জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৭২

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা ১৭২
চিত্রগ্রাহক - ঋপণ আর্য
সম্পাদকীয়,

টুংকুড়ি বইমেলা গেছে। মেলা বই দেখে অবাক। কিন্তু মাত্র কয়েকটা স্টলে ছোটোদের জন্য বই। এ ভারী অন্যায়। টুংকুড়ির মুখ হাঁড়ি দেখে ঋপণ আঙ্কেল বলল, বাড়ি গিয়ে ছোটোবেলা থেকে গল্প আর ছড়া শোনাবে। সেই শুনে টুংকুড়ির মন একটু ভাল হল। ঋপণ আঙ্কেল সেই ছবি পাঠিয়েছেন। বাড়ি এসে টুংকুড়ি প্রথমেই জয়দীপ আর আয়ুস্মিতার আঁকা দেখে খুশিতে ডগমগ হল। তারপর দিলীপ আঙ্কেলের লক্ষ্মীমেয়ের গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ল। আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বেড়াতে গেল আমেরিকায়।  কে নিয়ে গেল? কেন বাসবদত্তা আন্টি। আন্টি তো ওখানকার সব চেনে। ঘুম ভাঙলে খুব খিদে পেয়ে গেল। তখন খেতে খেতে সুমনা পিসির আহারে বাহারে শুনল। একটু খাবার পর আর খেতে চাইল না তখন টুংকুড়ির মা লাচুঙের নেকড়ে ধরিয়ে দেব বলে ভয় দেখাল। শ্রীকান্ত আঙ্কেলের সঙ্গে সঙ্গে আমরা সবাই লাচুঙ ঘুরে নিচ্ছি কি বল? আর মলয় জেঠু প্রতিবারের মতো খুব উৎসাহ দিয়েছেন আমাদের। এসো টুংকুড়ির মতো সবাই পড়ে ফেলি ছোটোবেলা। ...  মৌসুমী ঘোষ।
আহারে বাহারে
সুমনা সাহা

