছে। জীবনের মিলে যাওয়া বা না মেলা হিসেবের বোঝা কাঁধে নিয়েই যাত্রা করতে চেয়েছেন অনন্তের পথে। কোথাও বা ভাবনার ডানায় ভর করে তিনি রচিত করতে চেয়েছেন  এমন এক বৃত্ত, যেখানে আত্মপরিচয়, দেশ, সীমার গন্ডি ছাপিয়ে সমস্ত পৃথিবী একত্রিত হতে পারে একটি মাত্র কেন্দ্রে। তিনি কবি, তাই কোথাও তাঁর কলম যেমন সৃষ্টির সুখে মেতে থেকেছে, তেমনই আবার গর্জে উঠেছে নীরব অথচ জোরালো প্রতিবাদ হয়ে। কবি মনের এই স্বাধীনতা তো অপার! এই স্বাধীনতা রয়েছে বলেই কবিতার মধ্যেই তিনি প্রকাশ করেছেন জীবন ও জগতের নিগূঢ় উপলব্ধি! আত্মকেন্দ্রিকতার ঊর্ধ্বে  সন্ধান দিয়েছেন অসীম এক যাত্রাপথের, যেখানে অনাদিকালের অভিযাত্রী হয়ে জেগে রয়েছে তাঁর কবি সত্তা। সেখানে প্রতিনিয়ত আবর্তিত হয়ে চলেছে তাঁর সাহিত্য চেতনা। 

বইটি পড়তে গিয়ে চোখে পড়ে ত্রিভূজ, পাললিক, তিল প্রভৃতি কয়েকটি শব্দের একাধিক প্রয়োগ। কিন্তু ভালো করে অনুধাবন করার চেষ্টা করলে বোঝা যায়, বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করছে শব্দগুলি, ফলে বহু ব্যবহার সত্ত্বেও কখনোই একঘেয়ে শোনায় না। 

সাধারণ পাঠকের কাছে হয়তো কয়েকটি কবিতার ভাব সম্পদ অনুধাবন করা দুষ্কর হয়ে উঠতে পারে। তাদের জন্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি উক্তি স্মরণ করা যেতে পারে, " কিছু একটা বোঝার জন্য কেউ কবিতা লেখে না। এজন্য কবিতা পড়ে কেউ যখন বলে বুঝলাম না, তখন বিষম মুশকিলে পড়তে হয়। কেউ যদি ফুলের গন্ধ শুঁকে বলে "কিছু বুঝলাম না" তাকে এই কথা বলতে হয় এটাতে বোঝার কিছু নেই। এ যে কেবল গন্ধ।" না বোঝার মধ্যেই বুঝতে পারার যে ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে সেটাই এই বইটির অন্তরাত্মা, যা কীলক লিপির মতোই রহস্যময়। 

🍂

Post a Comment

0 Comments