বার্লিনের ডায়েরি
৩২ পর্ব
চিত্রা ভট্টাচার্য্য
মেঘেদের রাজপথে সাদা পাখা মেলে উড়ে যায় এক ঝাঁক সুদূর প্রসারী বলাকা। এনরিকের তিন চাকার বাহারী রথ এবার ফুটবলক্লাব গ্রাউন্ড পিছনে ফেলে ছুটেছে কালো মসৃণ পথের ওপর দিয়ে। উত্তর পশ্চিম ইতালীতে লোম্বার্ডি অঞ্চলের জাঁকজমক পূর্ণ শহর টির খুব কাছেই আলপ্স পর্বতমালার ৩০ মাইল দক্ষিণে অদ্রিজারা এসে পৌঁছলো। সুদূরে অস্পষ্ট আল্পসের উঁচু নীচু কালচেনীল মেঘে ঢাকা মাথাগুলো ঢেউয়ের মত চারদিক ঘিরে রয়েছে। তার শুভ্র তুষারাবৃত শীর্ষ দেশঝলমল করছে পড়ন্ত বিকেলের সূর্যালোকের কুসুমরাঙা আভায়। এনরিক বলে ,গ্রীষ্মকালে এ শহর গরম হলেও আদ্রতা ও থাকে তাইঐ সময় বেড়ানোর পক্ষে সম্পূর্ণ আদর্শ। এখন শীতের মরশুম পাহাড়ের বরফ কঠিন গা বেয়ে ছুটে আসা শৈত্যপ্রবাহ মাঝেমধ্যে ভারী অসহ্য হয়।
মিলানোর একেবারে কেন্দ্রস্থল ম্যাজিওর লেক জেলার খুব কাছে লেক কেমোর সামনে দাঁড়িয়ে অদ্রিজা বাঁধনহারা খুশিতে শ্রীর হাত টি ধরে দুইহাত প্রসারিত করে একপাক ঘুরে নিয়ে বলে কী অপরূপ সুন্দর দেখ মা !এক স্নিগ্ধ নির্মল শান্তির পরিবেশ সর্বত্র। পাহাড়ের পা ধুয়ে দিতেই এই টলটলে স্বচ্ছ আয়নার মত জলে ভরা হ্রদের এমন নিরন্তর বয়ে চলা। ওয়াটারট্যাক্সি ভাসছে লেকেরজলে কাঁপন তুলে । উৎসাহিত ভ্রমণার্থীরা টইটুম্বুর জলে লেকবিহারে মেতেছে। হাসি গানের আওয়াজ পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনিত হয় বেড়ায়। ইতালীর লেক গারদা এবং ম্যাগিওর হ্রদের পর তৃতীয় বৃহত্তম হ্রদ লেক-কেমো। ইতালীর লেক অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় পাঁচটি হ্রদের মধ্যে অন্যতম ১৪৬বর্গ কিলোমিটার লম্বা এই হ্রদ টি পাহাড়ের হিমবাহ থেকে সৃষ্টি হওয়া নির্মল গভীরতম একটি মিষ্টি জলের হ্রদ। বেশ কয়েকটি মনোমুগ্ধ কর হ্রদের সমষ্টি নিয়ে লেক কেমোর অবাধ বহমানতা এ শহর কে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য করে তুলেছে । শান্ত লেকটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে হোটেল মোটেল বিলাস বহুল ধনীদের ঘরবাড়ি ,সিজিন ফুলের রঙের বাহারের সাথে পাহাড়ের গায়ে অজস্র পাইন, বার্চ ,লার্চে ঘেরা সবুজের মিতালি । তারই পাশে কিছুটা সময় কাটিয়ে এবার ঋষভ বলে চলো ইতালীয় ফ্যাশন দুনিয়ায় মার্কেট প্লেসে যাওয়া যাক।
লেক কেমো
শহরের ফ্যাশন অফিকনাডোস সুপার মডেলস এবং আন্তর্জাতিক পাপারাৎজ্জিদের অন্যতম আকর্ষণ কেন্দ্র বিশাল ক্যাথিড্রাল চত্বরে পৌঁছলে সবেমাত্র সাঁঝ নেমেছে। মিলানে বছরে দুবার বিশাল উৎসবের আয়োজন হয়। প্রধানত থিয়েটার এবং কনসার্টের সময় বসন্ত ঋতুতে এবং তারপরে শরতের মেলায়। তখন অপরূপ সাজে মাতে ইতালীর সব শহরের সাথে মিলান ও। চলার পথে এনরিক ব্যস্ত ছিল নানা সংবাদ পরিবেশনে। উৎসবের সময় সুদূর বিশ্বের বহুপ্রান্ত থেকে