আজ স্কুল থেকে ফিরতেই মিঠু বলল, “অর্কদীপ বাবুর আজ রাজেশ্বরী দেবীর বাড়িতে নিমন্ত্রণ।” বুকাইয়ের শুনেই খুব আনন্দ হল। রাজেশ্বরী, মানে হল রাজি, বুকাইয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড। অর্কদীপ বুকাইয়ের স্কুলের নাম। মা মাঝে মাঝে ওকে ভাল নাম ধরে ডাকে। ওদের পাড়ায় প্রতিবছর নববর্ষের দিন একটা ফাংশন হয়। তাতে পাড়ার বড়রা, ছোটরা সবাই কিছু না কিছু করে। রাজির মা, শর্বাণী আন্টি খুব ভাল নাচ জানেন। আর রাজিদের বাড়িতে ছোটদের রিহার্সাল করিয়ে প্রতিবছরই উনি ফাংশনের জন্য তৈরি করে দেন। নববর্ষের দিন দশেক আগে থেকেই রিহার্সাল শুরু হয়। স্কুলের পড়া শেষ করে পাড়ার পনেরো কুড়ি জন কচিকাচা রাজিদের বাড়িতে জড়ো হয়। খুব মজা হয়। বুকাই আর সবাইও এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। তাই তাড়াতাড়ি হোমওয়র্ক করে ও হাজির হল রাজিদের বাড়িতে। পৌঁছেই দেখল গোপা, সোহম, সায়ন, আকাংক্ষা ও আরও অনেকে এসে গেছে। সবাই মেঝেতে কার্পেটের উপর বসে আছে। আরাধ্যা দিদি গান করবে। ও হারমোনিয়ম নিয়ে প্যাঁ পোঁ করে সুর তুলছে। বিশুদা গানের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করবে। সেও একটা ছোট হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে ঠুকে তবলাটাকে রেডি করছে। আর ডিভানের উপর বসে আছেন ফরসা ধবধবে একজন দাদুর বয়সী লোক। পানের রসে তার ঠোঁট দুটো লাল টুকটুকে। হাতওয়ালা সাদা বেনিয়ান আর ধুতি পরা সেই দাদুর মুখে মিটিমিটি হাসি। বুকাইকে দেখেই তিনি বলে উঠলেন, “এই যে, রাজ রাজেশ্বরীর বন্ধু এসেছে। এদিকে এসো ভাই, কি নাম তোমার?”
“অর্কদীপ।”
“মানে জানো?”
“হ্যাঁ, অর্ক মানে সূর্য।” 
“তাহলে তুমি সূর্যের মত প্রদীপ, কি তাই তো? অনেক আলো দিতে হবে। কোথায় থাকা হয়?”
শর্বাণী আন্টি হাতে বড় ট্রে নিয়ে ঢুকলেন, “মামা, ও আমাদের দুটো ব্লক পরেই থাকে। খুব ভাল ছেলে।”
বুকাই রাজিকে ইশারায় জিজ্ঞেস করে, “কে রে?”
শর্বাণী আন্টি শুনতে পেয়েছেন, “উনি আমার বড়মামা, বুঝলি? মুর্শিদাবাদে থাকেন, কালই এসেছেন। মামা কিন্তু অনেক গল্প জানেন।”
মামাদাদু আন্টির দিকে ফিরে বললেন, “তুমি আবার পিষ্টক কখন প্রস্তুত করিলে? ইহা ইষ্টকের ন্যায় হইবে কি?” 
আন্টি জোরে হেসে উঠল, “ইটের মত বলছ? না না, শক্ত হবে না। তুমি খেতে পারবে। আসলে কিছুটা আতপ চাল ঘরে ছিল। তাই আজ মিক্সিতে গুড়ো করেছি। আর শীতের সময় তুমি যে খেজুর গুড় পাঠিয়েছিলেন, তা আমরা খেয়ে শেষ করতে পারিনি। এখনও বেশ কিছুটা আছে। তাই ভাবলাম, আজ বাড়িতে ছোটরা আসবে, আর তুমিও আছ, কটা দুধপুলি বানিয়ে ফেলি!”
“তা বেশ করেছ। যদি গরুর মত খেতে না পারি, কাঠবিড়ালি হবো। তাও না পারলে প্রজাপতির মত খাব। খাব অবশ্যই।” 
বুকাই আবার রাজিকে ইশারায় প্রশ্ন করে, “কি বলছে রে পিষ্টক ইষ্টক? গরুর মত, কাঠবিড়ালির মত, প্রজাপতির মত? খুব মিস্টিরিয়াস লাগছে!”
মামাদাদু দুলে দুলে হাসতে আরম্ভ করেছেন। বুকাইয়ের প্রশ্ন শুনে ফেলেছেন। তারপর পিঠেতে একটা কামড় বসিয়ে বললেন, “তোফা হয়েছে! শোন অর্কদীপ, নানা প্রাণি নানাভাবে খাবার খায়। আমিও তো একটা প্রাণি, নাকি? কিন্তু দাঁতের জোর কমেছে, তাই কখনও গরুর মত খাই, কখনও হা হা হা...।” মামাদাদু হাসতে লাগলেন। তারপর বললেন, “গরু মোষ এদের তো মাঠে ঘাস খেতে দ্যাখো। কিন্তু যখন কিছু খায় না, বসে থাকে, তখনও লক্ষ্য করে দেখবে ওরা মুখ নাড়ছে, যেন খাবার চিবোচ্ছে। কেন জানো? এদের পেটের ভিতরে পাকস্থলীতে চারটে কুঠুরি আছে। তাই ওদের সমগোত্রের অন্য প্রাণিদের তুলনায় চার গুণ বেশি খেতে পারে। তাড়াতাড়ি খাবার সংগ্রহ করবার জন্য কোনরকমে ঘাস ছিঁড়ে মুখে ঢুকিয়ে গিলে ফেলে। পরে বিশ্রামের সময় ধীরে সুস্থে আধ চিবানো সেই ঘাসের মণ্ড গলার ভিতর থেকে তুলে এনে ভাল করে চিবায়। তবেই বোঝ। ওদের না আছে রান্নাবান্না, না টিভি দেখা, না ফাংশনের রিহার্সাল। খাওয়া নিয়েই পড়ে আছে সারাদিন। 
