পর্ব ৩। এই তাহলে গড
বাসুদেব গুপ্ত
অনির্বাণএর মাথায় এই মুহূর্তে আর কোন আইডিয়া আসে না। টারমিনাল বন্ধ করে কল করে নির্মাণকে। ওর ভাই। দুনিয়ার সঙ্গে একমাত্র যোগসূত্র। কিন্তু সেটাও আর কতদিন থাকে কে জানে। বেচারীর ব্রেন লিংক লাগানোর সময় একসিডেন্ট হয়ে নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। একই কথা বারবার বলে যায়। খেয়াল করে না যে কথাটা বলা হয়েই গেছে্ একটু আগেই। অনির্বাণ এসব দেখেও ঝুঁকি নিয়ে জোর করে নিজের মাথায় ব্রেনলিংক লাগিয়েছে। লাগাতে বাধ্য হয়েছে, এই কাজ করলে লাগাতেই হয়। নির্মাণ রকেট প্রোপালসান ডিভিশনের ইন-চারজ হতেই, ওকেও লাগাতে হলো বাধ্যতামূলক ভাবে। কিন্তু সব গোলমাল হয়ে গেল।
--কি রে কি করছিস?
ওপার থেকে নিরুৎসাহ গলার আওয়াজ-
--কি করব? নীল পেন্সিল দিবি?
-- দেব। কি করবি? ছবি আঁকবি? আকাশের?
--নীল পেন্সিল দিবি? বল না দিবি কি না?
-- দেব বলছি তো। ভাত খেয়েছিস?
-- চা খেয়েছি। চা আর চিপ্স। ভালো না খাওয়া?
--হ্যাঁ, ভালো কিন্তু কম খাবি। নীল পেন্সিল আনব। ঘুমো।
ও দিক থেকে আর কোন শব্দ নেই।
--ঘুমোলি?
নির্মাণ ঘুমিয়েই পড়েছে। অনির্বাণের বুকটা ভারী ভারী লাগে। একটু এয়ার মডিফায়ারটা চালিয়ে দেয়। অক্সিজেন একটু বাড়ে। আবার স্ক্রীনটা অন করে কাজে বসে।
গড গড গড। এক্রোনিম? ছদ্মনাম?
টুগ্লকে বলে গড এক্রোনিম দিয়ে যা পায় সব দেখাতে।
টুগ্ল দেখাতে থাকে…
Good Old Days, Government of Democracy, Great Out Doors, Guard on Duty, Glory or Death…
ফিঙ্গারমাউস দিয়ে দূরের বড় পর্দায় একটা একটা করে গোল করে, চোখ কুঁচকে ভাবে তারপর কেটে দেয়। হতেও পারে, নাও হতে পারে। কিন্তু কোনো নামটাই আর এগিয়ে দিচ্ছে না।
যদি সাংকেতিক নাম হয় কারো? টুগ্লকে বলে যত নাম যাতে জি ও আর ডি আছে খুঁজে বার করতে।
টুগ্ল চটপট কটা নাম দেখায়-
Gordon Godfrey Goldie Goodwin Goddard Golden Godiva …More
না এ থেকে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আচ্ছা নামটা যদি ভারতভূমির নাম হয়? টুগ্লকে আদেশ দেয়, ভারতভূমির নাম দেখাও। টুগ্ল দেখায়…
Gopal Dabholkar, Gourav damania, Gomathi dharkar, Gourika de, Gopinath Dutta ….More
গোপীনাথ নামটা দেখে খটকা লাগে নির্বা্ণের। ভীষণ চেনা নাম, কোথায় যেন দেখা। আবার টুগ্লকে বলে “গোপীনাথ নামে যত বিখ্যাত নাম আছে সব দেখাও।“
টুগ্ল দেখায়। এবারে অনির্বাণের চোখের মণি বড় হয়ে ওঠে, পালস রেট বেড়ে বোধহয় ১০০ পেরিয়ে যায়। রুদ্ধশ্বাসে পড়তে থাকে।
গোপীনাথ দত্ত। মিসিং টাইকুন। ৭ বছর নিখোঁজ। তাঁর অন্তর্ধান রহস্যের কোন সমাধান হয়নি।
মন দিয়ে লেখাগুলো পড়ে। স্ক্রীনে লাল অক্ষরে আন্ডারলাইন করে,
