বাংলার ঘাস পাতা ফুল ফল, পর্ব -- ২২
পদ্ম
ভাস্করব্রত পতি
'সেই আমাদের দেশের পদ্ম
তেমনি মধুর হেসে
ফুটেছে, ভাই, অন্য নামে
অন্য সুদূর দেশে।'
-- সেই আমাদের দেশের পদ্ম (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
'পদ্ম' আমাদের দেশের জাতীয় ফুল। ১৯৫০ এর ২৬ শে জানুয়ারি পদ্মফুলকে এই তকমা দেওয়া হয়েছিল। ভারত ছাড়াও মিশর এবং ভিয়েতনামের জাতীয় ফুল পদ্ম। ফ্রান্সের জাতীয় প্রতীক পদ্ম। এছাড়া ইতালি ও কানাডার জাতীয় প্রতীক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে শ্বেতপদ্মকেই। পদ্মফুল হল পবিত্র সৌন্দর্যের প্রতীক। এজন্য আমরা বলে থাকি চরণকমল, পাদপদ্ম, করকমল, মুখপদ্ম, কমলনয়না শব্দগুলি। ভারতের এক প্রতিষ্ঠিত অন্যতম রাজনৈতিক দল 'ভারতীয় জনতা পার্টি'র (BJP) প্রতীক হল পদ্মফুল। পদ্মফুল ইরানি সৌর হিরি ক্যালেন্ডারের প্রতীক। দক্ষিণ এশিয়ায় ইসমাইলি সাহিত্যে পদ্মকে শুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কাভেহ দ্য ব্ল্যাকস্মিথস দেরাফশে এবং পরবর্তীতে সাসানীয় সাম্রাজ্যের সম্রাট দেরাফশ কাভিয়ানীর পতাকায় অঙ্কিত ছিল পদ্মফুলের ছবি।
ভারতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের দেওয়া হয় 'পদ্ম' নামাঙ্কিত তিনটি পুরস্কার -- পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ এবং পদ্মশ্রী। সাহিত্য ও শিক্ষা, বাণিজ্য ও শিল্প, সমাজকর্ম, ক্রীড়া, পাবলিক অ্যাফেয়ার্স, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, চিকিৎসা, নাগরিক পরিষেবা ইত্যাদি ক্ষেত্রে দেওয়া হয় 'পদ্মবিভূষণ' পুরস্কার। ব্যতিক্রমী ও বিশিষ্ট সেবা এবং উচ্চ মানের বিশিষ্ট সেবার জন্য প্রদান করা হয় 'পদ্মভূষণ' পুরস্কার। যেকোনো ক্ষেত্রে বিশিষ্ট সেবার জন্য দেওয়া হয় 'পদ্মশ্রী' সম্মান। 'পদ্মাসন' হল একটি অতি পরিচিত যোগাসন। ধ্যানের সময় এই আসন করা হয়। প্রাচীন ভারতের সংখ্যাবাচক শব্দ হল পদ্ম, মহাপদ্ম। শোনা যায়, সিপাহী বিদ্রোহের সময় পদ্ম উপহার সাংকেতিক ভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হত। হিন্দু কাহিনী অনুসারে নারায়নের নাভি থেকেই নির্গত হয়েছিল পদ্ম। যা 'ব্রহ্মার আসন' বলে পরিগণিত। এইজন্য পদ্মফুলকে বলা হয় 'ব্রম্ভকমল' বা 'ব্রম্ভার পদ্ম'। আবার শ্বেতপদ্ম বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আসন। এই ফুল ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর সাথেও যুক্ত। যিনি বিশুদ্ধতার জন্য মূল্যবান। গ্রামবাংলায় এক ধরনের চর্মরোগের সন্ধান মেলে, যার নাম 'পদ্মকাঁটা'। ফনায় পদ্মফুলের ছাপ দেওয়া পদ্মগোখরো গ্রামবাংলায় এক অতি বিষধর সাপ। এই পদ্মবনে লুকিয়ে থাকা পদ্মখরিশের ছোবলে প্রাণ হারাতে হয়েছে বহু পদ্মচাষীদের। তবুও শরৎ এলেই পদ্মই হাসি ফোটায় অজস্র মানুষের। অর্থের সংস্থান করে দেয়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর 'কেউ কথা রাখেনি'তে লিখেছেন, "মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর / তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাব / সেখানে পদ্ম ফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর / খেলা করে!"