সহস্রাধিক দর্শনার্থীর মিলন মেলায় এ শহর প্রতিদিন মুখরিত হয়ে ওঠে। গমগম করে জন জোয়ারে প্লাবিত হয়। তবে অবশ্যই বলা যায় মিলান শহর ২৬ শতাধিক শতাব্দী ইউরোপের অন্যতম প্রাচীন শহর এবং ইতালীর সব চেয়ে ফ্যাশানেবল শহর হলেও এটি বিখ্যাত বিশ্বের বৃহত্তম এক গথিক ক্যাথিড্রাল ডুমো টির জন্য। দি লাস্ট স্যাপার পেইন্টিং এবং বিখ্যাত লাস্কালা অপেরা হাউস জনপ্রিয় নাইট ক্লাব সিনেমাস অপেরা ব্যালট কনসাটর্স এবং থিয়েটার হল গুলো মিলান কে ঐতিহ্য মন্ডিত একটি আকর্ষণীয় অত্যাধুনিক শহরে পরিণত করেছে । রাতের মিলান
আসন্ন প্রায় বড়দিন ২৫শে ডিসেম্বরের ও নতুন বছরের শুভারম্ভ।এক মাস আগের থেকেই খ্রিষ্টমাসের সেলিব্রেশন চলে। গভীর সুখে মুক্ত বিহঙ্গের মত শহরবাসী মেতে উঠেছে জীবনের জয়গানে। ওরা ঘুরছে বেড়াচ্ছে গল্প করছে অর্কেষ্টা বাজিয়ে নিজেদের মত গান গাইছে। বাঁধা নিষেধ নেই,অতিরিক্ত পানাহারের ফলে দৃষ্টিকটূ অভব্য আচরণ ও কেউ করছে না। সমস্ত পরিবেশে যথেষ্ট শোভন শালীনতা পূর্ণ। কেউ কারোর ব্যক্তিগত জীবনে অনর্থক অসুবিধার সৃষ্টি করছেনা । উৎসবের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে সারা রাত তার আমেজে ভাসছে । ডায়েরির পাতা উল্টে আজ ও শ্ৰী একাকী নিভৃতে হাসে। দারুণ উৎসাহ নিয়ে সেদিন এনরিকের সাথে শপিং সেন্টার ঢুকে জিনিস পত্রের দাম গুলো ইউরোতে নির্ধারিত থাকায় তাকে ভারতীয় মুদ্রায় হিসেব কষে মা মেয়ের মাথা খারাপ হওয়ার উপক্রম। ওরা শুধুই উইন্ডো শপিং করে বেরিয়ে এসে ঋষভ কে বলে মনে হোলো ট্যুরিস্ট দেখে অহেতুক বিশাল চওড়া দাম হাঁকিয়ে বসে আছে।
🍂
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গুলোর সাথে নৈশ ভোজনের ও এলাহী আয়োজন দেখে চমৎকৃত শ্রী ও অদ্রিজা। কত রকমের সুস্বাদু রান্নার ডিসে রেস্তোরাঁগুলো সাজানো ,মনোহারী বিজ্ঞাপনের আলোয় সুসজ্জিত ফুডহাবগুলোপিজ্জা ,পাস্তা ,স্প্যাগেত্তি ,চিংড়ী ,কাঁকড়া ,চিকেন সামুদ্রিক মাছ - মাংসের অফুরন্ত সম্ভারের প্রিপারেশন। শ্রী বলে বিশ্বখ্যাত মজ্জারেলা চীজ টি ইতালিয়ানদের একান্ত নিজস্ব সম্পদ। সব খাবারের মধ্যেই তার বিশেষ স্বাদ পাওয়া যায়। রেস্তোরাঁ গুলো থেকে রান্নার গন্ধ শীতের হাওয়ায় রসনা কে বিশেষ চঞ্চল করে তুলেছিল। রাতের ডিনার ডুমো চত্বরের একপাশে গোল্ডেনহাটে মন পছন্দ পিজ্জা পাস্তায় সেরে নিয়েছিল ,যার স্বাদ শ্ৰীময়ী আজ ও ভোলেনি। ডিনার টেবিলে বসে তিতির আস্তে করে শ্রী কে বলে দেখেছো মা এখানে কত হৈচৈ কত বিচিত্র মানুষের অবাধ মিলন। কিন্তু অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে অযাচিত ঢুকে পড়া টা যে চরম অসভ্যতা এবং অন্যায় সে সামাজিক শিক্ষা ওদের যথেষ্ট আছে।
মিলানো ফ্যাশন সেন্টার
