জ্বলদর্চি

স্বদেশ চেতনায় মহাকবি ও দক্ষ প্রশাসক নবীনচন্দ্র সেন /প্রসূন কাঞ্জিলাল

স্বদেশ চেতনায় মহাকবি ও দক্ষ প্রশাসক নবীনচন্দ্র সেন 

প্রসূন কাঞ্জিলাল


নবীনচন্দ্র সেনের ভূমিকা একদিকে যেমন বাংলা সাহিত্যের  প্রধানতম কবি হিসেবে, তেমনি তার ভূমিকা প্রশাসক হিসেবে, আবার সংগঠক হিসেবেও তার ভূমিকা অনেক।
  'বেহারে যখন তিন বৎসর শেষ হইয়া বদলি আসন্ন হইল, তখন স্বামী স্ত্রী দুজনেই ভাবিলাম যে বহু বরস বিদেশে উড়িষ্যা বাঙ্গালা বেহার ঘুরিয়া কাটাইলাম। যদি বাড়ির নিকটে ফেণী সাব-ডিভিসনটি পাইতে পারি বড় সুবিধা হয়। শ্রীভগবান সেই আশা আজ পূর্ণ করিলেন। মনে কত আনন্দই হইয়াছে। আমি পার্শনেল এসিসটেন্ট থাকিতে ১৮৭৫ সালে এ সাবডিভিসন খোলা হইয়াছিল। এই স্থানটি চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লা হইতে বহুদূরে, অথচ তিন জেলার রাস্তার সঙ্গম স্থলে অবস্থিত। এখানে দিনে ডাকাতি হইত। আমার চেষ্টায় সাব-ডিভিসন খোলা হয়, এবং এই স্থানটি নির্বাচিত হয়। এ কারণে এ স্থানটির উপর আমার একটুক আন্তরিক স্নেহ ছিল।' 
   'আমার জীবন স্মৃতিকথা'র একাংশে মহাকবি নবীনচন্দ্র সেন এমনভাবেই লিখেছিলেন ফেনীতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তার কর্মরত সময়ের স্মৃতি।  নবীনচন্দ্র সেন দুই দফায় প্রায় ৯ বছর ফেনীতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আধুনিক ফেনীর গোড়াপত্তন মূলত হয়েছিল তার হাত ধরেই।  ১৮৮৪ সালের নভেম্বরে নোয়াখালী জেলার ফেনী মহকুমাতে বদলি হন নবীনচন্দ্র সেন। ১৮৭৫ সালে  যখন ফেনী মহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো, তখন নবীনচন্দ্র সেন ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কর্মরত। মূলত নবীনচন্দ্র সেনের আন্তরিক পদক্ষেপের কারণেই মহকুমার মর্যাদা লাভ করেছিল ফেনী।   
নবীনচন্দ্র সেন ফেনীতে গিয়ে দেখলেন তাকে জঙ্গলাকীর্ণ অজপাড়াগাঁয়ে পাঠানো হয়েছে। এরপরই তার প্রশাসনিক দক্ষতায় ফেনীতে সর্বপ্রথম এন্ট্রান্স বা হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে সেই ফেনী সরকারি পাইলট হাইস্কুল বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। কেবল তাই নয়, ফেনীতে প্রথম হাসপাতাল, ফেনী বাজার স্থাপন, ফেনী স্টেশন, জেলখানা, ট্রেজারিসহ আধুনিক শহরের যাবতীয় ভিত্তি স্থাপন করে গিয়েছিলেন তিনি। ফেনী শহরের মাঝামাঝি ছিল একটি সুপ্রাচীন দিঘি। এই দিঘির চতুর্দিকে পাড় উঁচু করে তিনি ব্যবস্থা করেছিলেন সাপ্তাহিক দুদিন
হাট-বাজারের।

ফেনীর রাজাঝির দিঘিকে কেন্দ্র করেই নবীনচন্দ্র সেন গড়ে তুলেছিলেন ফেনী শহর। 
ফেনীতে নতুন শহর সৃষ্টি যে তার জন্য কতটা কঠিন ছিল, তা কিছুটা বোঝা যায় তার আত্মস্মৃতি 'আমার জীবন' পড়লে। আত্মস্মৃতিতে নবীনচন্দ্র সেন শুধু ১১৭ পৃষ্ঠা লিখেছেন তৎকালীন ফেনীর নানা বিষয় ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে, যাকে অনেকটা ফেনীর ইতিহাস হিসেবেও আখ্যায়িত করা যায়।

সেখানে একাংশে তিনি লিখেছিলেন, 'ভাবিলাম রামচন্দ্র চৌদ্দ বৎসর বনবাস ও পাণ্ডবেরা বারো বৎসর বনবাস করিতে পারিয়াছিলেন। তাহারা রাজা ছিলেন। আর আমি দরিদ্র তিন চারিটি বৎসর কি তাহা পারিব না? হরি বলিয়া কার্য আরম্ভ করিলাম।' প্রশাসক হিসেবে নবীনচন্দ্র সেনের সৃষ্টি বলা চলে আজকের ফেনী শহরকে । কবি হিসেবে বাংলা সাহিত্যে তার সব সৃষ্টি যেমন প্রমাণ, সংগঠক হিসেবে প্রমাণ বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, দক্ষ প্রশাসক হিসেবে প্রমাণ জঙ্গলাকীর্ণ স্থান থেকে আজকের আধুনিক ফেনী শহর। 

