জ্বলদর্চি

গদাইয়ের ধনদৌলত/ পুলককান্তি কর

গদাইয়ের ধনদৌলত
 পুলককান্তি কর 

১ 

-- স্যার, আমি এসেছিলাম, ও যেন জানতে না পারে। 
-- কেন, জানলে কী হবে ? তোমায় বকবে ? 
মালতী ঢুপ করে রইল। ওকে নিরুত্তর দেখে বড়সাহেব আবার বললেন, আমাদের গদাই খুব রাগী নাকি? 
একটু ম্লান হেসে মালতী বলল, ‘খুউব !‘
গদাই মানে গদাধর মাহাতো অফিসের পার্ট-টাইম সুইপার। এমন সাদামাটা মুখচোরা লোকটা যে কারোর কাছে ভয়ের কারণ হতে পারে, এই ভেবেই বিস্মিত হলেন বড়সাহেব। গলায় কিছুটা কৌতুক মিশিয়েই বললেন, তা রাগ করে কী করে গদাই ? চেঁচামেচি করে? 
কনুই এর উপর টাটকা একটা কালশিটের দাগ দেখাল বউটি। 
-- বল কী গো ! গদাই গায়ে হাত তোলে ? আর্তনাদের মত শোনাল বড়সাহেবের গলা। কৌতূহল আর দমন করতে পারলেন না তিনি। বললেন, কেন, হাত তোলে কেন ? 
-- ওই যেদিন হাঁড়িয়া-ফাঁড়িয়া খেয়ে আসে, সেদিনই এসব করে। তখন ওই মানুষটা আর ওর মধ্যে থাকে না স্যার ! চোখ দুটো রাঙা জবার মতো জ্বলতে থাকে। বড় বড় চোখ করে চায় আর হাতের সামনে যাই পায় তাই দিয়ে ঠ্যাঙাতে থাকে। খানিক পরে আবার ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোয়। 
-- ও মদটদ খেয়ে এলে তুমি রাগারাগি করো নাকি ? 
-- সবদিন কী আর মাথার ঠিক থাকে স্যার? কোনও কোনও দিন বলি। আমরা গরিব মানুষ৷ অভাবের সংসারে দু আনা কামিয়ে চার-আনা বিলিয়ে এলে ছেলেমেয়েরা খাবে কী ? 
-- আর যেদিন কিছুই বলো না ? 
-- সেদিন হয়তো সকালের কোনও কথা তোলে কিংবা ছেলেমেয়ের সাথে কোনও খটাখটি-- মোট কথা বাহানা একটা মিলেই যায়। 
-- তা মাসের মধ্যে এসব কবার হয় ? 
-- মাসে কি স্যার ! হপ্তায় দু-তিন বার। 
-- ছেলে-মেয়েরা বাবাকে কিছু বলে না ? 
-- ওরা বড় হচ্ছে। বোঝে নিশ্চয়ই সবই। তবে আমি বড় লজ্জা পাই স্যার। টুসির বাপ নেশা করে ঘরে এলেই আমি দোরে খিল দিয়ে দিই। ওরা অন্য ঘরে লেখাপড়া করে৷ 
-- আওয়াজ তো পায় নিশ্চয়ই ? 
-- ওদের বাপের গলা তো আর আটকাতে পারি না। তবে আমি মুখ বুজে থাকি। মেয়ের এগারো ক্লাশ হল। প্রায় দিনই আমায় শুধোয়, মা, বাবা এত চিৎকার করে তোমায় বকে কেন গো ? তা আমি এটা-ওটা ভুজুং-ভাজুং দিয়ে দিই। 

