জ্বলদর্চি

বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস(১৭ই এপ্রিল)/দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস(১৭ই এপ্রিল)
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

আজ১৭ই এপ্রিল "বিশ্ব হিমোফেলিয়া দিবস", এই সম্পর্কে লিখতে গেলে প্রথমেই আমাকে জানতে হয়, হিমোফিলিয়া কি?
হিমোফিলিয়া একটি বিরল জেনেটিক অবস্থা, যা রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। এই অবস্থা সার্জারি বা আঘাতের সময় দীর্ঘস্থায়ী রক্তপাত ঘটায় এবং গুরুতর ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ, অঙ্গগুলির ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। হিমোফিলিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস প্রতিবছর ১৭ই এপ্রিল পালিত হয়, যা ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ হিমোফিলিয়া (WFH) এর প্রতিষ্ঠাতা ফ্রাঙ্ক সেনেবেলের জন্মবার্ষিকীর সাথে মিলে যায়। তিনি গুরুতর হিমোফিলিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং হিমোফিলিয়া ও অন্যান্য রক্তপাত জনিত ব্যধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বার্থে কাজ করার জন্য WFH এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 

হিমোফিলিয়ার লক্ষণ সম্পর্কে জানতে গেলে বলা যায় যে, এটি একটি জেনেটিক রক্তক্ষরণ ব্যাধি যা জমাট বাঁধার প্রোটিন বা জমাট বাঁধার কারণের অভাবে ঘটে। এই রোগের রক্ত জমাট বাঁধে না, ফলে আঘাত বা অস্ত্র প্রচারের পরে রক্তপাত দীর্ঘস্থায়ী হয়, সেজন্য এই রোগে আক্রান্ত মানুষদের ক্ষেত্রে অস্ত্র পাচার বা আঘাতে জীবন হানি পর্যন্ত হতে পারে।

এই রোগের লক্ষণ বা সাধারণ উপসর্গগুলি হলো, 
১. ক্ষত ।
২.. অস্ত্রোপচার বা আঘাত বা কাটা থেকে অতিরিক্ত রক্তপাত।
৩. টিকা দেওয়ার পরে রক্তপাত।
৪.জয়েন্ট গুলোতে ব্যথা, প্রদাহ এবং শক্ত হওয়া। 
৫. নাক দিয়ে রক্ত পড়া। 
৬. প্রস্রাব বা মলে রক্ত।
🍂

বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস হলো একটি বিশ্বব্যাপী সাস্থ্যসেবা ইভেন্ট যা প্রতিবছর ১৭ই এপ্রিল পালিত হয়, বিশ্ব ফেডারেশন অফ হিমোফিলিয়া (WFH) দ্বারা শুরু হয়,যা সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং স্থানিয় নীতিনির্ধারকদের একটি উন্নত চিকিৎসা ও যত্নের ব্যবস্থা করার জন্য এই আহ্বান জানানোর উদ্দেশ্য। হিমোফিলিয়ার সাথে আরো ভালো নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ  প্রচার করে এর পাশাপাশি।

একটি বিরল গুরুতর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হেমোরেজিক ডিসঅর্ডার। হিমোফিলিয়া ফ্যাক্টর VIII এবং ফ্যাক্টর IX প্রোটিন (রক্ত জমাট বাঁধার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান) এর ত্রুটির কারণে রক্ত জমাট বাঁধা অস্বাভাবিকতার দিকে পরিচালিত করে। যদিও সমস্ত জাতি এবং জাতিসত্ত্বার লোকেদের হিমোফিলিয়া নির্ণয় করা যেতে পারে, তবে পুরুষদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, কারণ এই রোগটি X ক্রোমোজোমের সাথে যুক্ত। ৫০শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে যে, একটি ছেলে যার মা হিমোফিলিয়া জিন বহন করে সেও হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত হবে। এবং তার মেয়ের বাহক হওয়ার ঝুঁকি থাকে ৫০শতাংশ। তাই পুরুষদের মধ্যে হিমোফিলিয়া রোগটি বেশি দেখা যায়, যদিও এটি মহিলাদের প্রভাবিত করতে পারে,যা পিরিয়ডস এবং সন্তান জন্মদানে অসুবিধা সৃষ্টি করে।

প্রত্যেক দিবসের মতো এই দিনটির একটি ইতিহাস আছে। ওয়ার্ল্ড হিমোফিলিয়া দিবস প্রথম পালিত হয় ১৭ই এপ্রিল ১৯৮৯ সালে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ হিমোফিলিয়া দ্বারা, WFH এর প্রতিষ্ঠাতা ফ্র্যাঙ্ক সেনেবেলের জন্মদিন কে সম্মান জানাতে। হিমোফিলিয়া দশ শতক পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি, যখন লোকেরা আপাত দৃষ্টিতে ছোট দুর্ঘটনার কারণে পুরুষের মৃত্যু অসম সংখ্যার দিকে মনোযোগ দিতে শুরু করে,তারপর এটি আবিষ্কৃত হয়। এই অবস্থাটিকে সেই সময় আবুলকেসিস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল, তবে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে এটির চিকিৎসা করা যায়নি। 
একটি অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট সাধারণত একটি রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হতো, যা সেই সময় রাজ পরিবারের মধ্যে ব্যাপক ছিল। যাইহোক, অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট রক্তকে পাতলা করে এবং অবস্থাকে আরো খারাপ করে।