নবীনচন্দ্র সেন মহাশয়ের জন্ম ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৮৪৭ ও দেহাবসান ২৩ জানুয়ারি, ১৯০৯।  চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার অন্তর্গত পশ্চিম গুজরার (নোয়াপাড়া) প্রাচীন জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতার নাম গোপীমোহন রায় এবং মাতার নাম রাজরাজেশ্বরী।তার পূর্বপুরুষরা মহারাষ্ট্র বিপ্লবের সময় রাঢ়বঙ্গ থেকে চট্টগ্রামে এসে ভূপত্তন করেছিলেন।  
নবীনচন্দ্র সেনের পড়াশোনার হাতেখড়ি হয়েছিল চট্টগ্রামে নিজ গ্রামে। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে কলকাতায় গমন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে  এফ এ  এবং  স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বি এ পাশ করেছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্সি কলেজে থাকার সময় প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ সাটিক্লফের সুনজরে পড়েছিলেন তিনি। তারই সুপারিশে কলকাতার বিখ্যাত হেয়ার স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু হয়েছিল নবীনচন্দ্র সেনের।
 কিছুদিন পরে বেকার হয়ে পড়েন। পরে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন। মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত হন। প্রথমে ১৭ জুলাই ১৮৬৮ বেঙ্গল সেক্রেটারীয়েটের এসিষ্ট্যাণ্ট পদে যোগ দেন। ২৪ জুলাই ১৮৬৯ যশোরে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর পদে তাঁকে পদায়ন করা হয়। কর্মজীবনে তিনি বাংলা, বিহার, ত্রিপুরার অনেকস্থানে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন ডেপুটি কালেক্টর এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে । মাগুরাতে কিছুদিন এসডিও থাকার পর তাকে পাঠানো হয়েছিল নোয়াখালীতে। সেখানে পাঁচ মাস এসডিও ছিলেন তিনি। এ সময় নোয়াখালীরও ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল। বিশেষ করে নোয়াখালীর স্টিমার সার্ভিস তিনিই চালু করেছিলেন। ।তারপরই তিনি দুই দফায় মোট প্রায় নয়বছর ফেনীতে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং নিজ গুনে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। প্রায় ছত্রিশ বছর সরকারি চাকুরি করার পরে ১ জুলাই ১৯০৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

🍂

‘ধন্য আশা কুহকিনী! তোমার মায়ায়
মুগ্ধ মানবের মন, মুগ্ধ ত্রিভুবন!...’

বাংলা ব্যাকরণের সারমর্মের বদৌলতে উল্লিখিত কাব্যাংশের সঙ্গে পরিচিত হলেও অনেকেই জানি না যে এটি কবি নবীনচন্দ্র সেনের লেখা। বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার জীবন ও পলাশী যুদ্ধের মর্মান্তিক পরিণতি নিয়ে রচিত কাব্যগ্রন্থ ‘পলাশীর যুদ্ধ’-এর জন্য তিনি মহাকবি হিসেবে সম্বোধিত হন। কিন্তু নবীনচন্দ্র সেনের পরিচয় কবি বা মহাকবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। স্বাদু গদ্যে লেখা তার আত্মজীবনী ‘আমার জীবন’ও পেয়েছে উত্তম গদ্যসাহিত্যের স্বীকৃতি। তিনি শুধু সুসাহিত্যিকই ছিলেন না, প্রশাসক হিসেবেও ছিলেন সফল এবং জনকল্যাণমুখী। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বাংলাদেশের এ কীর্তিমানের কর্ম জনমানসে এখন বিস্মৃতপ্রায়। তাই সারমর্মে বহুল পঠিত কাব্যাংশের রচয়িতার পরিচয় সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল নই । গবেষণা পর্যায়েও যে দু-চারটি গ্রন্থ রচিত হয়েছে সেগুলোও প্রামাণ্য বলে মেনে নিতে দ্বিধা হয় তথ্যপ্রমাণের কারণে। এমতাবস্থায় নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে নিয়ে প্রথম কাব্যরচনাকারী নবীনচন্দ্র সেনের সাহিত্য ও কর্মজীবন নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী গ্রন্থ ‘নবীনচন্দ্র সেন চিন্তা ও দর্শন’ আশা জাগায়। উনিশ শতকের অন্যান্য রেঁনেসা পুরুষ রামমোহন রায়, সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখের সঙ্গে নবীনচন্দ্রের মিল হলো তিনিও ছিলেন ইংরেজ সরকারের একজন প্রশাসক। যদিও চাকরিজীবনে তিনি খুব স্বস্তিতে ছিলেন তা বলা যাবে না।সরকারী কাজে প্রতিভার পরিচয় দিলেও তাঁর স্পষ্টবাদী স্বভাবের জন্য উপরওয়ালার দ্বারা নির্যাতন ভোগ করেন। শেষে স্বনামধন্য মতিলাল ঘোষের সংস্পর্শে এসে স্বদেশীয়ানায় উদ্বুদ্ধ হন।
 চাকরিজীবনকে তিনি বলেছেন ‘দাসের জীবন’। কিন্তু অল্পবয়সেই পিতৃহীন হয়ে বিশাল পরিবারের ব্যয়ভার বহনের জন্য সরকারি চাকরি ভিন্ন তার কোনো উপায়ও ছিল না। চাকরির প্রথমদিকে নবীনচন্দ্র তার শিক্ষা ও ইংরেজি জ্ঞানের কারণে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রশংসা পেলেও পরে নানাভাবে নাজেহাল হয়েছেন। তার কারণ সাহিত্যচর্চা, তার কারণ সাহিত্যে জাতীয়তাবোধের প্রকাশ। সিরাজউদ্দৌলাকে নিয়ে কাব্যরচনাই এর কারণ। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মুহুর্মুহু কারণ দর্শানোর নোটিসের ভিত্তিতে তাকে বারবার সংশোধন করতে হয়েছে কাব্যগ্রন্থ, প্রতিটি সংস্করণেই পরিমার্জনার বাধ্যবাধকতা চাকরিজীবনকে ‘দাসের জীবন’ মনে করতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো, এত বাধা সত্ত্বেও ‘পলাশীর যুদ্ধ’র হাত ছাড়েননি। তিনি শিল্পচর্চার জন্য শিল্পচর্চা ধারণায় ব্রতী হয়ে শিল্পচর্চা করেননি। তিনি একদিকে যেমন হেমচন্দ্রের শিষ্য হয়ে সহজভাষায় কাব্যচর্চা করেছেন তেমনি আদর্শিকভাবে ছিলেন সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের অনুসারী। ফলে উনিশ শতকীয় হিন্দু জাতীয়তাবোধ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সনাতন ধর্ম সংস্কার করে ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠার তাড়নাও তার সাহিত্যে প্রতিভাত হয়েছিল। তবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রভাবে তার রচনায় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দুর্লভ নয়। সাহিত্যে নবীনচন্দ্র মাইকেল মধুসূদন দত্ত দ্বারাও প্রভাবিত ছিলেন। মূলত মাইকেলের ‘মেঘনাদ বধ’র সাফল্যের পরেই মহাকাব্য রচনায় ব্রতী হন। সে সময় অনেকেই মহাকাব্য রচনায় সচেষ্ট হলেও নবীনচন্দ্র সেনের ‘পলাশী যুদ্ধ’ই মেঘনাদ বধের পরের স্থান অধিকার করে। তার রচিত ‘আমার জীবন’ শুধু রচনাগুণেই বিশিষ্ট নয়, বরং জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা তাকে করে ঐশ্বর্যময়। সে সময়ের সমাজবাস্তবতার এক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে এই আত্মজীবনীর কদর কখনো কমবে না। প্রশাসক হিসেবে স্থানীয় উন্নয়নে জনমতের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি। সাহিত্যিক ও প্রশাসক দুই চরিত্রেই নবীনচন্দ্র ছিলেন সমান সক্রিয়। ফলে তার মানসপটে সাহিত্যদর্শন ও উন্নয়নদর্শনের একটি সুষম মিশ্রণ ঘটেছিল।  আমরা দেখেছি নবীনচন্দ্র (সাহিত্যে) হিন্দু জাতীয়তাবাদ দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন কিন্তু প্রশাসক হিসেবে এমনই ধর্মনিরপেক্ষ আধুনিক মানবিক চেতনার অধিকারী ছিলেন যে, আধ্যাত্মিক পুরুষ পাগলা মিয়া (রহ.)-এর জন্য ফেনী বাজারের পাশে দরগাহ তৈরি করে দিয়েছিলেন। নবীনচন্দ্রের উন্নয়ন দর্শন এটাই নিজের ধর্মের প্রতি আস্থাশীল থেকেও অপর ধর্মের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও সহাবস্থান প্রমান করে। নবীনচন্দ্রের কর্মজীবনের এমন দর্শন আমাদের অনুসরণীয়।