“তারপর ধরো গিয়ে সাপ। ওদের তো চিবানোর বালাই নেই। আস্ত গিলে খায়। গাছের কোটরে পাখির বাসা। সেখানে মা পাখি রাখে তার ডিম। সেখান থেকে ডিম চুরি করে খায় সাপ। জলের সাপও জলচর পাখির ডিম চুরি করে। পুকুরের ধারে কাদার মধ্যে গর্ত করে লুকিয়ে রাখা পাখির ডিম, সেগুলোর সন্ধান পেলে বিরাট হাঁ করে মুখের মধ্যে ডিম ঢুকিয়ে চোয়ালের চাপ দিয়ে ডিমের খোলা ভেঙে ফেলে। এইবার ডিমের ভিতরের নরম কুসুম গিলে ফেলে আর কায়দা করে খোলাটা ফেলে দেয়।”
“আর শিয়াল?”
“হায়েনা, শিয়াল এরা সুবিধাবাদী। যখন যা পায় তাই খায়। তবে শিকার ধরে নিজেদের থেকে আকারে ছোট প্রাণি, যেমন- হাঁস, মুরগি, ছাগলছানা, ইঁদুর এইসব। এমনকি মরা পশুর হাড়গোড়, নখ, চুল পর্যন্ত এরা খেয়ে ফেলে। আর সুযোগ পেলে তো বাঘ সিংহের শিকারেও ভাগ বসায়। শিম্পাঞ্জিরা আবার খুব চালাক। নিজেদের শরীরের ভালমন্দ বুঝে দরকার মত বিভিন্ন গাছের পাতা ফল এইসব খায়। যাতে পেট পরিষ্কার থাকে।”
গল্পের গন্ধ পেয়ে বুকাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্যরাও এসে দাদুকে ঘিরে বসে। শর্বাণী বলল, “মামা তুমি বাচ্চাদের সঙ্গে গল্প করতে থাক, ততক্ষণ আমি রান্নাঘরে একটু কাজ সেরে আসি।”
মামাদাদু বললেন, “খাওয়ার জোরেই শরীর টিকে থাকে, বুঝলে? তাই পড়াশুনো করো বা নাই করো, বেড়াতে যেতেও পারো নাও যেতে পারো, ফাংশন হল বা না হল, খেতে কিন্তু হবেই। সব প্রাণিকে খেতে হয়। আর খাওয়ার ধরণ, শিকার ধরার কায়দা কৌশল প্রত্যেকের আলাদা আলাদা।  
পেঙ্গুইনের নাম শুনেছ? শীতের দেশের পাখি। অ্যান্টার্কটিকায় থাকে। ছবি নিশ্চয় দেখেছ? এরা বরফের মধ্যে ঠোঁট দিয়ে ঠুকরে ঠুকরে খাবার খোঁজে। খাবারের খুঁজতে খুঁজতে প্রতিদিনই প্রায় ৪০ কিলোমিটার, এক এক সময় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলে যায়।
আরেকরকম প্রাণি আছে, কোয়ালা, গোলগাল ছোট্ট মিষ্টি প্রাণি। গাছেই থাকে। লম্বা লেজ ঝুলে থাকে নিচে আর ওরা দুহাতে গাছের ডাল আঁকড়ে কুচুর মুচুর করে পাতা খেয়ে সাবাড় করে। নিজের ওজনের থেকে অনেক বেশি খাবার খায়।
খরগোশ, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি এরা করে কি? সামনের দুই পা হাতের মত ব্যবহার করে খাবারের টুকরো, ফল বা বাদামটাকে ধরে, তারপর সামনের লম্বা ধারালো দাঁত দিয়ে কুড়ে কুড়ে খায়,” এই বলে মামাদাদু একটা পুলিপিঠে হাতে তুলে সামনের দুটো দাঁত দিয়ে কামড়ে খরগোশের খাওয়ার স্টাইল দেখিয়ে দেন। বাচ্চাদের সমবেত হাসি দেখে আবার পান খাওয়া লাল টুকটুকে জিভ বের করে বলেন, “ব্যাঙ তো এইভাবে জিভটাকে সামনে ছুঁড়ে দেয়।” 
“কেন দাদু?” 
“ওদের জিভের সামনের দিক মুখের ভিতর আটকানো। ভিতরের দিক, মানে যেখানে আমাদের আলজিভ থাকে, সেই দিকটা খোলা। যখনই পোকা মাকড় দেখতে পায়, মুখের ভিতর থেকে জিভটাকে উলটে দেয় শিকারের উপর, ওদের জিভে আঠার মত চটচটে একটা বস্তু থাকে। পোকাটা তাতে জিভের সঙ্গে আটকে যায়। ব্যাস, কেল্লা ফতে। ওটা শুদ্ধু আবার মুখের ভিতরে জিভটা উল্টে নেয়, আর খাবার চালান হয়ে যায় সোজা গলা হয়ে পেটের মধ্যে। যদি বর্ষার সময়ে পুকুরের আশেপাশে যাও, ওদের কাণ্ডকারখানা দূর থেকে লক্ষ্য করতে পারবে। তবে এরা খুব সাবধানী। একটু শব্দ পেলেই জলা ঝোপের ভিতর লুকিয়ে পড়বে। 