গদাই নিছক গোবেচারা এক বোকাসোকা মানুষ৷ সকালে অফিসঘর ঝাঁটটাট দেয়। তারপর যতক্ষণ অফিস খোলা থাকে, নানান ফাই-ফরমাস খাটে সে। সবাই তাকে ঠকিয়ে নেয়। ঠকতেও যেন বেশ ভালোবাসে সে। যদিও খাতায় কলমে সাক্ষর, তবু নিজের নামটুকু সই করা ছাড়া অন্য আর কোনও ছাপা কাগজের ধার ঘেঁষে না সে। তাকে যদি বলা হয়, একটা লাল ও দুটো কালো রিফিল নিয়ে এসো, তবে সে শতকরা নব্বই দিন দুটো লাল আর একটা কালো রিফিল আনবেই। যদি তাকে একটা কাগজের দু'পিঠ দেখিয়ে বলা হয় আলাদা আলাদা কাগজে জেরক্স করে এনো, মোটামুটি নিশ্চিত, সে একটা কাগজের দু'পিঠেই জেরক্স করে আনবে। অফিসের স্টাফেরা ওকে কাজ দেওয়ার বদলে নিজেরাই হাতে হাতে করে নেওয়াটাকে অনেক বেশি সুবিধের মনে করে। তবে নিতান্তই যদি ওকে পাঠাতে হয়, মানসিক প্রস্তুতি ওরা একটা নিয়েই নেয় যে, এই কাজটা অন্তত দু-তিনবারে শেষ করবে সে। তা সেই গদাই নেশা করলে অন্য মানুষ! বড়সাহেব খানিকটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়লেন। 
-- স্যার, আপনি কিছু বলতে পারেন না ? 
-- আমি কী বলব ? 
-- এই নেশা করা খারাপ, নেশা করলে আয়ু কমে -- এইসব ! 
-- দ্যাখো, ও বাড়ি ফিরে নেশা করবে কি করবে না, সেটা ওর ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার এক্তিয়ারের বাইরে। তবে হ্যাঁ, অফিসে যদি নেশা করে আসে, আমি বলতে পারি। আমি অবশ্য কোনওদিন টের পাই না। 
-- স্যার, ও সকালবেলাতেও কিন্তু মাঝে মাঝে খেয়ে আসে। আমার পাশে বসে কিনা, আমি টের পাই। পাশ থেকে গ্রুপ-ডি’র দিদি বলে উঠলেন৷ 
-- আমায় আগে জানাননি কেন ? এরপর খেয়ে এলে জানাবেন। নেশা করে এসে চাকরি করা ঘুচেয়ে দেব আমি। 
-- না, না স্যার। বকাঝকা যা করার করুন, দেখবেন চাকরিটা যেন না যায়। করুণ মুখে আবেদন করল মালতী। আর তাছাড়া টুসীর বাপ এমনিতে ভালো মানুষ। 
একথা সত্যি। বড়িতে বউ-এর উপর যাই অত্যাচার করুক গদাই, এমনিতে সে খুব ভালো। মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকে তার। ময়লা হলুদ ছোপওয়ালা দাঁতগুলো যেন সবসময় ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে হাসি বিলোচ্ছে। কোনও কাজে ‘না’ নেই তার। 
-- ওর আসার সময় হয়ে গেল স্যার, আজ যাই। যে কথা বলতে এসেছিলাম স্যার, দয়া করে মনে রাখবেন। একটু খবর দিলেই আমি টাকাটা এসে নিয়ে যাব। কোনওভাবেই ওর হাতে যেন টাকাটা না যায়। আবার একদফা অনুরোধ জানিয়ে চলে গেল মালতী। 