  কবি নবীনচন্দ্রের প্রথম কবিতা 'কোন এক বিধবা কামিনীর প্রতি' তৎকালীন সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পত্রিকা এডুকেশন গেজেটে যখন প্রকাশ হয়েছিল, তখন তিনি এফ এ শ্রেণী বা উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। প্রথম গ্রন্থ 'অবকাশরঞ্জিনী' প্রকাশিত হয়েছিল ১২৭৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখের দিনে। এটি ছিল 'অবকাশরঞ্জিনী'র প্রথম খণ্ড। দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল আরও ছয় বছর পর।

বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদন পরবর্তী কাব্য রচয়িতাদের মধ্যে দুজন ছিলেন সবচেয়ে খ্যাতিমান। প্রথমজন হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্যজন নবীনচন্দ্র সেন। বাংলা মহাকাব্যের ধারায় হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও নবীনচন্দ্র সেন এই দুজনের অবদান হলো স্বদেশ প্রেমের উত্তেজনা সঞ্চার। 

হেমচন্দ্র তার 'বৃত্রসংহার' কাব্যে যেমন পৌরাণিক কাহিনীর মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আহ্বান জানিয়েছিলেন। ঠিক তেমনি নবীনচন্দ্র সেন 'পলাশীর যুদ্ধ' মহাকাব্য দিয়ে তুলে ধরেছেন অনন্য এক স্বদেশপ্রেমী জাগরণ। 'পলাশীর যুদ্ধ' মহাকাব্য প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৭৫ সালে, যা পূর্বেই উল্লেখিত।
 মহাকাব্যের ধারায় এক নতুন বিস্তৃতি দেখিয়েছেন নবীনচন্দ্র সেন। যেমন তার তিন খণ্ডে রচিত মহাকাব্য রৈবতক, কুরুক্ষেত্র এবং প্রভাস ছিল মহাকাব্যের তিনটি স্বতন্ত্র অংশ। এই কাব্য তিনটির মধ্য দিয়ে কৃষ্ণ চরিত্রকে নবীনচন্দ্র সেন বিচিত্র কল্পনায় ফুটিয়ে তুলেছেন। যার তুলনা বাংলা ভাষায় আর পাওয়া যায় না। 

নবীনচন্দ্র সেনের মতে, আর্য ও অনার্য সংস্কৃতির সংঘর্ষের ফলেই মূলত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ হয়েছিল। আর্য ও অনার্য দুই সম্প্রদায়কে মিলিত করেই শ্রীকৃষ্ণ প্রেমরাজ্য স্থাপন করেছিলেন।

নবীনচন্দ্র সেন মহাকাব্য যেমন রচনা করেছেন, তেমনি ভগবদগীতা ও মার্কণ্ডেয়-চণ্ডীরও পদ্যানুবাদ করেছেন। যিশুখ্রিস্টের জীবন অবলম্বনে তিনি যেমন লিখেছিলেন কাব্যগ্রন্থ 'খ্রিস্ট', তেমনি বুদ্ধদেবের জীবন অবলম্বনে লিখেছেন 'অমিতাভ', কিংবা শ্রী চৈতন্যের জীবন অবলম্বনে 'অমৃতাভ'। কেবল পদ্যেই নয়, গদ্যেও তিনি ছিলেন অতুলনীয়। তার আত্মজীবনী 'আমার জীবন' খুবই সুখপাঠ্য। সেখানে নবীনচন্দ্র সেন  তার বাল্যজীবন, ছাত্রজীবন ও পিতৃহীন জীবন অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন নিজের জীবনের নানা অধ্যায়, ভারতবর্ষের তৎকালীন সময়কালসহ বহুদিক।  

শৈশবে নবীনচন্দ্র সেন ছিলেন দেবদেবী ভক্ত। স্কুলে পড়ার সময় শিক্ষক আনন্দবাবু তার হৃদয়ে এক বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন, চিনিয়েছিলেন ব্রাহ্মধর্মের ইতিবৃত্ত। যা শুনে ব্রাহ্মধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন নবীনচন্দ্র। তিনি তার আত্মকথায় লিখেছিলেন, 'খ্রিস্টান ও মুসলমানেরা হিন্দুদিগকে ঠাট্টা করিয়া বলিত, 

'আসিলে আশ্বিন হিন্দু হয় পাগল। 
গিড়ার কড়ি দিয়ে কেনে ছাগল। 
কায়স্থে কাটে, বামনে খায়।
মাটির ঠাকুর হাঁ করে চায়।' 

