জ্বলদর্চি

ভাঙা আয়নার মন /পর্ব-৮/ মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনীয়া

ভাঙা আয়নার মন 
পর্ব-৮
মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনীয়া

অন্য জন্মদিন ...


শীতের সকালে লেপের তলা থেকে উঠতেই ইচ্ছে করে না। মা কিন্তু উঠে পড়ে খুব সকালেই।  মার গায়ের নরম ওম সরে গেল টের পেয়ে ঘুমকাতুরে ঘ্যানঘেনে ঝিনি পাশবালিশে লেপ্টে লেপের মধ্যে আর একটু সেঁধিয়ে শোয়।
       সরস্বতী পুজোর দিন অবশ্য মা মাসির হাঁকডাক আর দাদাদের হুটোপাটিতে সেও উঠে পড়েছে তবে উঠেই চান করার বেমক্কা ঝামেলায় পড়ে গেছে সে।মহা ক্যাওম্যাও শুরু করে লেপের তলায় আরও একবার ঢোকার চেষ্টাও নিয়েছিল ততক্ষণে সেসব ভাঁজ টাজ হয়ে বিছানা পরিপাটি ঢাকা দেওয়া সারা। কাজেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও খাটের তলে তাকে ঢুকতেই হলো এবং যথারীতি অপ্রিয় বাক্যসহ সেখান থেকে টেনে বার করে মহা আপত্তি সত্ত্বেও সেই সক্কাল বেলা মা বেশ করে তাকে চান করিয়ে একটা নতুন সুতির ফ্রক পরিয়ে দিল।ঠান্ডায় অল্প অল্প কাঁপছিল সে।চুল আঁচড়ে  পরিস্কার সোয়েটার পরিয়ে দিল হেম। ঠাণ্ডা তত আর লাগছিল না।নতুন জামা পেয়ে তাই আনন্দে গুলগুল করে উঠল সে। আজ কি জন্মদিন হেম? না, আজ তোর হাতেখড়ি।  
      ঝিনুকের মনে পড়ল ছোট পিসিমা এসে সেবার বাপিকে খুব বকাবকি করছিল।এ কী অশৈরণ কাণ্ড ধীরান? মাইয়ে তোমার হাতে খড়ি না হতিই শিলেটে ন্যাহে ক্যাম্বায়?
     কী যে বলো ছোড়দি।আজকাল ওসব আর কেউ ধরে টরে না।বড়গে মুহি মুহি কতা কতি বারণ দিছি না তোমারে?চুপ কততি পাততিছো না?ন্যাহাপড়া শিহিছো কি এই কততি? ধমকে ওঠে ছোট পিসিমা।তোমাগে দেহেই তো ছলপল ছোটরথে মুহি মুহি কতা কতি শিহে যাবেনে। সামনের সরস্বতী পুজোর দিন ছেমড়ির হাতে খড়িডে দিয়ে দেবা কয়ে দিলাম। তাদের বাবাকেও কেউ ধমকে চমকে বকুনি দিচ্ছে এই আশ্চর্য ঘটনায় ভারি চমৎকৃত সে।তবে ছোট পিসিমা কিন্তু এমনিতে ঠাণ্ডা মাথার মানুষ।মা তাকে বকলে বা পেটালে থামো দেহি ছোট বৌ বলে উদ্ধার করে গায় মাথায় হাত বুলিয়ে মারের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে আঁচলের গিঁট খুলে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ আট আনা বা কখনো একটা টাকাও দেয় পিসিমা। ঝিনিও তক্ষুনি তার মাটির ঘটে টুকুস করে সেটা ফেলে দেয়। বলতে নেই পিসিমা  থাকলে তার আয় রোজগার ভালোই হয়।
কেননা দুপুরে একটা ধান জড়িয়ে সে পিসিমার পাকা চুল তুলে দেয়।প্রতি চুল পাঁচ পয়সা করে। বিকেলে সেই চুল গুণে নগদ পেমেন্ট।রথের মেলার দিন তারা তিনজন নিজেদের ঘট ভেঙে পয়সা গুণেগেঁথে বড়দের সঙ্গে মেলায় যায়। বাবা বাড়িতে আসে সপ্তাশেষে। কাজেই বাজার ঘাট কেরোসিন বা রেশন তুলে  মা'র কাছ থেকে দাদারা পঁচিশ পয়সা করে পায়। মেলায় বড়রা জিলিপি,নতুন লক্ষীর ঘট,আনারস, কাঠের বেলুন চাকি,এইসব কিনে আনে। চাইলে দুএকখানা পুতুল বা দড়ি টানা মাটির গাড়িও কিনে দেয় বটে তবে নিজের পয়সায় কেনো জলভরা বেলুন,বাঁশি ,স্প্রিং দেওয়া প্লাস্টিকের ছোট্ট সবুজ বাঁদর কিংবা গোলাপি হাওয়াই মিঠাই কেউ কিচ্ছু বলবে না। নিজের রোজগারের মহিমেই আলাদা! 