পদ্মফুল হিন্দুধর্ম এবং বৌদ্ধধর্মের একটি পবিত্র ফুল। খ্রিস্টধর্মেও পদ্মের অনুষঙ্গ রয়েছে। টমাস এবং তাঁর ভারতে আসার সাথে পদ্মফুল জড়িত। পদ্ম ফুলের কথাও বাইবেলেও পাওয়া যায়। বিভিন্ন বৌদ্ধবিহারের অলঙ্করণে 'লোটাস পেটাল' একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বাঙালীর দুর্গোৎসবে যেসব ফুল কাজে লাগে তাদের মধ্যে অন্যতম এই পদ্মফুল। দেবী দুর্গার পূজায় ১০৮ টি পদ্মের প্রয়োজন। পেঁজা তুলার মত মেঘের সাথেই সখ্যতা সাদা কাশফুলের। শিউলির গন্ধও কম যায় না। কিন্তু এসবের বাইরে পদ্মফুলের আভিজাত্য আলাদা। শরতের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে লেপটে থাকে পদ্মফুল।
সব 'কমল' কিন্তু 'পদ্ম' নয়। অথচ সব 'পদ্ম'ই 'কমল'!
কং = জলং অলতি = ভূষয়তি = কমলং
অর্থাৎ জলকে যে ভূষিত করে, সেইই কমল। এক কথায়, জলজ কুসুমের সম্মিলিত নাম 'কমল'।
আর মূলের দ্বারা যে গমন করে, সেইই পদ্ম।
পদ + মন্
পদ্ = মূলং তেন মনতে = সর্পতি
অর্থাৎ, জলজ কুসুগুলির সকলেই পদ্ম নয়। কিন্তু সব পদ্মই কমল। পদ্মের কন্দ থেকে মৃনাল বেরিয়ে আবার একটি গাছের সৃষ্টি হয়। এই জন্যই নাম রাখা হয়েছে 'পদ্ম'।
বেদে উল্লেখ আছে পদ্মের। অথর্ববেদ-এর 'বৈদ্যককল্প'তে লেখা আছে— 'যুক্তায় সবিতা দেবান স্বর্ষতো ধিয়াদিবং পদ্মং সবিতা প্রসূবাতি তান্’। অর্থাৎ সূর্য বা প্রজাপতি যেমন দেবতাদিকে রস বিষয়ের মধ্যে থেকেও তাদিকে বুদ্ধির দ্বারা প্রকাশিত করেন, তেমনি সূর্য জলস্থ কমলকে জলের মধ্যে রেখেও নিজ তেজগুনের মাধ্যমে বিকশিত করেন। আসলে পদ্ম জলজ ফুল হলেও সূর্যের তেজেই বিকশিত হয়।
পদ্মফুলের পরিচয় তো নতুন করে দেওয়ার নয়। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম 'Nilambo nucifera'। এটি Nelumbonaceae পরিবারের অন্তর্গত। এছাড়াও রয়েছে Nelumbium speciosum, Nelumbo komarovii, Nymphaea nelumbo। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, স্থলপদ্ম (Hibiscus mutabilis, Family - Malvaceae) কিন্তু এই জলপদ্মের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। নয়নজুলি, ছোট খাল, বড় দিঘী, ক্যানেল, পুষ্করিণীতে পদ্মফুলের অবাধ বাসস্থান। ইদানিং বাড়িতেও শখের পদ্ম চাষ শুরু হয়েছে। কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর 'পদ্ম মৃত্যু' কবিতায় লিখেছেন --
'পদ্ম ফোটানোর জন্যে একটা পুকুর কেটেছিলাম।
ঝর্নার মতো জল উঠবে তার পাতাল থেকে।
ভালোবেসে নিজের হাতে কেটেছি হাজার কোয়া মাটি।কিন্তু পাতাল চিরে উঠে আসেনি স্বচ্ছতোয়া নদী,
দু’কূল ছাপিয়ে উঠেনি স্বর্গীয় মদে ফেনা।
দিন শেষে দেখি পদ্মের মৃণালে শুধু মৃত্যু ফুটে আছে।'