মশা, প্রজাপতি, ফড়িং এদের আবার মুখের ভিতর থাকে লম্বা টিউবের মত জিনিস। সেটা দিয়ে ওরা মানুষের রক্ত বলো বা ফুলের মধু, চুষে খায়। আমি যখন খুব ছোট, তোমার মত, কি আরও ছোট, আমাদের গ্রামে রাজবাড়ি ছিল। সেখানে একটা হাতি বাঁধা থাকত। তার খাওয়া দেখলে তুমি অজ্ঞান হয়ে যাবে!”
হাতির কথায় বুকাই উৎসাহিত হয়ে উঠেছে। “তুমি হাতি সামনে থেকে দেখেছ? অনেক খায় বুঝি? শুঁড় দিয়ে খায়?”
“না গো। শুঁড় দিয়ে খাবার ধরে মুখের ভিতর ঢোকায়। শুঁড় যেন ওদের হাত। আবার নাকও। অতবড় প্রাণি হলেও হাতি কিন্তু মাংসাশী প্রাণী নয়, আর সাধারণত বেশ নিরীহ। গাছের ফল, মূল, ডালপালা, কোনও কোনও গাছের কাণ্ডও খেয়ে ফেলে। হাতি অনেক খেতে পারে। দিনে গড়ে ১৫০ কিলো খাবার খায়। তবে খুব খিদে পেলে এর দ্বিগুণ খাবারও খেতে পারে। আর খাবে নাই বা কেন? অতবড় শরীরটা যে। ভারতীয় হাতির গড় ওজন কত জানো? প্রায় ২ থেকে ৫ হাজার কেজির মতো। জলও পান করে দিনে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ লিটার। তবেই বোঝ, হাতি পোষার ঝক্কি কত! অত খাবার, পানীয় জল জোগাড় করা কি চাট্টিখানি কথা? বড় হয়ে প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘আদরিণী’ গল্পটা পড়ে নিও, তাতে আছে একটা হাতির গল্প, যার নাম আদরিণী। প্রাণের থেকেও প্রিয় হাতিটাকে শেষ পর্যন্ত আর পুষতে পারেননি জয়রাম মুখোপাধ্যায়। কিন্তু যাদের কাছে বেচলেন, তারাও প্রায় না খাইয়েই মেরে ফেলল তাকে।
“অনেক সময় খবর শোনা যায়, অমুক জঙ্গল থেকে হাতির পাল বেরিয়ে গ্রামে হানা দিয়েছে, ধানের গোলা সাবাড় করে দিয়েছে, ফসল নষ্ট করেছে... আসলে অত বড় শরীরটা বাঁচিয়ে রাখতে গেলে খাবার তো প্রয়োজন। জঙ্গল সাফ করে বসতি গড়ছে মানুষ। ক্রমশ ছোট হচ্ছে বনের প্রাণির খাবার ও থাকার জায়গা। তাই মানুষের আবাসে হানা না দিয়ে উপায় কী! আর তখনই জোটে লোষ্ট্রাঘাত! 
“কি ঘাত?”
শর্বাণী রান্নাঘরের কাজ সেরে চলে এসেছে, তার মামার কথায় হেসে বলে, “লোষ্ট্রাঘাত মানে লাঠির মার। মামা, তুমি যেভাবে অভিনয় করে গল্প বলছ, বাচ্চারা আজ আর মনে হয় রিহার্সাল করবে না!”
মামাদাদু বললেন, “বেশ, তবে আজ এই পর্যন্ত থাক। তোমরা রিহার্সাল আরম্ভ করো, আমি দেখি। কাল আবার আসবে তো? তখন আবার গল্প হবে।”
ঠিক হল ছোটদের একটা দল নাটক করবে, ‘সাত মার পালোয়ান’, আরেক দল শ্রুতি নাটক করবে, ‘অবাক জলপান’। আর গ্রুপ ডান্স হবে, ‘ওরে গৃহবাসী’। আরও আবৃত্তি, সোলো ডান্স, গান সবই থাকবে। ছেলেমেয়েদের কলরবে আর নাচে গানে মুখরিত হয়ে উঠল পৃথিবীর এক প্রান্তের একটি সন্ধ্যা। রিহার্সাল শেষে বাচ্চারা যে যার বাড়িতে ফিরে গেছে। ভুলু রাতের খাবার পাওয়ার আশায় বুকাইদের দরজায় দাঁড়িয়ে ডেকে উঠল ভৌ উ উ। আর রাজেশ্বরীর মায়ের আদরের মিনি রান্নাঘরের জানলা দিয়ে ডাক দিল ‘ম্যাওও।’ ওর আজ বড় তাড়া। চারটি ছানা হয়েছে, সিড়ির বাঁকে পুরনো ফুটো চালের হাঁড়ির মধ্যে তারা শুয়ে আছে। চোখ ফোটেনি। মিনি নিজে দুটি খেয়ে ছানাদের দুধ খাওয়াতে যাবে। ভুলু, মিনিরা গৃহস্থ বাড়ির খাবারের ভাগ পায় তবুও। কিন্তু ভুতোকে কে খাবার দেবে? পাড়ার বুড়ো কদম গাছের কোটরে বসে কালোপেঁচা ভুতোটা ঝিমাচ্ছিল। ভুলুর রাত্তিরের এই ভৌ উ উ ডাকই ভুতোর এলার্ম। ভুতো গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসল, ‘ইঁদুর ধরতে বের হওয়ার সময় হল!’
আয়ুস্মিতা সামন্ত। নার্সারী।
সরস্বতী শিশু মন্দির। মেদিনীপুর

