পর্ব ৩
বাসুদেব গুপ্ত
ভেড়ির ধারে অন্ধকার
আবার আসে অমাবস্যা । হাফ জল ঢোকানো ভেড়ির জলের ওপর গভীর কুয়াশা। তিন দিক থেকে তিনটি নৌকা এসে থামে। চারদিক ভরা নিঝ্ঝুম। কররর কররর করে অনেক পোকা ডেকেই চলেছে। জলের ওপর মাঝে মাঝে সরসর করে একটা চন্চলতা আবার টুবুস করে ডুবে যাচ্ছে। তিনটি মোবাইলের আলোয় তিনজন মানুষ চিনে নেয় নিজেদের। হলুদ লাল সবুজ এত অন্ধকারে সবই গভীর কালো লাগে। এল ই ডির সাদা আলো এই অন্ধকারকে আরো তীব্রতা দেয়, অন্ধকার আরো গভীর লাগে। মোবাইলের আলো নিভে যায়। তিনজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পড়ে একটা পতাকার মতো নদির পাড়ে। একটা জীপ এসে নামে। তাতে তিনজন কালো পোষাক সুরক্ষা বাহিনীর অফিসার। আর একজন গম্ভীর মানুষ। যিনি মেঘনাদ, আড়াল থেকে যার বাণ ছুটে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে, দেশের বেড়া ডিন্গিয়ে প্রতিবেশীর অজানা গলিতে, আরো দূরে অনেক সাগর পেরিয়ে দেশে বিদেশে।
তিনটি বান্ডিল হাত পাল্টায়। তিনটি কালো ইস্পাতের মসৃণ যন্ত্র। গম্ভীর লোকটি কথা শুরু করেন। ব্যারিটোন কণ্ঠ, অভিজাত হিন্দী উচ্চারণ মন্ত্রের মত পৌঁছয় তিন বন্ধুর কানে।
—যোগ বিয়োগ গুণের খেলা এবারে শেষ। ভাগ করতে হবে। আপনাদের সার্ভিস আমাদের খুব কাজে লাগবে। তবে সাবধান। গোলমাল আসছে। এই জিনিষগুলো বুঝে ব্যবহার করবেন। ভাগটা একদম সার্জিকাল হতে হবে। রক্তপাত বেশি না। বুদ্ধি বুদ্ধি আর বুদ্ধি। আর তার সংগে তোড়ে কথা। সেটা অবশ্য আপনারা ভালোই পারেন। আপনাদের পালাগান টিভিতে সান্ধ্য কীর্তনের আসরে আমরা শুনেছি। তবে এই কাজটা একটু শক্ত। আপনারা পারবেন তো? ভেবে দেখুন। পারলে ইনাম। না পারলে এখনই রাম রাম।
—জমিগুলো ফেরত দিতে হবে?
—না। কষ্ট করে পেয়েছেন,ফেরত দেবেন কেন।
—মেয়েগুলো বড্ড খেপে আছে। কি করব?
—কিচ্ছু না। দুর্বলতা দেখাবেন না। আবার ফালতু ভয়ও দেখাবেন না। ঝামেলা দেখলে চুপ। আর সুবিধে পেলেই কথার সুনামি। আর যা বলবেন করে দেখিয়ে দেবেন। আমরা যা বলি তাই করি। এটা আমাদের গ্যারান্টি। নিশ্চয় দেখেছেন।
—কাল থেকে কি হবে?
—জেনোসাইড।
—গাজার মত?
—গাঁজার মত নয়। গাজরের হালুয়ার মত ।
—বুঝলাম না স্যার।
—বুঝতে হবে না। যা অর্ডার আসবে পালন করবেন।
— অনেক লোক মারতে হবে না কি?
—কেন আপত্তি আছে? সুদাম সর্দার তিনটি খুন চারটি রেপ। শ্রীদাম সর্দার একশটা বাড়ী জ্বালানো, নজনের মৌত। আর সবুজবাবু তো একদম নেতানহু। মাঠে নোনা জল ঢুকতে বাধা দেওয়ায় একটা বাড়ীর আটজনকে জ্বালিয়ে দেওয়া। কিন্তু এসব ছুটকো কাজে হবে না। এখন বড় খেলা। জেনোসাইড। গাজায় নয়। একদম দরজায়। কি যেন বলেন আপনারা দুয়ারে।
গম্ভীর লোকটি জোক করলেও হাসেন না। তিনজন বুঝতে পারে না হাসবে কি না।
🍂
—জেনোসাইড তো খুব ভালো জিনিস। একদম সমাধান। ঐ যে কি বলেন ফাইনাল হ্যাঁ ফাইনাল সলুশান। আমি তো ঐ আরশোলাদের সহ্য করতে পারি না। দেখলেই গা ঘিনঘিন করে। ঘরে ঢুকলে গোবরজল দিয়ে না ধুয়ে সে ঘরে পা দি না। সুদাম সাহস পেয়ে অনেক কথা বলে ফেলে।
—ওদের মেয়েরা এলেও গোবর জল দেন?
অন্ধকারে বিরাট জিভ কাটে সুদাম দেখা যায় না। শ্রীদাম আলতো করে ওর পিছনে চিমটি কাটে।
—ঠিকই করেন। স্ত্রীরত্ন দুষ্কুলাদপি। আমাদের মহান জাতির বীজ যাকে আজকাল বলে জিন, ছড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের সেটাই তো প্রথম আদর্শ। আর আরশোলাদের বাড় বন্ধ করতে হবে। সেটা সেকেন্ড আদর্শ। একদিনে তো হবে না। ধীরে ধীরে।
—জেনোসাইডটা কেমন করে করবেন স্যার। জানতে ইচ্ছে করছে। ড্রোন থেকে বোম বা গ্যাস ছড়ানো যেতে পারে। আমার খুব ড্রোন চালাবার ইচ্ছে। ফোনে রীল আসে তো। দেখে দেখে শিখে গেছি। এক মাইল দূর থেকে চালিয়ে দাও। ভালো ক্যামেরা থাকলে একদম কিলিয়ার দেখা যায়। একটা মেয়ে মুখ ঘোরালো আওয়াজ শুনে। আর সোজা টিপ করে ছোট্ট,একটা মিসাইল। ব্যাস যাও নরকের করে গিয়ে পা দোলা এবার। ব্যাটারা দেখবে আকাশ থেকে ঝরছে আগুন। ছেলে পুড়ছে, মেয়ে জ্বলছে, বাচ্চাগুলোর মাথায় দুমদুম করে গুলি লাগছে। আমি দেখেছি গাজাতে ইস্রায়েলের সব মস্তানরা রক এন্ড রোল নাচছে আর ফায়ার করছে, নাচছে আর ফায়ার করছে। মেয়ে যাচ্ছে ফায়ার। পাঁচ বছরের বাচ্চা বল নিয়ে বেরোলে, ফায়ার।
পুরো লাইভ। সবুজ এতক্ষণ শুনছিল, এবারে উৎসাহ পেয়ে যায়।
—আবার গাজা। আমরা অমন কাঁচা কাজ করি না। এখন বাড়ী যান। কাল ইনস্ট্রাকশান পৌঁছে যাবে।
তিনজন সিকিউরিটি গাড়ীর পাশে সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। জিপ স্টার্ট দেয়। একটা ব্যাঙের আর্তনাদ শোনা যায়। সাপে ধরেছে। তার পাশে অনেক জোঁক ডিগবাজী খেতে খেতে এগোয়।
বাড়িতে বসেই সংগ্রহ করতে পারেন 👇
0 Comments