      পয়সা কড়ি ছাড়াও এমনিই মাঝে মাঝে বিকেলের দিকে পিসিমা তাকে ডেকে দুখানা লর্ডস লজেন্স হাতে  গুঁজে দেয় এবং লজেন্সের উৎসটা সে আগে থেকে পিসিমার ব্যাগ ঘেঁটেঘুঁটেও খুঁজে পায় না ম্যাজিক জানে নাকি পিসিমা!
      ঝিনি তাই আশ্চর্যময়ী তার ছোট পিসিমাকে একদম ফিরে যেতে দিতে চায় না।
     পিসিমার নির্দেশমতো মা ঠিক করেছে এবার হাতে খড়ি হবে।একটা নতুন স্লেট পেনসিলও কিনে এনেছে।ভালোই হলো। হাতে খড়ি বাবদ সেটা পাওয়া যাবে।আর যদি খাতা আর কাঠ পেনসিলও  একখানা অন্তত দেয় তবে তো কেয়া মজা! ভিজে ন্যাকড়া দিয়ে স্লেট মুছে স্লেটখানা হাতপাখার মতো নাড়িয়ে নাড়িয়ে রোজ যে বলতে হয় ,জলের পোকা জলে যা/ আমার সেলেট শুকিয়ে যা; তা ওই করতেই তো সেদিন সেলেট হাত ফসকে মাটিতে। কোনাকুনি চিড় খেয়ে গেছে স্লেটটা। হাতে পায় তো লক্ষী বলে মা বকা শুরু করতেই সে আবার কথাটার মানে জিজ্ঞেস করে বসল। কান ধরে এক্ষুণি চোখের সামনে থেকে বেরো বলে মা ঘর থেকে বার করে দিল। সেদিন থেকে ভাঙা মতো স্লেটেই সে লিখছে আর হেমের কাছে থেকে কথাটার মানেও সে জেনেছে। 
          এই যে মোরগ কেবল তোর পেটেই ঠুকরে দেয়,ধপাধপ আছাড় খাস, খেলতে গিয়ে রোজ রোজ হাত পা কেটে  আসিস। সিঁড়ির রেলিং এ সড়াৎ খেয়ে প্যান্ট ফাটিয়ে জামা ছিঁড়ে ফেলিস এগুলো কি ভালো মানুষদের হয় কখনো?