“গোপীনাথ দত্ত নামে এক শিল্পপতি রহস্যময় ভাবে অদৃশ্য হন ২০২৮ সালের ১ ডিসেম্বর। তিনি অ্যাক্স কম্পানীর প্রথম চেয়ারম্যান। তাঁর আবির্ভাব ও অন্তর্ধান দুইই এক জটিল রহস্যের কুহেলিজালে ঢাকা । “
চোখ বড় বড় করে অনির্বাণ লেখাগুলো দেখে। এত চট করে লক্ষ্যভেদ হয়ে যাবে? কিন্তু এ নামটা বড্ড বেশি এআই এর সঙ্গে জোড়া। এমন যে হবে কল্পনাও করতে পারে নি।
টুগ্লকে মনে মনে স্যালুট জানায় অনির্বাণ। কি করবে ঠিক করতে না পেরে অস্থির লাগে। উত্তেজিত হয়ে একবার বসে একবার ওঠে, একটা ডারট তুলে দেয়ালে ছুঁড়ে মারে, সেটা বুলস আই থেকে অনেক দূরে গিয়ে লাগে। দেখে একটু হাসি পেল, কোনদিনই ওর ডারট ঠিক জায়গায় লাগে না, এবারে একটা চ্যালেঞ্জ। কিছুক্ষণ ডীপ ব্রিদিং করতে উত্তেজনাও একটু কমতে অনির্বাণ লেজিবয়টাতে হেলে বসে মারভিন অন করে। মারভিন একরকম অটো রিডার। অনেক বড় আলেক্সা বলা যেতে পারে। খানিকটা আরটু ডিটুর মত ভিতু ভিতু দেখতে রোবট। চলা ফেরা করে, নানা রকম এক্সপ্রেশন দেয়, রিডিং পড়তে পারে। এক অদৃশ্য ব্যক্তি অডিব্ল এপের মত পড়ে যাওয়ার থেকে অনির্বাণের একে পছন্দ বেশি। হিচ হাইকারস গাইড নামে একটি ফিল্মে মারভিন নামে এক উদাস রোবট ছিল। তা থেকেই এই নাম। অটোরিডার সম্পূর্ণ জেসচার বা ভঙ্গীচালিত যন্ত্র। মনে মনে আদেশ দেয় গোপীনাথ দত্তর ইতিহাস দেখাও। ব্রেন লিংক থেকে সেটা চলে যায় টুগ্লে। সেখান থেকে চালানো হয় মারভিনকে। মারভিন বলতে থাকে…
"গোপীনাথ দত্তর নাম সবাই জানতো তিনি ভারতভূমিতে এআই বিপ্লব এনেছেন বলে। আর এই সুবাদে তাঁর সঙ্গে দেশের শাসক দলের খুব সৌহার্দের সম্পর্ক ছিল। সরকারের যে কোন মহলে তিনি ইচ্ছেমত যখন খুশী যাতায়াত করতে পারতেন। নামজাদা ক্ষমতাশালীদের সঙ্গে তাঁর হাসিমুখে হাগ করার ছবি রোজ কোথাও না কোথাও দেখা যেত। তাঁর পোষাক সবসময় ছিল খুব সাধাসিধে, সুটবুট তাঁর একেবারেই পছন্দ নয়। গলায় সিল্কের চাদর, কপালে একটা লাল টিপ, পায়ে একজোড়া চটি। যাতা চটি নয়, থ্রি ডি ডিজাইন করা। শোনা যেত, এই চটির জন্য নাকি এনাকোন্ডা এআই সু কম্পানিকে মাসে সাবস্ক্রিশান হিসেবে একশো ইথারীয়াম দিতে হয়। পরিমাণটা বেশী হলেও, মাসিক ভাড়া এখন খুবই প্রচলিত ব্যাপার। গোপীনাথের নাম হঠাৎ লাইমলাইটে চলে আসে তাঁর পরশু ভ্যালি প্রকল্পের ঘোষণা থেকে। ইনফরমেশান একটু পলিটিকাল আছে। আরো শুনতে চান?” মারভিন বলে ওঠে।
অনির্বাণ ভিসুয়ালাইজ বোতামটা টেপে, গোপীনাথের ছবি ফুটে ওঠে। ঠিক উপরের বর্ণনার মত।
শুধু কপালে একটা স্বস্তিকা আঁকা। এই চিহ্নটা আজকাল পপুলার।