এতদিন উহা হাসিয়া উড়াইতাম। কিন্তু আনন্দবাবু বুঝাইয়া দিলেন এই মহা বাক্যের মধ্যে গভীর তত্ত্ব আছে। খড় মাটির দ্বারা মানুষের গঠিত ঠাকুর কি প্রকারে ঈশ্বর হইতে পারে? এরূপ পুতুল পূজা 'পৌত্তলিকতা', - কুসংস্কার- ঈশ্বরের অবজ্ঞা। আর বুঝাইতেন যে গোপনে লাড়ু- গোপাল-সন্নিভ বিস্ফারিতাধর পাঁওরুটি ভক্ষন করা যায়। ব্রাহ্মধর্মের মাহাত্ম্য ও সত্যতা হৃদয়াঙ্গম বা উদরস্থ করিতে, আমি পেটুকের জন্য আর অন্য যুক্তির আবশ্যক হইল না।' পরবর্তীতে অবশ্য ব্রাহ্মধর্ম ত্যাগ করেছিলেন নবীনচন্দ্র সেন। 

তৎকালীন পূর্ববঙ্গে যে কয়েকজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন তাদের মধ্যে লেখক ছিলেন বেশ কয়েকজন। তাদের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গৌরদাস বসাক, পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নওয়াব আবদুল লতিফের মতো বিখ্যাত লেখকরাও ছিলেন।
 এই লেখকদের ক্ষেত্রে অনেকটা সহজ হলেও, নবীনচন্দ্র সেনের সময়ে নিয়োগ পরীক্ষা ছিল বেশ কঠিন। কারণ সে বছরই বাংলার গভর্নর লর্ড গ্রে প্রবর্তন করেছিলেন নিয়োগ পরীক্ষা। তাও আবার দুই দফায়। চাকরিতে ঢোকার আগে দিতে হতো লোয়ার স্ট্যান্ডার্ড এবং চাকরিতে ঢোকার পর ৬ মাসের মধ্যে হায়ার স্ট্যান্ডার্ড পরীক্ষা। কেউ যদি কোনো এক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হতে পারতেন, তবে সাঙ্গ হতো সাধের চাকরি। যার সবচেয়ে বড় প্রমাণ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অনুজ সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, চাকরিতে থাকা অবস্থায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ার কারণে তাঁর চাকরি চলে যায় ।

প্রথমদিকে এই নিয়োগ পরীক্ষার আগে শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা, বংশমর্যাদা ও সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে সরকার প্রত্যক্ষ নিয়োগ দিত বলে সেভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। যার কারণে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, নওয়াব আবদুল লতিফ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং  সঞ্জীব চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিয়োগ পেয়েছিলেন পরীক্ষা ছাড়াই অর্থাৎ শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সুপারিশের ভিত্তিতে। নিয়োগপ্রার্থীরা সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য হওয়ায় তাদের সুপারিশ জোগাড় করতে কখনোই সমস্যা হতো না। যার ফলে তারাই বরাবর ম্যাজিস্ট্রেট হতেন।  
    সংগঠক হিসেবে নবীনচন্দ্র সেনের অবদান বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের আগে কলকাতার শোভাবাজারের রাজপরিবারের সদস্য বিনয়কৃষ্ণ দেব ১৮৯৩ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন 'বেঙ্গল অ্যাকাডেমি অফ লিটারেচার'। সভাপতি হলেন বিনয়কৃষ্ণ নিজেই। মূলত সংস্কৃতি সাহিত্যের সাহায্য থেকে বাংলা সাহিত্যের উন্নতি সাধন করা হবে, এমনই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু কার্যবিবরণী লেখা থাকত ইংরেজিতে।

বাংলা ভাষার সাহিত্যচর্চার প্রতিষ্ঠানের নাম ইংরেজি দেখে আপত্তি তুলেছিলেন নবীনচন্দ্র সেন, রবীন্দ্রনাথসহ সাহিত্যিকরা। তখন ১৩০১ বঙ্গাব্দের ১৭ বৈশাখ এই সভার নামকরণ করা হয়েছিল 'বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ'। যেখানে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছিল রমেশচন্দ্র দত্তকে। আর সহ-সভাপতি হন নবীনচন্দ্র সেন এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজও বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ বাংলা সাহিত্য গবেষণার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বমহলে স্বীকৃত।
   এবার তাঁর রচিত সাহিত্য সম্ভারের কাব্যগুন সম্পর্কে  একটু বিস্তৃত আলোচনা  করা যাক। 
    "আমি ‘এডুকেশন গেজেট' লিখিতে আরম্ভ করিবার পূর্বে স্বতন্ত্র  বিষয়ে খণ্ডকবিতা বঙ্গভাষায় ছিল না....... 'অবকাশরঞ্জিনী' বোধ হয় বঙ্গভাষায় এরূপ ভাবের প্রথম খণ্ডকাব্য” (“আমার জীবন' ২য় ভাগ) গীতিকবিতার প্রথম রচয়িতা রূপে এই অভিমানী আত্মভাষণ কবি নবীনচন্দ্র সেনের। তিনি কাব্য রচনায় হেমচন্দ্রের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। ‘এডুকেশন গেজেট’সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় কবিতা লিখে খ্যাতিলাভ হয়। এই তিনটি কাব্যকে ঊনবিংশ শতাব্দীর মহাভরত’ (Mahavarata of the Nineteenth Century) বলা হয়েছে।