গদাইরা আগে মাসে মাত্র সাতশো করে টাকা পেত। গত বছর যখন সবার মাইনে বাড়ল, ওদেরও মাইনে বেড়ে হল দু'হাজার টাকা মাসে। তিন বছরের এরিয়ার পাবে। কম করে যাট-সত্তর হাজার টাকা। ওই টাকার জন্য আর্জি জানাতে এসেছিল মালতী। অবশ্য সব টাকা এখন পাবে না। এত আ্যালটমেন্ট নেই এখন। তবে যাই পাক না কেন, সেটাও কম হবে না। বড় সাহেব বাকি স্টাফেদের বলে দিলেন গদাই এর বিলটা পাশ হয়ে গেলে সেটা যেন গোপন রাখা হয়। ছোট অফিস, একটা পরিবারের মত। বড়সাহেবের কথা কেউ অমান্য করবে এমন নয়। জি.ডি.এ দিদি উঠে এসে বললেন, ‘জানেন তো স্যার, গদাই মাইনের পুরো টাকাটাও বাড়িতে দেয় না। 
-- আপনি কী করে জানলেন ? 
-- আমি যেখানে থাকি, সেখানেই ওই বউটার অফিস৷ আই.সি.ডি.এস-এ কাজ করে৷ ওই তো সংসারটা চালায়। ছেলে নাইনে পড়ে। বড় মেয়েটা ইলেভেনে উঠল। ওই স্কুলের পাশে তিন কাঠার মতো জায়গাও কিনেছে সে। একটা বাড়ি করার ইচ্ছে। এখন যে বাড়িতে আছে, সেটা গেল বার আয়লায় ভেঙে গেছিল। বান এলেই জল ঢোকে। বউটা খুবই লক্ষ্মী স্যার ! গদাইয়ের কপাল ভালো। ওই দেখুন না কেমন হেলেদুলে আসছে ও ! 
বলতে বলতে গদাই এল। প্রতিদিনের অভ্যাস মতো জিজ্ঞেস করল, ‘ছার, চা আনব?’ 
-- তা আনো। কিন্তু আমার চিনি ছাড়া চা আবার বাকিদের সাথে মিলিয়ে ফেলো না যেন। তাহলে কিন্তু আবার পাঠাব। 
নাহ, আজ কোনও ভুল করেনি গদাই। চায়ে চুমুক দিতে দিতে বড় সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন, আজ অফিস আসতে দেরি হল যে ? 
-- আড়তে একটু আটকে পড়েছিলাম ছার। 
এখানেই এক বড় মাছের আড়তে কাজ করে গদাই। সকালে দু-তিন ঘণ্টার কাজ। ভোর ভোর অফিস ঝাঁট দিয়েই আড়তে চলে যায় সে। সেখানে মুটের কাজ তার। নদী থেকে ভেড়িমালিকের মাছ বয়ে আনা, তাতে জল ছেটানো, ওজন করা-- এইসব ছোটখাটো কাজ। এজন্য আড়তদারের থেকে কোনও মাইনে পায় না সে। ভেড়িমালিকদের থেকে যে মাছ তোলা হিসেবে পায়, তাই বিক্রি করেই তার রোজগার। তাছাড়া, মুটেদের সাথে আড়তের মুহুরিদের নাকি ষড় থাকে, ছল-চাতুরি থাকে। অবশ্য গদাই যে এসব ছল-চাতুরি পারবে না, সে তো বোঝাই যায়। আজ  যদিও আর কোনও কিছুতেই অবিশ্বাস নেই বড় সাহেবের। সে যে বউ পেটাতে পারে, এটাই বা কে কবে ভেবেছে ! 