ঘড়ির কাঁটা রাত বারোটার ঘর ঘুরে গিয়েছে শ্রীর চোখে ঘুম নেই ,জানলায় এসে দাঁড়িয়েছে। এখান থেকে বাইরের বড় রাস্তা পার হয়ে সোজা ডুমোর বিশাল চত্বর দেখা যায় । দূর থেকে ভেসে আসছে বাজনার ধ্বনি গীটার সাক্সফোনের সাথে ড্রাম তাশা বাজানোর উদ্দাম আওয়াজ।নিদ্রা হারা এ শহরের চোখে ক্লান্তি নেই। উজ্জ্বল জোরালো আলোর বন্যায় প্লাবিত বিশাল চত্বরটি তে কোথাও নাচের কোথাও গানের প্রাকটিস চলছে। বাজনার ধ্বনিতে রক্তে উন্মাদনা জাগায়। কত উৎসাহী বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষের পার্টিতে নাচ গান ,সদ্যবয়ঃসন্ধি পার হওয়া কিশোর কিশোরী,যৌবন দীপ্ত ইয়ং ছেলে মেয়েদের অবাধ মেলা মেশার সমাবেশ। স্বাধীন মুক্ত জীবন। উৎসবের নেশায় মাতোয়ারা মিলান নিদ্রা হারা। দিন রাত এক করে ওরা মেতে থাকে আনন্দে। জোনাকজ্বলা রাতের আঁধার থেকে ভোরের আকাশের প্রথম সূর্য কে বরণ করে স্বাগত জানানোতেই এই আধুনিক ফ্যাসান শহরের যেন সার্বিক প্রয়াস। যার জন্য এই শহরের জনপ্রিয়তা ক্রমশঃএত বিশাল। মিলানের এই ক্যাথিড্রাল ডুমো টির সাথে সাঁঝেরবেলার আলোআঁধারিতে এক ঝলক পরিচয় হয়েছে।আগামীকাল সারাদিন সেখানেই কাটানোর খেয়ালে শ্রীময়ীর চোখের পাতায় ধীরে ধীরে ঘুম নেমে আসে।
সে রাত পার হয়ে নতুন সকাল এলো। স্বভাববিক ছন্দে রেডি হয়ে মিলানো ভ্রমণের দ্বিতীয় দিনে ডুমো ডি মিলানো বা মিলানো ক্যাথিড্রালের সামনে গিয়ে শ্রীময়ী বাকরুদ্ধ।আশ মেটেনা, অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে কী অসাধারণ অপূর্ব কারুকার্য আকাশ ছোঁয়া উঁচু গীর্জাটির আপাদ মস্তক জুড়ে। ওর মনে হোলো অসীম ওই নীলাকাশের গলায় কে যেন অতিযত্নে বহুমূল্য মণি মাণিক্য খচিত হীরের রত্ন মণিহারের নেকলেস খানি পরিয়ে দিয়েছে । মিলানের প্রতীক মিলান ক্যাথেড্রাল সে যুগে মানুষের চিন্তার প্রকাশ যে এতো সুদূর প্রসারী নিখুঁত কারুকার্য্য ময় ,এত সূক্ষ শিল্প চেতনার পরিকল্পনায় হতে পারে তা কিছুতেই ঋষভের বিশ্বাস হতে চায় না। এর আকৃতি গত বিশালতা আর সুষম স্থাপনার সৌন্দর্য মুগ্ধ করে। অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে কী অসাধারণ কারুকার্য্য। সারি সারি মিনার শত শত নিপুন ভাস্কর্য্য ,ক্যাথেড্রালের ছাতের কিনারায় সুসজ্জিত হয়ে অজস্র সুন্দরী পরীরা রানীর মত বিরাজিত। সেখানে ধর্ম যাজক পুরোহিত সিংহ থেকে শুরু করে কল্পলোকের গ্রিফন ফিনিক্স ড্রাগন গার্গওয়েল দুর্দান্ত সব অপরূপ মূর্তি নিজেদের যথাযোগ্য স্থান টি অধিকার করে স্বীয় গর্বে বিরাজমান।শ্রীর বারবার অন্বেষণের কথা মনে পড়ে। প্রাগের ঐতিহাসিক গল্পগুলো ও কত সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছিল ।