নবীন সেনের কবি-পরিচয় বৈচিত্র্যময়। আখ্যানকাব্য মহাকাব্য, খণ্ডকাব্যের কবি, স্বদেশপ্রেমের কবি, রোমান্সরসের কবি, এমনকি ভক্তি বা ধর্মতত্ত্বের কবি পর্যন্ত তা বিস্তৃত হতে পারে। নব-মানবতার আদর্শ ছিল তাঁর উদ্দীষ্ট, অথচ মধ্যযুগীয় ধর্মসংস্কারও ছিল অত্যাজ্য। ফলে নব্য যুক্তিবাদ এবং ভক্তিধর্মের দ্বন্দ্বে তাঁর চিত্ত হয়েছে আলোড়িত। তাঁর মানবতাবাদী অভীপ্সা উনিশ শতকের যুগচেতনারই পরিচায়ক। মহাভারতকে অবলম্বন করে তার মানবধর্মের প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা মহাকাব্য রচনার মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হয়। এই মানবধর্ম প্রতিষ্ঠার সংকল্প বাদে স্বদেশচেতনার তথা স্বজাত্যবোধের আবেগধর্মী প্রকাশও তাঁর কাব্য-কবিতার মধ্যে দেখা যায়। উপরন্তু প্রাক্-রবীন্দ্রপর্বের গীতিকবিতার যথার্থ হৃদয়াবেগ তাঁর মধ্যেই মূর্ত হয়ে উঠেছিল। তাঁর প্রথম জীবনের কবিতায় বায়রনসুলভ উচ্ছ্বাস ও তেজস্বিতা স্বয়ং ‘সাহিত্যসম্রাট’ বঙ্কিমচন্দ্রকে পর্যন্ত মুগ্ধ করেছিল।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের যোগ্য উত্তর-সাধকরূপে যে দুই জন কবি বাংলা-সাহিত্যে বিপুল প্রতিষ্ঠা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছেন, তাঁদের একজন হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, অপর জন
নবীনচন্দ্র সেন। নবীনচন্দ্রের কবি-প্রতিভা ছিল সহজাত ও স্বাভাবিক, পিতা এবং পিতৃব্যদের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে তা তিনি লাভ করেছিলেন। মধুসূদনের অনুগামী
হলেও তিনি তাঁর অনুকারী ছিলেন না। সে যুগের কাব্য-সাহিত্যে তিনি স্বকীয়ত্ব ও মৌলিকত্বের নিদর্শন রেখে গিয়েছেন । স্বদেশপ্রেম এবং আধ্যাত্মিকতা, এই দুইটি মূল সুর নবীনচন্দ্রের কাব্য-গ্রন্থাবলীর মধ্যে
অনুসৃত। দেশের প্রতি সুগভীর ভালবাসায় তাঁহার হৃদয় ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ, পরাধীনতার বেদনা তিনি মর্মে মর্মে অনুভব করতেন। বহু কবিতায় তিনি দেশের
দুঃখ দুর্দশায় অশ্রুপাত করেছেন। এই দেশপ্রীতির প্রেরণায় তাঁহার অন্তরের অন্তস্থল থেকে যে কবিত্বস্রোত তরুণ বয়সেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসারিত হয়ে উঠেছিল, পরিণত যৌবনে
তাই দুকূলপ্লাবী হইয়া তাঁকে ‘পলাশির যুদ্ধ' রচনায় প্রণোদিত করে।
... " অস্ত্রাঘাতে সুপ্তোথিত শার্দুলের প্রায়
ক্লাইভ নির্দয়‐মন,
করি রশ্মি আক্রমণ,
আসিল তুরঙ্গোপরে রক্ষিতে সেনায়।

সম্মুখে‐সম্মুখে"!—বলি সরোষে গর্জিয়া
করে অসি তীক্ষ্ন‐ধার,
বৃটিশের পুনর্বার,
নির্বাপিত‐প্রায় বীর্য উঠিল জ্বলিয়া।

ইংরাজের বজ্রনাদী কামানসকল,
গম্ভীর গর্জন করি,
নাশিতে সম্মুখ অরি,
মুহূর্তেকে উগরিল কালান্ত‐অনল।

বিনা মেঘে বজ্রপাতে চাষা মনে গণি,
ভয়ে সশঙ্কিত প্রাণে,
চাহিল আকাশ পানে;
ঝরিল কামিনী‐কক্ষ‐কলসী অমনি।"......