পদ্মফুলেরও বিচিত্র নাম রয়েছে। সাধারণত সাদা পদ্মকে বলে পুণ্ডরীক, নীলবর্ণের পদ্মকে বলে সৌগন্ধিক, নীলকমল, ইন্দীবর এবং লাল বর্ণের পদ্মকে কোকনদ বলা হয়। এছাড়া পদ্মকে আরও যেসব নামে ডাকা হয় তা হল – নলিন, নল, কমল, মৃণাল, অন্তোজ, অম্বুজন্ম, সুজন, অম্বুজ, শ্রী, অম্বুরাহ, অম্বুপদ্ম, ভদ্র, নীলমুৎপল, নীলাবদ্ধ, করলয়, নীলোৎপল, মৃদুৎপল, পুশুরীক, ইন্দীবর, শতপদ্ম, মহাপদ্ম, সিতাম্বুজ, সরোজ, নলেন, অরবিন্দ, মহোৎপল, কোকনন্দ, রক্তোৎপল, হল্লক, রক্ত সন্দিক, রক্তসরোরাহ, রক্তাম্ব, অরুনকমল, রবিপ্রিয়, রক্তবারিজ, রাজীব, পঙ্কেরুহ, অনিলজ, শতদল, সহস্রপত্র, সরসিজ, বারিরুহ, পুষ্কর, বার্জ, তামরস, কুঞ্জ, কব্জ, কুশেশয়, বিসকুসুম এবং পঙ্কজ। পদ্মের কন্দ থেকে যে ফেঁকড়ি বের হয় তাকে বলে মৃনাল, পদ্মের কচিপাতার নাম সংবর্তিকা, কেশরকে বলে কিঞ্জল্ক, পদ্মের ফুল থেকে নিঃসৃত রসকে বলে মকরন্দ। পদ্মের বীজকে বলে টনা। পদ্মের ডাঁটাতে থাকে কাঁটা। ফলে পদ্মফুল তোলার সময় গায়ে আঁচড় পড়ে যায়!
'কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে?
দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহিতে?'
পদ্মের প্রচলন দুর্গাপূজায়— অতি প্রাচীন। আনুমানিক দশ হাজার বছর আগে শুরু দুর্গাপূজা। রাজা সুরথের বাসন্তী পূজা এবং রামচন্দ্রের অকালবোধনে। । শরৎকালীন দুর্গাপুজোর বয়স ছ'হাজার বছর আগে। এর চার হাজার বছর আগেও দুর্গাপূজার প্রচলন ছিল। তখন এই দেবী বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পূজিত হতেন। অদ্ভুত ব্যাপার, প্রায় প্রতিটি দেশে সেই দেবীর প্রধান পূজার উপকরণ ছিল পদ্ম এবং শালুক। আমাদের এখানে যা দেবী দুর্গা তা একসময় বিভিন্ন দেশে পূজিতা হতেন। সে সময় নীলপদ্ম ছিল সবচেয়ে বেশি। এই নীলপদ্মের 'নীল' নাম থেকেই নাকি মিশরের প্রধান নদী 'নীল'-এর নামকরণ হয়েছে।
এই দেবী দুর্গা হলেন অনার্যদের দেবী। তিনি পরিচিত ছিলেন দেবী শবরী হিসাবে। তাঁর পূজাতে ছিল পদ্ম ও শালুক। ইরাক তথা প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার এক মহাদেবীর নাম— ‘ইশতার’। তিনিও সিংহবাহিনী, এই ইশতারের পূজায় লাগতো পদ্ম এবং শালুক। এর পূজা চলত একটানা দশদিন ধরে। তখন ভারত, জাভা এবং এশিয়ার কিছু দেশ থেকে জাহাজ ভর্তি করে পদ্ম নিয়ে যাওয়া হত দেবীর আরাধনার জন্য। নানা বর্ণের টন টন পদ্ম ফুল যে সে সময় ব্যাবিলনে আনা হত ইশতারের জন্য তার প্রমাণ মিলেছে।
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে দেবী ভারগোর রূপও অনেকটা দেবী দূর্গার আদলে। রণরঙ্গিনী মূর্তি। হাতে নানা ধরণের যুদ্ধাস্ত্র। কিন্তু সেই পদ্ম ও শালুক ফুলই ব্যবহৃত হত তাঁর পূজায়। আফ্রিকার মানুষের কাছে উর্বরতার দেবী হলেন দেবী তানিত। তিনি রুদ্রের দেবীও বটে। এই দেবী তানিত আবার সোনার দেবী হিসাবেও পরিগণিত হতেন। আফ্রিকার মানুষ এই দেবীর পূজা করতেন পদ্মফুল দিয়েই। তেমনি রোমানরা তাঁদের বানিজ্যতরী ভর্তি করে পদ্ম আর শালুক ফুল বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসতেন তাঁদের যুদ্ধের দেবী 'ওপস'-এর জন্য। এই দেবী ওপস রোমানদের কাছে স্নেহ এবং সমতার দেবী হিসাবেও পূজিতা হতেন।