  তা'লে যে বলল হাতে পায় লক্ষী? দুষ্টু লক্ষ্মী আর কি হেম হেসে দেয় আর হেসে ফেলে বলেই হয়তো আদর করে চুলগুলো ঘেঁটে দেয় একটু।
       বুঝলি সেজো, হেম যখন তার চুল আঁচড়ে দিচ্ছিলো তাদের বাবা সেজোমাসিকে বলল ঝিনুক কিন্তু ঠিকই বলেছে আজ ঝিনির অন্য জন্মদিন।
    সে কিরকম বাপি? ধরো আজ তুমি লিখবে তো? আমি তো লিখি।হ্যাঁ সে তো লেখোই তবে আজ আবার নতুন করে শুরু করবে।কত লিখবে এরপরে।খাতাতেও লিখব? অনেক দিন ধরেই দাদাদের মতো খাতায় লেখার শখ তার। হ্যাঁ নিশ্চয়ই,আর কিছুদিন পর খাতাতেও। এখনো খাতায় লিখতে পারবে না?যাঃ বাবা!হাতে খড়িতে লাভ কী তাহলে?সে হতাশ হয়। বাপি তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে খাতা কেন হয়ত বইই লিখবে একদিন।হয়ত পড়েশুনে ডাক্তার হবে।সবার অসুখ ভালো করে দেবে । কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ব্রিজ বানাবে মস্ত। না না বিরিজ না। সজোরে মাথা নাড়ে সে, রুবিদির বলি দেওয়ার গল্প তার মাথায় আছে। আচ্ছা বেশ না ; তবে কথাটা বিরিজ নয়,বলো ব্রিজ। বললাম তো বিরিজ।হো হো করে হেসে বাবা তাকে উঁচু করে কাঁধে বসিয়ে বারান্দার নিয়ে আসে।
          বারান্দার এক দিকে সরস্বতী ঠাকুর মাটির পদ্মফুলে বসে আছেন।ঠাকুরের হাতে মাটির বীণা। মাটির একহাতে পলাশ ফুলের কুঁড়ি অন্য হাতে তিনটে মা লেখা শোলার চাঁদমালা।দাদারা ওই পলাশ কুঁড়ি আনতে দল বেঁধে কাল গিয়েছিল অনেক দূরে মনসুর ভাইদের বাড়ি। পাড়ার আর ইস্কুলের ছেলেরা এসে ভোরবেলায় সব ফুল চুরি করে নেবে বলে কাল বিকেলেই দাদাদের সাথে সে বাগানের গাঁদা ফুল তুলে রেখেছে। বাগান ভর্তি কত গাঁদা, পপি, জিনিয়া আর কসমস। একদিকে নানা রঙের গোলাপ ফুটে আছে। তবে পুজোর জন্য গাঁদা ফুলের দিকেই ছেলেপিলের বেশি নজর। লাল মেঝেতে চমৎকার আলপনা দিয়ে হেম সাজিয়েছে রাতে।ফুল,প্রসাদ, ঘটের চারদিকে লাল সুতো বাঁধা কঞ্চি ধুপ দীপ কোশাকুশির সামনে পুজোয় বসেছে জগন্নাথ ঠাকুর। দাদারাও চান টান করে খাড়া বসে আছে। বাড়ির পুজো হলে প্রসাদ খেয়েই তারা ইস্কুলের পুজোয় দৌড়বে‌। মাকেও তো যেতে হবে গার্লস ইস্কুলের পুজোয়।
       ভেজা আতপ, চন্দন বাটা,ফুল ধুনো গুগগুল আর কাটা ফলের গন্ধ মিলেমিশে কী সুন্দর যে এক সৌরভ তৈরি হয়েছে। গানের মতো পাক খাচ্ছে ধুপের ধোঁয়া।সব মিলে আজ সকালে যেন রোদের মতো কী এক সুর উঠেছে সরস্বতী ঠাকুর কি বীণা বাজাচ্ছে নাকি? সে ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে ভালো করে প্রতিমার মুখখানা দেখল। মৃদু আলোর মতো ঠোঁটে হাসি লেগে আছে তবে যে হেম বলে জোছনা রাতেই কেবল পদ্মবনে সরস্বতী একলা বসে বীণা বাজায়? ফুলের মধ্যে অনেক ভোমরা আর মৌমাছি থাকে তারা সেই সময় সুর শিখে নিয়ে ডানায় সেই সুর বাজিয়ে বেড়ায়। ছোড়দা তার কথা শুনেই চাপা গলায় বলল মাটির ঠাকুর জ্যান্ত হয় নাকি? মাটির বীণা বাজবে কি করে? তার আছে ওটায় হাঁদারাম?