২ 
আজ সকাল সকাল অফিস এসেছে গদাই। কোত্থেকে খবর পেয়েছে ওর এরিয়ার বিলের টাকাটা আজ পাশ হয়ে অফিসে আসছে। নির্ঘাত ওই হারু ব্যাটার কাজ ! হারু ওর মতোই কাজ করে, নদীর ওপারের অফিসে। গদাই এর স্যাঙাৎ। গদাইকে মুরগি করে আশেপাশের দোকানে প্রায়ই চা-ঘুগনিটা খেতে দেখা যায় তাকে। বড় সাহেব ঢুকতেই গদাই জিজ্ঞাসা করল, ‘কত টাকা পাব ছার?’ 
-- ওই পনেরো হাজার ছ’শো মতো। 
-- আর বাকিটা ? 
-- পরের আ্যালটমেন্টে হয়তো আরও কিছু পাবে। তা এত টাকা নিয়ে কী করবে ভেবেছ ? 
-- আজ্ঞে, আমাদের একটা নাবাল জমি আছে ইস্কুলের কাছে। ভাবছি, এই টাকাটা দিয়ে ওখানে মাটি ভরিয়ে নেব। 
-- কত টাকা লাগবে মাটি ভরাতে ? 
-- সাত-আট হাজারের মতো। 
-- বাকি টাকাটা কী করবে ? 
-- ব্যাংকে রেখে দেব। টুসির মা বলছিল, ইস্কুল ছাড়লেই মেয়ের বিয়ে দেবে। মেয়ের নামে কিছু জমাব ভাবছি। 
-- ঠিক আছে৷ কালকে কিন্তু তোমার পাশ বইটা দেখিও। আচ্ছা একটা কাজ করো না কেন, তোমার বউকেই পুরো টাকাটা দিয়ে দিও। সেই সুবিধা মতো খরচা করবে। নিজের বিবেককে সান্ত্বনা দিলেন বড়সাহেব। 
-- ঠিক আছে ছার। আজ বাড়ি গিয়েই বউকে টাকাটা দিয়ে দেব। বলেই বাইরে বেরিয়ে গেল গদাই। 
ও একটু আড়াল হতেই বড়সাহেব দিদিকে গিয়ে বললেন, আজ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাবেন। যাবার পথে ওর বউকে খবরটা দিয়ে যাবেন, ও যেন গদাইয়ের থেকে টাকাফাকা ঠিক মতো নিয়ে নেয়। 
খানিক বাদে কয়েক প্যাকেট মিষ্টি নিয়ে এল গদাই। আড়াইশো করে মাখা সন্দেশ। প্রত্যেকের জন্য। বড় সাহেব একটু রাগ করেই বললেন, অমনি পয়সা নষ্ট শুরু করে দিয়েছ ? এসব আনার কী দরকার ছিল ? 
-- ছার, কী যে বলেন ! আজ এত টাকা একসাথে পেলাম, সবাইকে একটু মিষ্টিমুখ করাব না ? 
-- অন্যদের জন্য আনলে আনলে, আমার জন্য আনার দরকার ছিল না। জানই তো আমি মিষ্টি খাই না। 
-- তা বললে কী করে হবে ছার ! আজ একটু আপনাকে খেতেই হবে৷ বাকিটা বৌদিমণির জন্য বাড়ি নিয়ে যান। 
অগত্যা একটু খেতেই হল। আজ অন্যদিনের থেকে একটু তাড়াতাড়িই ছুটি করে দিলেন অফিস।৷ টাকা পয়সা নিয়ে সবাইকে বাড়ি যেতে হবে। বেরিয়েই দেখলেন, গদাই কয়েক জন সাগরেদ নিয়ে লুচি-মাংস খাচ্ছে। ওর পকেটই ফাটছে নির্ঘাত। ব্যাটা আজ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরলে হয় ! দ্রুত পা চালালেন তিনি। 
খানিক বাদে বাড়ির দিকে পা বাড়াল গদাই। পথে বলরাম মাহাতোর সাথে দেখা। বলল, কী রে খুড়ো, কোথা থেকে আসছিস ? 
-- ওই একটু বসিরহাট যাইছিলি। 
-- কী জন্যে? 
-- পোস্টোঅফিসে একটা কাগজ কিনিছিলি । তা ওরা বলছে, এখন ভাঙালে নাকি অনেক টাকা কাটি লিবেক। 
-- এখন তালে ভাঙতে যাবি কেনে ? টাকার খুব দরকার পড়ল নাকি ? 
-- তোর কাকির শরীলটা ভালো যাছে নাই ক’দিন। তা ডাক্তার বলল, এখনেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবেক। 
-- কেন রে, বড় কিছু রোগ হইছে নাকি ? 
-- বলছে তো পেট কাটি কী একটা পরীক্ষা করবেক। কী সব ফটোটটোও নাকি করতে হবেক। 
-- তালে তো অনেক টাকার ব্যাপার রে ! কী করবি ? 
-- ভাবছি ঘেরিটা লিজ দিব। আর কিছু ধারদেনা করতে হবেক। 