নবীনচন্দ্রের জীবিতাবস্থায় তাঁর কাব্যের যে সমাদর ছিল, কালধর্ম্মে আজ তা বহুল
পরিমাণে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে। মূখ্যতঃ ‘পলাশির যুদ্ধে'র রচয়িতারূপেই আধুনিক বাঙালী পাঠক তাঁকে স্মরণ করে থাকেন, কিন্তু ‘পলাশির যুদ্ধ' তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্য নহে।
নবীনচন্দ্রের কবিত্বশক্তির পূর্ণ বিকাশ পরিলক্ষিত হয় ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণের আদ্য, মধ্য এবং অন্ত্য লীলা-কাহিনী অবলম্বনে রচিত তাঁর ‘কুরুক্ষেত্র’, ‘রৈবতক’ এবং ‘প্রভাস,’ এই
তিনখানি কাব্যে। এগুলিতে বিরাট্ কবিকল্পনার সঙ্গে দার্শনিকতা এবং বর্ণনানৈপুণ্যের যে
অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে, তা বিস্ময়কর। এই কাব্যত্রয়ীতে নবীনচন্দ্রের কবি-প্রতিভার
সোনার কাঠির স্পর্শে হিন্দু অধ্যাত্মদর্শনের জটিল তত্ত্ব রূপান্তরিত হইয়াছে উপভোগ্য
রসবস্তুতে।
নবীনচন্দ্র লোকাত্তর প্রতিভার অধিকারী ছিলেন না সত্য, কিন্তু এ কথা অনস্বীকার্য যে,
বাংলা সাহিত্যে তিনি একটা বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। তিনি যে যুগে
জন্মেছিলেন, সে যুগের বাংলার বিশিষ্ট ভাবধারা প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর রচনায়। তাঁর জাতীয়তামূলক কবিতাসমূহ একদা শিক্ষিত বাঙালীর মনে দেশাত্মবোধের উন্মেষ সাধনে বিশেষ ভাবে সহায়ক হয়েছিল। বঙ্গভারতীর একনিষ্ঠ সাধক এবং বাংলা-সাহিত্যে
জাতীয়তামূলক কবিতারচনার অন্যতম পথিকৃৎরূপে নবীনচন্দ্র স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
   বঙ্কিমচন্দ্র ১২৮২ বঙ্গাব্দের ‘বঙ্গদর্শনে' (কার্তিক, ১২৮২, পৃ. ৩১৯-২৮ ‘পলাশির যুদ্ধ’
সমালোচনা-প্রসঙ্গে কবি-হিসাবে হেমচন্দ্রের প্রতি পক্ষপাতিত্ব প্রকাশ করে নবীনচন্দ্র সম্বন্ধে বলেছেন
"নবীনবাবুর বর্ণনা এবং গীতিতে একপ্রকার মন্ত্রসিদ্ধ।...এই সকল বিষয়ে তাঁহার লিপিপ্রণালীর
সঙ্গে বাইরনের লিপিপ্রণালীর বিশেষ সাদৃশ্য দেখা যায়। চরিত্রের আশ্লেষণে দুই জনের এক জনও কোন শক্তি প্রকাশ করেন নাই—বিশ্লেষণে দুই জনেরই কিছু শক্তি আছে। নাটকে যাহা প্রাণ—হৃদয়ে হৃদয়ে “ঘাত প্রতিঘাত”—দুই জনের এক জনের কাব্যে তাহার কিছুমাত্র নাই। কিন্তু অন্য দিকে দুই জনেই অত্যন্ত শক্তিশালী। ইংরেজিতে বাইরনের কবিতা
তীব্র-তেজস্বিনী, জ্বালাময়ী, অগ্নিতুল্যা, বাঙ্গালাতেও নবীনবাবুর কবিতা সেইরূপ
তীব্রতেজস্বিনী, জ্বালাময়ী, অগ্নিতুল্যা। তাঁহাদিগের হৃদয়নিরুদ্ধ ভাবসকল, আগ্নেয়গিরিনিরুদ্ধ
অগ্নিশিখাবৎ—যখন ছুটে, তখন তাহার বেগ অসহ্য।...
নবীনবাবুরও যখন স্বদেশবাৎসল্যস্রোতঃ উচ্ছলিত হয়, তখন তিনিও রাখিয়া ঢাকিয়া
বলিতে জানেন না। সেও গৈরিক নিস্রবের ন্যায়। যদি উচ্চৈঃস্বরে রোদন, যদি আন্তরিক মর্মভেদী কাতরোক্তি, যদি ভয়শূন্য তেজোময় সত্যপ্রিয়তা, যদি দুর্বাসাপ্রার্থিত ক্রোধ,
দেশ-বাৎসল্যের লক্ষণ হয়—তবে সেই দেশবাৎসল্য নবীনবাবুর...।
বাইরনের ন্যায় নবীনবাবু বর্ণনায় অত্যন্ত ক্ষমতাশালী। বাইরনের ন্যায়, তাঁহারও শক্তি
আছে যে, দুই চারিটি কথায় তিনি উৎকৃষ্ট বর্ণনার অবতারণ করিতে পারেন। যাহাই হউক,
কবিদিগের মধ্যে নবীনবাবুকে আমরা অধিকতর উচ্চ আসন দিতে পারি না পারি, তাঁহাকে
বাঙ্গালার বাইরন বলিয়া পরিচিত করিতে পারি। এ প্রশংসা বড় অল্প প্রশংসা নহে ।
সুতরাং ইংলণ্ডে বাইরন যেমন বিস্মৃত ও পরিত্যক্ত হয়েছেন, এ দেশেও নবীনচন্দ্ৰ
সেইরূপ হইয়াছেন। যুগান্তকারী প্রতিভার অধিকারী না হইলে যুগকে অতিক্রম করে কেহ
সগৌরবে দাঁড়াইতে পারেন না। নবীনচন্দ্রের প্রতিভা তেমন ছিল না।
নবীনচন্দ্র স্বভাব-কবি ছিলেন; তিনি হৃদয়াবেগে লিখিতেন, মস্তিষ্কের সহিত তাঁহার
কাব্যের ক্বচিৎ যোগ ছিল। এই কারণে ‘আমার জীবন’ লিখিতে বসিয়া তিনি ডেপুটি
নবীনচন্দ্র, হিন্দুধর্ম্মপ্রচারক নবীনচন্দ্র, স্বদেশবৎসল নবীনচন্দ্র, আত্মম্ভরী নবীনচন্দ্রেরই পরিচয়
দিয়াছেন, কবি নবীনচন্দ্র কুত্রাপি আত্মপ্রকাশ করে নাই। সেই যুগকে এবং সে-যুগের মানুষকে বুঝিবার জন্য নবীনচন্দ্রের রচনার সহিত এ যুগের পাঠকের পরিচয় আবশ্যক।"

নবীন সেনের কাব্যসমূহ:
‘অবকাশরঞ্জিনী’ (১ম– ১৮৭১, ২য় – ১৮৭৮), ‘পলাশীর যুদ্ধ’ (১৮৭৫), 'ক্লিওপেট্রা' (১৮৭৭), 'রঙ্গমতী' (১৮৮০), ‘খ্ৰীষ্ট' (১৮৯১), 'অমিতাভ’ (১৮৯৫), ‘অমৃতাভ’ (১৯০৯), ত্রয়ী মহাকাব্য—'রৈবতক' (১৮৮৭), ‘কুরুক্ষেত্র’ (১৮৯৩), ‘প্রভাস’ (১৮৯৬), চণ্ডী এবং গীতার পদ্যানুবাদ' (১৮৮৯)।
উপন্যাস: ‘ভানুমতী’ (১৯০০) ।
আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ও পত্রসাহিত্য : ‘আমার জীবন’ (৫ খণ্ডে সমাপ্ত- ১৩১৬-১৩২০ বঙ্গাব্দ), ‘প্রবাসের পত্র' (১৮৯২)।


নবীনচন্দ্রের প্রথম কাব্য 'অবকাশরঞ্জিনী' গীতিকাব্যের পর্যায়ভুক্ত। এই কাব্যের দুটি খণ্ড। প্রথম ভাগে ২১টি এবং দ্বিতীয় ভাগে ৪৬টি কবিতা আছে। কবিতাগুলিকে প্রেম প্রকৃতি-স্বদেশপ্রেম-গার্হস্থ্য
জীবন এই চারভাগে বিভক্ত করা যায়। তবে প্রথম খণ্ড অপেক্ষা দ্বিতীয় খণ্ডের কবিতাগুলি পরিণত চিন্তা এবং গীতিমূৰ্চ্ছনায় সমৃদ্ধ। রবীন্দ্র-পূর্ববর্তীযুগের রোমান্টিক প্রেমের নৈরাশ্য তার কোন কোন কবিতায় যথার্থই মর্মস্পর্শী :

“নিবুক নিবুক প্রিয়ে     দাও তারে নিবিবারে

আশার প্রদীপ। 

এই তো নিবিতেছিল     কেন তারে উজলিলে

নিবুক সে আলো, আমি ডুবি এই পারাবারে।"

তাঁর স্বদেশপ্রেমের কবিতাগুলির মধ্যে হেমচন্দ্রের ভাবগত প্রেরণা লক্ষ্য করা যায়। তাঁর কবিস্বভাব গীতিকবির অনুগামী, কিন্তু প্রকাশরীতির শিল্পগুণ থেকে বঞ্চিত। আবেগ ছিল, কিন্তু তাকে বিশ্বগত করে তোলার ক্ষমতা ছিল না। তার ‘পলাশীর যুদ্ধ’ ঐতিহাসিক ঘটনা সমন্বিত আখ্যানকাব্য।