ছোটগল্প
লক্ষীমেয়ে
দিলীপকুমার মিস্ত্রী
                                                                  
ভবঘুরে রাধারাণী এ’পাড়ায় এসেছে বছরখানেক হল।  সঙ্গে  তার একমাত্র মেয়ে লক্ষী। লক্ষী সবে সাত বছরে পা দিয়েছে।  রাধারাণীর মধ্যে কিছুটা  মানসিক ভারসাম্যের অভাব রয়েছে। সে আগে  মেয়েকে  নিয়ে এ’পাড়া ও’পাড়ায় ঘুরে বেড়াত। বোসপাড়ার মানবাধিকারকর্মী সাব্রিনা সুলতানা মাসকয়েক  আগে  মা-মেয়ে দু’জনকে মৃদঙ্গ  হাজরার পরিত্যক্ত একতলা বাড়ির সিঁড়ি-ঘরে  থাকার ব‍্যবস্থা করে দিয়েছে।  ওদের খাবারের ব‍্যবস্থাও করে দিয়েছে সে। শুধু কী তাই ! সাব্রিনা ওই পাগলির একমাত্র মেয়ে লক্ষীকে  বোসপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছে। মেয়েটি খুবই শান্ত প্রকৃতির। কিন্তু লেখাপড়ায় তার খুব মনযোগ। খুবই বুদ্ধিমতী মেয়ে।
        কিছুদিন পরের ঘটনা। বোসপাড়ায়  ইদানিং রোজই চুরি হচ্ছে। তেমন কোন দামী জিনিস অবশ্য নয়। কা’রও ঘটি, কা’রও বাটি, কা’রও ঘরের প্লাস্টিকের বালতি, মগ, জগ- এইসব। পাড়ার সকলের সন্দেহ ওই রাধারাণী আর তার মেয়ের ওপর। কিন্তু সাব্রিনা পাড়া-প্রতিবেশীদের এমন অভিযোগ কিছুতেই মানতে রাজী নয়। তাছাড়া,একথাও ঠিক, চুরি যাওয়া জিনিসের কোন চিহ্ন কেউ কখনও রাধারাণীর ঘরে পায়নি। সাব্রিনার  প্রশ্ন,মা-মেয়ে চুরি করে থাকলে,ওগুলো কী ওরা খেয়ে ফেলেছে ? আবার বাজারে বিক্রি করেছে,এমন প্রমাণ কী কারও কাছে আছে ? তাহলে,কেন শুধু শুধু ওদের ঘাড়ে এমন দোষ চাপানো ?
          একদিন দুপুরবেলা,ঝেঁপে বৃষ্টি নেমেছে। হ‍্যাঁ,আজ শ্রাবণের শেষদিন বটে। অনেকদিন পর এমন মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। বলতে গেলে,বোসপাড়ার প্রায় সবাই আজ ঘরের বাইরে। বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দে সবাই এখন বিভোর। সাব্রিনাও বাড়ির সামনে মাঠে দাঁড়িয়ে ভিজছে।  কিন্তু সে দেখল,পাড়ার ছেলেমেয়েদের সবাই এলেও লক্ষী বাইরে আসেনি। আসেনি তার মাও। সাব্রিনা একটু অবাক হল। সে দু’পা এগিয়ে লক্ষীর ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। জোরে হাঁক পাড়ল,লক্ষী।
      লক্ষী অমনি ছাদের ওপর থেকে গলা ছেড়ে উত্তর দিল,দিদিমণি,আমি এখানে। সাব্রিনা দেখল, লক্ষী একা ছাদে উপরে দাঁড়িয়ে ভিজছে। তার চোখে মুখে যেন খুশির বন‍্যা বইছে। সে ভীষণ অবাক হল। কারণ, এরআগে সে  লক্ষীকে কখনও ঐ ছাদে উঠতে দেখেনি।  উঠবে কি করে,ছাদে ওঠার সিঁড়িতে যে ঠাসাঠাসি করে রাখা ওদের গুচ্ছের লোটা-কম্বল। পুরো সিঁড়িটাই আটকে আছে সেসবে। সাব্রিনা নিজে একদিন ছাদে উঠতে গিয়েও পারেনি,ফিরে এসেছে। 
          সাব্রিনা একটুও দেরি না করে, লক্ষীর কাছে পৌঁছতে দে-ছুট। তার পিছু নিল পাড়ার অনেকেই। অনেক কষ্টে,সবাই সেখানে গিয়ে দেখল,ছাদের ওপর পর পর সাজানো পাড়ার চুরি যাওয়া বালতি, ঘটি, মগ, বাটি- সবকিছু। বৃষ্টির জলে সেগুলো এখন ভর্তি। সবাই চোখ পাকিয়ে লক্ষীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেখে,সাব্রিনা তাকে আগলে ধরল। কিন্তু সে নিজেই ভীষণ রেগে গিয়ে লক্ষীকে বলল,লক্ষী,তুইই তাহলে সত্যিই এসব চুরি করেছিস ?
🍂

           লক্ষী নির্বিকারভাবে উত্তর দিল,চুরি,চুরি কেন করতে যাব গো! এইতো,সবই তো রয়েছে এখানে। এসব আমার কী কাজে লাগবে,তোমরা বলতো ? খালি এনেছিলাম,এখন বৃষ্টির জলে সব ভর্তি। সবাই নিয়ে যাও না; যে-যারটা। কে তোমাদের মানা করছে শুনি ?
        সাব্রিনা আরও রেগে গিয়ে বলল,তোর যখন নিজের কোন কাজেই লাগবে না,তবে এগুলো লুকিয়ে আনতে গেলি কেন ? লক্ষীছাড়া মেয়ে কোথাকার,তোকে এমন কু-বুদ্ধি কে দিয়েছে শুনি ?
         লক্ষী দিদিমণির চোখে চোখ রেখে, তার গলা জড়িয়ে ধরে,আরও শান্ত-গলায়, ভাবলেশহীনভাবে বলতে লাগল,কে আবার দেবে শুনি ! সেদিন ইসকুলে শিউলী দিদিমণি বলেছিল,আমাদের মাটির নিচের জল শেষ হয়ে আসছে। তাই সবাইকে জল অপচয় বন্ধ করতে হবে। আর সেই সঙ্গে জল সঞ্চয়ও করতে হবে। এখন থেকে বৃষ্টির জল ধরে রাখতে হবে আমাদের। আমি তো তার জ‍ন‍্যই এগুলো এনেছিলাম। এখন সবাই যার-যারটা ঘরে নিয়ে যাও। খালি এনেছিলাম,ভর্তি করে ফেরত দিলাম।  ভালোইতো হল।
     লক্ষীর কথা শুনে,সাব্রিনা তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল। উপস্থিত সকলের চোখেও জল থই থই করছে। সাব্রিনা লক্ষীর চোখে তাকিয়ে আবার বলল,তুই না বলে, সবার বাড়ি থেকে এগুলো কেন এনেছিস দুষ্টু মেয়ে ? অপরের কোনও জিনিস না বলে নেওয়াটা অন‍্যায় অপরাধ,তুই বুঝি জানিসনে সেকথা?
          লক্ষী এখনও নির্বিকার। সে দু-হাতে দিদিমণির গলা জড়িয়ে ধরে,আরও আদো আদো করে বলল,ঠিক আছে বাবা,আমার ভুল হয়ে গেছে। খুব অন‍্যায় হয়ে গেছে। কিন্তু আর কখ্খনো এমনটি হবে না। না বলে আমি আর কখনও,অপরের তৃণটিও ধরবো না। আমি এই দুই কান ধরে,তিন-সত্যি করে বলছি- আর কখনও এমনটি হবে না,হবে না, হবে না।
      সাব্রিনা লক্ষীর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে তার কপালে অনেক চুমু খেলো। তারপর বলল,তুই সত্যিই খুব লক্ষী মেয়ে বটে রে !
           এখন পাড়ার সবাই যে-যার ঘরে ফিরে যাচ্ছে। যাবার সময়,তাদের অনেকেই  লক্ষীর মাথায় হাত রেখে বলে যাচ্ছে,সত্যি, আমাদের খুব গর্ব হচ্ছে রে তোর জন্য। আনন্দও হচ্ছে। তুই এ’পাড়ার  লক্ষীমেয়েই বটে।
ধারাবাহিক উপন্যাস
লাচুঙের নেকড়ে
শ্রীকান্ত অধিকারী

