জ্বলদর্চি

তামাক বর্জন দিবস (৩১শে মে)/দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

তামাক বর্জন দিবস (৩১শে মে)
দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে

তামাক বর্জন দিবস নিয়ে লেখতে গেলে প্রথমেই জানতে  হয়, তামাক কি?
তামাক অত্যন্ত নেশাদায়ক পদার্থ।তামাক গাছের আদি নিবাস উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায়। তামাক গাছের শুকানো পাতাকে তামাক বলা হয়। তামাক গাছ ১২-১৮ ইঞ্চি লম্বা হয়। তামাকে আগুন দিয়ে সিগারেট, বিড়ি, চুরুট, হুঁকো ও অন্যান্য ধূমপানের মাধ্যম প্রস্তুত করা হয়। 

আরো বিস্তারিতভাবে বলা যায় যে,তামাক হলো,সোলানাসি পরিবারের নিকোটিয়ানা গোত্রের বেশ কয়েকটি উদ্ভিদের সাধারণ নাম এবং এই উদ্ভিদের পাতা থেকে তৈরি হয় তামাক। তামাকের ৭০টিরও বেশি প্রজাতি আছে,তবে প্রধান বাণিজ্যিক ফসল হল এন. ট্যাবাকাম ।

তামাক সাধারণত তিন প্রকারের হয়ে থাকে, যেমন ১.ভার্জিনিয়া, 
২.বার্লি এবং 
৩.ওরিয়েন্টাল। 
আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চীন, গ্রীস, ইতালি, মালাউই, মোজাম্বিক, স্পেন, তানজানিয়া, তুরস্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ ৩০টিরও বেশি দেশে এই তামাক চাষ হয়।

তামাক উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসী পরিবারের একটি উদ্ভিদ নিকোটিয়ানা গণের পাতা থেকে প্রাপ্ত। প্রত্নতাত্ত্বিক অধ্যয়ন খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে তামাকের ব্যবহারের কথা বলেন। সেই সময় মধ্য আমেরিকার মায়া গোষ্ঠীর মানুষেরা পবিত্র ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ধূমপানের জন্য তামাকের পাতা ব্যবহার করতো।

ভারতে তামাক চাষ ১৬০৫ সালে প্রথম পর্তুগিজদের দ্বারা প্রবর্তিত হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে গুজরাটের কাইরা এবং মেহসানা জেলায় তামাক চাষ করা হয়েছিল, এবং পরে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

আজ ৩১শে মে,*"বিশ্ব তামাক বর্জন দিবস"*। গোটা বিশ্বের মানুষ বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত। প্রতি দিন হাজার, হাজার মানুষের জীবনহানি হয়ে চলেছে, তার মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই তামাক জাতীয় দ্রব্য নেশা করার জন্য মারা যাচ্ছে। তামাক বর্জন দিবসের মূল লক্ষ্যই হলো,বিশ্বকে তামাক মুক্ত করা অর্থাৎ ব্যক্তি মানুষদের তামাক থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা।

এই দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম।বিশ্ব তামাক বর্জন দিবস বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ৩১শে মে পালিত হয়। এই দিনটির লক্ষ্য জনসাধারণকে তামাক ব্যবহারের ঝুঁকি এবং তামাক সংস্থাগুলির ব্যবসায়িক রীতি সম্পর্কে অবহিত করা। তামাকের ব্যবহারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য জনগণকে কী করা উচিত, সে সম্পর্কে শিক্ষা দেয়।

বিশ্ব তামাক বর্জন দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে বলা যায় যে, WHO দ্বারা স্বীকৃত ১১টি অফিসিয়াল গ্লোবাল পাবলিক হেলথ ক্যাম্পেইনের একটি হলো এটি।১৯৮৭ সালে এই দিবসের শুরু হয়।এরপর ৭ এপ্রিল ১৯৮৮ সালে WHO অধিবেশনের মাধ্যমে এই ‘World no-smoking day’ প্রস্তাবটি পাশ করে।
ওই বছরেই, ৩১ মে বিশ্ব তামাক বর্জন দিবস উদযাপনের আহ্বান জানায়। তারপর থেকে বিশ্বে প্রতি বছর এই দিনটিকে পালন করে। কুড়ি বছর পর, WHO সমস্ত তামাকের বিজ্ঞাপন, প্রচার এবং স্পনসরশিপ বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছিল।

প্রত্যেক দিবসের একটা প্রতিপাদ্য বিষয় বা থিম থাকে। তামাক-সংক্রান্ত নির্দিষ্ট বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে WHO প্রতি বছর এই দিনটির জন্য একটি থিম নির্বাচন করে।২০২১সালের থিম ছিলো *‘বিজয়ী হতে তামাক ছেড়ে দিন*’ কিন্তু এতো বছরেও বিশেষ কোনও পরিবর্তন আসেনি।ধূমপান শরীরের কতটা ক্ষতি করছে, সেই নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। তবে বর্তমানে একটু বেশি করে নিজেদের এবং পরিবারের কথা যে ভাবতে হবে, সে বিষয়েও সন্দেহ নেই।

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের ( WNTD ) উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা যায় যে, প্রতি বছর ৩১শে মে সারা বিশ্বে তামাক বর্জন দিবস পালিত হয়। এই বার্ষিক পালনটি তামাক ব্যবহারের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করে।চিকিৎসক এবং গবেষকদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ধূমপান করার জেরে সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৮ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়। শুধু তাই নয়, বিশেষজ্ঞরা বলছেন,যাঁরা ধূমপান করেন না, করোনা কালে তাদের থেকে ধূমপায়ীদের সমস্যা অনেক বেশি হয়েছে।

২০২৩ বিশ্ব তামাক বর্জন দিবসের থিম ছিলো,*"জিততে হলে করতে হবে তামাক বর্জন"*। সহজ কিছু পদ্ধতি মেনে চললে, মৃত্যু সহ তামাকের জেরে একাধিক রোগের প্রবণতা কমানো যেতে পারে।তামাক বর্জনের জন্য সবার আগে এই সংক্রান্ত পরিকল্পনা প্রয়োজন,যারা তামাক সেবন করেন, বা ধূমপান করেন, তাদের নেশার প্রতি নির্ভরশীলতা তৈরি হয়ে যায়। ফলে এক ধাক্কায় তামাক বর্জন সম্ভব নয়। এজন্য কতগুলি পদক্ষেপ নিতে হবে, যেমন,আপনি যেখানে রয়েছেন, তার আশেপাশে তামাক জাতীয় কোনও পদার্থ  থাকা চলবে না। যে কোনও ধরনের কাজের মধ্যে থাকলে ওই দিকে মন যাবে না।

তামাক বর্জন করতে চাইলেও অনেকেই ধূমপান করে ফেলেন। এক্ষেত্রে নিকোটিন গাম বা লজেন্স খাওয়া যেতে পারে। এইভাবে ধীরে-ধীরে এই তামাক সেবন বর্জন সম্ভব। আবার,এই সময় খেয়াল রাখতে হবে, তামাক বর্জন করতে গিয়ে অন্য কোনও নেশার প্রতি যেন আসক্তি না হয়। বিশেষত মাদকাসক্তি হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এই বিষয়ও সতর্কতা প্রয়োজন।

যাই হোক, দিনটির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, তাৎপর্য ও গুরুত্ব হলো, ব্যক্তি তথা সমাজকে এই নেশা থেকে দূরে রাখা, তবেই আগামী প্রজন্ম এক সুস্থ, সবল ও বুদ্ধিদীপ্ত নাগরিক পাবে।
🍂

Post a Comment

0 Comments