সকালের সূর্যের কাঁচা হলুদ রঙের আলোর ছটায় উজ্জ্বল সোনার মত ঝলমল করছে ক্যাথেড্রাল চার্চ টির সর্বাঙ্গ জুড়ে। এর একেবারে সামনের দিক টি চিত্তাকর্ষক সূক্ষ্ণ দুধ সাদা এবং হাল্কা দুধে আলতা গোলাপী রঙের সাদা। সোনালী আলোর প্রতিফলনে এক মায়াবী রূপ নিয়ে নিজেকে আকর্ষিত করে চলেছে। বার বার ছুঁয়ে দেখে ও ভ্রম সংশোধিত হতে চায় না। মনে হয় যেন সত্যি রাশাকৃত সোনা গলিয়ে এমন শিল্পের সৃস্টি সম্ভব হয়েছে। ঘাড় টি উঁচু করে গীর্জা শীর্ষে তাকিয়ে অদ্রিজা বলে দেখ কেমন ,অগুনিত পরীরা নৃত্যের ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এবং গ্রথিত গথিক ক্যাথিড্রাল। এবং ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম গীর্জা। ফ্লেমিং গথিক ইতালীয় স্থাপত্য শিল্পকলার সে এক অনুপম সৌন্দর্যের সৃষ্টির স্বাক্ষর।
দূরের পাহাড়
সামনের বিশাল চত্বরে হাজার হাজার দর্শনার্থী মানুষের মেলা আর সেই সাথে সহস্র হৃষ্ট পুষ্ট চেহারার বড় সরো গোলা পায়রার দল নির্ভয়ে খেলে বেড়াচ্ছে। ভ্রমণার্থী অচেনা মানুষগুলো যেন ওদের কতকালের চেনা !কত নিবিড় সখ্যতা। অতো উঁচু গীর্জাটির ছাতে ও দর্শনার্থীরা খুব ছোট্ট সব পুতুলের মাথার মত বাইনোকুলার দিয়ে দেখলে বোঝা যাবে মানুষ। টিকিট কেটে সিঁড়ি আরোহন করে বা লিফ্টে চড়ে ডুমোর ছাদে উঠে শহরের দৃশ্যের সুন্দর ছবি এবং ডুমোর স্পায়ার্সের সৌন্দর্য খুব কাছের থেকে দেখা যায় । অদ্রিজার ইচ্ছে ওমনি ছাদে উঠবে । অসাধারণ ঐতিহাসিক শৈল্পিক আকর্ষণ শ্রী ও ঋষভ কে ক্রমাগত আকৃষ্ট করছিল। অমন অপরূপ কারুকার্য্য ময় ছাদে না উঠলে মিলানো ক্যাথেড্রাল দেখা অসমাপ্ত থেকে যাবে ,শ্রী ও ভাবে ছাদে উঠতেই হবে। লিফ্টে ওঠার লাইনে অস্বাভাবিক ভীড়। বরং সিঁড়ি দিয়ে ওঠার টিকিট কাটার লাইন ফাঁকা এবং টিকিট সস্তা ও । অদ্রিজা সময় নষ্ট না করে সিঁড়ির লাইন টি তে দাঁড়িয়েছে।
শ্রীর মনে একটু আশঙ্কা জাগে ও পারবো তো? সেই কবে আছাড় খেয়েছিলো আঘাত পাওয়া হাঁটু পায়ের যন্ত্রনা এখনো নিজেদের অস্তিত্ব জানিয়ে যায়। মিলান চত্বরেই এক নিভৃত কোণে টিকেটের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল যখন চমৎকার এক ছবি সহ মিলানের ম্যাগাজিন ঋষভ নিয়ে এলে শ্রী গভীর মনোযোগে পাতা ওল্টায়। কোনো এক ব্রিটিশ সাংবাদিকের প্রতিবেদন ,--মিলানো ডুমোর অবিস্মরণীয় সৃস্টি তত্ব --অবশ্যই শ্রীর কাছে অপরিহার্য্য।
অতীত আর বর্তমানের সিঁড়ির মাঝ খানে দাঁড়িয়ে শ্রীময়ী একান্তে পায়ে পায়ে ইতিহাসের মেঠো পথ টি ধরে চলে গিয়েছিলো চতুর্দশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে। এখন যেখানে মিলানো ক্যাথিড্রাল চার্চ টি বিশ্বখ্যাত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইতালি তথা সমগ্র ইউরোপ মহাদেশের গর্ব হয়ে , সেখানে একদা সেলটেসের প্রাচীন মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। ইতিহাসের সে কাহিনী বারংবার মনে শিহরন জাগায় । এখানে দুটি গীর্জা সান্তামারিয়া ম্যাগজিওর এবং সান্তা টেকলা ছিল গথিক স্থাপত্য শৈলীতে সুপ্রসিদ্ধ হয়ে একটিতে