নবীন সেনের 'ক্লিওপেট্রা'কে পূর্ণাঙ্গ কাব্য বলা যায় না। এটি একটি দীর্ঘ বিবৃতিমূলক কবিতা মাত্র। কাব্যের মধ্যে কোন উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য নেই। ভাবকল্পনার তারল্য এবং রচনা শৈথিল্যের জন্য কাব্যের বিষয়বস্তুতে রসস্ফূর্তি ঘটেনি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটির রোমান্স ও স্মৃতিতে রঙীন ‘রঙ্গমতী' কাব্য। বিষয়বস্তু ও চরিত্রগুলি কাল্পনিক। বীরেন্দ্র-কুসুমিকার প্রণয়কাহিনী স্কট-অনুসারী রোমান্স বা তার চেয়েও প্রত্যক্ষতর বঙ্কিম-রোমান্স থেকেই উৎসারিত, ব্যক্তি হৃদয়ের সিঞ্চনে উত্তপ্ত। কাব্যটি অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা। তবে মাইকেলী-অমিত্রাক্ষরের মহিমা, ভাবগাম্ভীর্য ও প্রবহমানতা লক্ষিত হয় না। তার পরবর্তী ত্রি-পর্বিক কাব্যের বীজ এবং সর্বভারতীয় ঐক্যের প্রথম পরিকল্পনা এখানে ভূমিকারূপে ছিল।

কর্মসূত্রে পুরী ও রাজগীরে থাকার অভিজ্ঞতা, ভাগবত-গীতা-মহাভারতের প্রতি মুগ্ধ মনোভাব, বঙ্কিমচন্দ্রের ‘কৃষ্ণচরিত্র’ প্রকাশের আলোড়ন প্রভৃতি ভাবপ্রেরণার ফলশ্রুতি নবীনচন্দ্রের ‘ত্রয়ী’ মহাকাব্য রচনা : ‘রৈবতক কুরুক্ষেত্র—প্রভাস’। তিনটি কাব্যের একাত্ম ভাবনার সতর্ক নির্দেশ ভূমিকাতেই আছে— “রৈবতক না পড়িলে কুরুক্ষেত্রের সম্যক কাব্যের উপলব্ধি হইবে না’”—‘কুরুক্ষেত্র’।
“রৈবতক কাব্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদিলীলা, কুরুক্ষেত্রের কাব্য মধ্যলীলা এবং প্রভাস কাব্য অন্তিমলীলা লইয়া রচিত। রৈবতকে কাব্যের উন্মেষ, কুরুক্ষেত্র বিকাশ এবং প্রভাসে শেষ।”—‘প্রভাস’।

আর্য-জাগৃতি বা নব্য-হিন্দু-জাগৃতির আদর্শ স্থাপন ছিল কবির লক্ষ্য। এই আর্য জাগৃতি মূলতঃ ভক্তিকেন্দ্রিক, তবে তার মধ্যে ধর্ম, বিজ্ঞানদৃষ্টি এবং ঐতিহাসিক মানসিকতার প্রতিফলন দুর্লভ নয়।

কৃষ্ণের অন্যমনস্কতা এবং দুর্বাসার ক্রোধে ‘রৈবতকে’র কাহিনী আরম্ভ, অনার্যরাজ বাসুকির সঙ্গে ষড়যন্ত্রে কাহিনীর অগ্রগতি। সুভদ্রাহরণে কাহিনীর উপসংহার। অন্যদিকে মহাযুদ্ধে ভীষ্মের পতনের পর ‘কুরুক্ষেত্র’ কাব্যের কাহিনী-সূচনা। উত্তরার বাহুপাশ ছিন্ন করে অভিমন্যুর যুদ্ধযাত্রায় এবং জরৎকারু-বাসুকি ও দুর্বাসার মন্ত্রণায় কাহিনীর মধ্যে কৌতূহল সঞ্চার। অভিমন্যুর মৃত্যু এবং তার চিতাগ্নির দীপ্তশিখায় মহাভারতের আভাসে কাহিনীর অবসান ঘটে। আবার, কৃষ্ণের লীলা সংবরণের আভাসে ‘প্রভাসে’র কাহিনীর শুরু, যাদবগণের আত্মকলহ, যদুকুল ধ্বংস, কৃষ্ণের মহাপ্রয়াণ ইত্যাদি ঘটনা বর্ণনায় কাহিনীর অগ্রগতি। শ্রীক্ষেত্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনায় কাব্যটির সমাপ্তি ঘটে। এইভাবে দেখা যায়, ‘রৈবতক’ বিংশ সর্গে, 'কুরুক্ষেত্র' সপ্তদশ সর্গে এবং ‘প্রভাস' ত্রয়োদশ সর্গে বিন্যস্ত হয়েছে। কৃষ্ণের ভূমিকায় মানবমহিমার বাণী বিঘোষিত—

“মানব চেতনাযুক্ত, বিবেকী, স্বাধীন, 

জড় ওই সূর্য হতে কত শ্রেষ্ঠতর। 

মানব! উৎকৃষ্ট সৃষ্ট, যে অনন্ত জ্ঞানে

সৃষ্ট ও চালিত ওই বিশ্ব চরাচর।

পড়েছে সে জ্ঞান-ছায়া হৃদয়ে তাহার।”



শরশয্যাশায়ী ভীষ্মও বলেছেন—

“মানব! মানব তুমি। তুমিও মানব’

দেবতার ঊর্ধ্বে তবে মানবের স্থান।”

এই ত্রয়ীর নায়ক কৃষ্ণ অর্জুনের বীর্য, ব্যাসের প্রজ্ঞা, সুভদ্রার প্রীতি ও শৈলজার সংরাগের সহযোগে কবি আবার মানবতাবাদের মহামন্ত্রে “খণ্ড এ ভারতে মহাভারত স্থাপিত” করার ব্রতে প্রবুদ্ধ হয়েছেন। এই তিনটি কাব্যকে 'ঊনবিংশ শতাব্দীর মহাভারত' (Mahavarata of the Nineteenth Century) বলা হয়েছে।

