জ্বলদর্চি

বিশ্ব স্বাস্থ্য ও নিরাপদ দিবস (২৮শে এপ্রিল)/দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

বিশ্ব স্বাস্থ্য ও নিরাপদ দিবস (২৮শে এপ্রিল)
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

আজ ২৮শে এপ্রিল "বিশ্ব পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপদ দিবস"। পেশাগত স্বাস্থ্য হলো, স্বাস্থ্য থেকে প্রস্থান, রোধ, ঝুঁকি ও নিয়ন্ত্রন।মানুষের সাথে কাজের অভিযোজন, এছাড়াও সমস্ত পেশার কর্মীদের শারীরিক-মানসিক এবং সামাজিক সুস্থতার সর্বোচ্চ স্তরের প্রচার এবং রক্ষণাবেক্ষণ।

পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপদ অর্থাৎ নিরাপত্তা বলতে বোঝায়, কর্মক্ষেত্রে বা সংস্থার সকল বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংমিশন ক্ষেত্র, যা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত সকলের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য কাজ করে।

বিশ্ব পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপদ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো,কর্ম ক্ষেত্রে অর্থাৎ পেশার জন্য প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন করার সময় মানুষের নিরাপত্তা,স্বাস্থ্য ও কল্যাণের বিষয়টি বিশেষভাবে মাথায় রেখে চলা। 

মূল কথা হলো, পেশাগত কর্মের স্থানে ব্যক্তি মানুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিরাপত্তা প্রদান করা।এমন অনেক কাজ আছে, যা থেকে মানুষ বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং হয়ও। এই রোগ থেকে নিরাপত্তা স্থির করাই হলো পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপদ দিবসের লক্ষ্য।

ও,এস,এইচ(পেশাগত নিরাপত্তা স্বাস্থ্য) সেই সমস্ত সাধারণ জনগণকে রক্ষা করে, যারা পেশাগত পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। জাতিসংঘের অফিসিয়েল হিসেব অনুযায়ী WHO/ILO জয়েন্ট এস্টিমেট অফ দ্য ওয়ার্ক রিলেটেড বার্ডেন অফ ডিসিস এন্ড ইনজুরিতে প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষ পেশাগত ঝুঁকির কারণে মৃত্যুবরণ করে। বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষেত্র সম্পর্কিত দুর্ঘটনা বা রোগের ফলে বার্ষিক ২.৭৮ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারা যায়। ভাবতে অবাক লাগে যে,হিসেব অনুযায়ী প্রতি ১৫ সেকেন্ডে পেশাগত কারণে একজন করে মানুষ মারা যায়। এছাড়াও বার্ষিক অতিরিক্ত ৩৭৪ মিলিয়ন মানুষের মরণাত্মক কাজ সম্পর্কিত আঘাত রয়েছে। এটি অনুমান করা হয় যে, পেশাগত সম্পর্কিত আঘাত এবং মৃত্যুর অর্থনৈতিক বোঝা প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় চার শতাংশ। এই প্রতিকূলতায় মানুষের মূল্য অপরিসীম।

কমন আইন এক্তিয়ারে নিয়োগকর্তা,তাদের কর্মীদের নিরাপত্তার যুক্তিসঙ্গত যত্ন নেওয়ার জন্য সাধারণ আইনের কর্তব্য রয়েছে। এক্তিয়ারে বলা হয়েছে যে, সংবিধি আইন ছাড়াও অন্যান্য সাধারণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্দিষ্ট দায়িত্ব প্রববর্তন করতে পারে এবং পেশাগত নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাসহ সরকারি সংস্থা তৈরি করতে পারে, আবার এক্তিয়ার থেকে এক্তিয়ার পরিবর্তিতও হতে পারে।পেশাগত ক্ষেত্রে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ও ঘটনা পেশাগত স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার কর্মসূচির মধ্যেই পড়ে।

পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। শিল্প বিপ্লবের মুহূর্ত থেকে এই বিষয় নিয়ে ডাক্তার,শিক্ষাবিদ ও দার্শনিকরা নড়েচড়ে বসে। শিল্প বিপ্লবের সময় ইংল্যান্ডে শ্রম ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে প্রথম এই বিষয়টি উঠে আসে। ১৫শতকের শেষের দিকে কতগুলি রোগের কারণ হয়, বেশ কিছু পেশাগত শ্রম। শিল্প বিপ্লবের সময় সোনা,  রুপোর চাহিদা যখন তুঙ্গে এবং নতুন আগ্নেয়াস্ত্রর বাজার থেকে লোহা,তামা ও সীসার চাহিদাও ছিল প্রচুর। এ সকল ধাতু খনি থেকে তোলার জন্য যে সকল শ্রমিকরা কাজ করতো তাদের এবং স্বর্ণ শিল্পীদের নাইট্রিক অ্যাসিড, কয়লা, সীসা ও পারদের ধোঁয়ার সম্মুখীন হতে হতো, সেটি লক্ষ্য করেন জার্মান চিকিৎসক উলরিচ এলেনবগ। এই দূষিত ধোঁয়ার ফলে, তাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে শুরু করে এবং এই বিষাক্ত ধোঁয়া নিয়ে তিনি একটি গ্রন্থও রচনা করেন।
🍂

 ১৫৮৭ সালে প্যারাসেলসাস, খনি এবং গলনা শ্রমিকদের রোগের উপর প্রথম কাজ করতে গিয়ে এই শ্রমিকদের ফুসফুসের অসুস্থতার বিবরণ দিয়েছেন। ১৫২৬ সালে জর্জিয়াস এগ্রিকোলার খনি শ্রমিকদের প্রচলিত দুর্ঘটনা ও রোগগুলির বর্ণনা করেন এবং তাদের প্রতিরোধ করার জন্য সুপারিশ করেছিলেন।

এর বহু সময় পর শিল্প, স্বাস্থ্য ও সানিটেশন অফিস স্থাপিত হয়,বর্তমানে যা 'ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর সেফটি এন্ড হেলথ'  নামে পরিচিত। কুড়ি শতকের শুরুর দিকেও কর্মক্ষেত্রে বিপর্যয় সাধারণ ঘটনা ছিল, যেমন ১৯১১ সালে নিউইয়র্কের ট্রায়াঙ্গেল শর্ট ওয়াইস কোম্পানিতে আগুন লেগে প্রায় ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যাদের বেশি ভাগই ছিলেন মহিলা। বিভিন্ন শ্রমজনিত কারনে ক্যান্সার, ফুসফুসের রোগ, স্কিন ডিসিস সহ বিভিন্ন ধরনের মারনাত্মক রোগ হতো শ্রমিকদের।

১৯৬৯সালের ফেডারেল কয়লা খনি স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা আইনের প্রনোয়ন দ্রুত হয়। ১৯৭০সালের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা আইন দ্বারা অনুসরণ করা হয়েছিল, যা বর্তমানে পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য প্রশাসন OSHA  NIOSH নামে পরিচিত।

পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক রাসায়নিক, জৈবিক আর্গোনমিক ও কাজের দুর্ঘটনার ঝুঁকি প্রতিরোধের প্রচেষ্টা করে এবং যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব। কর্ম পরিবেশের ঝুঁকি নিরসন হ্রাস বা পরিবর্তনের প্রয়োজনে পেশাগত স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষার মান আগের থেকে অনেকটাই বাড়ানো গেছে।

Post a Comment

0 Comments