পর্ব ৪১

নিমেষে তীব্র এবং তীক্ষ্ণ চিৎকার আর আলোর প্রতিঘাতে আপার জঙ্গুর কুসঙ থেকে আরো উপরে শাক্যং পেন্টঙ্গের ঘন জঙ্গল যখন আন্দোলিত, অদ্ভুতভাবে লেবারের দল হাতিয়ার বাগিয়ে সামনের দিকে যাওয়ার জন্য সেরগিল সাহেবের আদেশের অপেক্ষায়।  
কিন্তু সেরগিল সাহেব পাথরের মত চুপ। নড়ন-চড়নহীন এক অদ্ভুত জীব। বড়মামা দীপকবাবু এবং ছেত্রী ম্যাডাম সহ কনস্টেবলের দল বন্দুক উঁচিয়ে চেয়ে আছে কোন অজানা  বিভীষিকার দিকে।  
কাঞ্চন জঙ্ঘা ন্যাশানাল পার্ক থেকে আরো উত্তরে সিনিওল চু যেতে গেলে এই পথে পায়ে হেঁটে যেতে হয়। কিন্তু সে দিন তিনেকের পথ। কিন্তু ততক্ষণে চায়না থেকে গুলি বর্ষণের সমূহ সম্ভাবনা থেকেই যায়।–কথাগুলো ছেত্রী ম্যাডাম বলছিলেন। কিন্তু তার কথা শেষ না হতেই ভয়ঙ্কর এক পাহাড়ি ঝোড়ার মত চারধার থেকে সরবে নীচে নামার হাড় হিম করা শব্দ ভেসে আসে।

 লেপচাদের মহিলা পুরোহিতকে (লেপচারা যাকে মুন বলে) ঘিরে শ পাঁচেকের বেশি লেপচা এসে ধীরে ধীরে জমা হচ্ছে, এদিকে ছোট মামাকে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে দেখে রামসির যেন মনে হল ছোট মামাকে এরা বলি দেবে। মাসির বাড়িতে কালী পুজোতে যেমন করে পুজোর সময় ছাগলকে বেঁধে রাখে ঠিক তেমনি। ওদিকে জুং এবং ওর মা ছোটমামার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এখনো নাকে লাগছে জুনিপারের সুগন্ধি পাতা পোড়ানোর গন্ধ। 
রামসি খুব আফসোস করে এই ভেবে, বেশ ছিল, মামার কথায় ঠিক ছিল- শান্ত হয়ে ধৈর্য ধরে শেষ দেখে ছাড়তে, কিন্তু তার আগেই ছোটমামা কেন যে ফিসফিস করতে গেল আর বার বার বোতলগুলো ভেঙে ফেলল। অথচ ছোট মামার তো হাত কাঁপে না কিংবা পারকিনসন রোগ আছে বলে আগে শোনে নি। তবে! 
রামসির মনে পড়ে ছোটমামা একবার বলেছিল, -এই লেপচাদের এক রাজা পোহাক্তক পাণির কথা। তিনি নাকি অ্যালেকজান্ডার সঙ্গে যুদ্ধের সময় চন্দ্রগুপ্তকে সাহায্যের জন্য তক্ষশীলায় প্রচুর  লেপচা সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিল। 
রামসি বলেছিল কী করে জানলে? 
বই পড়ে। ছোট মামা বলে, -চুনাক আখেন। সে এক বহু পুরোনো লেপচা বই । 
তুমি বইটা পড়েছ?
না। শুনেছি। 
অথচ এদেরই হাতে আজ ওরা বন্দী হয়ে পড়ে আছে! ভাবলে চোখ ভিজে আসে। আর বোধ হয় শেষ রক্ষা হল না! ঠিক সে সময়েই জুং কর্কশ গলায় বলে ওঠে – Sikkim is only for lepchas and only Sikkimese. We are not Indian.
উপস্থিত সকলেই এক সঙ্গে চিৎকার করে ওঠে – উই আর নট ইন্ডিয়ান। উই ডু নট ফলো দ্য নাইন্টিন ফিফটিস এগ্রিমেন্ট! 
তারপর ওরা পাহাড় বন কাঁপিয়ে যা বলে চিৎকার জুড়ে ছিল তা থেকে রামসিং যেটুকু বুঝেছিল তা হল, ওরা ফুন্টসগ চোগিয়ালকেই মানে। চেগিয়ালের বংশধরই হলেন ওদের রাজা। মাঝে মাঝে ‘তেন স্যুঙ নামগিয়ালে’র নামেও উল্লাস করে। ওরা সিকিম চায়। শুধুই ওদের নামে। সিকিম হল ইয়ক্‌সাম। যেখানে তিন জ্ঞানী লামা আলোর দীপ এনেছিলেন ইয়ক্‌সামে। সেন্টার অফ সিক্কিম! 
সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রের মত উচ্চারণ করতে শুরু করে ওই হাজির হওয়া লোকগুলো -
‘কাঞ্চিন জিঙ্গা, প্রেমিকাদুপ 
নে-চে তাঙ্‌লা, দুবশা তেম্বার 
জুভিঙ্গা পেম্‌সুন্‌ সারকিয়াম… ’
মন্ত্র শেষ হয় না। জুঙের বক্তব্যও শেষ হয় না, তার আগেই মেঘ গর্জনের মত একটানা গুম গুম গুম করে বিকট শব্দ পুব আকাশের দিক থেকে যেদিকে ভারত ও আধুনিক চিনের সীমানারেখা জিরো পয়েন্ট আছে, যেদিকে লাচেন নদী নিচে নেমে আসছে সেই দিক থেকে ভেসে আসে।  
 চকিতে রামসিঙের মনে পড়ে সিক্কিমের সব চেয়ে বড়ো মঠ ‘পেমিওঙচি’ থেকে এমনি গুরু 
গম্ভীর আওয়াজ বেরিয়ে আসে। কিন্তু ভুল ভাঙতে সময় লাগে না। মাথার ওপর দিয়ে তীক্ষ্ণ ফলার মত পাহাড়ের চূড়োর বাঁকে ফট ফট ফট করতে করতে হেলিকপ্টার একটা বেরিয়ে গেল।
রামসি চমকাবার আগেই ছোট মামা চেঁচিয়ে ওঠে,- রামসিং বোতল লে আও। ভেঙে ফেল সব। ভেঙে ফেল। 
(ক্রমশ)
উৎসব মরশুমে আমেরিকাতে বাসবদত্তা কদম