অনির্বাণের এসব পুরনো ইতিহাসে খুব একটা দিলচস্পি নেই। দিলচস্পি কথাটা ভেরা খুব বলত। এই কাহিনীতে কেমন রাজনীতি রাজনীতি গন্ধ। যদিও আজকাল রাজনীতিকে পাবলিক ইনফরমেশন সিস্টেম থেকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা টুগ্লের একটা মূল দায়িত্ব। হিউম্যানরা রাজনীতির নিয়ে ভীষণ গোলমাল বাধায়। তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে এআইএর খুব অসুবিধে হয়। তাই রাজনীতি নামক গোলমেলে জিনিষটা যাতে মানুষের মস্তিষ্কে না আবার গোলমাল না বাধায় সেটা নিশ্চিত করার জন্য এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু অনির্বাণের কাজটাই হলো পলিটিকাল রিপোরট। কাজেই সব রকম তথ্যই তার জন্য এক্সেস দেওয়া আছে। বাঁ চোখ টিপে অনির্বাণ সায় দেয় মারভিন কে।
“২০২৬ সালে গোপীনাথ দত্ত ঘোষণা করেন পরশু ভ্যালি প্রকল্পের। তাঁর এই ঘোষণা টুগ্লের সব কটা চ্যানেলে ২৫শে ডিসেম্বর রাত আটটায় পৌঁছে যায় প্রতিটি মানুষের কাছে। একটি নামকরা মিডিয়া নিউস ব্যুরোর চ্যানেলে দীর্ঘ ইন্টারভিউ চলে। গোপীনাথ দত্ত জানান তিনি একটি দ্বীপ কিনেছেন বে অফ বেংগলে। ২০২৫ সালে সুন্দরবনের মিনি সুনামির পর এই দ্বীপ নাকি জেগে ওঠে । সরকার তাঁকে অল্পমূল্যে দ্বীপটি ডেভেলপ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য লিজ দিয়েছে। তিনি তার নাম দিয়েছেন ময়না দ্বীপ। কোন এক প্রাচীন লেখকের এক উপন্যাস থেকে সেই নামটা গোপীনাথের পছন্দ হয়ে যায়। তিনি জানান, সেই দ্বীপে তিনি শতাব্দীর সবচেয়ে বড় এলিট রেসিডেন্স প্রকল্প শুরু করছেন । প্রকল্পের নাম পরশু ভ্যালি প্রজেক্ট। পরশু নামটা কেন দেওয়া হয় তা অবশ্য তখন জানা যায় নি। আজ নয় কাল নয় পরশু, এ নিয়ে লোকে হেসেছিল অনেকে, অনেক মিম হয়েছিল জিটিউবে। সরকারের কাছে কিছু লোক জানার চেষ্টা করে, এর সত্যাসত্য, কিন্তু ততদিনে আর টি আই আইন বাতিল হয়ে গেছে, সিকিউরিটির জন্য। তাই কেউ জানতে পারে নি সরকার কত মূল্যে গোপীনাথকে দ্বীপ লিজ দিয়েছে।
এই দ্বীপের জমি গোপীনাথ দত্ত বিক্রি করেন খুঁজে খুঁজে সমাজের বড় বড় এলিট বা সেলেবদের । নক্সা তৈরী করেন এক কিলোমিটার পরিধির বৃত্তাকার তিনটি ৩৩৩ তলা মাল্টিপ্লেক্সের। তার বাহারী নাম হয় ত্রিভূমি। নতুন দ্বীপ, চলাফেরা করার জন্য ম্যাগলেভ ট্রেন, ২৪ ঘণ্টা ড্রোন ডেলিভারি, ২০০ ফুট বাই ২০০ ফুট ভারচুয়াল খেলার মাঠ সবকিছু হাই টেক, আল্ট্রা মডারন। হু হু করে এলিট মানুষজন বুকিং করে ফেলেন। সব বুকিং হয় ক্রিপ্টো কারেন্সীতে। কি পরিমাণ বুকিং হয় তার কোন হিসেব অবশ্য দেওয়া হয় না। তবু কত বুকিং হয়েছিল তা শুধু বোঝা যায় ক্রিপ্টোর বাজারদর দেখে। এক লাফে ১ লাখ থেকে চলে যায় প্রায় সাড়ে ন লাখে।
