জ্বলদর্চি

অরণ্য ষষ্ঠীর পরিবর্তিত রূপ জামাই ষষ্ঠী /রাজীব শ্রাবণ

অরণ্য ষষ্ঠীর পরিবর্তিত রূপ জামাই ষষ্ঠী 

রাজীব শ্রাবণ 


ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিক এক লৌকিক অনুষ্ঠান অরণ্যষষ্ঠী ।অনেকই ভাবছেন এটা আবার কি।  এই নামে ষষ্ঠী হয় আবার।  এই নামেই ছিল আজকের জামাই ষষ্ঠীর।  অরণ্য ষষ্ঠী। প্রকৃতি উদ্দেশ্যে নিবেদিত এক ষষ্ঠী। সেই ষষ্ঠী আজ  বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণে পরিনত হয়েছে। অতি আদরের এক উৎসবে পরিণত হয়েছে।   উৎসবটি বাঙালির একেবারে ঘরোয়া উৎসবে রূপ নিয়েছে।  সে উৎসবে   আছে বাঙালী আনা স্বাদ।   আমাদের পরম প্রিয়  প্রাণের  জামাইষষ্ঠী । প্রতিবছর জৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে জামাইষষ্ঠী পালন করা হয়। এই অনুষ্ঠানের আর একটা নাম হল 'অরণ্য ষষ্ঠী'। 

গাছের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে জামাই ষষ্ঠীর ইতিহাস। 
ইতিহাস বলছে, জ্যৈষ্ঠ মাসের এই তিথির সঙ্গে 'জামাই'-এর কোনও সম্পর্কই নাকি ছিল না প্রথমে। এই তিথি নাকি ছিল অরণ্যের। আসলে প্রাচীন অরণ্য ষষ্ঠী থেকেই শুরু হয় জামাইষষ্ঠী।
দেবী ষষ্ঠীর আশীর্বাদে যে সন্তান লাভ হয়, তা সকলেরই জানা। মা ষষ্ঠীর আশীর্বাদে মায়ের কোল আলো করে জন্ম নেয় সন্তান। তাই সন্তান লাভের আশায় বা সন্তানের কল্যাণের উদ্দেশ্যে বছরে ১২ টি ষষ্ঠী পালন করার রীতি ছিল গ্রাম বাংলায়। দুর্গা ষষ্ঠী, নীল ষষ্ঠীর মতোই এমন একটি ষষ্ঠী ছিল অরণ্য ষষ্ঠী। এক সময় অরণ্যের মাঝে এই ষষ্ঠী পালন করা হতো
অরণ্য না থাকলে বাড়ির উঠোন বা দালানকেও ছোটখাটো বাগান বানিয়ে সেখানে ব্রত পালন করতো বাড়ির মায়েরা। তবে এই অরণ্য সৃষ্টির সঙ্গে শুধুমাত্র সন্তানের মঙ্গল কামনাই জড়িয়ে রয়েছে তা নয়, এই রীতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রকৃতির উদ্দেশ্যে আরাধনাও।

কথিত রয়েছে, একবার দেবী ষষ্ঠী এক গৃহবধূকে শিখিয়েছিলেন অরণ্য ষষ্ঠী ব্রত পালন করার সমস্ত নিয়ম কানুন। ওই বিশেষ দিনে ব্রত পালন করার সময় ওই গৃহবধূ বাড়িতে ডেকেছিলেন নিজের মেয়ে এবং জামাইকেও। জামাই আসার পর দই-চন্দনের ফোঁটা দিয়ে জামাইকে আম কাঁঠাল খেতে বলেন ওই মহিলা। সেই থেকে অরণ্য ষষ্ঠীর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেছে জামাইষষ্ঠীর নাম।
আজ অরণ্য ষষ্ঠী পালন না করা হলেও অরণ্য ষষ্ঠীর সেই রীতি একইভাবে পালন করে ঘরে ঘরে জামাইষষ্ঠী উদযাপন করা হয়। এই ভাবেই জ্যৈষ্ঠ মাসের ষষ্ঠী তিথিতে ঘরে ঘরে পালন করা হয় জামাইষষ্ঠী।

🍂

Post a Comment

0 Comments