পর্ব ১৮ বিশাল দুই বাঁকানো দাঁত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই ম্যামথ। তাকে পেরিয়ে আমরা ঢুকে পড়লাম হিস্ট্রি এন্ড সায়েন্স মিউজিয়মের অন্দরমহলে। সে ম্যামথ নেহাত এক রেপ্লিকা হলেও একটু যেন কেঁপে ওঠে অন্তর। একসময় এই পৃথিবীর বুকেই দাপিয়ে বেড়াতো এরকম বিশাল, বিশাল ম্যামথ। সব থেকে ছোট যে সব ম্যামথ ছিল, তারাও নাকি আয়তনে ছিল এশিয়ান হাতিদের সমান। তারপর আইস এজের বরফ গলতে শুরু করলো যখন, তখন থেকেই সম্ববত এদের খাদ্যাভাব শুরু হয়ে গেল। চারিদিকে জল আর জল। খাদ্য নেই। এরপর ধীরে ধীরে এরা চলে গেল বিলুপ্তির পথে। 
সেই হাজার হাজার বছরের প্রাচীন রাজাকে পিছনে ফেলে আরেক বিশাল রাজ্যের মধ্যে ঢুকে পড়লাম আমরা। অবশ্যই বিশাল। এই মিউজিয়মের এলাকা হচ্ছে তিন লক্ষ পঁচিশ হাজার স্কোয়ার ফুটের মতন। অজস্র তার সম্ভার। এই পুরো জায়গা জুড়ে সময় যেন থমকে আছে। কোথাও আমাজনের জঙ্গলের হিংস্র প্রাণী, কোথাও আদিম মানুষ, কোথাও অসাধারণ সুন্দর সব পাখি। কোনো জায়গায় কাঁচের কেসে বসে আছে প্রকৃতির বিস্ময় অপূর্ব সব কৃষ্টাল বা স্ফটিক। অজস্র ফসিল, বিভিন্ন ধরণের পাথর। একের পর এক দেখেই চলেছি। বুঝতে পারছি এ সমস্ত কখনোই এক দিনে দেখে ওঠা সম্ভব নয়। বার বার ফিরে আসতে হবে এমনই তার সংগ্রহ। এর সঙ্গে রয়েছে বেশ কিছু ভালো শো। খানিকক্ষণ বসতেই হয় সেই শো দেখতে। এই সংগ্রহশালা শুরু হয়েছিল ১৯১০ সালে কিংবা তার   আশেপাশে। প্রস্তুতিপর্ব শুরু হয়েছিল অবশ্য এর অনেকদিন আগে। এখনো পর্যন্ত এমনকি ২০২৩ সালেও সারা পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে বেশি ট্যুরিস্ট দেখতে গেছেন এই মিউজিয়মটি।
চিত্রগ্রাহক - বাসবদত্তা।