🍂

-- তা খুড়ো, হামি তোকে হাজার টাকা দিতে পারি। 
-- তুই কোথা থেকে পাবি রে ? 
-- আমি অনেক টাকা পাইছি। আরও পাব। বলেই হাজার টাকা বের করে দিল গদাই। 
-- কী যে উপকার করলিস ভাইপো ! হামি তোকে মাস দুয়েকের মধ্যেই টাকাটা শোধ করি দিব। 
-- খুড়ো, তুই হাঙ্কে পাঁচশো টাকা শোধ দিবি। বাকিটা হামি কাকিকে ডাক্তার দেখানোর জন্য দিলি। 
- ভগবান তোকে আশীর্বাদ করুক ! চল, বরং বাসস্তীর দোকান থেকে একটু ঘুরে আসি৷ 
বাসস্তীর দোকানে যাবার কথা শুনে চোখ চকচক করে উঠল গদাইয়ের। টাকা পাবার খুশিতে একটু হাঁড়িয়া না খেলে চলে ! বলল, ‘চল খুড়ো, আজ মালের খরচ হামি দিব। যতটা খাতে পারবি, খাবি।‘ 
গদাইকে আসতে দেখে ধমকে উঠল বাসন্তী, ‘আজকে কিন্তু আর বাকি দিব নাই। নগদেই খাতে হবেক। তোর চারশ টাকা আগের বাকি আছে কিন্তু !’ 
-- না রে, আজ আর বাকি খাব নাই। বরঞ্চ চাইলে কিছু আগামও পাবি। সামনের তিন-চার মাস আর কিছু বলতে পারবি নাই কিন্তু ! 
-- কী ব্যাপার মামা, তোর ট্যাঁক আজ এত গরম হল কোথা থেকে ? পাশ থেকে মংলা বলে উঠল। 
-- উ হামি অনেক টাকা পাইছি না ! 
-- তালে হামদেরকেও তোর খাতে দিতে হবেক কিনু ! 
-- আচ্ছা, আচ্ছা। আজ তোদের হাঁড়িয়ার দাম হামি দিব সব৷। যত খাবি খা। ও কাকি, তাড়াতাড়ি দে। গলা যে শুকনা হই গেল ! 
গদাই আরাম করে কয়েক ঢোক দিয়েছে, এমন সময় দেখল মালতী দৌড়ে দৌড়ে ওর দিকেই আসছে। মনে মনে প্রমাদ গুনল সে। ও তো কখনও এদিকে আসে না। টাকার খবর পেয়ে গেল নাকি ? তড়াক করে লাফিয়ে উঠল সে৷ বাসন্তীর হাতে দুটো পাঁচশো টাকার নোট গুঁজে দিয়ে বলল, তাড়াতাড়ি লুকা। হামার বউ আসছে, ওকে বলবি নাই কিন্তু। যেন মালতীকে দেখেনি, এমন ভান করে আবার বসে পড়ল সে। গামলায় চুমুক দিতে লাগল দ্রুত। 
-- এই যে টুসির বাপ, শুনছিস ? একবার এইদিকে আয় তো, কথা আছে। 
মালতীকে দেখেই গর্জন করে উঠল গদাই, হতচ্ছাড়ি মেয়েছেলে ! তুই ইখিনে কী করতে আসিছিস? চোখ দুটো বড় হয়ে ভাটার আগুনের মতো জ্বলতে লাগল তার, ‘নজরদারি করতে আসিছিস ? যা ভাগ ইখান থেকে।‘ 
-- লজ্জা নাই তোর ! ঘরে সেয়না বেটি আছে, আর তুই ইখিনে ফুর্তি করছিস ? 
-- বেশ করছি। হামার টাকা, হামি যা খুশি খাব, যা খুশি উড়াব। তাতে তোর বাপের কী ? 
-- তুই এখন ঘর যাবি কি নাই বল। না হলে হামি চেঁচায়কোনি লোক জড়ো করব। 
- তর পিঠ কি চুলকাছে? ঘর যাবি, নাকি ইখিনেই দিই দিব তোকে ঘা কতক ? বলেই একটা কঞ্চি নিয়ে তাড়া করে গেল ওর দিকে। 
 আজ রুখে দাঁড়াল মালতী। আজ আর ভয় পেলে চলবে না তার। এই টাকা ক’টার জন্য অনেক দিন ধরেই অপেক্ষা করে আছে সে। অনেক স্বপ্ন সে দেখেছে এটা নিয়ে। এ তার স্বপ্নের ধন। যেটুকু বেঁচে আছে, বাড়ি নিয়েই ফিরবে সে। একটু দম নিয়ে শক্ত করে চেপে ধরল স্বামীর হাত, শান্ত অথচ দৃঢ় গলায় বলল, ‘চল, ঘর চল।‘

Post a Comment

0 Comments