এই কাব্যত্রয়ের বিষয়বস্তু মহাকব্যোচিত মহৎ ও প্রশস্ত। কিন্তু আখ্যান পরিকল্পনায় এবং রচনায় তার পরিচয় বিরলদৃষ্ট। এই তিনটি কাব্যের ত্রুটি হল— (ক) দীর্ঘ পরিসরে কাহিনী বিন্যাসে সংযোগ রক্ষার অভাব। কাব্যের ঘটনা বা বিষয়বস্তুর মধ্যে confor-mity নেই। আবেগের অতিবাদিতায় কাহিনীর মধ্যে অসংযমের প্রকাশ দেখা যায় (খ) কৃষ্ণ, অর্জুন, ব্যাসদেব চরিত্রগুলির মধ্যে বাস্তবতা অপেক্ষা দার্শনিক তত্ত্বের প্রাধান্য দেখা যায়। দুর্বাসাও নিছক পাষণ্ড চরিত্র মাত্র। (গ) অভিমন্যু-উত্তরা-সুলোচনার তরল-চপল আচরণ, বাঙালী পরিবার সুলভ সোহাগ মান-অভিমানের আতিশয্য মহাকাব্য ও আখ্যানকাব্যের মহিমা ক্ষুণ্ণ করেছে।

এছাড়া কৃষ্ণের স্বপ্নবিলাস, অর্জুনের প্রেমপিপাসা, দুর্বাসার ক্রোধদীপ্তির ম্লানিমা চরিত্রগুলির মর্যাদাহানি করেছে। ফলে এই তিনটি কাব্যের মধ্যে কোথাও কবি-প্রতিভার স্ফূর্তি বা দীপ্তি চোখে পড়ে না। রোমান্টিকতা ও লিরিক মাধুর্য হয়ত আছে, কিন্তু মহাকাব্যের মহত্ত্ব ও গাম্ভীর্য, চরিত্র পরিকল্পনার ঔদার্য, রচনারীতির ক্লাসিক সংযম আয়ত্ত করা ভাবপ্রবণ কবি নবীনচন্দ্রের পক্ষে দুঃসাধ্য ছিল। তার লিরিক উচ্ছ্বাসের অসংগতির একটি দৃষ্টান্ত : রৈবতকে কুড়ি সর্গের মধ্যে দশটি সর্গ জুড়ে সুভদ্রা, শৈল, জরৎকারু, রুক্মিণী ও সত্যভামার পূর্বরাগের বিবরণদান। এই আতিশয্য লক্ষ্য করে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল লিখেছিলেন: "The simple truth is that ten of the twenty books must be lopped off,' if the 'Raivataka' is to take a place among the great epics of Bengal" (New Essays in Criticism' pp 95-96)। আবার ‘কুরুক্ষেত্রে’র উত্তরা-অভিমন্যুর কাহিনীতেও এই অসংগতি আছে।

 ‘খ্রীষ্ট’, ‘অমিতাভ’ এবং ‘অমৃতাভ’ জীবনীকাব্যের শ্রেণীভুক্ত। এর মধ্যে প্রথমটি Gospel of St. Mathew-র অবলম্বনে যীশুর, দ্বিতীয়টির আশ্রয় ভগবান বুদ্ধদেবের জীবন, তৃতীয়টির বিষয় শ্রীচৈতন্যের জীবন। এই কাব্যগুলি রচনার উদ্দেশ্য ছিল, “আর্যধর্মাবলম্বীদের কাছে অবতার স্বরূপে পূজনীয়” (‘খ্রীস্ট’ কাব্যের ভূমিকা) ব্যক্তিবর্গের পার্থিব জীবন-বর্ণনা এবং জাতীয় জীবনে সুউচ্চ আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা।

নবীনচন্দ্রের লেখা 'ভানুমতী' উপন্যাসখানি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক কাহিনী অবলম্বনে রচিত। বাস্তবতা ও কল্পনার সংমিশ্রণে রোমান্সমূলক ইতিবৃত্তই এর মুখ্য আকর্ষণীয় বিষয়। তাঁর লিখিত ‘আমার জীবন’ উনিশ শতকের বিচিত্র ব্যক্তিবৈশিষ্ট্যে পূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ আত্মজীবনী। প্রমথ চৌধুরী বইটির পরিচয় দিয়েছিলেন এইভাবে : “এই বইখানি সেন মহাশয়ের জীবনচরিত হলেও একখানি নভেল বিশেষ। আর সেন মহাশয় হচ্ছেন এ নভেলের একমাত্র নায়ক” (উদ্ধৃত, গ্রন্থ দ্রষ্টব্য : 'বাংলা সাহিত্যের রেখালেখ্য’, পৃষ্ঠা ৩৪৯)। 
নবীনচন্দ্রের ৬১ থেকে ৮৮ বৎসর বয়স পর্যন্ত জীবনের ঘটনাসমূহ এখানে বর্ণিত। এই গ্রন্থের কাহিনী যেমন উপন্যাসের মতো মনোরম, তেমনি ভূগোল-নির্ভর নিসর্গের বর্ণনা, অকপট আত্মবিশ্লেষণ এই গ্রন্থের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। স্ত্রীর উদ্দেশে লেখা ‘প্রবাসের পত্র’ একদিকে যেমন আপন হৃদয়ের অনুভব-অভিজ্ঞতার কাহিনী, তেমনি দেশ-পর্যটনের নির্দেশিকা। মহাকবির যোগ্য প্রতিভা না হোক গীতিকবি এবং অনুভূতিপ্রবণ সংবেদী মনের পরিচয়ে নবীনচন্দ্রের সচেতন ব্যক্তিত্ব কোনমতেই বিস্মৃত হওয়ার নয়।
   মহাকবি নবীনচন্দ্র সেন মহাশয়কে শুধুই এক দক্ষ প্রশাসক ও সাহিত্য সৃষ্টির উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে আমরা মনে রাখব না, তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের এক নামজাদা সরকারি কর্মকর্তা হয়েও  দেশবাসীর হিতার্থে দেশাত্মবোধক রচনার জন্য কলম ধরেছিলেন এবং বহুবার ব্রিটিশ সরকার দ্বারা হেনস্থাও হয়েছেন, এও আজ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা উচিত।  সাহিত্যের মধ্য দিয়ে  জনমানসে দেশপ্রেম সঞ্চার করার তাঁর এই উদ্যোগ আজও কূর্নিশের দাবি রাখে।

তথ্যসূত্র-
১) আমার জীবন/ নবীনচন্দ্র সেন 
২)  বাঙ্গালা সাহিত্যের কথা/ শ্রী সুকুমার সেন,
৩-) নবীনচন্দ্র রচনাবলী
৪) ইন্টারনেট

Post a Comment

0 Comments