জ্বলদর্চি

আঠালি /ভাস্করব্রত পতি

বাংলার ঘাস পাতা ফুল ফল, পর্ব -- ২৬
আঠালি

ভাস্করব্রত পতি

আঠালি হল সুমিষ্ট বেরি জাতীয় ফল। স্থানীয় ভাষায় কেউ কেউ বলেন আঠালি, বচ, বয়রা ফল, বওড়া, বল্লা, বউলা, বউলাগোটা, বোঁচ, বুজ, বয়েল কুড়ি, মুণ্ডা ফল এবং কাশিফল। পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় এর পরিচিতি Glueberry, Indian Glueberry, Indian Cherry, Small Cordia, Sebesten, Lasoda, Sudan Teak, Laveda, Seulingong, Lasura, Sebastan Tree, Pidar, Sebesten Plum, Sapistan Plum, Sapistan, Sapistan Tree, Panugeri, Naruvilli, Geduri, Spistan, Burgund Dulu Wanan, Ntege, Selu, Clammy Cherry, Glueberry,  Assyrian Plum ইত্যাদি নামে। 
আঠালি পাতা

কোথাও কোথাও শেলুকা বা বহুবারা গাছের নামেও একে চেনা যায়। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম Cordia dichotoma, Cordia obliqua, Cordia myxa, Cordia domestica ইত্যাদি। এটি Boraginaceae পরিবারভুক্ত। ভারত, মায়ানমার, লেবানন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, চিন, তাইওয়ান সহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে জন্মাতে দেখা যায়। মোটামুটি শুষ্ক এবং আদ্র উভয় জায়গাতেই জন্মায়। 
 কাঁচা আঠালি ফল

আঠালি গাছ খুব বড় ধরনের হয়না। মাঝারি উচ্চতার বৃক্ষ জাতীয় গাছ। গ্রামাঞ্চলে একসময় খুব দেখা যেত। এখন সচরাচর চোখে পড়ে না। কাষ্ঠল ধূসর বর্ণের কাণ্ড হয়। এই গাছে উঠে দামাল ছেলেরা আঠালি ফল পেড়ে নিয়ে এসে তা দিয়ে আঠা বানাতো কাগজ চেটানোর জন্য। যদিও বর্তমান প্রজন্মের কেউ সেসব ভাবতেই পারবেনা। 
আঠালি ফুল

পাতাগুলো হালকা সবুজ বর্ণের ডিম্বাকার বা গোলাকার হয়। এর ওপর কিউটিকল এর আবরণ থাকে। ফুলগুলো ছোট ছোট এবং সেগুলো হালকা হলুদাভ সাদা রঙের হয়। উভয়লিঙ্গ প্রকৃতির। মার্চ এপ্রিল নাগাদ ফুল ফোটে। আর জুলাই আগস্ট মাসে গুচ্ছাকারে ফোটা সবুজ ছোট ছোট ফলগুলোয় গাছ ভরে ওঠা ফলগুলোয় পাক ধরে। ফলগুলো অনেকটা ঠিক গোলাকার মার্বেল গুলির মতো দেখতে। এগুলি কাঁচা থাকাকালীন সবুজ বর্ণের হলেও পেকে গেলে তা গোলাপি বর্ণ ধারণ করে। ফলের মধ্যে থাকে হড়হড়ে অংশ। যা অনেকটা সর্দি লেগে তৈরি হওয়া শিকনির মতো। এই ফলগুলিকে গরম জলে ফুটিয়ে আঠা বানানো হয়। কোথাও কোথাও এই ফলকে সবজি হিসেবে রান্না করা হয় এবং সরাসরিও খাওয়া হয়।
পাকা আঠালি ফল

প্রাচীন গ্রিস দেশে আঠালি গাছের ব্যবহার প্রচুর ছিল বলে জানা যায়। বর্তমানে রাজস্থানের বিকানীরে এই গাছের চাষ হয়। তাঁদের কাছে এই গাছ গুন্দা ফল। এর থেকে সেখানে আচার এবং জেলি তৈরি হয়। এই ফল খেলে নাকি কাশি হয়। তাই একে গ্রামাঞ্চলে বলে কাশিফল। তবে এর অনেক ভেষজ উপকারিতা রয়েছে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এর গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। ডায়রিয়া, পেট খারাপ, জ্বর, মাথা ব্যাথাতে আঠালি গাছের পাতা ও ছালের রস খুব উপকারী। কফ, কুষ্ঠ, পোড়া ঘা, গনোরিয়া, পাকস্থলীর সমস্যার সমাধানে আঠালি গাছের অবদান রয়েছে।

🍂

Post a Comment

0 Comments