         পুরুত মশাই এটা ওটা চাইছেন আর আর গম্ভীর মুখে রুবিদি চান করে মায়ের দেওয়া একখানা শাড়ি পরে  হাতে হাতে জোগাড় দিচ্ছে। 
        কই হে ধীরেন, পুজো হলো তোমাদের?খুব ফর্সা চশমা পরা একজন মানুষ এসে দাঁড়ালে মা বাপি  হেম সবাই শশব্যস্তে  আসুন মাস্টার মশাই আসুন বলে তাকে প্রণাম করল। 
        বসুন মাস্টার মশাই,মা জগন্নাথ ঠাকুরের পাশেই হাতে বোনা একখানা আসন পেতে দিল।
     ও কে রে হেম? ও কি তোদের পড়ায়?তোদেরও মাস্টার মশাই থাকে ইস্কুলে? চুপ চুপ "ও " বলতে হয় না। উনি বল। উনি তোদের পড়ায়? প্রণাম করছিস কেন তোরা? চুপ। হেম তার মুখ চাপা দিয়ে ফিসফিস করে বলে ওরকমই করতে হয় উনি সন্ন্যাসী মানুষ, সবার মাস্টার মশাই।খুব পণ্ডিত। পণ্ডিত মানে কী?যিনি অনেক পড়াশুনা করেছেন, অনেক জানেন।সন্ন্যাসী বললি কেন?জটা নেই ত্রিশূল নেই মোটে শাদা পাঞ্জাবি আর চশমা পরেছে কেন তা'লে?সব সাধুই ওরকম হয় না আর একটা কথাও না।হেম ঝিনির মুখ চেপে রাখে বলে থামতে বাধ্য হয় ঝিনি।মানে জিজ্ঞেস করলেই বড়রা ভারি বিরক্ত হয়। তবু তো তাদের বাবা আর হেম কিছু উত্তর দেয় মাকে জিজ্ঞেস করেই দ্যাখো না ধমকে দেবেই। কেমন সন্ন্যাসী লোকটা জানাই হলো না তার আগেই বাবা তাকে ডেকে,  প্রণাম কর ঝিনুক।ও বাবা এটা কে রে?ওই তো ওর জন্যই। তা আবার আমি কেন?ঠাকুর মশাই আছেন তো। না না মাস্টার মশাই আমার ভারি ইচ্ছে আপনি ওকে হাতেখড়িটা দিন।
       বড়দের কথা বোঝা ভারি শক্ত। তবে এই লোকটাকে তারও বেশ পছন্দ হলো। সন্ধেবেলা প্রতিদিন যে মাস্টার মশাই তাদের পড়াতে আসেন তিনিও খুব মজার তার কোলেও চড়ে বসে সে কিন্তু এই লোকটা অন্য রকম।কালো চশমার ওপাশে চোখদুটো যেন হাসিতে চিকচিক করছে।সাধুর জটা ত্রিশূলের ব্যপারটা পরে বাবার কাছ থেকে জেনে নিতে হবে ঝিনি ভেবে রাখল।
        দাদারা সব বইখাতা ঠাকুরের পায়ের কাছে রেখে দিয়েছে।কালির দোয়াত ধুয়ে তাতে দুধ আর যবের শীষ রেখে কঞ্চির কলম ডুবিয়েছে। কলমের পেছনে আবার একটা করে কুল গেঁথে দিয়েছে।এসব করে কেন রে? পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়া যায়। ফার্স্ট হলে কী হয়? প্রাইজ পাওয়া যায়। কী প্রাইজ?চুপ কর না হাঁদাই কটকটি।সবে সে চেঁচাতে যাচ্ছে ;কই হে এসো তো এদিকে। অচেনা মাস্টার মশাই হাত বাড়িয়ে ডাকলেন তাকে। ক'পা এগিয়ে ফের পিছোচ্ছিল সে,মা'র হাতের হালকা ঠেলা খেয়ে একটু এগোলো।ভয় পাচ্ছো? তোতা পাখির মতো এতক্ষণ তো বেশ পুটুরপুটুর কচ্ছিলে।ঝিনি ফিক করে হেসে দেয়। মোটেও ভয় লাগে না সন্ন্যাসী না আরও কিছু! নাম কী তোমার?