এত ভালো সব প্রদর্শনী দেখতে দেখতে হঠাৎ করে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে করলো না আমার। আর তার ফলে এখান থেকে বেরোতে গিয়ে আমি রাস্তা হারিয়ে ফেললাম। সঙ্গের লোকজনকে বলেছিলাম তোমরা এগোও আমি আসছি। যেন এ মিউজিয়ম আর তার আশেপাশের এলাকা আমার কাছে জলভাত আর কি! তারপর অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে কিছুই চিনতে পারছি না। অবশেষে আমাকে রাস্তা দেখালো সেই প্রাগৈতিহাসিক ম্যামথ। কে যে কখন কিভাবে কাজে আসে, আগে থেকে কি বলা যায়!
রাস্তা যখন চিনতে পারছি না, আবার সিঁড়ি দিয়ে ওপরে চলে এলাম। ঢুকে পড়লাম মিউজিয়মের ভেতরে। ফ্রি টিকিটের সুবিধায় ঢোকা বেরোনোর সমস্যা নেই। মনে পড়লো ঢোকার সময় ম্যামথের কথা। এবার সেই ম্যামথের কাছে চলে গেলাম বেশ খানিকটা। ভাবলাম ঢোকার সময় একে কোন দিক থেকে দেখেছিলাম। ঘুরে ঘুরে তাকে দেখতে দেখতে অবশেষে খুঁজে পেলাম সেই চিচিং ফাঁকের দরজা। বাপরে বাপ। ভাগ্যিস সে দাঁড়িয়েছিল, নাহলেই হয়েছিল আর কি! বেরিয়ে দেখলাম লোকজন আমাকে ফেলেই দিব্যি আইসক্রিম খাচ্ছে। আমি মানুষটা যে হারিয়ে গেছি আর ফিরি কি না ফিরি; তা নিয়ে কারুর কোনো মাথা ব্যথা নেই! আমিও লজ্জায় কাউকে কিছু বললাম না। আইসক্রিম খাওয়া তার থেকে অনেক ভালো কাজ মনে হল। আসলে জানতাম, বললেই সকলে হেসে উঠবে!
লিস্টি খুলে দেখলাম – এবারের গন্তব্য ওয়ার্ল্ড ওয়ার মেমোরিয়াল টু।
লিংকন মেমোরিয়াল এবং ওয়াশিংটন মনুমেন্টের প্রায় মাঝখানে বলা যায় এই মেমোরিয়াল দাঁড়িয়ে আছে।

জয়দীপ সাহা
অষ্টম শ্রেণি, সোদপুর হাই স্কুল, উত্তর ২৪ পরগণা


জ্বলদর্চি ছোটবেলার ১৭১ সংখ্যার পাঠ প্রতিক্রিয়া 

মলয় সরকার

প্রথমেই বলি, অনেকদিন পর আমি এব্যাপারে কিছু লিখছি। প্রায় নিয়মিতই পড়ি এটি তবে সব সময়েই কিছু লেখা হয় না।
আসলে মৌসুমীর প্রচ্ছদ নির্বাচনটা আমার বরাবরই  খুব ভাল লাগে। এটা,আমি আগেও অনেকবার বলেছি।এবারে সুদীপ পাত্রর এই ছবিটি তো সেই বসন্ত কালকেই মনে পড়িয়ে দেয়, ‘’ রঙ লাগালে বনে বনে-”। আমি বর্তমানে বিদেশে থাকলেও, এখানে প্রকৃতিতে অনুভিব করছি, সেই ঋতুরাজের আগমন বার্তা। রাজা যখন কোথাও যান, তাঁর আবাহন হয় লাজকুসুমে।প্রকৃতিতে যেন তারই প্রস্তুতি।
এর পরেই আসি ভিতরের দিকে।সুমনা সাহা শুরু করেছেন প্রাণিদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে। খুব ভাল ব্যাপার। শিশুরা অনেক কিছু জানতে পারবে এই প্রাণিদের সম্বন্ধে আশা করি।আর, শিশুদের গল্পে যে  সব প্রাণীরা আসে, তাদের দিয়ে পরিচিতি করানোর কায়দাটা ভালই।ওরা তাহলে, এই প্রাণীদের সম্বন্ধে আগে আকর্ষণ বোধ করবে।

লাচুঙের নেকড়ে তো এগোচ্ছে নিজস্ব গতিতে। এর মধ্যে পাঠক অনেক কিছু জানতে পারছে৷ ইয়েলোস্টোন থেকে শুরু করে অনেক কিছু জ্ঞাতব্য আশ্চর্য বিষয় পরিবেশিত হচ্ছে সুন্দর ভাবে।চলুক এই প্রবাহ।
শ্রীপর্ণা আর প্রবাহনীল তো ভবিষ্যতের সম্পদ। হাতের সৃষ্টি তো দারুণ, সে লেখায়ই হোক বা আঁকায়। তাকিয়ে থাকতেই হবে ওদের দিকে। আকাশও বেশ বড় কবিতা লিখেছে সুন্দর। বাসবদত্তার লেখা পড়তে পড়তে মনে পড়ে যাচ্ছিল, ওই সব জায়গায় হেঁটে বেড়ানোর সময়গুলো। খুব ভাল। যারা দেখে নি, তাদের কাছে এগুলোর সুন্দর পরিচিতি হচ্ছে।

সব মিলিয়ে পত্রিকা এগিয়ে চলছে স্বচ্ছন্দ গতিতে।
এগিয়ে চল মৌসুমী তোমার সৃষ্টি নিয়ে।


Post a Comment

0 Comments