সব বেশ চলছিল, শোনা যেত ২০৩০এর মধ্যে এগুলোর হ্যান্ডওভার সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। কিন্তু ঠিক এক বছরের মাথায় দিওয়ালীর পরে পরে এক অদ্ভুত বিচিত্র ঘটনা ঘটে। ২০২৮ সাল ৩০শে নভেম্বর কোন রকম ভূমিকম্প বা সাবধান বাণী ছাড়াই আবার আবির্ভাব হয় এক ভীষণ সুনামির। হঠাৎ বিনা নোটিসে ময়নাদ্বীপের চারদিকে জল ৩০ ফুট উঁচু হয়ে মাটি ফুঁড়ে উঠে আসা বাসুকির মত ঝাঁপিয়ে পড়ে। ত্রিভূমি টুকরো হয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। সুনামি চলে যাবার পর ময়না দ্বীপের আর কোন চিহ্নমাত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। অথৈ নোনা জলের মধ্যে চিরতরে হারিয়ে যায় এই ময়না দ্বীপ। খুব কম লোকই তখন জেগে। এই ঘোষণা আসে টুগ্ল চ্যানেলে ঠিক রাত বারোটার সময়। পরের দিন এ নিয়ে শুরু হয়ে যায় তুলকালাম । শেয়ার বাজার পড়ে যায় ২০ পারসেন্ট। সব এলিট বিনিয়োগকারী মাথায় হাত দিয়ে বসে। ক্রিপ্টোর দাম অর্ধেক হয়ে যায়। এ নিয়ে তদন্ত শুরু করে ভারতভূমির গোয়েন্দা দফতর। কিন্তু আরো অনেক তদন্তের মত, তার ফলাফল আজ পর্যন্ত প্রকাশ হয় নি। আর ফোরস ম্যাজিওর বা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য গোপীনাথকে কোন ক্ষতিপূরণও দিতে হয় না “
অনির্বাণ মারভিনকে একটু পজ করে। তার কফি প্রায় শেষ । ক্যাফিন না মারভিন কার জন্য তার রক্তচাপ বেড়ে গেছে বলা শক্ত কিন্তু ব্রেন লিংক ওয়ারনিং মেসেজ পাঠায়, পজ পজ, হাই প্রেসার বলে। মারভিন চিরকালই একটু সেন্টিমেন্টাল রোবট। কাজ থাকলে খুশি, নইলে বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। সে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে চোখ পিটপিট করতে থাকে। অনির্বাণ একটু বিশ্রাম নেয়, চোখ বুজে চেয়ারটাকে এলিভেট করে দেয়, পা দুটো ওপরে উঠে আসে। ব্যাপারটা কোন দিকে যাচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না। আরো শুনতে হবে। দেখা যাক। মারভিন চুপ করে ছিল, ভয়েস কমান্ড পেয়ে আবার শুরু করে।
🍂
“গোপীনাথ দত্ত কোথায়? তিনি যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন। একেবারে উধাও হয়ে গেলেন সেই দিন থেকে। আর অদ্ভুতভাবে তাঁর সেই বিখ্যাত নীল চটি ভেসে ভেসে এসে পৌঁছুলো ভারতভূমির ৬৮৪নং বিচের ভিজে নীল বালিতে। টুগ্লের গ্লোবাল স্কাইলাইট স্ক্যানার সেটা আবিষ্কার করল তিন দিন পরে। নীল বালি, ধূ ধূ নীল, ঠিক যেন আকাশ নেমে এসেছে বালিয়াড়িতে। কিন্তু তার মানে রোমান্টিক কিছু না। কাছেই এক তামার এলয় কারখানার থেকে তৈরী হয় বছরে কোটি কোটি বিস্ফোরক শেল। সেগুলো সাপ্লাই হয় দেশে দেশে নইলে সারাক্ষণ চলতে থাকা যুদ্ধগুলো থেমে যাবে, আর তা হলে বিশ্বের অর্থনীতিও বিরাট ধাক্কা খাবে। সেরকমই বলেন সব বড় বড় ইউনিগুলোর অর্থনীতিবিদরা। সেই কারখানাই সমুদ্র ও বিচ মিলিয়ে প্রায় ৫০ স্কোয়ার কিমি কিনে নিয়েছে। কারও সেখানে যাবার কোন এক্তিয়ার নেই। কোন বিচপ্রেমিক সেখানে যায় না ঢেউএর ফেনায় লুটোপুটি খেতে। বিচের রং বিষের মত গাঢ় নীল।“