ঝিনি ইয়ে স্রোতস্বিনী। ও বাবা! এত কঠিন নাম বলে হাত বাড়িয়ে কোলে বসিয়ে নেন তাকে।সেলেট পেতে পেনসিল সমেত তার হাতটা ধরে বড় করে একটা অ লিখে দেন। এটা কী? "অ "সে বলে। ঠিক, আর এর পাশাপাশি বসতে সবচে' পছন্দ করে কে বলো দেখি?নিজেই "আ" বলে বড় একখানা আ লেখেন একইভাবে।সেলেটের উল্টোপিঠে একইভাবে ক আর খ লিখে বললেন এই যে দেখছ সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কে বলোতো? সরস্বতী ঠাকুর।একদম ঠিক। হাতজোড় করে ওনাকে নমো করে বলো মা আমায় বিদ্যা দাও,বুদ্ধি দাও।সে তাই বলে।যাও ছুটি তোমার।
      মাস্টার মশাইকেও নমো করো।এই তো করল একটু আগে। আবার করো।মার কথামত বড়দের সঙ্গে ঠাকুরমশাইকেও প্রণাম করলে জগন্নাথ ঠাকুর কাজলের মতো হোমের টিপ পরিয়ে দেয়। মাথায় হাত ঠেকিয়ে বিড়বিড় করে কীসব বলে, প্রদীপের তাপ দিয়ে দেয়। সে এসে আবার দাদাদের কাছে বসে পড়ে। গাঁদা ফুলের অঞ্জলি দেয় সবার সাথে।
       আজ খুব কুল খাব ।ছোড়দা ফিসফিস করে দাদামণির সাথে।সে তো রোজই খাস। ছোড়দা খিকখিক হাসে।সে তো লুকিয়ে।আজ সবার সামনে।বইখাতাও আজ ঠাকুরের কাছে জমা।কিয়া মজা!হেম বলে সরস্বতী পুজোর অঞ্জলি না দিয়ে কুল খেলে ঠাকুর রেগে যায় আর লেখাপড়ায় ফেল হয়।দাদামণি খায় না। সে আর ছোড়দা অবশ্য রোজই খেয়েছে।
           বড় হয়ে ঝিনি কি ভাবতে পারবে, জীবনে কখনও চলে কিছু যায় না?যা গিয়েছে ভাবে সবাই আসলে তা না থাকা হয়েই থেকে যায়। সমস্ত গল্পেরই নরম বুকে ধারালো বালুর কণা বিঁধে গেলে  সময়ের নুন জমে জমে জলরঙ মুক্ত দানায় কেউ কি দেখতে পায় তত অবধি সমুদ্রমুখ? কেউ কি ভেঙেছে ঢেউ পাহাড়ের চুড়োয় চুড়োয়? অথচ তাকালেই চোখের পাথরে ধাক্কা লেগে প্রাচীন জাহাজডুবি ঘটে।ঝিনুকের শাদা হাড়ে  জলের কল্কা আঁকা একঝাঁক বিষন্ন ডানা স্নানে নেমে মরে পড়ে থাকে তার একদিকে ঢেউয়ের অভিশাপ উল্টোদিকে চাঁদ আলো উঁচু করে উড়বার আয়ু লিখে রাখে ।
      সরস্বতী পুজোর মতো শাদা সকালের গান হয়তো সে  শুনতে পাবে গভীর সন্ধেয় অথবা রাত্রির দ্বিতীয় প্রহরে। শেষ রাতে বেজে ওঠা ভারী এস্রাজ ধুনোর ধোঁয়ার সাথে জড়িয়ে খুব দূরের নিঝুম গন্ধ হয়ে ভেঙে দিলে  একলা ঘুম , ঝিনি দেখবে যোগ রাগ বারবার বেজে যায় ভৈঁরোর বদলে। যেন সে কুয়াশা হয়ে নেমে আসে প্রত্যেক বসন্ত পঞ্চমীতে। পায়ের কাছে তার বইখাতা, দোয়াতে দুধ খাগের কলম আর যবের শীষ।পদ্মের পাপড়িতে শাদা শাড়ি পড়ে গান আসন পেতে দেবে আরও একবার। সেই গান ছুঁয়ে দিতে পারলেই সকলের হাতে খড়ি শুক্লা তিথির ভোরে...সকলের অন্য জন্মদিন...

🍂

                                         

Post a Comment

0 Comments