১৮০৩ সালের ফিলাডেলফিয়ায় ডক্টর জন অটো "ব্লিডার্স"নিয়ে গবেষণা শুরু করেন, যিনি শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত তে পৌঁছেছিলেন যে, এই রোগটি মা থেকে ছেলেদের মধ্যে চলে গেছে ১৯৩৭ সালে হিমোফিলিয়া কে টাইপে A এবং টাইপ B জেনেটিক ডিসঅর্ডার হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছিল। যাইহোক, সেই সময় পর্যন্ত এই রোগের কার্যকর চিকিৎসার বিকাশ ঘটানো সম্ভব হয়নি।

বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবসের গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। ২০০০ সালে এটি অনুমান করা হয়েছিল যে, বিশ্বব্যাপী ৪ লক্ষ ব্যক্তির বা ১০০০০ জীবিত মানুষের মধ্যে ১জন এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছিল, এবং আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ পর্যাপ্ত চিকিৎসার সুবিধা পেয়েছিল। ২০১৯ সালে তবে একটি মেটা বিশ্লেষনে দেখা গেছে যে, উত্তর অধিকার সূত্রে রক্তপাতের অবস্থার সাথে এই রোগে পুরুষদের সংখ্যা অনেক বেশি,প্রায় ১১.২৫ লাখ। 

 উচ্চ আয়ের দেশ গুলিতে বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ১৫ শতাংশ হিমোফিলিয়ার জন্য কার্যকর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য সম্পদের অভাব। নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশ গুলিতে উচ্চ মৃত্যুহার এবং অসুস্থতার হারের দিকে পরিচালিত করে।

এই বছর বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস তার ৩১ তম বার্ষিকী উদযাপন করে, যা রক্তক্ষরণজনিত ব্যধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তপাতের উন্নত চিকিৎসা, প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ও নীতি নির্ধারকদের সহায়তা করার জন্য জনসাধারণকে উৎসাহিত করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। 

প্রত্যেকটি দিবসের মতো এই দিবসেরও প্রত্যেকবছর একটি করে নতুন থিম থাকে। এই বছর অর্থাৎ ২০২৪ বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবসের থিম হলো  "*সবার জন্য ন্যায় সঙ্গত এক্সেস সমস্ত রক্তপাতের ব্যাধিকে স্বীকৃতি দেওয়া"*
এই থিমটি সকলের জন্য চিকিৎসার উপর জোর দেয় এবং এমন একটি সমাজকে কল্পনা করে, যেখানে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রক্তপাত জনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত প্রতিটি ব্যক্তির যত্নের  ব্যবস্থা রয়েছে। লিঙ্গ, বয়স বা অবস্থান নির্বিশেষে তাদের রক্তপাতের অবস্থা দেখা হয়।

বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবসের ২০১৮ সালের থিম ছিল "জ্ঞান ভাগ করা আমাদের শক্তিশালী করে"। 
২০১৯ এর বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবসের থিম ছিল, "প্রচার এবং সনাক্তকরণ" 
২০২০সালে বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবসের থিম ছিল," সবার জন্য চিকিৎসা"
২০২১ এর বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবসের থিম ছিল, "পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেওয়া একটি নতুন বিশ্বে যত্ন বজায় রাখা"। 
২০২২ সালের বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবসের থিম ছিল," সবার জন্য এক্সেস অংশীদারিত্ব, নীতি অগ্রগতি"। 
এছাড়াও ২০২৩ এর হিমোফিলিয়া দিবসের থিম ছিল, "সবার জন্য এক্সেস যত্নের বৈশ্বিক মান হিসেবে রক্তপাত প্রতিরোধ"।

Post a Comment

1 Comments

  1. ✍️বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস বিষয়ে অনেক তথ্য জ্ঞাত হয়ে সমৃদ্ধ হলাম।ধন্যবাদ লেখিকা ,দোলন চাঁপা তেওয়ারী কে।আর সমানুভূতি রইল চিকিৎসক, রোগী ও রোগীর পরিবারের প্রতি।সকলের সম্মিলিত প্রয়াস হিমোফিলিয়া সংক্রান্ত ঋণাত্মক প্রভাব হতে মুক্ত রাখুক সমাজকে।🙏

    ReplyDelete