মাইসেনি সভ্যতায় ক্রীট দ্বীপের একটি দেবীর কথা না বললেই নয়। একসময় এখানে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য ছিল দেবী সিবিলির। মেসোপটেমিয়ার দেবী ইশতারের মতোই দেবী সিবিলিও সিংহবাহিনী। তিনি ছিলেন শক্তির দেবী। তাঁর পূজাতেও পদ্মের প্রচলন ছিল। মানুষের কাছে এই ফুল ছিল আশীর্বাদ ফুল। ইউরোপীয়রা তথা গ্রীকরা দেবী রিয়াকে পূজা করতে ব্যবহার করত পদ্ম। যুদ্ধের এই দেবীর সাথে আমাদের দেবী দুর্গার অদ্ভুত মিল।
মহাশক্তির এই পূজা সেই আদি অনন্তকাল থেকেই চলে আসছে। তাই ভাবতে অবাক লাগে আমাদের এই দুর্গা দেবী কি ঐসব দেশের মহাশক্তির আরাধ্য দেবীরই পরিবর্তিত রূপ? দুর্গা কি ইশতার, রিয়া, সিবিলি, ওপস, ভারগো এবং দেবী তানিতের ভারতীয় সংস্করণ? সব ক্ষেত্রেই যে মিলটি লক্ষ্য করা গিয়েছে তা হল পদ্ম এবং শালুকের ব্যবহার। পদ্মের অনেক উপকারী দিক আমাদের উপকৃত করে। ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে পদ্মকে আমরা রাখতে পারি। পদ্মপাতার ওপর শুয়ে থাকলে গায়ের জ্বালা কমে যায়। 'হারিশ' নামক একপ্রকার অর্শ্বরোগে কচি পদ্মপাতা বেটে লাগালে ভালো হয়। Prolapse of uterus এর ক্ষেত্রে পদ্মপাতা উপকারী। রক্তপিত্ত, চোখের ছানি, অনিয়মিত ঋতুস্রাব, প্রস্রাব রোধে পদ্মের প্রয়োজনীয়তা কার্যকরী।
পদ্মের ডাঁটার তরকারি বেশ উপাদেয়। ভিয়েতনামে পদ্মের ডাঁটা স্যালাডে দেওয়া হয়। বিভিন্ন নুডলসের সাথে পদ্মফুল কুচি কুচি করে দেওয়া হয়। এখানকার লোকজন এমনি এমনিই পদ্মের বীজ মুখে পুরে দেন। পদ্মের বিচি শুকিয়ে ভেজে খই তৈরি করেন বাঙালিরা। ডেকোরেটিং শিল্পেও পদ্মফুলের চাহিদা ভালোই। পদ্ম পাতায় খাওয়ার চল ইদানিং দেখা যাচ্ছে আমাদের বিভিন্ন হোটেলে। প্রেয়সীকে 'পদ্মপাতা' হিসেবে ভেবে 'তোমায় আমি' কবিতায় জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন --
'তোমায় আমি দেখেছিলাম ব'লে
তুমি আমার পদ্মপাতা হলে;
শিশির কণার মতন শূন্যে ঘুরে
শুনেছিলাম পদ্মপত্র আছে অনেক দূরে
খুঁজে খুঁজে পেলাম তাকে শেষে।
নদী সাগর কোথায় চলে ব'য়ে
পদ্মপাতায় জলের বিন্দু হ'য়ে
জানি না কিছু দেখি না কিছু আর
এতদিনে মিল হয়েছে তোমার আমার
পদ্মপাতার বুকের ভিতর এসে।
তোমায় ভালোবেসেছি আমি, তাই
শিশির হয়ে থাকতে যে ভয় পাই,
তোমার কোলে জলের বিন্দু পেতে
চাই যে তোমার মধ্যে মিশে যেতে
শরীর যেমন মনের সঙ্গে মেশে।
জানি আমি তুমি রবে আমার হবে ক্ষয়
পদ্মপাতা একটি শুধু জলের বিন্দু নয়।
এই আছে, নেই এই আছে নেই জীবন চঞ্চল;
তা তাকাতেই ফুরিয়ে যায় রে পদ্মপাতার জল
বুঝেছি আমি তোমায় ভালোবেসে।'
🍂
0 Comments