জ্বলদর্চি

জয়ন্তী /ভাস্করব্রত পতি

বাংলার ঘাস পাতা ফুল ফল, পর্ব -- ১৭
জয়ন্তী

ভাস্করব্রত পতি

একবার রাজা ভোজরাজের শিরঃপীড়া হলে স্বর্গের অশ্বিনীকুমাররা মর্তে এসে নাগ ভেষজ সহকারে চিকিৎসা শুরু করেন। শিরঃপীড়ামুক্ত ভোজরাজা যখন রোগের পথ্যের কথা জানতে চাইলেন, তখন অশ্বিনীকুমাররা বললেন, 'নাদেয়ং নাদেয়ং কিঞ্চিৎ শরদি চ বসন্তকে / আদেয়ী নাদেয়ী তত্র দেয়া ধারাপতেঃ শুভা'। অর্থাৎ শরৎ এবং বসন্তকালে নদনদীর জল ভালো নয়। এ সময় নাদেয়ী ব্যবহার করবেন। এটি শুভ। অথর্ববেদের বৈদ্যককল্পে উল্লিখিত আছে 'নাদেয়ী' নামটি। সেখানে মিলবে 'নাদেয়ী সুষদামি শত্রস্য যোনিরসি, সোনামাসীদ সুষদামাসীদ, মহিনোহবিষ্ঠানমিসি।' এই ‘নাদেয়ী’ নামটি ‘জয়ন্তী’ গাছকেই বলা হয়ে থাকে।

তেলুগু ভাষায় সোমাজি, তামিলে চম্পাই, হিন্দিতে জিহী, ফারসীতে সিদিবন, আরবীতে হব এল ফাকদ বলা হয় জয়ন্তী গাছকে। এছাড়া এই গাছ পরিচিত জৈতী গাছ, সূক্ষ্মমূলা, বিজয়া, জয়া, অপরাজিতা, শিবারী নামেও। ইংরেজিতে পরিচিত Common Sesban, Egyptian Rattlepod, Egyptian Riverhemp নামেও। সংস্কৃতে বলা হয় জয়ন্তীকা। জয়ন্তীর ফুলগুলি ফোটে সাধারণত শীতকালের শুরুতে। বসন্তকাল পর্যন্ত গাছে থাকে। সাধারণত হলুদ, গোলাপি ও বাদামী এই ৩ ধরনের ফুল দেখতে পাওয়া যায়। ফুলগুলির দৈর্ঘ্য ২ - ৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। এর ৪ টি পাপড়ির মধ্যে ২ টি উল্টানো বিস্তৃত এবং ২ টি একত্রীভূত। ফলগুলো সরু সরু এবং লম্বা আকারের। পেকে গেলে বাদামী বর্ণ ধারণ করে। 

জয়ন্তী গাছের বীজ

LEGUMINOSAE গোত্রভুক্ত এই জয়ন্তী গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম Sesbania sesban (Linn)। এছাড়া Sesbania aegypliaaca Poir, Coronilla sesban Willd এবং Aeschynomene sesban L নামও পরিচিত। এটি মধ্যমাকৃতি গাছ। ছোট ছোট ফুল হয়। এটি এখন প্রায় দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে। মোটামুটি ১০-২০ ফুট উচ্চতার এই গাছটি অন্ততঃ ৩-৪ বছর বাঁচে। তেঁতুল বা আমলকি গাছের মতো পাতা দেখা যায়। অনেকে ধঞ্চে গাছ বলে ভুল করে থাকে। এদের ফুল, পাতা, শিকড় এবং বীজ ভেষজ ঔষধ তৈরিতে কাজে লাগে।

বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজায় জয়ন্তী গাছ লাগবেই। কেননা দুর্গা পূজার সময় 'নবপত্রিকা' তৈরিতে ধান, বেল, কালোকচু, অশোক, কলা, ডালিম, মানকচু, হলুদের সাথে জয়ন্তীও প্রয়োজন। আমরা পেয়ে থাকি একটি লেখা — 'গর্ভধারণ বারনায় জয়ন্তী কুসুমম'। অত্যন্ত ভেষজ গুণসম্পন্ন গাছ এটি। নানা ধরনের জ্বরজ্বালা, বসন্ত, শ্বেতী, বাত, ইক্ষুমেহ ইত্যাদি রোগের শুরুতে জয়ন্তী গাছের নানা অংশ ব্যবহৃত হয়। মহিলাদের যোনি পথ ছোট করার জন্য এই গাছের কচি পাতা বেটে যোনিতে প্রলেপ দিতে হয়। যাঁদের শ্বেতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, তাঁদের শ্বেত জয়ন্তীর মূলের ছাল গরুর দুধের সাথে বেটে লাগালে এবং খেলে দারুণ উপকার মেলে।

🍂

Post a Comment

0 Comments