প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। এই ক্যাথেড্রাল টি নির্মাণের স্থানে রোমান সাম্রাজ্যের সময়ে সেল্টসের অভয়ারণ্য ছিল মিনার্ভা চার্চ। পরে চতুর্দশ শতাব্দীতে সান্তা টেকলা এবং সপ্তম শতাব্দীতে সান্তামারিয়া মাগিগিয়ারের গির্জা ভেঙে ফেলে মিলানোর এই ক্যাথেড্রাল ক্রমশ ব্যাপ্তি বাড়িয়ে গড়ে উঠেছিল। এবং সর্বাধিক বিখ্যাত স্মৃতি স্তম্ভ হয়ে পরবর্তী কালে এই ক্যাথেড্রাল যার পুরো নাম হয় সান্তামারিয়া নাসান্তে। গথিক স্থাপত্যের এই দুর্দান্ত বিল্ডিং মিলানো ডুমো টি কে মিলানের প্রতীক ও বলা হয়। ইতালীয় স্থাপত্য শৈলীর এক অপরূপ প্রকাশ শ্রীর মনে হয় এক ঐশ্বরিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ন অলিখিত মহাকাব্যের জগতে পৌঁছে গিয়েছে ।
মিলানোর ইতিহাস বলে , ১৪১৭ সালে নির্মিত অসমাপ্ত ক্যাথেড্রালটি পোপ মার্টিন ভি দ্বারা পবিত্র করা হয়েছিল এবং ১৫টি গীর্জার উদ্বোধন ১৫৭২ সালে সেন্ট কার্ল বোরোমিও করেছিলেন। ১৭৬৯ সালে ম্যাডোনার সোনার মূর্তি এবং ১৯ শতকে আকাশ ছোঁয়া ১৩৫ টি মার্বেল স্প্যায়ার 'পাথরের বন' দিয়ে ডোমো টি সাজানো হয়েছিল। সবচেয়ে দুঃখ জনক ঘটনা এই ক্যাথেড্রাল টি নির্মাণের সময় অংশ গ্রহণকারী বহু প্রজন্ম যারা জানতেন তাদের সৃষ্টির শেষ পরিণতির পরিপূর্ন আসল রূপটি তারা কখনোই দেখে যেতে পারবেন না। কারণ ক্যাথেড্রাল সম্পূর্ণ নিখুঁত ভাবে নির্মিত হতে মাঝ খানে পাঁচশত বছর কেটে গিয়েছিল। ১৩৮৬ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হওয়া ইতালীয় গথিক স্থাপত্য কলার প্রকৃষ্ট নিদর্শন এই ক্যাথেড্রাল টির নির্মাণ কাজ চলে ৫৬৪ বছর ধরে এবং ১৯৫০সালে সম্পূর্ণ রূপে তা পরিপূর্ণতা পায়।
এর সম্মুখ ভাগ টি বিশাল সংখ্যক আশ্চর্য জনক ভাস্কর্য পাতলা কলাম টাওয়ার এবংস্পায়ার দিয়ে সজ্জিত যা ক্যাথেড্রালটি কে এক পরিশীলিত গথিক শিল্পের পরিপূর্নতা দিয়েছে। পুরোপুরি সাদা মার্বেল দ্বারা নির্মিত, এই ক্যাথেড্রাল দিনের যে কোনো সময়ে এবং যে কোনো আলোতে অপরূপ রূপে ধরা দিয়ে এক রহস্যময়ী রূপে পরিপূর্ন হয়ে আছে। অপূর্ব দৃশ্য অভিনব তার প্রকাশ । এবং তার অভ্যন্তরের সাজে ও এক অমূল্য শিল্প প্রতিভার পরিপূর্ণ রূপের পরিচয় রয়েছে যা জগৎ সভায় যুগ যুগ ধরে আজো অনুপম শিল্প সৃষ্টির সমৃদ্ধময় বাহক হয়ে আছে । জন সমাগমে পরিপূর্ন এই ক্যাথেড্রালের দেওয়াল প্রাচীর খিলান পিলার মর্মর মূর্তি থেকে শুরু করে প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে মেঝেতে সোপানে কী এক অব্যক্ত ধ্বনির প্রতিধ্বনি গুঞ্জরিত। আকাশে বাতাসে মর্মরিত একদিকে সৃষ্টির সুখের উল্লাস অপর দিকে এই সৃজন শীলতার নেপথ্যে রয়েছে বেদন ভরা নীরব অশ্রুজল। অদ্রিজা অন্দরে প্রবেশের টিকিট হাতে এগিয়ে আসছে। শ্রীময়ী ও প্রস্তুত হয়ে চলেছে মিলান ডুমোর অন্দরে প্ৰবেশ করতে। ক্রমশঃ
0 Comments