মারভিনের গলায় উদাস ভাবটা চলে গিয়ে হঠাৎ যেন মনে হয় মারভিন শুধু ইতিহাস পড়ে যাচ্ছে না, যেন আরো কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। মারভিন যেন জানে অনেক কিছু কিন্তু ওর LLMএর সিকিউরিটি ফিল্টার, টেম্পারেচার সেটিং যা ঠিক করে দেয় কতটা বলবে, সেটা ওকে বাধা দিচ্ছে। অনির্বাণ একটা রহস্যর গন্ধ পায়। কিন্তু এই গল্পের সঙ্গে গডের সম্পর্ক কি? এআই নিয়ে গোপীনাথ কাজ করতেন কি? এই ব্যাপারগুলো জানা দরকার। আর জানা দরকার এআইএর আরো ভিতরের কথা। এআই ব্যাপারটা ওর কাছে এত ভাসা ভাসা। এখন অনেক গাড়ীই এআই চালায়। রাস্তায় দেখা যায় প্রচুর গাড়ী নিজে নিজে চলে যাচ্ছে, কোন ড্রাইভার নেই, এমনকি কোন রোবট সেটাকে চালাচ্ছে না। চলে যাচ্ছে এআই দিয়ে। ওয়াই ফাই দিয়ে এক জিবিপিএস বেগে ইন্টেলিজেন্ট গাড়ীর স্টিয়ারিং ধরা আছে। কি করে? অনির্বাণের মনে হয় এআইএর গভীরে ঢুকতে না পারলে এই রহস্যের কূলকিনারা করা যাবে না। মারভিনকে আবার পজ করে। মারভিন এককোণে গিয়ে চারজারের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে বসে থাকে মন মরা হয়ে। অনির্বাণ ভিসিগ্লাস চোখে পরে নিয়ে ভিভিরামাটা অন করে দেয়।
ভিভিরামা অন করে দিতেই কাঁচের দেওয়াল হয়ে যায় বিশাল থ্রি ডি স্ক্রীন। সেখানে ফুটে ওঠে ইন্টারনেটে জমা করা সব বই, পত্রিকা আর কাগজের এক অনন্ত লাইব্রেরী। এটা চালায় গুটেনবার্গ কর্প। সেইসব পুরনো ব্রাউজার সারচ ইঞ্জিন এখন পুরনো হয়ে গেছে। ভার্চুয়াল লাইব্রেরীতে অবতার হয়ে ঢুকে যায় অনির্বাণ। ভারচুয়াল জগতের চশমা পরলেই চার পাশের সব কিছু অদৃশ্য হয়ে ভেসে ওঠে থ্রি ডিতে গোটা পৃথিবী। যেখানে খুশি যাওয়া যায়। ভিভিরামা দেখাতে দেখাতে যাবে কোনটা কি, পাহাড় হলে কোন পাহাড়, নদী হলে কোন নদী, শহর হলে কোন শহর। ওর পছন্দ অবতার পান্ডা। লাল চীনা পান্ডা নয়, সাদা আর কালো। ভদ্রলোকের মত চেহারা, চলাফেরা। মে আই হেল্প ইউ লিখে এখানে ওখানে বসে আছে অনেক ভিভিরামা গাইড। মারভিন কাজ করে রিয়েল ওয়ারল্ডে, ওর ঘরে, অফিস ঘরে। ভিভিরামা গাইডের কাজ ভারচুয়াল ওয়ার্ল্ডে। মানুষ একটা থেকে আর একটায় এখন ইচ্ছেমত লাফিয়ে যায়, যদিও, ভারচুয়ালে শুধু দেখা বা শোনা যায়, অর্থাৎ ইনপুট নেওয়া যায়, কোন আউটপুট করা যায় না। অনির্বাণ গাইড হিসেবে একজনকে বেছে নেয়। সবাইকে দেখতে একই রকম তবু একেই অনির্বাণের পছন্দ হয়। গাইডের নাম সনি। নামটা আইরোবট ছবি থেকে নকল করা। পান্ডা সেজে অনির্বাণ তিন চারটি বই শর্ট লিস্ট করে। তারপর ভিভিরামা রিডারকে আদেশ দেয় ‘হাউ এআই ওন দি ওয়ার্লড’ বইটি পড়তে।
(ক্রমশ)
0 Comments